#আপনারা_লাউ_কিভাবে_আবাদ_করবেন?
#জলবায়ুঃ
লাউ প্রধানত শীতকালের সবজি। বর্তমানে এ দেশে সারা বছরই লাউ হচ্ছে। উষ্ণ ও অব-উষ্ণ অঞ্চলে ভালো হয়।
#মাটিঃ
লাউ প্রায় সব ধরণের মাটিতেই ভালো জন্মে। তবে লাউ চাষের জন্য দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো।
#জমি_নির্বাচনঃ
সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
#লাউয়ের_জাত_নির্বাচনঃ
মার্শাল সুপার, ময়না, সুলতান, বাদশা, মধুমতি, হাইগ্রিন, ডালিয়া পল্লবী, মোনালিসা, ডায়না, বর্ষা, মার্কিন, সুলতানা, নবাব, নাইসগ্রীণ, হাজারী লাউ, ইত্যাদি
#জীবনকালঃ ১২০-১৪০ দিন
#বীজ বপনের সময়ঃ
লাউ সারা বছর আবাদ করা যায়। তবে
শীতকালে-
চাষের জন্য আগস্ট – অক্টোবর এবং
গ্রীষ্মকালে-
চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি-মে মাসে বীজ বপন করা যায়।
#জমি_তৈরিঃ
জমিকে প্রথমে ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন ঢিলা এবং আগাছা না থাকে।
লাউ গাছের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য উত্তমরূপে গর্ত (মাদা) তৈরি করতে হবে।
#বেড_তৈরিঃ
বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি। বেডের প্রস্থ হবে ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামতো নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে।
#বেডের_দুরত্বঃ
পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি ব্যাসের সেচ নালা থাকবে এবং প্রতি দুবেড অন্তর ৩০ সেমি প্রশস্ত শুধু নিকাশ নালা থাকবে।
#মাদা_তৈরিঃ
মাদার আকার হবে ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি, গভীর ৫০-৫৫ সেমি এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি।
#মাদার_দুরত্বঃ
বেডের যে দিকে ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে সেদিকে বেডের কিনারা হইতে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে।
একটি বেডের যে কিনারা থেকে ৬০ সেমি বাদ দেয়া হবে, উহার পার্শ্ববর্তী বেডের ঠিক একই কিনারা থেকে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে অনুরুপ নিয়মে মাদা করতে হবে।
#বীজহারঃ
প্রতি শতকে ৬-৮ গ্রাম বীজের প্রয়োজন।
#বীজ_শোধনঃ
বীজ বাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং সবল-সতেজ চারা উৎপাদনের জন্য বীজ শোধন জরুরি। কেজি প্রতি দুই গ্রাম ভিটাভেক্স/ক্যাপটান ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়।
সহজ অংকুরোদগমের জন্য পরিষ্কার পানিতে ১৫-২০ ঘন্টা অথবা শতকরা এক ভাগ পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে বীজ এক রাত্রি ভিজিয়ে অতঃপর পলিব্যাগে বপন করতে হবে।
#চারা_উৎপাদনঃ
লাউ চাষের জন্য চারা নার্সারিতে পলিব্যাগে উৎপাদন করে নিলে ভাল হয়।
বীজ বপনের জন্য ৮ × ১০ সেমি বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়।
প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে পলিব্যাগে ভরতে হবে।
#বীজের_সংখ্যাঃ
প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বুনতে হবে। পলিব্যাগ বা কলাপাতার ঠোঙায় বা পলিব্যাগে চারা তৈরি করে প্রতি মাদায় একটি করে সবল চারা রোপণ করা ভালো। এতে বীজের খরচ কম পড়ে এবং চারার মৃত্যুহার কমে যায়। পলিব্যাগে চারা তৈরি করতে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
#বীজ_বপনের_গভীরতাঃ
বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে।
#বীজতলায়_চারার_পরিচর্যাঃ
নার্সারিতে চারার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি শীতে বীজ গজানোর সমস্যা হয়। এজন্য শীতকালে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে।
চারায় প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে তবে সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার গায়ে পানি না পড়ে।
পলিব্যাগের মাটি চটা বাঁধলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
লাউয়ের চারাগাছে ‘রেড পামকিন বিটল’ নামে এক ধরণের লালচে পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয়। এটি দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
#চারার_বয়সঃ
বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম।
#চারা_রোপণঃ
মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতঃপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি উক্ত জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে।
চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।
পলিব্যাগ সরানোর সময় এবং চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং মাটির দলা না ভাঙ্গে । নতুবা শিকড়ের ক্ষতস্থান দিয়ে ঢলে পড়া রোগের (ফিউজারিয়াম উইল্ট) জীবাণু ঢুকবে এবং শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ হলে গাছের বৃদ্ধি দেরিতে শুরু হবে।
#সারের_পরিমাণঃ বিঘা প্রতি ৩৩ শতকে
গোবর ১৫০০ কেজি
ইউরিয়া ২০-২৫ কেজি
টিএসপি ২৫ কেজি
পটাশ ২০ কেজি
জিপসাম ১৫ কেজি
জিংক ১.৫ কেজি
বোরন ১.৫ কেজি
#সার_প্রয়োগ_পদ্ধতিঃ
অর্ধেক গোবর সার, টিএসপি ও এমপি এবং সবটুকু জিপসাম, দস্তা, বোরাক্স ও ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট গোবর এবং টিএসপি চারা লাগানোর ৭ দিন পূর্বে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগে ইউরিয়া এবং অবশিষ্ট এমপি সার সমান ৪ কিস্তিতে চারা রোপণের ১৫, ৩৫, ৫৫ এবং ৭৫ দিন পর গাছের গোড়ায় ১০-১৫ সেমি দূরে মাদার মাটির সংগে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
#সেচ_দেওয়াঃ
লাউ ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। কাজেই সেচ নালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। লাউয়ের জমিতে কখনও সমস্ত জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না। শুধুমাত্র সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নিবে। প্রয়োজনে সেচ নালা হতে ছোট কোন পাত্র দিয়ে কিছু পানি গাছের গোড়ায় সেচে দেওয়া যায়। শুষ্ক মৌসুমে লাউ ফসলে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দিতে হয়।
#লাউ_সংগ্রহঃ
বীজ বপনের ৭০-৮০ দিন বয়স হলে লাউ সংগ্রহ করা যায়।
#ফলনঃ
হেক্টর প্রতি ৬০ টন পর্যন্ত লাউ পাওয়া যায় জাত ভেদে।
মোঃ ফরিদুল ইসলাম
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা
ব্লকঃ ভোটমারী, কালিগঞ্জ, লালমনিরহাট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন