প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর মতে,দাড়ি শয়তান ও রাখে।
দাড়ি নিয়ে কবির কবিতাটা পড়ুন মজা পাবেন
সংক্ষিপ্ত
""" দাড়ি-বিলাপ """
"""""" কাজী নজরুল ইসলাম।
হে আমার দাড়ি!
একাদশ বর্ষ পরে গেলে আজি ছাড়ি
আমারে কাঙাল করি, শূন্য করি বুক!
শূন্য এ চোয়াল আজি শূন্য এ চিবুক!
তোমার বিরহে বন্ধু, তোমার প্রেয়সী
ঝুরিছে শ্যামলী গুম্ফ ওষ্ঠকূলে বসি!
কপোল কপাল ঠুকি করে হাহাকার –
‘রে কপটি, রে সেফটি (safety) গিলেট রেজার!’….
একে একে মনে পড়ে অতীতের কথা –
তখনও ফোটেনি মুখে দাড়ির মমতা!
তখনও এ গাল ছিল সাহারার মরু,
বে-পাল মাস্তুল কিংবা বিপল্লব তরু!
স্বজাতির ভীরুতার ইতিহাস স্মরি
বাহিয়া বি-শ্মশ্রু গণ্ড অশ্রু যেত ঝরি।
নারীসম কেশ বেশ, নারিকেলি মুখ,
নারিকেলি হুঁকা খায়! – পুরুষ উৎসুক
নারীর ‘নেচার’ নিতে, হা ভারত মাতা!
নারী-মুণ্ড হল আজি নর বিশ্বত্রাতা!
চলিত কাবুলিওয়ালা গুঁতো-হস্তে পথে
উড়ায়ে দাড়ির ধ্বজা, আফগানিয়া রথে
সুকৃষ্ণ নিশান যেন! অবাক বিস্ময়ে
মহিলা-মহলে নিজ নারী-মুখ লয়ে
রহিতাম চাহি আমি ঘুলঘুলি-ফাঁকে,
বেচারি বাঙালি দাড়ি, কে শুধায় তাকে?
চলিত মটরু মিয়াঁ চামারুর নানা,
মনে হত, এ দাড়িও ধার করে আনা
কাবুলির দেনা-সাথে! বাঙালির দাড়ি
বাঙালির শৌর্য-সাথে গিয়াছে গো ছাড়ি!
দাড়ির দাড়িম্ব বনে ফেরে নাকো আর
নির্মুক্ত হিড়িম্বা সতী, সে যুগ ফেরার!
জামাতারে হেরি শ্বশ্রু লুকান যেমনি!
‘রেজারে’ হেরিয়া শ্মশ্রু লুকাল তেমনি!…
ভোজপুরি দারোয়ান তারও দাড়ি আছে,
চলিতে সে দাড়ি যেন শিখীপুচ্ছ নাচে!
পাঞ্জাবি, বেলুচি, শিখ, বীর রাজপুত,
দরবেশ, মুনি, ঋষি, বাবাজি অদ্ভুত
বোকেন্দ্র-গন্ধিত ছাগ সেও দাড়ি রাখে,
শিম্পাঞ্জি, গরিলা – হায়, বাদ দিই কাকে!
এমন যে বটবৃক্ষ তারও নামে ঝুরি,
ঝুরি নয় ও যে দাড়ি করিয়াছে চুরি
বনের মানুষ হতে! তাই সে বনস্পতি আজ!
দাড়ি রাখে গুল্মলতা রসুন পেঁয়াজ!
হাটে দাড়ি, মাঠে দাড়ি, দাড়ি চারিধার,
লক্ষ খারে ঝরে যেন দাড়ি-বারিধার!
ঝরে যবে বৃষ্টিধারা নীল নভ বেয়ে
মনে হয় গাড়ি গাড়ি দাড়ি গেছে ছেয়ে
ধরণির চোখে-মুখে, সে সুখ-আবেশে
নব নব পুষ্পে তৃণে ধরা ওঠে হেসে!
মুকুরে হেরিয়া নিত বি-শ্মশ্রু বদন
লজ্জায় মুদিয়া যেত আপনি নয়ন।
হায় রে কাঙালি,
রহিলি তুই-ই হয়ে মাকুন্দা বাঙালি!
এতেক চিন্তিয়া এক ক্ষুর করি ক্রয়
চাঁছিতে লাগিনু গাল সকল সময়।
বহু সাধ্য-সাধনায় বহু বর্ষ পরে
উদিল নবীন দাড়ি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন