চাল কুমড়া চাষ পদ্ধতি
চালকুমড়ার ভালো ফলনের জন্য উঞ্চ, প্রচুর সূর্যালোক এবং নিম্ন আর্দ্রতা প্রয়োজন। চালকুমড়া চাষের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা হলো ২০-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চাষকালীন সময়ে উচ্চ তাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায় যার ফলে ফলন কমে যায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলি মাটিতে চালকুমড়ার ভালো ফলন হয়।
উন্নত জাতঃ
কুমড়ার বাংলাদেশে কুমড়ার কোনো অনুমোদিত জাত নেই। তবে বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি চালকুমড়া-১ নামের জাতটি বাংলাদেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়।
এছাড়াও রয়েছে
বারি চালকুমড়া-১,
ইপসা চালকুমড়া-১,
জুপিটার, হীরা ৪৫১ এফ-১,
হাইব্রীড চালকুমড়া সুফলা-১,
হাইব্রীড চালকুমড়া বাসন্তী-নিরালা,
হাইব্রীড চালকুমড়া বিজয় (উফশী-বিজয়),
হাইব্রীড চালকুমড়া সোনালী এফ-১,
হাইব্রীড চালকুমড়া মাধবী, হাইব্রীড চালকুমড়া ইউনিক,
হাইব্রীড চালকুমড়া সুপারস্টার।
বপনের সময়ঃ ফেব্রু - মে (ফাল্গুন থেকে আশ্বিন) উপযুক্ত সময় ।
চাষপদ্ধতি:
চারাগুলো রোপনের আগের দিন বিকালে পানি দিয়ে মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। পরের দিন বিকালে চারা রোপন করতে হবে। মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। চারার পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে। পলিব্যাগ সরানোর সময় এবং চারা রোপনের সময় সাবধানে থাকতে হবে যাতে মাটির দলা ভেঙ্গে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। নতুবা শিকড়ের ক্ষতস্থান দিয়ে ঢলে পড়া রোগের জীবানু ঢুকবে এবং শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ হলে গাছের বৃদ্ধি দেরীতে শুরু হবে।
বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ২.৫ - ৩ গ্রাম।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
শতক প্রতি সারের পরিমাণ
কম্পোস্ট -৮০ কেজি
ইউরিয়া- ৮০০ গ্রাম
টিএসপি -৭০০ গ্রাম
পটাশ -৬০০ গ্রাম
জিপসী (জিপসাম)- ৪০০ গ্রাম
২০ কেজি গোবর,
অর্ধেক টিএসপি ও ২০০ গ্রাম পটাশ,
সমুদয় জিপসাম, দস্তা, বোরণ জমি তৈরির সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
অবশিষ্ট গোবর (মাদা প্রতি ৫ কেজি),
টিএসপি (মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম),
২০০ গ্রাম পটাশ (মাদা প্রতি ২০ গ্রাম),
সমুদয় ম্যাগনাম (ম্যাগনেসিয়াম) (মাদা প্রতি ৫ গ্রাম)
চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ১ম বার ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম পটাশ (মাদা প্রতি ১৫ গ্রাম), ৩০-৩৫ দিন পর ২য় বার, ৫০-৫৫ দিন পর ৩য় বার ২০০ গ্রাম করে ইউরিয়া (মাদা প্রতি ১৫ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিন পর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া (মাদা প্রতি ১৫ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে।
মাদার গর্তে বীজ বপন:
প্রতি মাদায় সারিতে ৪-৫ টি বীজ বপন করতে হবে। ৫-৭ দিনের মধ্যেই বীজগুলো গজাবে। চারা গজানোর কয়েকদিন পর প্রতি মাদায় ২-৩ টি সবল গাছ রাখতে হবে।
সেচ:
জমিতে যখনই রসের অভাব হবে তখনই সেচ দিতে হবে। চালকুমড়ার লতা বেশ রসালো ও নরম। তাই মাটি শুকিয়ে গেলে গাছ ঝিমিয়ে পড়ে এবং কচি ফল ও কুঁড়ি ঝরে যায়। শুষ্ক মৌসুমে ৫-৬ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। প্রতিবার সেচের পর গাছের গোঁড়ার মাটি চটা বেঁধে গেলে চটা ভেঙে দিতে হবে। বৃষ্টির পর অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে।
আগাছা:
জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন । সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র নিড়িয়ে আগাছা বাছাই। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।চারা অবস্থা থেকে রসুন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বার নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
পোকামাকড়ঃ
চাল কুমড়ার স্কোয়াশ বাগ পোকা - এগ্রোইমিডা (ইমিডাক্লোরোপ্রিড) জাতীয় কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
সুড়ঙ্গকারী পোকা দমনে পেরিথ্রিন ১০ ইসি (সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক ১০ মিলি/ ১০ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে সকালের পরে সাঁজের দিকে স্প্রে করুন। স্প্রের পুর্বে খাবারযোগ্য লতা ও ফল পেড়ে নিন। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে।
ফলের মাছি পোকা- পেরিথ্রিন ১০ ইসি (সাইপারমেথ্রিন) জাতীয় কীটনাশক ( ১০ মিলি প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রেড পামকিন বিটল/ লাল বিটল- পেরিথ্রিন ১০ ইসি (সাইপারমেথ্রিন) জাতীয় কীটনাশক ১০ মিলিলিটার প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।
ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রোগবালাইঃ
লিফ কার্ল - জমিতে সাদা মাছি দেখা গেলে (বাহক পোকা এগ্রোইমিডা ২০ এস এল ( ইমিডাক্লোরোপ্রিড) জাতীয় কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।
গামি স্টেম ব্লাইট রোগ- ম্যাকক্্রগোল্ড 72 ডব্লিউপি ( ম্যানকোজেব 64 + মেটালক্সিল 4) জাতীয় ছত্রাকনাশক ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে যেতে পারে।
ডাঊনি মিলডিউ রোগ- ম্যাকক্্রগোল্ড 72 ডব্লিউপি ( ম্যানকোজেব 64 + মেটালক্সিল 4) জাতীয় ছত্রাকনাশক ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে যেতে পারে।
ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১১০ – ১৩০ কেজি।
-ধন্যবাদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন