ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসঃ
ভারতের ইতিহাস বলতে মূলত খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে খ্রিষ্টীয় বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন -মধ্যযুগীয় ও প্রাক-আধুনিক কালের ইতিহাসকেই বোঝানো হয়। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় দশ লক্ষ(?) বছর আগে উক্ত ভূখণ্ডে প্রথম মানববসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়।
তবে ভারতের জ্ঞাত ইতিহাসের সূচনা হয় ৩৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সিন্ধু সভ্যতার উন্মেষ ও প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে। পরবর্তী হরপ্পা যুগের সময়কাল ২৬০০ – ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সূচনায় এই ব্রোঞ্জযুগীয় সভ্যতার পতন ঘটে। সূচনা হয় লৌহ-নির্ভর বৈদিক যুগের।
এই যুগেই সমগ্র গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে মহাজনপদ নামে পরিচিত ১৬টি প্রধান প্রধান রাজ্য-তথা-জনবসতির উত্থান ঘটে। এই জনপদগুলির অধিকাংশই রাজতান্ত্রিক হলেও এদের মধ্যে "লিচ্ছিবি" ছিল গণতান্ত্রিক। এই জনপদের মধ্যে অন্যতম ছিল মগধ।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে মগধে জন্মগ্রহণ করেন মহাবীর ও গৌতম বুদ্ধ; পরবর্তীকালে যাঁরা ভারতের জনসাধারণের মধ্যে শ্রমণ ধর্মদর্শন প্রচার করেন।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসঃ
দক্ষিণ এশিয়া
• প্রস্তর যুগ ৭০,০০০-৩৩০০ খ্রীষ্টপূর্ব
• মেহেরগড় ৭০০০-৩৩০০ খ্রীষ্টপূর্ব
• হরপ্পা ও মহেঞ্জদর সভ্যতা ৩৩০০-১৭০০খ্রীষ্টপূর্ব
• হরপ্পা সংস্কৃতি ১৭০০-১৩০০ খ্রীষ্টপূর্ব
. বৈদিক যুগ ১৫০০-৫০০ খ্রীষ্টপূর্ব
. লৌহ যুগ ১২০০-৩০০ খ্রীষ্টপূর্ব
• ষোড়শ মহাজনপদ ৭০০-৩০০ খ্রীষ্টপূর্ব
• মগধ সাম্রাজ্য ৫৪৫খ্রীষ্টপূর্ব
• মৌর্য সাম্রাজ্য ৩২১-১৮৪খ্রীষ্টপূর্ব
• মধ্যকালীন রাজ্যসমূহ ২৫০ খ্রীষ্টপূর্ব
• চোল সাম্রাজ্য ২৫০খ্রীষ্টপূর্ব
• সাতবাহন সাম্রাজ্য ২৩০খ্রীষ্টপূর্ব
• কুষাণ সাম্রাজ্য৬০-২৪০ খ্রীষ্টাব্দ
• বাকাটক সাম্রাজ্য ২৫০-৫০০ খ্রীষ্টাব্দ
• গুপ্ত সাম্রাজ্য ২৮০-৫৫০ খ্রীষ্টাব্দ
• পাল সাম্রাজ্য ৭৫০-১১৭৪ খ্রীষ্টাব্দ
• রাষ্ট্রকুট ৭৫৩-৯৮২
• ইসলামের ভারত বিজয় ৭১২
• সুলতানী আমল ১২০৬-১৫৯৬
• দিল্লি সালতানাত ১২০৬-১৫২৬
• দক্ষিণাত্য সালতানাত ১৪৯০-১৫৯৬
• হৈসল সাম্রাজ্য ১০৪০-১৩৪৬
• কাকতীয় সাম্রাজ্য ১০৮৩-১৩২৩
• আহমন সাম্রাজ্য ১২২৮-১৮২৬
. বিজয়নগর সাম্রাজ্য ১৩৩৬-১৬৪৬
. মুঘল সাম্রাজ্য ১৫২৬-১৮৫৮
. মারাঠা সাম্রাজ্য ১৬৭৪-১৮১৮
. শিখ রাষ্ট্র ১৭১৬-১৮৪৯
. শিখ সাম্রাজ্য ১৭৯৯-১৮৪৯
. ব্রিটিশ ভারত ১৮৫৮–১৯৪৭
. ভারত ভাগ ১৯৪৭
. স্বাধীন ভারত ১৯৪৭–বর্তমান
. জাতীয় ইতিহাসঃ
. বাংলাদেশ • ভুটান • ভারত
. মালদ্বীপ • নেপাল • পাকিস্তান • শ্রীলঙ্কা
. আঞ্চলিক ইতিহাস
. আসাম • বেলুচিস্তান • বঙ্গ
. হিমাচল প্রদেশ • উড়িষ্যা • পাকিস্তানের অঞ্চল সমূহ
. পাঞ্জাব • দক্ষিণ ভারত • তিব্বত
. বিশেষায়িত ইতিহাস
. টঙ্কন • রাজবংশ • অর্থনীতি ভারততত্ত্ব
• ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাস • সাহিত্য • নৌসেনা
• সেনা • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি • সময়রেখা
এই বাক্সটি: দেখুনসম্পাদনা
এই নিবন্ধটি ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্ববর্তী ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস-সম্পর্কিত। ১৯৪৭-পরবর্তী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস জানতে হলে দেখুন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস নিবন্ধটি।
এছাড়া পাকিস্তান বা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ইতিহাস জানতে হলে দেখুন যথাক্রমে পাকিস্তানের ইতিহাস ও বাংলাদেশের ইতিহাস। দক্ষিণ ভারত, অবিভক্ত বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস জানতে হলে দেখুন যথাক্রমে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস ও পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস।
অব্যবহিত পরবর্তীতেই একাধিক বৈদেশিক শাসনে আওতায় চলে আসে উত্তর-পূর্বের এই অঞ্চল। এগুলির মধ্যে ৫৪৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ প্রতিষ্ঠিত হখামনি পারসিক সাম্রাজ্য ৩২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ মহামতি আলেকজান্ডারের রাজত্বকাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া পাঞ্জাব ও গান্ধার অঞ্চলে ব্যাকট্রিয়ার প্রথম ডিমেট্রিয়াস কর্তৃক ১৮৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে স্থাপন করেন ইন্দো-গ্রিক রাজ্য। প্রথম মিনান্ডারের আমলে গ্রিকো-বৌদ্ধ যুগে এই রাজ্য বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির চরমে পৌঁছায়।
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে উপমহাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য সাধিত হয়। পরবর্তী দশ শতাব্দীকালে একাধিক ক্ষুদ্রকায় রাজ্য ভারতের বিভিন্ন অংশ শাসন করে। চতুর্থ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর ভারত পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয় এবং পরবর্তী প্রায় দুই শতাব্দীকাল গুপ্ত সাম্রাজ্যের যাবৎ এই ঐক্য বজায় থাকে। এই যুগটি ছিল হিন্দুধর্মসংস্কৃতির পুনর্জাগরণের কাল।
ভারতের ইতিহাসে এই যুগ "ভারতের সুবর্ণ যুগ" নামে অভিহিত । এই সময় ও পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতে রাজত্ব করেন চালুক্য, চোল, পল্লব ও পাণ্ড্য রাজন্যবর্গ। তাদের রাজত্বকাল দক্ষিণ ভারতের নিজস্ব এক সুবর্ণ যুগের জন্ম দেয়।
এই সময়ই ভারতীয় সভ্যতা, প্রশাসন, সংস্কৃতি তথা হিন্দু ও বৌদ্ধধর্ম এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ৭৭ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কেরলের সঙ্গে রোমান সাম্রাজ্যের সামুদ্রিক বাণিজ্যের কথাও জানা যায়।
৭১২ খ্রিষ্টাব্দে আরব সেনানায়ক মুহাম্মদ বিন কাশিম দক্ষিণ পাঞ্জাবের সিন্ধ ও উত্তর পাঞ্জাবের মুলতান অধিকার করে নিলে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান শাসনের সূচনা ঘটে।এই অভিযানের ফলে দশম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মধ্য এশিয়া থেকে সংগঠিত একাধিক অভিযানের ভিত্তিভূমি সজ্জিত করে।
এরই ফলস্রুতিতে ভারতীয় উপমহাদেশে দিল্লি সুলতানি ও মুঘল সাম্রাজ্যের মতো মুসলমানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। মুঘল শাসনে উপমহাদেশের প্রায় সমগ্র উত্তরাঞ্চলটি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
মুঘল শাসকরা ভারতে মধ্যপ্রাচ্যের শিল্প ও স্থাপত্যকলার প্রবর্তন ঘটান। মুঘলদের সমকালেই দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব পশ্চিম ভারতে বিজয়নগর সাম্রাজ্য, অহোম রাজ্য এবং বাংলা, মারাঠা সাম্রাজ্য ও একাধিক রাজপুত রাজ্যের মতো বেশ কিছু স্বাধীন রাজ্যের উন্মেষ ঘটে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ধীরে ধীরে মুঘলদের পতন শুরু হয়।
এর ফলে আফগান, বালুচ ও শিখরা উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়।অবশেষে ব্রিটিশরা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার উপরে নিজেদের শাসন কায়েম করে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ও পরবর্তী শতাব্দীতে ধীরে ধীরে ভারত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীনে চলে যায়। ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের নামে অভিহিত সিপাহী বিদ্রোহেরপ্রেক্ষিতে কোম্পানির শাসনে অসন্তুষ্ট ব্রিটিশ সরকার সরাসরি ভারতকে ব্রিটিশ রাজের প্রত্যক্ষ শাসনে নিয়ে আসেন।
এই সময়টি ছিল ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অবনমনের এক অধ্যায়। যদিও পাশ্চাত্য আধুনিক শিক্ষার প্রসার এই যুগেই বাংলার মাটিতে নবজাগরণের জন্ম দেয়।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দেশব্যাপী এক স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেয়। অবশেষে, ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ গ্রেট ব্রিটেনের অধীনতাপাশ ছিন্ন করে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়।
উপমহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমাংশের মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি নিয়ে পাকিস্তান ও অবশিষ্ট অঞ্চল ভারতীয় প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে আত্ম-প্রতিষ্ঠা করে।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ
বৈদিক ও বেদোত্তর যুগঃ
লিচ্ছবি রাজ্যের রাজধানী বৈশালী। লিচ্ছবি ছিল অরোয়াদের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক রাজ্য।
বৈদিক সংস্কৃতে মৌখিকভাবে রচিত হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আর্য সভ্যতাই ছিল বৈদিক যুগের ভিত্তি।
বেদ বিশ্বের প্রাচীনতম প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির অন্যতম। এই গ্রন্থ মেসোপটেমিয়া ও প্রাচীন মিশরের ধর্মগ্রন্থগুলির সমসাময়িক।
বৈদিক যুগের সময়কাল ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই সময়েই হিন্দুধর্ম ও প্রাচীন ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানের মূল ভিত্তিগুলি স্থাপিত হয়। গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সমগ্র উত্তর ভারতে বৈদিক সভ্যতাকে ছড়িয়ে দেয় আর্যরা।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইন্দো-আর্যভাষী উপজাতিগুলির অনুপ্রবেশের ফলে প্রাগৈতিহাসিক পরবর্তী হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটে এবং বিদ্যমান স্থানীয় সভ্যতার উপরেই স্থাপিত হয় বৈদিক সভ্যতা। স্থানীয় বাসিন্দারা আর্যদের কাছে দস্যু নামে পরিচিত হয়।
আদি বৈদিক সমাজ ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। ফলত এই যুগে পরবর্তী হরপ্পা সভ্যতার নগরায়ণের ধারণাটি পরিত্যক্ত হয়।ঋগ্বেদোত্তর যুগে, আর্য সমাজ অধিকতর কৃষিভিত্তিক হয়ে পড়ে এবং এই সময়েই সমাজে বর্ণাশ্রম প্রথার উদ্ভব ঘটে।
মনে করা হয়, হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ ছাড়াও সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের আদি সূত্রগুলি এই যুগেই নিহিত ছিল।
বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক খননের ফলে প্রাপ্ত মৃৎপাত্রগুলিতে আদি ইন্দো-আর্য সভ্যতার কিছু নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায়।
প্রাচীন ভারতের কুরু রাজ্যে, কৃষ্ণ ও রক্ত ধাতব ও চিত্রিত ধূসর ধাতব সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উত্তর-পশ্চিম ভারতে লৌহ যুগের সুচনা হয়।
এই সময়ে রচিত অথর্ববেদে প্রথম লৌহের উল্লেখ মেলে। উক্ত গ্রন্থে লৌহকে "শ্যাম অয়স" বা কালো ধাতু বলে চিহ্নিত করা হয়। চিত্রিত ধূসর ধাতব সভ্যতা উত্তর ভারতে ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
বৈদিক যুগেই ভারতে বৈশালীর মতো একাধিক গণরাজ্য স্থাপিত হয়। এগুলি খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে চতুর্থ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্তও স্থায়ী হয়েছিল।
এই যুগের পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাজ্যস্থাপন ও রাজ্যবিস্তারের সংগ্রাম শুরু হয়। এই রাজ্যগুলিই পরিচিত হয় মহাজনপদ নামে।
( সংগৃহীত )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন