পিরামিড রহস্য
এত বড় একটা পিরামিড তৈরি করতে নিশ্চয়ই অনেক অনেক বেশি পাথর লেগেছিল। দূর থেকে বড় বড় পাথর বহনের কাজ সোজা নয়। আর সেই কাজ একটু সহজ করার জন্য খুফু ভাবলেন, রাজধানী নয়, এমন এক জায়গায় বানাতে হবে পিরামিড, যার আশপাশে পাথরের পর্যাপ্ত জোগান আছে। আর যদি হয় জায়গাটা বেশ উঁচু, তাহলে সোনায় সোহাগা।
খুঁজেপেতে রাজধানী মেমফিস থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গিজা অঞ্চলটাকেই বেছে নেন তিনি। জায়গাটা উঁচু, পাশেই চুনাপাথরের খনি। সমস্যা হলো দূরত্বটা। ফারাওদের সমাধি রাজধানীতে হবে, সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু খুফুর উদ্দেশ্য সবার চেয়ে সেরা জিনিসটা বানানো, তাই একটা ব্যাপারে ছাড় দিলেন। গিজাতেই বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন পিরামিড। দূরত্ব কমানোর জন্য ব্যবহার করলেন নীল নদকেই। মেমফিস নীল নদের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল।
দূরত্ব কমানোর জন্য নীল নদ থেকে গিজা পর্যন্ত একটা খাল খনন করলেন খুফু। নৌ যোগাযোগ স্থাপিত হলো। সুতরাং ১৫ কিলোমিটার দূরত্বটাকে আর বাধা মনে হলো না খুফুর কাছে। তা ছাড়া গিজাতেই বানিয়ে নিলেন একটা অস্থায়ী রাজপ্রাসাদ। পরের ৩০ বছর ধরে ধীরে ধীরে নির্মাণ করা হলো গিজার পিরামিড।
৬.এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ। নিশ্চয়ই অনেক লোকের দরকার। তা বৈকি। ইতিহাসের জনক গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাস মিসর ভ্রমণ করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে। সেখানকার জনশ্রুতি শুনে লিখেছিলেন গিজার পিরামিডের ইতিহাস। তাতে লেখা, প্রায় এক লাখ ক্রীতদাস অবিরাম খেটে তৈরি করেছিল গিজার পিরামিড। কিন্তু ১৯৯০ সালে মিসরীয় আর্কিওলজিষ্ট জাহি আব্বাস হাওয়াস ভুল প্রমাণ করেন হেরোডোটাসকে। আশপাশের এলাকা খনন করেন। খুঁজে পান নতুন নিদর্শন। একটা শ্রমিকপল্লির সন্ধান পাওয়া যায়। পাওয়া যায় শ্রমিকদের কঙ্কাল, তাঁদের ব্যবহার্য জিনিস, থাকার ঘর, তৈজসপত্র, চিকিৎসালয়। এসব নিদর্শন থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়াস হিসাব করে দেখান, ১ লাখ নয়, ১০ হাজারের মতো শ্রমিক সেখানে কাজ করেছেন ৩০ বছর ধরে। পরে এই সংখ্যা বেড়েছে। এখন মনে করা হয়, ২৫ হাজার শ্রমিক এ কাজ করেছিলেন। হাওয়াস বলেছিলেন, শ্রমিকেরা স্রেফ ক্রীতদাস নন, বরং পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করা শ্রমিক। সম্ভবত তাঁরা ফারাওয়ের সৈন্য বাহিনীর একাংশ। সেখানে শ্রমিকদের থাকা-খাওয়া, এমনকি চিকিৎসালয়ের সন্ধানও পেয়েছিলেন। বলে দাবি করেন হাওয়াস। পরে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, ইজিপ্টলজিস্ট রোজালি ডেভিড শ্রমিকদের কঙ্কাল রাসায়নিক ও কম্পিউটার সিমুলেশন করে দেখিয়েছেন, কেমন ছিল শ্রমিকদের চেহারা। সেটা দেখে বোঝা যায়, এদের শারীরিক গঠন মোটেও কৃতদাসদের মতো নয়। এদের কঙ্কালের সিটি স্ক্যান করে পাওয়া গেছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। অনেকের ভাঙা হাড় পাওয়া গেছে। সেগুলো রীতিমতো চিকিৎসা করে জোড়া দেওয়া হয়েছে। তার মানে, জাহি হাওয়াসের ধারণাই ঠিক। এদের শ্রমিকদের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও ছিল। কৃতদাসদের দিয়ে করানো হলে এ ব্যবস্থা থাকত না। চলবে...
#মানুষের_ইতিহাস
![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন