মহাকবি ফেরদৌসীর বিখ্যাত কাব্য 'শাহনামা'র আলোচিত চরিত্র 'রুস্তম' লোককথা থেকে বাস্তবে!
মহাকবি ফেরদৌসীর বিখ্যাত কাব্য 'শাহনামা'র সবচেয়ে আলোচিত কাহিনী 'সোহরাব-রুস্তম'। রুস্তম ইরানের লোককাহিনীর সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র। লোককথায় তিনি আবহমান কিংবদন্তির মহাবীররূপে উপস্থাপিত হয়েছেন। বিশ্বজুড়ে মানুষের মুখে মুখে বছরের পর বছর সোহরাব রুস্তম গল্পটি চর্চা হয়ে আসছে। এই কাহিনী এতই জনপ্রিয় যে, মানুষ একে সত্য হিসেবে ধরে নিয়েছে যেনো ইতিহাসের কোনো অবিচ্ছেদ্য অংশ। সত্যিকার অর্থে এটি মহাকবি ফেরদৌসীর একটি কাহিনীকাব্য।
জন্মগতভাবেই রুস্তম অনেক ব্যতিক্রমী গুণসম্পন্ন। তার সে গুণগুলোই তাকে আলাদা ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্থান দিয়েছে লোককথায়। শাহনামায় বিচিত্র সব ঘটনা ঘটিয়ে ব্যতিক্রমী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রুস্তম। কৈশরে সে তার রাজা মেনুচির সাদা হাতিকে হত্যা করেছিল শুধু গজা দিয়ে। নারিমানের ছেলে সাম তার দাদা। আর তার কাছ থেকেই রুস্তম উত্তরাধিকার সূত্রে বীরত্বের অধিকারী।
পারস্যের লোককাহিনী মতে, রুস্তম বিয়ের পর তার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসে। স্ত্রী যখন প্রসব বেদনায় কাতর, তখন যুদ্ধে যেতে হয় রুস্তমকে। রুস্তম যাওয়ার সময় বলে যায় সন্তান হওয়ার খবর যেন তাকে জানানো হয়। কিন্তু তার স্ত্রী কন্যা সন্তান হওয়ার মিথ্যা সংবাদ দেয়। কারণ পুত্র সন্তানের সংবাদ দিলে রুস্তম তাকে নিয়ে যুদ্ধবিদ্যা শেখাবে এবং হয়তো সে যুদ্ধক্ষেত্রেই মারা যাবে। এমন আশঙ্কা করেই স্ত্রী লুকিয়েছিল পুত্র সন্তানের খবর। পরবর্তীতে যুদ্ধের ময়দানে পিতা-পুত্রের যুদ্ধের এর হৃদয়বিদারক দৃশ্যে পিতার হাতে মৃত্যু হয় সন্তানের। এমন ঘটনার কারণেই ঘটে গেছে সোহরাব-রুস্তমের সেই ট্র্যাজেডি।
রুস্তম নায়কোচিত অভিযান চালিয়ে কোহেকাফের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন। রুস্তমের আরেকটি বিখ্যাত কৃতিত্ব হচ্ছে পারস্যের অপদেবতা 'অকভান'-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। অকভান দেখতে কিছুটা বন্য গাধার মতো, যে দ্রুত ভোল পাল্টে মানুষের সর্বস্ব লুট করত। এ অপদেবতার অত্যাচারে রাজ্যের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। চিন্তিত হয়ে পড়েন রাজা। শেষে এর প্রতিকারের ভার মহাবীর রুস্তমকে দেওয়া হয়। রুস্তম তাকে হত্যা করে প্রজাদের বিপদমুক্ত করেন। এ ছাড়া রুস্তম ড্রাগনের সঙ্গেও যুদ্ধ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। এসব গল্প লোককাহিনী হলেও মানুষের কাছে এর আবেদন চিরন্তন।
ছবি: ইরানের খোরাসান প্রদেশের Mashhad city তে মহাবীর রুস্তম এবং তার ঘোড়া Rakhsh.
তথ্যসূত্র:
ক। ফেরদৌসীর শাহনামে রোস্তম ও সোহরাবের গল্পে ট্র্যাজেডি, ইব্রাহিমি, মোখতার ও তাহেরি, আবদুল্লাহ। । ইতিহাস সংস্কৃতি ও শিল্প গবেষণা জার্নাল
খ। উইকিপিডিয়া।
গ। মহাবীর রুস্তম, রাজেশ পাল।
ফেইসবুক থেকে নেওয়া
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন