" ছোট ছোট টিলার বুক চিরে তৈরী করা ইরানের আশ্চর্য গ্রাম,কান্দোভান " The Laleh Kandovan
**********************************************
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন দেশের মধ্যে এমনই কিছু গ্রাম রয়েছে যা সত্যিই বেশ অদ্ভুত। কোনোটা প্রাকৃতিক কারণে এবং কোনটা মনুষ্য সৃষ্ট কারণে সেই গ্রামগুলি অনন্য এক নজির স্থাপন করেছে। এরকমই আরও একটি গ্রামের অজানা তথ্য শেয়ার করব আপনাদের সঙ্গে।
কান্দোভান গ্রাম, ইরান ::--
প্রথমবার এই গ্রাম দেখার পর আপনি অবাক হবেন এটা এক রকম নিশ্চিত। চারিদিকে জমাট বাধা পাথরের স্থাপত্য গুলি দেখলে মনে হবে পাথররা আপনাকে বলছে শক্ত নিরেট প্রস্তর শহরে আপনাকে স্বাগত।
ইরানের পূর্ব আজারবাইজানের ওস্কু উপশহরের একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবহুল ও ঐতিহাসিক গ্রামের নাম কান্দোভান। তাব্রিজ শহর থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ওস্কু শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সাহান্দ পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি।
সাহান্দ পর্বতের চমৎকার আবহাওয়া এই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গ্রামটির শোভা আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের প্রস্তরময় বা পাথুরে গুহাময় তিনটি বিখ্যাত গ্রামের একটি হলো কান্দোভান। এ বিষয়টি কান্দোভানকে নজিরবিহীন সৌন্দর্যে ভূষিত করেছে। কান্দোভনের আরেকটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হলো এখানে মানুষজন ভালোভাবেই বসবাস করে অর্থাৎ এখানে জীবনের সকল আয়োজন রয়েছে।
ইরানের কান্দোভন পল্লীতে জীবনের সাড়া আছে সেই বহুকাল আগে থেকেই। পৃথিবী বিখ্যাত পুরাতাত্ত্বিকগণ এই গ্রামটিকে ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই মানব বাস উপযোগী ছিল বলে মনে করেন। এখানে রয়েছে বড় বড় টিলা। এসব টিলার কোনো কোনোটির উচ্চতা চল্লিশ মিটারের মতো।
এইসব সুউচ্চ টিলাগুলির বুক চিরে তৈরি করা হয়েছে বসতবাড়ি ,গোয়ালঘর, গুদাম এবং ছোটো ছোটো কামরা। আক্ষরিক অর্থে দেখতে খুবই সুন্দর এগুলো। আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থার পর্যটকগণ এই গ্রামটির পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখে এটিকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলোর তালিকাভুক্ত করেছেন।
কান্দোভানের গ্রামে মসজিদ, হাম্মাম, মাদ্রাসা, যাঁতাকলসহ সকল প্রয়োজনীয় সুবিধাদি রয়েছে। যে গুহাটিতে মসজিদ আছে ওই গুহাটি এখানকার সবচেয়ে বড় গুহা বা গহ্বর। প্রতিদিন প্রায় নিয়ম করে পাঁচবার নামাজ সম্পন্ন হয় এই মসজিদে।
কান্দোভান গ্রামে ইরানের শীতপ্রধান অন্যান্য পার্বত্য এলাকাগুলোর মতো কোথাও কোথাও মূল কক্ষেও ইরানের বিখ্যাত তন্দুর রুটি তৈরির চুল্লি রয়েছে। তবে কান্দোভানের অধিকাংশ পরিবার সাধারণত ঘরের বাইরেই তন্দুর তৈরির চুল্লি ব্যবহার করেন।
কান্দোভানের উপত্যকাগুলো বিশেষ করে উত্তর এবং দক্ষিণের শ্যামল উপত্যকাগুলো ইরানের পার্বত্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো আবহাওয়াময় অঞ্চল। এ উপত্যকায় মোটামুটি বড় একটা নদী এবং অনেকগুলো ঝর্ণাধারা বর্তমানে বহমান।
এই ঝর্ণাগুলো এই অঞ্চলে বসবাসকারী অধিবাসীদের বিশুদ্ধ জলের প্রধান উৎস। কান্দোভানের ঝর্নার খনিজ জলের কিছু ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা মনে করেন কিডনির পাথর দূর করার ক্ষেত্রে এই ঝর্ণার জল খুবই কার্যকর। কান্দোভানের আশেপাশের উপত্যকাগুলো পশুপালনের জন্যে খুবই উপযোগী। এই অঞ্চলের বেশ কিছু অধিবাসীদের অন্যতম উপজীবিকা এই পশুপালন।
উন্নত পৌষ্টিক গুনসম্পন্ন মধু এবং দুগ্ধজাত পণ্যাদির জন্যে কান্দোভানের রয়েছে বিশ্বজোড়া সুনাম। এখানকার স্থাপত্যগুলোও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটি বর্তমানে ইরানের একটি অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। দূর দূরান্তের পর্যটকরা ইরান ভ্রমণে এলে অবশ্যই এই স্থানটিকে রাখেন তাদের পর্যটনের তালিকায়। ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় কান্দোভানের নাম বহু আগেই স্থান পেয়েছে।
এই কান্দোভানের সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, পাথরে ঘেরা এই ছোট্ট গ্রামটিতে রয়েছে " The Laleh Kandovan " নামে পাথরের তৈরি একটি আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারা হোটেল। যে হোটেলটিতে ইরানে আগত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মীরা এবং এই স্থানে আগত বিভিন্ন উচ্চপদস্থ অফিসাররা বসবাস করে থাকেন।
#জ্ঞান৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন