'' মৃত্যু তোর হোক দূরে নিশীথে নির্জনে,
হোক সেই পথে যেথা সমুদ্রের তরঙ্গগর্জনে--
গৃহহীন পথিকেরই নৃত্যছন্দে নিত্যকাল বাজিতেছে ভেরী; ''
ফিরে দেখছি ৯৭ বছর আগে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৪ সালে বিদেশে অনেক জায়গা ভ্রমণের পর প্যারিসে এলবার্ট কাহ্নের অতিথিশালায় আসেন ১২ অক্টোবর ১৯২৪। এরপর মার্সেলি বন্দর থেকে ১৮ অক্টোবর এন্ডেস জাহাজে করে তিন সপ্তাহের ল্যাটিন আমেরিকার 'পেরু' র পথে রওয়ানা হন এবং আর্জেন্টিনার কাছে ইনফ্লুয়েঞ্জায় খুবই অসুস্থ হ'ন এবং এই অবস্থায় ৬ নভেম্বরে বুয়েন্স আয়ের্সে এসে পৌঁছান।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর উদার আতিথ্য ও কবির উপযুক্ত সেবাযত্নের ব্যবস্থায় কবিগুরু সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ওঠেন।----সে এক অন্য ইতিহাস, আজ আর সেকথা নয়।
পথে তিনি অনেক কবিতা লেখেন, যার মধ্যে স্পষ্টতঃই প্রকাশ পায় কবির অসুস্থতার পরোক্ষ আভাস। ৩ নভম্বরে' ১৯২৪ এ কবি লেখেন 'পূরবী' কাব্যগ্রন্থের দুটি কবিতা।কবিতা দু'টি ''দান'' ও ''মৃত্যুর আহ্বান'' নামে।আসুন,আজ কবিতা দুটিকে দেখে ও পড়ে এই সৃষ্টিকে স্মরণ করি।--
প্রথম কবিতা--
''দান''
' কাঁকনজোড়া এনে দিলেম যবে
ভেবেছিলেম হয়তো খুশি হবে।
তুলে তুমি নিলে হাতের 'পরে,
ঘুরিয়ে তুমি দেখলে ক্ষণেক-তরে,
পরেছিলে হয়তো গিয়ে ঘরে,
হয়তো বা তা রেখেছিলে খুলে।
এলে যেদিন বিদায় নেবার রাতে
কাঁকন-দুটি দেখি নাই তো হাতে,
হয়তো এলে ভুলে।
দেয় যে জনা কী দশা পায় তাকে।
দেওয়ার কথা কেনই মনে রাখে।
পাকা যে ফল পড়ল মাটির টানে
শাখা আবার চায় কি তাহার পানে।
বাতাসেতে উড়িয়ে-দেওয়া গানে
তারে কি আর স্মরণ করে পাখি।
দিতে যারা জানে এ সংসারে
এমন করেই তারা দিতে পারে
কিছু না রয় বাকি।
নিতে যারা জানে তারাই জানে,
বোঝে তারা মূল্যটি কোন্খানে।
তারাই জানে বুকের রত্নহারে
সেই মণিটি কজন দিতে পারে
হৃদয় দিয়ে দেখিতে হয় যারে --
যে পায় তারে পায় সে অবহেলে।
পাওয়ার মতন পাওয়া যারে কহে
সহজ বলেই সহজ তাহা নহে,
দৈবে তারে মেলে।
ভাবি যখন ভেবে না পাই তবে
দেবার মতো কী আছে এই ভবে।
কোন্ খনিতে কোন্ ধনভাণ্ডারে
সাগরতলে কিম্বা সাগরপারে
যক্ষরাজের লক্ষমণির হারে
যা আছে তা কিছুই তো নয় প্রিয়ে!
তাই তো বলি যা কিছু মোর দান
গ্রহণ করেই করবে মূল্যবান
আপন হৃদয় দিয়ে।'
আণ্ডেস জাহাজ, ৩ নভেম্বর, ১৯২৪
![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন