চাচায় চা চায় -
অভিনন্দন -
শুভ জন্মদিন
নকুল কুমার বিশ্বাস
----------------------------------------------------
সঙ্গীতাঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ নকুল কুমার বিশ্বাস।
তিনি একাধারে একজন কণ্ঠশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক এবং গীতিকার।
জন্ম ২ ডিসেম্বর ১৯৬৫ সালে মাদারীপুর জেলার দত্ত কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের এক সঙ্গীত পরিবারে।
পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে তার অবস্থান পাঁচ। পিতা মাতা প্রয়াত সুরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও শ্রীমতি মঙ্গলী দেবী।
নকুলের জীবন ট্রাজেডি
নকুলের জীবনে বড় ট্র্যাজেডি জন্মের ছয় বছর পরই মাকে হারানো। ১৯৭৫ সালে মেজভাই হীরালাল বিশ্বাসের হাত ধরে গোপালগঞ্জে আসেন। লক্ষ্য ছিল যাত্রাদল দীপালি অপেরায় শিশুশিল্পী হিসেবে একটা সুযোগ পাওয়া।
সুযোগ মিলল তাঁর
শিশু নকুল অডিশন কক্ষে ছোট্ট আঙুলের ডগা দিয়ে হারমোনিয়ামে সুর তুলে মিষ্টি কণ্ঠে শুনিয়ে গেলেন একের পর এক গান। সেদিন নকুলের গান শুনে অবাক বনেছিলেন উপস্থিত সবাই!
গানের শিক্ষক হিসেবে নকুল
মাদারীপুরের ওস্তাদ রণজিৎ দাইয়ের কাছে হারমোনিয়ামে রাগ সঙ্গীতের তালিম নেন নকুল। মাত্র ছয় মাসেই এটা আয়ত্ত করেন এবং প্রধান হারমোনিয়াম মাস্টার হিসেবে একটি স্কুলে শিক্ষক নির্বাচিত হন।
কলকাতায় গমন
গুরু আশু মিয়ার কাছে বিখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্করের গল্প শুনতেন।
মনে মনে ঠিক করলেন রবিশঙ্করের মতো বিখ্যাত হতে হবে। ১৯৮০ সালে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পকেটে মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে পাড়ি জমান কলকাতায়।
ছোট্ট নকুল কলকাতায় গিয়ে সুভাষ বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রখ্যাত সেতারবাদক ওস্তাদ মোস্তাক আলী খানের নাতি শিষ্য শ্রী রণজিৎ বিশ্বাসের কাছে যান। তাঁর কাছে কিছুদিন সেতার শেখেন। সেখান থেকে ২৮০ টাকা দিয়ে কিনে নেন একটি সেতার। এরপর ফিরে আসেন দেশে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
দেশে ফিরেই এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান, অভিনয়, নৃত্য দিয়ে মানুষের মন জয় করতে থাকেন।
১৯৮৩ সালে বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। আশ্রয় নেন ওস্তাদ আমানউল্লাহ খানের বাড়ির ভাঙা বারান্দায়। তাঁর কাছে কিছুদিন তালিমও নেন।
বেতারে চাকরি
সে বছরই তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের এক আসরে এককভাবে হারমোনিয়াম বাজানোর সুযোগ পান।
উপস্থিত সবাই তাঁর পরিবেশনায় মুগ্ধ হন। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁকে কেন্দ্রের ফান্ড থেকে এক হাজার টাকা পুরস্কারও দেন।
এরপর বেতারে চাকরি হয় তাঁর
কিন্তু চাকরিতে তাঁর মন বসল না। ১৯৮৬ সালে তিনি আবারও গ্রামের বাড়িতে চলে যান এসএসসি পরীক্ষা দিতে।
গীতিকার সুরকার নকুল
ওই সময় এক কবিয়ালের কিছু গান সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু কবিয়াল গান না দিলে অভিমান হয় তাঁর।
নিজেই লেখা শুরু করেন। সেই থেকে আজ অবধি অন্য কারো লেখা গান করেননি তিনি। এসএসসি পাস করে পরের বছর আবার আসেন ঢাকায়।
প্রথম অ্যালবাম
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এন্টারপ্রাইজের ব্যানারে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম 'ভাগবত পড়ে ভগবানকে পাইছোনি'।
অ্যালবামটি হিট হয়। একই সঙ্গে গান ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। ১৯৯৬ সালে 'ইত্যাদি'তে প্রচারিত হয় তাঁর গাওয়া 'দাদা বিয়া করলাম ক্যান' গানটি।
এই গানটি তাঁকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এরপর টানা দশ বছর তিনি ইত্যাদিতে জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে জীবনমুখী গান নিয়ে হাজির হয়েছেন।
কলকাতায় জনপ্রিয় নকুল
এর মধ্যে কলকাতার অডিও বাজারে লাগে নকুলের গানের ঢেউ। কলকাতার অডিও কোম্পানি জেএমডি থেকে ২০০১ সালে প্রকাশিত হয় নকুলের 'নদীয়ান নকুল' এবং ২০০৩ এএসডি অডিও কোম্পানির ব্যানারে প্রকাশিত হয় 'চাকরি নাই বুড়ো বাবার' নামে আরেকটি অ্যালবাম। ভারত-বাংলাদেশ মিলে এভাবে তাঁর প্রায় অর্ধশত অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
বিদেশ ভ্রমন
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গান নিয়ে গেছেন ভারত, হংকং, কাতার, চীন, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে। অনেক উপাধিও অর্জন করেছেন।
সংসার জীবন
স্ত্রী এবং দুই সন্তান পলক কুমার বিশ্বাস ও মেয়ে প্রত্যাশা বিশ্বাসকে নিয়ে নকুলের সুখের সংসার।
উল্লেখযোগ্য গান
তাঁর গানের মধ্যে 'চাচায় চা চায়', 'এই আমার পকেটে আছে', 'মানুষটা পাঁচ ফিট', 'হ্যালো হ্যালো মাই ডিয়ার', 'মাগো তুমি যেন না কাঁদো', 'পাঁচতলার ঐ চিলেকোঠায়', 'ভালো হইতে পয়সা লাগে না' ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।
ফেসবুক পরিবারের পক্ষে তাঁর জন্য রইল শুভ কামনা আজকের এই বিশেষ দিনটিতে।
-- মেসবা খান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন