পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন কিছু গ্রাম বা শহর রয়েছে যার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আজও আমাদের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। সুদুর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এমনই একটি শহরের বৈশিষ্ট্য আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব তা সত্যি অবাক করবে আপনাদের।
বিশ্বের যে কোনও আধুনিক শহরে আধুনিক জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সমস্ত ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকে। ব্যাঙ্ক, রেস্তোরাঁ, ভালো পরিবহণ সহ আরও বেশ কিছু পরিষেবা। এগুলি ছাড়া শহুরে জীবনের কথা ভাবাই যায় না।
অথচ এই পৃথিবীতেই এমন একটি শহর রয়েছে যেখানে ব্যাঙ্ক রেস্তোরাঁ ইত্যাদি আপনি কিছুই পাবেন না। নেই পরিবহণের বিশেষ সুবিধা নেই। নাগরিকদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে। রাস্তায় যান চলাচল যেমন দেখা যায় না, তেমনই স্থানীয় লোকজনও পথে বিশেষ বের হন না।
রাস্তায় মানুষের সংখ্যা এতটাই কম যে প্রাথমিকভাবে এই শহরকে দেখে জনশূন্য নগর বলেও ভ্রম হতে পারে। চলুন আজ আপনাদের জানিয়ে দিই বিশ্বের সেই শীতলতম শহরের কথা, যার পোশাকী নাম " লিটল ডিও মেড আইল্যান্ড "।
এই শহরের বসবাসকারী মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়,খাবার,জ্বালানি, ঔষধের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আসে নিকটবর্তী অন্য শহর থেকে এবং তাও শুধুমাত্র হেলিকপ্টারে করে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই হেলিকপ্টারে করে দরকারি জিনিসপত্র ডেলিভারি করা হয় এই শহরের মানুষদের জন্য।
অবশ্য শুধুমাত্র যে হেলিকপ্টারে করেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া হয় তাই নয় কখনও আবার নৌ-যানেও করেও পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। এত সমস্যা থাকলেও এখানে চালু রয়েছে নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা। এখানে শুধুমাত্র একটি ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সিস্টেম আছে এবং তাও সেটি রয়েছে শহরের একমাত্র শিশুদের স্কুলে।
আমেরিকা এমনিতেই অত্যন্ত ঠান্ডা জায়গা। এখানকার তাপমাত্রা প্রায়ই মাইনাসে চলে যায়। কিন্তু এখানকার লিটল ডিও মেড আইল্যান্ডও কম নয়। এ কথা জানলে আপনারা অবাক হবেন এই স্থান থেকে রাশিয়ার দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। এই শহরের বিস্তৃতি মাত্র চার বর্গ কিলোমিটার। রাশিয়ার " বিগ ডায়োমেড দ্বীপ " এই শীতল শহরের একমাত্র নিকটবর্তী স্থান। এই দুটি দ্বীপের মধ্যে রয়েছে নীল সমুদ্র।
আমেরিকা এবং রাশিয়ার এই দুটি দ্বীপই আলাস্কার কাছে বেরিং উপসাগরের মাঝখানে অবস্থিত। জানলে অবাক হবেন যে লিটল ডিও মেড আইল্যান্ডের বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা মাত্র ৮০ জন। শীতের মরশুমে দুই দ্বীপের মাঝের জল পুরোপুরি জমে যায়, যার কারণে এটি নিজেই একটি বরফের সেতুতে পরিণত হয়ে যায়। আর ভালো ব্যাপার হল, এই সেতুর উপর দিয়ে মানুষ এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাতায়াতও করতে পারেন।
গ্রীষ্মকালে এই জায়গার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার আশেপাশে থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা নেমে দাঁড়ায় মাইনাস ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। এই কারণে এখানে অনেক বন্য এবং ভয়ঙ্কর শিকারী প্রানী দেখা যায়। এই জায়গায় ঘণ্টায় প্রায় ১৪৪ কিলোমিটার বেগে হিমশীতল বরফের বাতাস প্রবাহিত হয়।
১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে নির্মিত এই স্থানে প্রায় ২৫টি ভবন রয়েছে। এই সব ভবনগুলোর মধ্যে একটি স্কুল এবং একটি গ্রন্থাগারও রয়েছে। এই এলাকাটি খুবই পাথুরে এবং এই কারণে এখানে রাস্তা তৈরি হয়নি।
littlediomadeisland
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন