সৌদি আরবে লাভা টিউবে
১০ হাজার বছরের মানুষ বসত
**********************
আগ্নেয়গিরির লাভা সমতলে এগোবার সময় বাইরের দিকটি ঠান্ডা ও কঠিন হবার পর ভেতরের লাভা বয়ে বের হয়ে গেলে ওখানে সুড়ঙ্গের মতো গুহা রেখে যেতে পারে। একেই বলা হয় লাভা টিউব। সাধারণভাবে এমন কোনো কোনো লাভা টিউব যে প্রাচীন মানুষের আশ্রয় হয়েছে , তার প্রমাণ মিলেছে। সম্প্রতি সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে উম জিরসান এলাকায় মরুর মধ্যে এমনি একটি লাভা টিউবে ১০ হাজার বছর ধরে দফায় দফায় মানুষ বাসের বিস্তারিত প্রমাণ তো মিলেছেই , ওই নানা সময়ে এই এলাকার পরিবেশ নিয়েও জানা গেছে। বাইরে খাঁ খাঁ রোদের মরুতে প্রাচীন জীবনের কোনো চিহ্ন না টিকলেও লাভা টিউবের ভেতর ঠান্ডা ও সুরক্ষিত পরিবেশে তার অভাব ছিলোনা। আবিষ্কারটি প্রকাশিত হয়েছে প্লস ওয়ান জার্নালের এবছরের এপ্রিল সংখ্যায় ম্যাথু স্টুয়ার্ট প্রমুখের নিবন্ধে। উম জিরসানের লাভা টিউবটি প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা , সব থেকে চওড়া জায়গায় ৪৫ মিটার প্রশস্ত , আর স্থান বিশেষে ৮-১২ মিটার উঁচু। মাঝে দুটি জায়গায় ধস থাকায় এটি তিন টুকরায় বিভক্ত , এছাড়া দুই প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ সম্ভব। ভেতরে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ আর খননে বিভিন্ন স্তর থেকে পাওয়া গেছে মানুষ ও প্রাণী হাড়ের ফসিল , পাথর দিয়ে তৈরি নানা হাতিয়ার, আর গুহার শিলায় প্রাচীন মানুষের খোদাই করা ছবি। হাড়গুলোর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের একটি ছিল আইসোটোপিক বিশ্লেষণ। কোনো জিনিসে এটমগুলো একাধিক নানা আইসোটোপের রূপে থাকতে পারে , নিউট্রন কণিকার সংখ্যায় প্রভেদ অনুযায়ী। এতে একই এটমের বিভিন্ন আইসোটোপ কী অনুপাতে আছে তার সঙ্গে এর জীবৎকালের পরিবেশের সম্পর্ক আছে বলে এই অনুপাত থেকে সেই প্রাচীন পরিবেশের খবর আমরা পাই। ওভাবে উদ্ভিদভোজী প্রাণীর হাড়ের আইসোটোপ অনুপাত থেকে বোঝা যাচ্ছে তারা তাজা ঘাস আর গুল্ম খেয়ে বড় হয়েছে। সাত হাজার বছরের মতো আগের দিকের মানুষের হাড়ে এই অনুপাত সে সময় প্রচুর মাংস-নির্ভর খাদ্য প্রমাণ করছে -তা পোষা পশু চারণের জীবিকার আলামতও দিচ্ছে । অর্থাৎ বন্য পশুকে গৃহপালিত করার কৃষি-কৌশলটি ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলে এসে গিয়েছিলো, অথবা অন্য জায়গা থেকে গৃহপালিত পশু আনা হয়েছিল। । আরো কয়েক হাজার বছর পরের মানুষের হাড়ে আইসোটোপ অনুপাত দেখাচ্ছে মানুষের খাবারে খেজুর, ডুমুর, ও গম যোগ হয়েছে। এতে এ সময় মরুদ্যান- নির্ভর চাষের কৃষি এখানে চালু হয়ে গেছে এমন সাক্ষ্যই মেলে। ফসিল হাড় ও অন্যান্য জিনিসগুলোর বয়স নির্ণয় করা হয়েছে খুব সুক্ষ সব বৈজ্ঞানিক উপায়ে। কার্বন ডেটিং এবং অপ্টিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়েছে যেখানে যেটি প্রযোজ্য। সাত হাজার আগের থেকে মানুষের হাড় পাওয়া গেছে - খুব সম্ভব বন্য হায়েনা ইত্যাদি এসে কবর ওলোটপালোট করার কারণে। পাথরের হাতিয়ার অবশ্য ১০ হাজার বছর আগে থেকেই পাওয়া গেছে। শিলার ওপরে আঁকা ছবিগুলোতে মানুষ এবং পোষা ভেড়া ,ছাগল, কুকুর, ও গরুর ছবিই প্রায় সব. বেশ সরলীকৃত করে আঁকা হলেও গরুর সোজা সামনের দিকে লম্বা শিং , ভেড়ার অনেকখানি ঘোরানো বাঁকা শিং ইত্যাদি অতিরঞ্জনের স্টাইলের মধ্য দিয়ে পশুর জাতগুলো ধরা পড়ছে। বিভিন্ন কালের হলেও মনে হচ্ছে একই রকম অবসিডিয়ান পাথরের ধারালো সরু অস্ত্র দিয়ে শিলার ওপর রেখা খোদাই করে ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে- বার্নিশ করা কালচে শিলার পিঠে কিছু রঙিন রেখা। ''' মানুষের পায়ের আওয়াজ'' বইটি দুনিয়ার নানা জায়গার নানা প্রত্ন-স্থানে আবিষ্কৃত প্রাগৈতিহাসিক মানুষের জীবনের এমনি উদ্ঘাটনগুলো সামনে এনেছে তাদের নানা গল্পে। নিচের পেইজ নাম সার্চ করে আমার লেখক পেইজে গিয়ে বইটি সেখানেই পড়তে বা অর্ডার করতে পারবেন। পেইজটি ফলো করে, পোস্টটি লাইক শেয়ার মন্তব্য করে যোগ দিলে খুশি হবো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন