সবাই লেখাটি পড়বেন প্লিজ....
এই সম্পূর্ণ লেখাটি Md. Abdul Malik Nobel ভাইয়ের লেখা।
@Md_monsur_ali ফেইসবুক থেকে নেওয়া,,,,,,,
লেখাটি ভালো লেগেছে তাই আপনাদের সাথে সিয়ার করছি।
গতকাল একজন মানুষ আমাদের দেশী একজন শিল্পীর আঁকা ছবির পোস্টে এই (ছবিতে দেখুন) প্রশ্নটি করেন।। প্রশ্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার ধারনা অনেকের মনেই এই প্রশ্নটি থাকতে পারে।। কমেন্টটি দেখে আমি তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি।। নিচে আমার কমেন্টে দেয়া দীর্ঘ উত্তরটি হুবহু তুলে ধরলাম। আশা করি, অনেকেরই জানা হবে।
"জনাব, আপনার প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আমার জ্ঞান অত্যন্ত অল্প, তবুও আমি আমার সল্প জ্ঞান থেকে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করছি।
প্রথম কথা হচ্ছে ছবি আঁকায় বা শিল্পে 'সেরা' বলতে কিছু নেই। কেউ কেউ প্রদর্শনী বা প্রতিযোগিতায় সেরা হতে পারেন, সেখানে অংশগ্রহণ করা অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে যদি বিচারকরা মনে করেন তাঁর সৃষ্টি শিল্পমানে শ্রেষ্ঠ তখন তাঁকে 'এই' প্রতিযোগিতার সেরা বলা যায়। তবে সেই সেরা মানে সেই সময়ের নয়, সবসময়ের জন্য তো অবশ্যই নয়।
জয়নুল আবেদিনকে আমরা পরম শ্রদ্ধা করে তাঁকে যা বলি তা হচ্ছে 'শিল্পাচার্য'। তিনি হচ্ছেন গুরুদেরও গুরু, মাস্টার অফ মাস্টার পেইন্টারস। যদি ব্যাকরণগত দিক থেকে আলোচনা করি, তবুও জয়নুল আবেদিন তখনকার সময়ে পৃথিবীর সেরা কয়েকজন ড্রইং মাস্টারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। আপনি তাঁর যে ছবিটি দিলেন এটিও অতি বিখ্যাত এক ছবি, নাম 'বিদ্রোহী' এখানে একটি গাভীর দড়ি ছিঁড়ে মুক্তি পাওয়ার তীব্র উন্মত্ততা প্রকাশ পেয়েছে, যা আসলে আমাদের সবার মনের গভীরে লুকায়িত স্বাধীনতার আকাঙ্খার শিল্পরূপ। ড্রইং এর দিক দিয়ে এটি অতি অবশ্যই একটি উঁচুমানের ড্রইং। এর রেখার গতিবেগ ও সাবলীলতা প্রমাণ করে তিনি কালি ও তুলিতে কি পরিমাণ দক্ষ ছিলেন। তিনি সস্তা খাকি কাগজে শুধু চাইনিজ কালো কালি আর তুলি দিয়ে এই ড্রইংগুলো করেছেন। হয়তো খুব চকচকে, অভিজাতও নয়, কিন্তু এর নিজস্ব এক সৌন্দর্য আছে।। আছে এক সুগভীর অর্থ, বার্তা ( মেসেজ)।
এখন আসি ব্যাকরণ এর বাইরে, একজন শিল্পীর কাজ শুধু ছবি আঁকায় দক্ষ হওয়া নয়। একজন শিল্পী সমাজ পরিবর্তনের অগ্রপথিক, অত্যন্ত সংবেদনশীল, সচেতন নাগরিক। শিল্পী জয়নুল আবেদিন জীবদ্দশায় অন্যান্য শিল্পীদের তুলনায় তুলনামূলক অনেক কম ছবি এঁকেছেন। কারন একসময় তিনি টের পেয়েছেন নিজে ছবি আঁকার চাইতে শিল্পী তৈরী করা বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশে নেই কোনো শিল্পী তৈরী করার প্রতিষ্ঠান, নেই পৃষ্ঠপোষকতা। তিনি একজন সফল শিল্প-সংগঠক। অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি আমাদের বাংলাদেশের শিল্পের অতি অনুর্বর জমিতে সোনা ফলিয়েছেন। আজ এই যে চারুকলা, আরো কত কত কি, এসবই তাঁর হাতে গড়া।। তিনি না থাকলে বা নেতৃত্ব না দিলে আমরা এসব হয়তো আরো অনেক অনেক দেরিতে পেতাম।। জয়নুল আবেদিন সারাজীবন মহৎ শিল্পের শিক্ষা দিয়েছেন, যে ছবি সুন্দরের দিকে নিয়ে যায়। আজকের প্রথিতযশা শিল্পী, যাদের নিয়ে আমরা এখন গর্ব করি, এরা সবই জয়নুল আবেদিনের কোনো না কোনোভাবে ছাত্র ছিলেন। একজন শিল্পী যখন নিজে ছবি এঁকে দক্ষ হন তখন আমরা তাঁকে মাস্টার বলি, কিন্তু একজন যখন আরো অনেক শিল্পী, আরো অনেক সুন্দর পথ তৈরি করে যান, আমরা তাঁকে মহামানব বলতে পারি। জয়নুল আবেদিন তাই আমাদের বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বযুগের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় শিল্পী।
এতো গেলো শিল্পীদের কথা, সাধারণ মানুষের জন্য তিনি কি করেছেন?
আমাদের দেশে ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো, তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ। চারিদিকে ভাতের জন্য হাহাকার। মনুষ্যসৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে মারা যায়। জয়নুল আবেদিন তখন উনত্রিশ বছরের যুবক, তিনি মানুষের দুর্দশায় ব্যথিত হয়ে তাঁদের স্কেচ করা শুরু করলেন। চিত্রে রাখলেন মানবতার ভয়াবহ বিপর্যয়ের দলিল। সেই একেকটা চিত্রগুলো হলো দুর্ভিক্ষ নিয়ে লেখা বিশাল বিশাল প্রতিবেদন, প্রবন্ধের থেকেও বেশি শক্তিশালী। সারা বিশ্বের মানুষকে নাড়া দিয়েছিলো সেই চিত্রকর্মগুলো। এই চিত্রকর্মগুলোর প্রদর্শিত হওয়ার পর নানাদিক থেকে দুর্ভিক্ষপীড়িত অসহায় মানুষের জন্য বিপুল পরিমাণ ত্রাণ আসতে শুরু করে। যা শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে সেই মহৎ শিল্পীকে নিয়ে।।
সব শেষে বলি, শিল্পীকে তাঁর একটা ছবি অথবা সব ছবি দিয়েও বিচার করা যায় না। শিল্পীকে বিচার করতে হয় তাঁর পুরো জীবন দিয়ে। ভালো ছবি আঁকা একটা সাধারণ দক্ষতা, দীর্ঘদিন অনুশীলনের ফলে একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ভালো আঁকতে শিখে যান, এতে কোনোই মহত্ত্ব নেই। শিল্প ভিন্ন ব্যাপার।। এটা মানবমনীষার শ্রেষ্ঠ উপহার। আপনি পিকাসোর ছবি দেখলে নিশ্চিত বলবেন, "আরেহ এতো বাচ্চাদের মত আঁকা"।। কিন্তু একটা 'গোয়ের্নিকা'র যে কি পরিমাণ শক্তি, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।। পিকাসোর আঁকা 'গোয়ের্নিকা' সারা বিশ্বের জন্য যুদ্ধবিরোধী শান্তির প্রতীক।৷ পিকাসোর চেয়ে ভালো আঁকা সহজ, কিন্তু তাঁর অনুভুতির চেয়ে বড় হওয়া সহজ নয়।
জয়নুল আবেদিন বিশাল বরফের চাঁই (Iceberg) এর মত, বাইরে যা অল্প একটু দেখা যায়, বিশাল অংশ আমাদের চোখের আড়ালে পানির নিচে থেকে যায়।।
জয়নুল আবেদিন সূর্যের মত, চোখ ঢেকে ফেললেও যাকে আড়াল করা যায় না।
জয়নুল আবেদিন আমাদের কাছে আকাশের মত, কোনোভাবেই তাঁর বাইরে যাওয়া যায় না...... "
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন