...এই ছবির জন্ম কাহিনী বর্ণনা করে জনাব জহিরুল হক বলেনঃ পয়গাম কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, মওলানা ভাসানীর ঊননব্বইতম জন্মদিন উপলক্ষে একটি বিশেষ সংখ্যা বের করার। এই বিশেষ সংখ্যার ছাপার জন্য বার্তা সম্পাদক সৈয়দ আসাদুজ্জামান ও আমি শিল্পাচার্যের কাছে যাই মওলানার একটি ছবির জন্য। সময়টা ১৯৭০-এর ডিসেম্বরের শেষদিকে।...আমাদের ড্রইংরুমে বসিয়ে বললেন, তোমাদের কথা দিয়েছি মওলানার ছবি এঁকে দিব কিন্তু কী আঁকবো, কীভাবে আঁকবো? আমার মনের মতো করে তাঁকে আমি কিছুতেই ক্যানভাসে আনতে পারছি না। আমি যতবার তাঁর ছবি আঁকতে চেষ্টা করেছি ততবারই আমার সামনে ভেসে উঠেছে ক্ষুধা, দারিদ্র, শোষণ, গর্কি, জলোচ্ছ্বাস, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, বিক্ষোভ, সংগ্রাম আর হাহাকার।
জহিরুল হক বলেনঃ শিল্পাচার্যকে খুব অস্থির মনে হয়েছিল আমার। তাঁকে মনে হচ্ছিল তিনি যেন একজন মা। একজন মা তার শিশুকে জন্ম দেয়ার জন্য যেভাবে প্রখর যন্ত্রণায় কাৎরায়, ভিতরে জীবন আছে, সে জীবনকে তিনি উপহার দিতে চাচ্ছেন, ভিতরে প্রাণের স্পন্দন তিনি অনুভবও করেছেন, সেজন্য দুর্লঙ্ঘ পথ অতিক্রমের তীব্র আকাঙ্ক্ষাও আছে, কিন্তু কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে সব উদ্যোগ.........কথাবার্তার এক ফাঁকে আমি বলেছিলাম, আপনার এই যে ভাবনা তার প্রেক্ষাপটেই আঁকুন না মওলানার ছবি।...আমার এই কথা সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিয়েছিলেন তিনি।...বললেন ২/৪ দিন পর এসো। গেলাম অবশেষে ১১ জানুয়ারি, ১৯৭১-এ। আমাদের হাতে তুলে দিলেন তাঁর ‘মওলানা ভাসানী’। ছবির দিকে তাকিয়ে বিস্ময় ও উত্তেজনায় কাঁপছিলাম আমি। মনে আছে ছবিটিকে গোল করে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন শিল্পাচার্য। দেয়ার সময় বলেছিলেন ‘ছবিটি তোমাদের দিচ্ছি বটে তবে এঁকে তৃপ্তি পেলাম না। পরিপূর্ণভাবে মওলানা ভাসানীকে আমি ফোটাতে পারলাম না’।
এই ছবির জন্য শিল্পাচার্য কোন পারিশ্রমিক নেননি। বর্তমানে ছবিটির মূল কপি আছে সন্তোষে সৈয়দ ইরফানুল বারীর কাছে। অবশ্য ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় ছবিটি ছিল দীর্ঘদিন মাটির নিচে। ফলে একটা অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের জাতীয় জাদুঘরে এর একটা রিপ্রডাকশন আছে।
[অতিশয় সংক্ষেপিত]
[জানা অজানা মওলানা ভাসানী; আবদুল হাই শিকদার]
![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন