এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বৌদির শিকল" ফেইসবুক থেকে নেওয়া

কলেজে পড়ি তখন। সেকেণ্ড ইয়ার। একদিন পল্টু হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে এসে বলল,


-ভাই একটা টিউশন খুঁজে দিতে হবে, ভীষণ দরকার।


পল্টু মানে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। দুজনের সাবজেক্ট আলাদা হওয়ার দরুণ দুজনে তখন আলাদা কলেজে পড়ছি।দেখা সাক্ষাৎ এমনিতেই কম হত। তবে পল্টুর টিউশান খুঁজে দিতে বলার কথা শুনে একটু অবাকই হলাম। বললাম,


-তুই পড়াবি?


বলল,


-নতুন প্রেম করছি। গার্লফ্রেন্ডের পিছনে খরচ তো আছেই। খরচ না করলে গার্লফ্রেন্ড থাকবে?


বললাম,


-ঠিকই তো, কত আর বাবার পকেট কাটবি?


-আরে ওই জন্যই তো তোকে বলা।


পল্টুর কথা রাখতে একটা টিউশান খুঁজে দিলাম ওকে। সাত'শ টাকা দেবে, কিন্তু সপ্তাহে ছ'দিন পড়াতে হবে। দেখলাম, পল্টু তাতেই রাজী হয়ে গেল। সাত'শ টাকা তো কম নয়‍ আর সে বাজারে। তবে পল্টু যে মেয়েটির সাথে প্রেম করত আমি মেয়েটিকে চিনতাম। আমাদের পাশের পাড়াতেই থাকত।শেষমেশ পল্টুর যে একটা হিল্লে করতে পেরেছে এটা জেনেই খুশিই হয়ে ছিলাম। যদিও প্রেম করা নিয়ে পল্টুর একটা আক্ষেপ ছিলই।


সে যাইহোক, মাস তিনেক কেটে গেছে। হঠাৎ একদিন দেখি পল্টুর গার্লফ্রেন্ড অন্য একটি ছেলের সাথে ঘুরছে। প্রথম দিন আমার সন্দেহ হয়নি। দু একদিন পর দেখি,ওই ছেলেটির সাথে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করছে মেয়েটি ,তাতেই সন্দেহটা বাড়ল। ভাবলাম এ কথা পল্টুকে জানাতেই হবে।


দিন তিনেক পর পল্টুর সাথে খেলার মাঠে দেখা। পল্টুকে ব্যাপারটা বলতেই,পল্টু একদম স্বাভাবিক ভাবেই বলল,


-আরে আমার তো ব্রেকাপ হয়ে গেছে।


-ব্রেকাপ মানে?


-আর বলিস না। তুই যে টিউশনিটা দেখে দিলি, ওটাই আমার কাল হল।


-কেন? তোর ভালোর জন্যই তো করলাম। মাস গেলে সাতশ টাক কি কম? এতেও হচ্ছিল না?


-আরে টাকাটা ব্যাপার নয় তো। সর্বনাশটি করল ওই বৌদি মানে আমার ওই ছাত্রের মা। ওনার খপ্পরে না পড়লে আমার গার্ল ফ্রেণ্ড পালাত না।


-মানে? পড়াতে গিয়ে বৌদির পাল্লায় পড়লি?


-দুঃখের কথা কী বলব আর। জানিস ঘরে শিকল তুলে দিয়ে আমাকে আটকে রাখত।


আটকে রাখতে শুনে আমার চোখ তো কপালে?


-আটকে রাখত মানে?


-ঘটনাটা তোকে না বললে বুঝবি না। আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার দেখা হত ওই বিকেলে। ও টিউশন থেকে বাড়ি ফিরত সাড়ে পাঁচটায়। আমি গিয়ে তখনই দেখা করতাম। পড়াতে গিয়েই সমস্যাটা তৈরি হল। চারটের সময় পড়াতে গিয়ে দেড় ঘণ্টা বা তার কম সময় পড়িয়ে চলে আসতাম গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করব বলে। ওই টুকু টাইম পড়াতাম এটা ওই ছাত্রের মা খেয়াল রাখত। তার ওপর বাচ্চাটি আবার বিশ বার উঠে বাইরে যেত। বলত,মাস্টারমশাই জল তেষ্টা পেয়েছে, মাস্টারমশাই টয়লেটে যাব, থুথু ফেলতে যাব, পায়খানা যাব এসব করত। আর এই সুয়োগটাকে কাজে লাগাল ওর মা‌।একদিন বৌদি বলল, মাস্টারমশাই,আমার ছেলে খুব দুরন্ত।দরজা খোলা থাকে বলেই বার বার উঠে চলে যায়। এই তো এই টুকু টাইম পড়ে, তার ওপর যদি এই ভাবে উঠে পালায় কী করে হবে বলুন তো? একটা উপায় আমি ভেবেছি, আমি বাইরে থেকে শিকল তুলে রাখব, যাতে ও বেরোতে না পারে, আপনার অসুবিধা নেই তো? আমি বললাম, আমার আর অসুবিধা কি!পরের দিন থেকে আমি পড়াতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে থেকে শিকল তুলে দিত, আর ছ'টা বাজলে তবেই খুলত। পাক্কা দু ঘণ্টা। দশ মিনিট দেরীতে গেলে দরজাও খুলত সেই দু'ঘণ্টা মেপেই। তুই বল ভাই,গার্লফ্রেণ্ডের সাথে দেখা করার টাইম ওই সাড়ে পাঁচটার পর। প্রতিদিন  যদি এভাবে আটকে রাখে, তাহলে কীভাবেই বা দেখা হবে? ও আমার জন্য ওয়েট করে থাকত, আমি টাইমে যেতে পারতাম না। তারপর একদিন বলে দিল, এভাবে সম্ভব নয়। সময় দিতে যখন পারবে না, তখন তোমার সাথে প্রেম করার দরকার নেই। তবু আমি বলেছিলাম,কয়েকটা দিন টাইম দাও। মাস শেষ হলেই মাইনেটা পেয়ে যাব, তারপর টিউশনিটা ছেড়ে দেব। বলল,'কবে মাইনে পাবে, তার জন্য আমি ওয়েট করে বসে থাকব নাকি?' কপাল খারাপ আমার। ছেড়ে গেল তারপর। এখন নতুন বয়ফ্রেন্ডও পেয়ে গেছে।


-ইস!খারাপ লাগছে রে। আমার জন্য তোর খারাপ হল। তা টিউশনিটা ছেড়ে দিয়েছিস তো?


-মাথা খারাপ নাকি। এক সঙ্গে দুটোকে কেউ হাত ছাড়া করে?মাসে সাতশ টাকা। শোন আমি পল্টু,কোথায় নাটবল্টু আঁটতে হয় সে আমিও জানি। এতটাই বোকা নাকি আমি? তবে এই টিউশনিটা তুই যে দেখে দিলি,এতে আমার খারাপ হয়নি,বরং কপাল খুলেছে। বৌদির শিকলে বাঁধা পড়ে ভালোই হয়েছে। এখন আমি আড়াই ঘণ্টা পড়াই,আধ ঘণ্টা বেশি টাইম দিই আরো।


-কেন,বেশি মাইনে দিচ্ছে? নাকি বৌদির সাথেই ইন্টুমিন্টু করছিস?


-মাইনে সাতশ ই আছে। তবে উপরি পাওনা হচ্ছে পড়াতে গিয়ে প্রেমে মজেছি। হেব্বি দেখতে, পটিয়ে নিয়েছি। এখনো পনেরো দিন থাকবে বলেছে। এই পনেরো দিন আধঘণ্টা বেশি করে টাইম দেব। বৌদির বোন যে এত সুন্দরী, তা কি আমি জানতাম।


-বলিস কি! তো বৌদির শিকলে বলছিস কেন, এ তো বৌদির বোনের শিকলে বাঁধা পড়েছিস? পনেরো দিন পর বোন যখন চলে যাবে তখন কী হবে?


-বোনের সাথে সে সব কথা হয়ে গেছে।


আমি হেসে মজা করে বললুম,


-তোর আবার বোন কী করে হবে, ও তো বৌদির বোন।


-শোন! যা হবে তা ভালোর জন্যই হবে। বৌদির বোন, মানে আমার হবু বৌ। বৌদির বাপের বাড়ি তো আমাদের কলেজের পাশেই। সব জেনে নিয়েছি আমি। ও বলেই দিয়েছে, আগে বাড়ি ফিরি তারপর দেখাও হবে, জমিয়ে কথাও হবে। এখন পড়াতে গেলে পড়ানোর মাঝখানে চায়ের প্লেট নিয়ে ও-ই তো আসে, তখন দু একটা কথা হয়, আর চোখে চোখে ঈশারা। ভাই,আমি পল্টু, কোথায় নাটবল্টু আঁটতে হয় সে আমিও জানি। বৌদির শিকলে বাঁধা পড়ে আখেরে লাভটাই হয়েছে।


কলমে:সরজিৎ ঘোষ। Sarajit Ghosh 

"বৌদির শিকল"

কোন মন্তব্য নেই:

রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫

 রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫ আজকের সংবাদ শিরোনাম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা --- পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টি...