এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

ছোটগল্প  সন্দেহ ফেইসবুক থেকে নেওয়া  

 ছোটগল্প 

সন্দেহ 


ঢালু পথটা এঁকেবেঁকে শেষ হয়ে যে ঝোপঝাড় ঘেরা বাঁশবনে গিয়ে মিশেছে তার একেবারে শেষ মাথাতেই কুতুব আলীর একহারা মাটির ঘর। এদিকটাতে লোক সমাগম বিশেষ একটা নেই। বাঁশ বাগানটার খারাপ একটা গল্প আছে। এখানে নাকি দুষ্ট জীনের আনাগোনা আছে। লোকে এই পথ তাই বেশি একটা মাড়ায় না। নেহায়েত প্রয়োজন না পড়লে রাত বিরেতে তো একেবারেই না। তবে কুতুব আলীর ঘরে দিনে দুপুরে যেসব গল্প গাঁথা চলে তাতে তার বাড়ির চারধারে লোকজনের বিশেষ একটা আকাল পরে না। প্রায় সারা দিনই তার ঘরের আশেপাশে উৎসুক দর্শকের ভীড় বাট্টা লেগেই থাকে।

কুতুব আলী পেশায় ভ্যান চালক। বয়স চল্লিশের বেশি নয়। গাট্টাগোট্টা শরীর। শরীরের সাথে মানানসই একটা যথেষ্ট মোটা মাথা। গলার স্বর রীতিমতো বাঁজখাই। চেঁচালে আশেপাশে গরু ছাগলও ঘাস খাওয়া বন্ধ করে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বিরাট মুখে কুতকুতে ছোট ছোট দুইটা চোখ। চোখ দুটো ভয়ানক অনুসন্ধানী। সেই অনুসন্ধানী চোখে সে সারাক্ষণই তার বউএর চলন বলনের খুঁত খুঁজে বেড়ায়। কাজের প্রয়োজনে যতোটুকু সময় ঘরের বাইরে থাকতে হয়, তার বেশি এতোটুকু সময়ও সে বাইরে কাটায় না। সোজা ঘরে চলে আসে। ঘরে সুন্দরী তরুণী বউ। একা একা ভুতুড়ে পরিবেশে বেশিক্ষণ থাকলে জিন ভূতের আছর পরাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। মানুষের তো আছেই।

স্ত্রী কমলা, কুতুব আলীর সম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের মানুষ। সে ঘরে আছে কী নেই লোকে তা জানতেও পারে না। ছায়ার মতো নিঃশব্দে পা টিপে টিপে চলাচল করে। দিন রাত কখনোই তার গলার স্বর কেউ শুনতেও পায় না। আকার আকৃতিতেও সে একেবারে ছোট খাট। কুতুব আলীর পাশে দাঁড়ালে তাকে একরকম খুঁজেই পাওয়া যায় না। তবে ছোটখাট হলেও তার মুখের গড়নটি ভারী সুন্দর। মায়াকাড়া মুখে বড় বড় দুটো কথা বলা চোখ।

লোকে এই দুজনের অসম জোড়া নিয়ে কম হাসাহাসি করে না। তাদের এই জোড়কে অনেকে উপমা হিসেবেও ব্যবহার করে। কখনো কোনো ব্যাপারে একটার সাথে আরেকটা বেমানান কিছু মনে হলেই সবাই হেসে বলে,

‘আরে এইডা তো কুতুব-কমলা’র জোড় হইছে!’

কুতুব আলী বউকে ভয়ানক সন্দেহ করে। তার মনে ঘোর বদ্ধমূল ধারণা একেবারে বাসা বেঁধে বসেছে যে, কমলার নিশ্চয়ই কারো সাথে ইটিসপিটিস আছে। একে তো সে সারাদিন ঘরে থাকে না, তার উপরে সে তার বউকে রাখে একরকম দৌঁড়ের উপর। মেয়েমানুষকে মাথায় তুললে পরে মাশুল চুকাতে হয়। তাই সবসময় টাইটে রাখতে হয়। কিন্তু এতো হম্বি তম্বি সত্তেও বউ মুখ খোলে না। এই ব্যাপারটা কুতুব আলীর কাছে মোটেও স্বাভাবিক মনে হয় না। মেয়ে মানুষের তো এমনিতে এতো মুখ বন্ধ রাখার কথা নয়! বউ ভেতরে ভেতরে নতুন নাগর জুটিয়েছে কী না কে জানে!

অনেক ভাবনা চিন্তা করে কুতুব আলী এক ফন্দি এঁটেছে। বউ যদি ভেতরে ভেতরে দুই নম্বরী কিছু করেও থাকে, লোকলজ্জার ভয়ে তো আর স্বামীর ঘর ছাড়তে পারবে না। তাই স্বামীর ঘর ছাড়ার ভয় দেখিয়েই তাকে সোজা রাখতে হবে। এভারেই এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।

সেদিনও যথারীতি সে দুপুরের পরে পরেই খেপ শেষ করে বাসায় চলে এসেছে। কমলা তখন সবেমাত্র রান্না বান্না শেষ করে গোসলে ঢুকেছে। এতো দেরি করে গোসলে যাওয়া নিয়েও কুতুব আলীর জোর সন্দেহ লাগে। করে তো মোটে দুজন মানুষের রান্না। এতো সময় লাগে কেন? ঘরে কেউ আসে নাকি তার অনুপস্থিতিতে?

ঘরে ঢুকেই কুতুব আলী জোরে জোরে চেঁচাতে লাগলো,

‘কমলা...ও নবাবের বিটি কমলা! সারাদিন বাদে এতোক্ষণে তোর সময় হইছে গা ধোয়ার! এত্ত বেলা অব্দি বইয়া বইয়া কোন নাঙ্গরের লগে সোহাগ করতাছিলি? তোর শয়তানী বুঝি না আমি! তুই আইজই বেবাক কথা আমারে খুইলা কবি নাইলে...নাইলে আমি তোরে তালাক দিমু।‘

কমলা উঠোনের টিউবওয়েলের ঘের দেওয়া আবরণে সবে গোসল করার জন্য শাড়ি জামা আলগা করছে। স্বামীর পায়ের আওয়াজ শুনেই সে সচকিত হয়ে উঠেছিল। তাড়াতাড়ি গায়ে পানি ঢালতে যাবে, এমন সময় এই অনাহুত বাক্যবাণ। আজ স্বামীর মুখে তালাকের কথা শুনে কমলার মুখে আর রা সরলো না। এমনিতে যা বলে বলুক, এই ‘তালাক’ শব্দ তার স্বামী কখনো মুখে আনে না। আজ এটা সে কী বললো!

কমলা আসলে পেরে উঠে না। তার শরীরে কেমন যেন কুলোয় না। ছোটখাট শরীরে সে ঠিক দৌঁড় ঝাপ করে কাজ কর্ম করতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই দূর্বল ধাঁচ তার, বড় কোনো অসুখ বিসুখ না থাকলেও শরীর খুব একটা সুস্থ নীরোগ নয়। কেমন যেন আলস্য জড়িয়ে আসে সবসময়।

কুতুব আলী বেরিয়ে যাওয়ার পরে সে কিছুক্ষণ পরে পরে ঘুমায়। মাথা কেমন যেন ঘুরতে থাকে সবসময়। স্বামীর ভয়ে এমনিতেই সে সারাদিন তটস্থ থাকে। রাতেও যে আরাম করে একটু ঘুমাবে তার উপায় নাই। যখন তখন ঘুমের মধ্যেই স্বামী আওয়াজ দেয়। কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়ে স্বামীর প্রয়োজন মেটাতে হয়। সকালে উঠে আর সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আজ তিন বছর হলো তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে থেকেই এই ঘটনা চলে আসছে।

কমলা শাড়ি কাপড় গুছিয়ে নিয়ে গোসল না সেরেই কলপাড় থেকে বের হয়ে আসে। কুতুব আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার গলা শুকিয়ে গেল। সে যেন আজ মহা উৎসাহে ঝগড়ায় নেমেছে। চোখে মুখে ঝগড়ার আনন্দ যেন ঠিকরে বেরুচ্ছে। কমলার শুকনো মুখ দেখে সে আরো উদ্দীপনার সাথে শুরু করলো,

‘কী রে! মুখে রা নাই যে! সারাদিনে দুইপদ রান্না কইরা গোসল করার সময় পাস না! প্রতিদিন আমি যখন আসি, তখনি তোর গোসল করার চিন্তা মাথায় আসে! ঠিক কইরা ক, এর আসল কারন কী?’

কমলা চুপ। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই কোনো। স্বামী বলতেই চায়, শুনতে নয়।

‘তুই যদি আমারে ঠিক ঠিক ভাঙ্গাইয়া না কস, রোজ রোজ তোর দেরি কেন হয়...তাইলে আমি তোরে এক তালাক...দুই তালাক...তিন তালাক...বাইন তালাক দিয়া দিমু। এই আমার শেষ কথা!’

কমলার অন্তরাত্মা শুকিয়ে যায়। স্বামী আজ এ কোন আগুন নিয়ে খেলতে শুরু করলো?

খেতে বসেও সেই খ্যাঁচখ্যাঁচানি।

‘এইটার মইধ্যে নুন কম কেন...ভাত কেন জাউ...তরকারীর আলু কেন গইলা গেছে...’ কুতুব আলী বিরামহীন মুখের মেশিন চালিয়ে যেতে থাকে।

পরেরদিন কমলা আর গড়িমসি করে না। শরীরের আলস্যকে টেনে সরিয়ে রেখে সে তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ করে নেয়। দুপুর গড়ানোর আগেই তার রান্নাবান্না, গোসল সব সারা হয়। ঘরের মধ্যে পাটি পেতে ভাত তরকারী থালা বাসন সুন্দর মতো গুছিয়ে নিয়ে সে বসে বসে ঝিমায়। কুতুব আলীর খাওয়া না হলে সে খায় না কখনো। ঝিমুনি গাঢ় হতেই আবার সে সোজা হয়ে বসে। ঘুমিয়ে পরা যাবে না মোটেও।

বাইরে উঠোনে এসে তার মনে হয়, লাউ গাছের ডগাটা বড় হয়েছে। একটু মাচান দেওয়া দরকার। ভর দুপুর। মাথায় আধহাত ঘোমটা টেনে কমলা বাঁশঝাড়ে ঢোকে কঞ্চি জোগাড় করতে। চিকন চিকন ক’টা কঞ্চি খুঁজে বের করে। হাত দিয়ে মটকিয়ে ভাঙতে চায়। ভাঙতে পারে না।

দূরে বাঁশঝাড়ের এক কোনায় বসে মন্টু পাগলা দাঁত দিয়ে কঞ্চি কাটছিল। মাথার চুল উশকো খুশকো, পরনে আধ ময়লা লুঙ্গি...ছেড়া শার্ট। মুখ দেখে মনে হয় প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। হাতে একটা ছোট দা। সব সময় হাতে রেখে দেয়। এমনিতে মন্টু মিয়া বেজায় শান্ত, সাত চড়ে রা করে না। গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চারা কতো ঢিল পাটকেল ছুড়ে। মন্টু মিয়া কিচ্ছুটি বলে না। মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ কাউকে কাউকে দেখে সে দা নিয়ে তেড়ে আসে। এছাড়া তার মধ্যে পাগলামীর আর কোনো লক্ষণ নেই।

তার তিনকূলে কেউ নেই। একমাত্র ছোট বোনের হঠাৎ ম্যালেরিয়া জ্বরে মৃত্যু হয়। বোনটি ছিল তার বড় আদরের। বোনের মৃত্যুর পরে থেকেই সে এমন আউলা হয়ে দিন কাটায়। কেউ দুটো খেতে দিলে খায়, নয়তো উপোস দেয়।

কমলা টানাটানি করেও যখন কঞ্চি কাটতে পারছিলো না, তখনই হঠাৎ মণ্টু মিয়া এসে সামনে দাঁড়ায়। হাতে উঁচিয়ে রাখা দা। এই বেশে তাকে দেখে কমলার প্রায় ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড় হয়। চোখ উল্টানি দিয়ে সে পড়েই যেতো। মণ্টু মিয়া কমলাকে লক্ষ্য না করেই ফটফট করে কঞ্চিগুলো কেটে মাটিতে ফেলে রাখে। সেটা দেখে কমলা একটু আশ্বস্ত হয়। হঠাৎ পেছন থেকে হুঙ্কার শুনে কমলা আর মণ্টু মিয়া দুজনেই একসাথে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।

‘ও আইচ্ছা! শেষমেষ কাউরে না পাইয়া এই পাগলা রে নাগর বানাইছোস! ছ্যা ছ্যা ছ্যা...শয়তান মা...তর পেটে পেটে এই হারামি! আইজ তরে আমি এখখুনি তালাক দিতাছি ...’

কমলা গিয়ে কুতুব আলীর পা জড়িয়ে ধরে। কুতুব আলী এক ঝটকায় পা সরিয়ে নিতে নিতে বলে,

নষ্টা মা..., তোরে আমি আইজ থেইকা হারাম কইরা দিলাম। তুই আর আমার ঘরে আইবার পারবি না। এই দিলাম তোরে আমি তালাক। এক তালাক......’

শুনতে শুনতে মাথা ঘুরে কমলা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এদিকে হৈ-হট্টগোলে আশেপাশের সবাই ছুটে এসে নিজের কানে শুনে যায় কুতুব আলী কমলাকে গুনে গুনে তিন তালাক দিয়েছে।

কমলাকে পাড়া প্রতিবেশিরা নিয়ে এসে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দেয়। মাথায় পানি ঢেলে তার চেতনা ফিরিয়ে আনা হয়। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চেতনা ফিরতেই প্রথমেই তার মনে পড়েছে, স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে। সে এখন আর তার স্বামীর ঘরে যেতে পারবে না। সে একা না, অনেকেই এর সাক্ষী। কমলার বাবা-মা কেউ নেই। এক ভাই আছে। বোনকে বিয়ে দিয়ে সে তার দায়িত্ব শেষ করেছে। তিন বছর তার সাথে কমলার কোনো যোগাযোগ নেই। ভাইয়ের বউ তার প্রাক্তন স্বামীর চেয়ে কিছু কম মুখরা নয়। সেখানে ফিরে যাবার কথা কমলা ভাবতেও পারে না। তাহলে সে কই যাবে?

গ্রামে প্রতিবেশির বাড়িতেই জরুরি সভা বসে। মসজিদের ইমাম সাহেবও আসেন। কুতুব আলীকে খবর দিয়ে আনা হয়েছে। সে ঘাড় গোঁজ করে বসেছিল। কয়েকদফা সে আপত্তি উঠাতে চেয়েছিল যে, সে তালাক দেয় নাই...দিতে চেয়েছিল কেবল। তার আপত্তি ধোপে টেকেনি। অনেকেই তার তালাক ঘোষণার সাক্ষী। মণ্টু মিয়াকেও ধরে আনা হয়েছে। সে তো রাজ সাক্ষী। কুতুব আলীর গরম কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। সে বুঝতে পেরেছে মাথা গরম করে কাজটা সে ঠিক করে নাই। তবুও গায়ের জোরে সে বলে ওঠে,

‘মোলবি সাব, হিল্লা বিয়া পড়াইয়া দেন। আমার বউ আমি কাল বাড়িত নিয়া যামু।‘

গ্রামের ইমাম হলেও ইমাম সাহেব ধর্মীয় পড়াশুনা ভালোই জানতেন। তিনি মাথা নেড়ে বললেন,

‘শোনো কুতুব আলী, ধর্ম নিয়া খেল তামাশা করবা না। তুমি যা করছো তা বড়োই নিন্দনীয়। এখন আরেকখান ভুল কাজ করবার যাইতাছো। তোমার বউ যদি আরেকবার বিয়া করতে রাজি থাকে, তারে বিয়া দেওন হইবো। কিন্তু জোর কইরা সেই বিয়া ভাঙ্গান যাইবো না। যার লগে বিয়া হইবো হেই যদি আবার তারে তালাক দেয় কেবলমাত্র তাইলেই আবার তারে তুমি বিয়া করবার পারবা। বুঝলা কিছু?’

কুতুব আলী ইমাম সাহেবের কথা শুনে বেকুব হয়ে বসে থাকে। এই টা ইমাম সাহেব কী বলেন? তার বউ আর তার ঘর করবে না? সে করলো টা কী?

কমলার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, সে আবার বিয়ে করবে কী না। কমলার চোখ বেয়ে পানি গড়াতে থাকে। এই দুঃসময়ে মায়ের কথা খুব মনে পড়ে তার। সে যদি আজ তার মায়ের সাথে থাকতে পারতো!

তার মৌনতাকে সম্মতি বলে ধরে নেওয়া হয়। তবু অভিভাবক হিসেবে তার ভাইয়ের একটা সম্মতির প্রয়োজন আছে। সেটা নিয়ে নিতে হবে। কমলাকে জিজ্ঞেস করা হয় সে কাউকে বিয়ে করতে চায় কী না।

মাথা হেঁট হয়ে আসে কমলার। এমন দিনও তাকে দেখতে হলো!

একসময় অনেক কষ্টে হেঁট মাথাকে উঁচু করে সে সোজা হয়ে বসে। মাথার ঘোমটা ঈষৎ সরিয়ে সে দূরে বসিয়ে থাকা মণ্টু মিয়াকে দেখিয়ে দিয়ে বলে, মণ্টু মিয়া রাজি থাকলে সে তাকে বিয়ে করবে।

কুতুব আলী বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকে। তার মাথার ভেতরটা ভনভন করে ঘুরতে থাকে।

মণ্টু মিয়ার সাথে দু’দিন বাদেই কমলার বিয়ে হয়ে যায়।

কমলার ভাই এসে তার সম্মতি জানিয়ে যায়। সকালে এসে দুপুরের আগেই সে চলে যায়। বোনের এই ভাগ্য বিপর্যয়ে একটিবারের জন্যও তার মুখ দিয়ে কোনো সান্তনার কথা আসে না। শক্ত মুখ করে এসে শক্ত মুখেই সে ফিরে যায়। বোন নদীতে পরলো নাকি সমূদ্রে সেটা দেখা আর তার দায়িত্ব নয়।

কুতুব আলীর মহা দূর্দশার দিন শুরু হয়। তার রান্না বাড়ি করে দেবার কেউ নেই, ঘর দোর আগলে রাখার কেউ নেই। তার নিত্য প্রয়োজন মেটানোর কেউ নেই...সর্বোপরি তার আগুনের হল্কার মতো রাগ ঠান্ডা করার মতো কোনো পানির পাত্র নেই। কমলা ছিল তার পানির পাত্র। সে যতো আগুন ছাড়তো, কমলা ততো তাতে পানি ঢালতো।

এদিকে মন্টু মিয়া এখন পুরোপুরি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ। সে এখন নিয়মিত গোসল করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। টুকটাক বর্গার কাজ করে আয় রোজগারও করে ইদানিং। তাছাড়া কমলা ফুলঝাড়ু, বাঁশের জিনিসপাতি বানাতে পারে। সেগুলো সে হাটবারে শহরে বেচতে যায়। দুজন মানুষের পেট ভালোই চলে যায়।

কুতুব আলী তার সন্দেহের বিষ মণ্টু মিয়ার মনে ঢোকাতে চায়। একবার যদি ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তবেই কেল্লা ফতে। মাঝে মাঝে সে মণ্টু মিয়াকে কান ভাঙানি দেয়,

‘কমলার কইলাম স্বভাব চরিত্র ভালা না। দেইখা শুইনা না রাখলে একদিন দেখবা পক্ষী উড়াল দিছে!’

মণ্টু মিয়া কিছু বলে না। চুপচাপ শোনে। একদিন কুতুব আলীকে এগিয়ে আসতে দেখে সে আস্তে করে কোমড়ের কোচড় থেকে তার দা টাকে বের করে আনে। অনেকদিন এটাকে সে ঢুকিয়ে রেখেছিল। তারপরে সোজা কুতুব আলীর সামনে বের করে রক্তচক্ষু নিয়ে বলে,

‘আরেকবার যদি এইদিকে তোরে দেখছি...তাইলে এইটা দেখছস? এক কোপে কল্লা কাইটা ...’

কুতুব আলী সেই যে দৌঁড় লাগায় ভুলেও আর কোনোদিন ওমুখো হয় না।


(ছবি- ইন্টারনেট)


ফাহ্‌মিদা_বারী

ফেইসবুক থেকে নেওয়া 

কোন মন্তব্য নেই:

বাত ব্যথা হলেই হোমিও ঔষধের  আবশ্যকতা হয়ে পরে,— গেঁটে বাত (Gout)। ---

 🎋বাত ব্যথা হলেই হোমিও ঔষধের  আবশ্যকতা হয়ে পরে,— গেঁটে বাত (Gout)। --- 🔖 Ledum Palustre 30 🌹 প্রধান লক্ষণ: ▪ গেঁটে বাতের ব্যথা, যা নিচ থে...