এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪

আকিনজি" বর্তমান আধুনিক তুরস্কের সেনাবাহিনীর পরীক্ষিত সবচেয়ে শক্তিশালী মানববিহীন আকাশযান (ড্রোন)

 "আকিনজি" বর্তমান আধুনিক তুরস্কের সেনাবাহিনীর পরীক্ষিত সবচেয়ে শক্তিশালী মানববিহীন আকাশযান (ড্রোন)। আকিনজি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র পাইলটবিহীন আকাশযান যা আকাশ থেকে আকাশে, আকাশ থেকে ভূমিতে এবং আকাশ থেকে সাগরে (এন্টি শীপ মিসাইল বহনকারী ড্রোন) হামলা চালাতে সক্ষম। বিভিন্ন যুদ্ধে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন পাইলটবিহীন এই আকাশযান। তুরস্কের টেক জায়ান্ট বায়কার টেকনোলজিস তৈরি করছে শক্তিশালী এই টেকটিক্যাল পাইলটবিহীন আকাশযান (ড্রোন)।  কিন্তু কথা হচ্ছে কেন শক্তিশালী ড্রোনের নাম আকিনজি হলো? কে বা কারা ছিল এই আকিনজি? কি ছিল তার বা তাদের পরিচয়? 


আমরা আজকে আকিনজি সম্পর্কে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানতে চেষ্টা করব।


আকিনজি একটি তুর্কি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে - আক্রমণকারী। আকিনজি বাহিনী ছিলো উসমানী খেলাফতের এক নির্ভীক বাহিনীর নাম। তুর্কি সাহিত্যে যাদের বীরত্ব আর সাহসিকতা নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য কবিতা আর গল্প। বিভিন্ন তুর্কি গোষ্ঠির সমন্বয়ে গঠিত এই বাহিনী উসমানীয় সেনাবাহিনীর নিয়মিত অংশ ছিলো না। এরা ছিল উসমানীয় সেনাবাহিনীর অনিয়মিত লাইট ক্যাভালরি বা ঘোড় সওয়ারী যোদ্ধা। হালকা অস্ত্রে সজ্জিত এই অশ্বারোহী বাহিনীর ছিলো ক্রুসেডার টেমপ্লার আর নাইটদের জন্য যমদূতের মতো। উসমানীয় খিলাফতে কখনোই যোদ্ধার অভাব ছিল না, সামর্থ্যবানরা সবসময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে আমীরের নেতৃত্বে যুদ্ধ করার সুযোগ খুঁজতো। তাই এই বিপুল সংখ্যক মানুষগুলোকে রাষ্ট্রের উপকারের কাজে লাগাতে গঠন করা হয় আকিনজি বাহিনী।


আকিনজি বাহিনী উসমানীয় খিলাফতের নিয়মিত বাহিনী ছিল না। তারা ছিল উসমানীয় খিলাফতের "সীমান্তের আক্রমণকারী" বাহিনী। এরা শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করে গণিমতের অংশ লাভ করতো। আকিনজি বাহিনীকে তুলনা করা হতো "গমভর্তি মাঠে কাস্তের মত"। অর্থাৎ যুদ্ধের ময়দানে এরা এতটাই দুর্ধর্ষ হয়ে যেত যে "শত্রুরা এদের ভয়ে মাঠভর্তি গম হয়ে যেত, আর আকিনজি বাহিনী হয় যেত সেই গম কাটার ধারালো কাস্তে"। 


আকিনজি বাহিনী মিলি এট্যাক (হাড্ডাহাড্ডি লড়াই) ও তীরন্দাজীতে সিদ্ধহস্ত ছিল। যুদ্ধের ময়দানে যখন শত্রুরা এদের পিছু করত, তখন এরা চলন্ত ঘোড়া থেকে পিছন ফিরে তীর ছুঁড়তে পারতো। যুদ্ধক্ষেত্রে আকিনজি বাহিনী লাইট ক্যাভালরি হলেও প্রায়ই দেখা যেত তারা ক্ষিপ্রতায় ও ধ্বংসাত্মক আক্রমণে হেভি ক্যাভালরিকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক যুদ্ধে হেভি ক্যাভালরিকে আক্রমণে আসতেই হতো না। 


আকিনজি বাহিনীর ঘোড়াগুলোকে আলাদা করে ট্রেনিং ও ব্রিডিং করানো হতো। যার ফলে তাদের ঘোড়াগুলো ছিল অন্যান্য ঘোড়া থেকে আলাদা। আকিনজিদের ঘোড়াগুলোর ক্ষিপ্রতা হতো অনেক বেশি। আকিনজিরা যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতো কুড়াল, বল্লম, ঢাল, তলোয়ার, তীর ও ধনুক। এত অস্ত্র ব্যবহার করার কারণ হলো আকিনজিরা যুদ্ধক্ষেত্রে সবার আগে মিলি এট্যাক (হাড্ডাহাড্ডি লড়াই) করতো। উসমানীয় সাম্রাজ্যে কোন কোন যুদ্ধে হেভি ক্যাভালরি প্রয়োগই হতো না, কারণ আকিনজিরাই যথেষ্ট ছিল। উদাহরণ স্বরূপ ১৪৯৩ সালের "কারবাভার যুদ্ধ" এর কথা উল্লেখ করা যায়। 


" কারবাভার যুদ্ধ -

উসমানীয় খলিফা দ্বিতীয় বায়েজিদের আমলে ৯ সেপ্টেম্বর ১৪৯৩ সালে ক্রোয়েশিয়া সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর সাথে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো যখন ক্রোয়েশিয়া স্বেচ্ছায় হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত হয়। প্রাচীন ইতিহাসবিদরা এই যুদ্ধকে ক্রোয়েশীয় রাজ্যের প্রথম বিলুপ্তি হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কারভাবার এই মাঠটি ক্রোয়েশিয়ার লিকা অঞ্চলের একটি অংশ। উসমানী বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন বসনিয়ার সানজাক-বে (স্থানীয় গভর্নর ও সেনানায়ক) হাদিম ইয়াকুব পাশা। এবং ক্রোয়েশিয়ান সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার উচ্চপদস্থ সামরিক প্রশাসক এমেরিক ডেরেনচিন- যিনি রাজা ভ্লাদিসলাস দ্বিতীয় জাগিলোর অধীনে ছিলেন। ১৪৯৩ সালের গ্রীষ্মের শুরুতে, উসমানীয় সেনাবাহিনী ক্রোয়েশিয়ার মধ্য দিয়ে কার্নিওলা এবং স্টাইরিয়াতে অভিযান চালায়। উসমানীয় সেনাবাহিনী গোরিকার সংকীর্ণ পর্বতের গিরিপথ দিয়ে কারভাবার মাঠে প্রবেশ করেছিল। সেনাপতিদের সাথে একটি বৈঠকের পর, হাদিম ইয়াকুব পাশা প্রায় ৩ হাজার আকিনজি অশ্বারোহী সৈন্যকে কারভাবার মাঠের কাছে একটি জঙ্গলে শত্রুকে গোপনে আক্রমণের জন্য অ্যামবুশ স্থাপন করতে পাঠান। যদিও এটি ছিলো উন্মুক্ত সমভূমির যুদ্ধ। 


ওদিকে ক্রোয়েশিয়ান সেনাবাহিনীকে প্রাথমিকভাবে কারভাবার মাঠের পূর্ব অংশের ঢালে মোতায়েন করা হয়েছিল। ক্রোয়েশিয়ান সেনাবাহিনী তিনটি দলে বিভক্ত ছিল। প্রথমটি ফ্রাঞ্জো বেরিসলাভিচের নেতৃত্বে স্লাভোনিয়ার সৈন্যদের নিয়ে গঠিত, দ্বিতীয়টি ইভান ফ্রাঙ্কোপান সেটিনস্কির অধীনে ছিল, এবং তৃতীয়টি নিকোলা ষষ্ঠ ফ্রাঙ্কোপ্যান এবং বার্নার্ডিন ফ্রাঙ্কোপ্যানের নেতৃত্বে ছিল। ক্রোয়েশিয়ান পদাতিক এবং অশ্বারোহী বাহিনী তিনটি বিভাগেই সমানভাবে বিভক্ত করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার ছিলেন ব্যান এমেরিক ডেরেনচিন। উসমানীয় সেনাবাহিনীকেও তিনটি দলে বিন্যস্ত করা হয়েছিল। প্রথমটির পরিচালনায় ছিলেন বেক্রুশেভাকের গভর্নর ইসমাইল বে, দ্বিতীয়টি ছিলো উসকুপের সানজাক মেহমেদ বে’র নেতৃত্বে, আর মাঝখানের দলটি হাদিম ইয়াকুপ পাশার অধীনে ছিল। বসনিয়ার রাজা স্টিফেন থমাসের পুত্র ইশাক বে ক্রালোগলুও উসমানীয় খেলাফতের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। উসমানীয় সেনাপতির পরিকল্পনা ছিল ক্রোয়েশিয়ান বাহিনীকে আরও পশ্চিমে বনের পাশে নিয়ে যাওয়া যেখানে তারা একটি অ্যামবুশ স্থাপন করেছিল। ইসমাইলের ডান পাশের বাহিনী প্রথম আক্রমণ চালালে ক্রোয়েশিয়ান বাহিনী বাম দিকে এগিয়ে যায়। ক্রোয়েশিয়ান সেনাবাহিনী এরপর ঢাল ছেড়ে উসমানীয় সেনাদের দিকে ছুটে গেলে খোলা মাঠে যুদ্ধ শুরু হয়। 


যুদ্ধটি তলোয়ার দিয়ে হাতাহাতির পর্যায়ে হয়েছিল, তীর-ধনুক ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। উসমানীয় বাহিনী প্রথমে পিছু হঠে, এবং একটি পরিকল্পিত পশ্চাদপসরণ শুরু করে। যা ক্রোয়েশিয়ান সেনাবাহিনীকে তাড়া করার জন্য প্রলুব্ধ করে নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। কারভাবার মাঠের জঙ্গল এলাকায় অবস্থিত ৩,০০০ অশ্বারোহী আকিনজি কারভাবার নদী অতিক্রম করে এবং ক্রোয়েশিয়ান পেছন দিকে আক্রমণ চালায়। তারপরে হাদিম ইয়াকুপ পাশার মূল সেনাবাহিনী সম্মুখ আক্রমণ শুরু করে। একইভাবে ক্রোয়েশিয়ান সেনাবাহিনীকে সামনে, পেছন এবং ডান দিক থেকে আক্রমণ করা হয়েছিল। বার্নার্ডিন ফ্রাঙ্কোপানের ক্রোয়েশিয়ান বাহিনীর বাম অংশ তুর্কি হালকা অশ্বারোহী আকিনজি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেনি এবং পিছু হটতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়ান পদাতিক বাহিনীর অধিকাংশই ঘেরাও হয়ে যায় এবং পিছু হটার সুযোগও পায়নি। ক্রোয়েশিয়ান সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ পরাজয়ের সম্মুখীন হয় এবং শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক পুরুষই নিকটবর্তী দুর্গে ঘেরা শহর উদবিনায় নিরাপদে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। সকাল প্রায় ৯ টার দিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে বিকেলে শেষ হয়। ইতিহাসবিদ এইচ ই এফেন্দির মতে, যুদ্ধের একটি আশ্চর্য ঘটনা হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ান সেনাপতি ডেরেনচিন একজন আকিনজি সেনার সাথে মল্লযুদ্ধে নামেন, যিনি তাকে তার ঘোড়া থেকে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃসাহসী আকিনজি গেরিলা ডেরেনচিনের হাত ও গলায় দড়ি বেঁধে পাশার কাছে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। পাশা তখন ডেরেনচিনকে বেঁধে নিহত ও বন্দী ক্রোয়েশিয়ান সৈন্যদের পাশে হাটিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ডেরেনচিন বন্দী অবস্থায় মারা যান। তার ভাই এবং তার পুত্র পাভাও এই যুদ্ধে নিহত হন। নিকোলা ষষ্ঠ ফ্রাঙ্কোপান ট্রাজাকিকেও বন্দী করা হয়েছিল, কিন্তু মুক্তিপণ দিয়ে তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন। "


কোন এলাকায় যুদ্ধ শুরু হলে সেই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়তো। আর এই কাজে আকিনজিরা ছিল সিদ্ধহস্ত। কারণ আকিনজিরা‌ ছিল খুবই সতর্ক ও সচল। 


আকিনজিরা শত্রুর এলাকায় ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা করে দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারঙম ছিল। অনেক সময় শত্রু বাহিনীর সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য আকিনজিদের ব্যবহার করা হতো। আকিনজিরা হঠাৎ করে আক্রমণ করে শত্র বাহিনীর সরবরাহ ব্যবস্থা, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, ঔষধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা মাটির সাথে মিশিয়ে দিত। শত্রুর বাণিজ্যিক পথে আক্রমণ পরিচালনা করতেও দক্ষ ছিল আকিনজি বাহিনী। 


কিছু তুর্কি বংশোদ্ভূত যারা আকিনজি বাহিনীতে কাজ করেছিল তারা হলো - "মালকোশোগলু, তুরহানলি, ওমেরলি, এভ্রেনোসওগলু ও মিহালি "। 


বায়কার টেকনোলজিস মূলত উসমানীয় খিলাফত সমকালীন সময়ে তুর্কিদের শৌর্য বীর্যের পরিচয় সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তার সমরাস্ত্রের নাম ইতিহাস থেকে তুলে এনেছে। এই সকল নামের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে চায় উসমানীয় খিলাফতের ঐতিহ্য। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বটে।

কোন মন্তব্য নেই:

জানা প্রয়োজন গায়রত কী? *******************

 ★জানা প্রয়োজন গায়রত কী? ************************** প্রিয় নবীজীর সাহাবীরা তাদের স্ত্রী'র নাম পর্যন্ত পরপুরুষকে বলতো না। এটাই গায়রত।তথা-(...