এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

শুভ জন্মদিন নীনা হামিদ জন্মঃ ২৬ ডিসেম্বর ১৯৪৯

 আমার সোনার ময়না পাখি কোন দেশেতে গেলা উইড়া রে দিয়া মোরে ফাঁকি রে আমার সোনার ময়না পাখী...অসাধারণ এই গানটি গেয়েছেন পল্লীগীতি সম্রাজ্ঞী শিল্পী নীনা হামিদ। নীনা হামিদের কণ্ঠে আমার খুব ছোটবেলায় শোনা এই গান। নীনা হামিদের সেই দরদী কণ্ঠ ভুলবার নয়। নীনা হামিদের অসাধারণ গায়কী যারা শুনেছেন তারা আজীবন মনে রাখবেন এই শিল্পীকে। গানটির কথা ও সুরঃ মোহাম্মদ ওসমান খান। এই গানটি খুব জনপ্রিয় বাংলা ছায়াছবি ’মনপুরা’ ছবিতে গেয়েছেন অর্ণব। ওয়াসিম ও অঞ্জু অভিনীত রাজকুমারী ছবিতে গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন।

শুভ জন্মদিন

নীনা হামিদ

জন্মঃ ২৬ ডিসেম্বর ১৯৪৯

----------------------------------------------------

নীনা হামিদের জন্ম শিক্ষিত, সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল সম্‌ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার বাবা আবু মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ খান ছিলেন পুলিশ অফিসার। মা সফুরুন নেছা। ভাই বোনদের মধ্যে নীনা হামিদ ছিলেন সবচেয়ে ছোট। তার পৈতৃক ভিটা ছিল মানিকগঞ্জ জেলার পারলি নওদা গ্রামে। কোনদিন যাওয়া-আসা ছিল না গ্রামের বাড়িতে। তবে তাদের পরিবার গোড়া থেকেই গান-বাজনা, কবিতা-আবৃত্তির চর্চা করতো। তার বাবার পক্ষে সাংস্কৃতিক চর্চা সম্ভব হয়নি, কেননা তিনি ছিলেন পুলিশ বিভাগে কর্মরত, কর্মজীবনে তিনি ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তবে তাঁর ছেলেমেয়ে সংস্কৃতিমনস্ক হোক এটা তিনি সব সময় চাইতেন। ১৯৫৬ সালে নীনা হামিদ ধ্রুপদী সংগীতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে ভর্তি হন। সেইসঙ্গে তার ভাই মোজাম্মেল হোসেনও ভর্তি হন সেতারে। বোন রাহিজা খানম ঝুনু নৃত্যে এবং আরেক বোন রাশিদা চৌধুরী রুনু ভর্তি হন রবীন্দ্রসংগীত বিভাগে।

নীনা হামিদ দীর্ঘদিন যাবত দেশের বাইরে। স্বামী শিল্পী এম এ হামিদের সাথে বসবাস করছেন সুদূর আমেরিকার আটলান্টিক সিটিতে। একসময় তাঁর কণ্ঠমাধুর্যে মুগ্ধ হত শ্রোতা-দর্শক। যাঁর গান শুনে বাংলাদেশের লাখো শ্রোতা চোখের পানি ফেলতেন। জীবনে তিনি অনেক কিছুই পেয়েছেন -”গানের কোকিল” পদবি, বাংলাদেশের শ্রোতাদের ভালোবাসা। 

নীনা হামিদ খুব ছোটবেলা থেকেই গান করেন। নিখিল দেবের কাছে তার গানের হাতেখড়ি। প্রতিবছরই স্কুলে গানের প্রতিযোগিতায় তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাসন্তী গুহ তার নাম লেখাতেন। তিনি নীনা হামিদের নাম দেন ”কোকিল” তখন তিনি পল্লীগীতি ছাড়াও সব ধরনের গান গাইতেন। সুরকার আবদুল আহাদ নীনা হামিদের বড় বোন আফসারী খানমকে গান শেখাতেন। একদিন তিনি নীনা হামিদের কণ্ঠ শুনে বিস্মিত হলেন। এরপর তিনি নীনা হামিদকে উচ্চাঙ্গসংগীত শেখাতে শুরু করলেন। তারপর ওস্তাদ বিমল দাস, বারীণ মজুমদার তাঁদের কাছে গান শিখলেন। ওই বয়সে একবার সরকারি আমন্ত্রণে নীনা হামিদ পাকিস্তানের মুলতানে গেলেন। সেখানে সালামত আলী, নাজাকাত আলী, নুরজাহান, মেহেদি হাসান, সুরাইয়া সুলতানিকা, এনায়েত ভাট্টি এঁরাও গান করবেন। সেই অনুষ্ঠানে নীনা হামিদও গাইলেন। এরপর রেডিওতে খেলাঘরের অনুষ্ঠানে আবদুল আহাদ নিয়ে গেলেন। সেখানে মোটামুটি নিয়মিত ক্লাসিক্যাল গান গাইতে শুরু করেন। স্কুল ব্রডকাস্টিং প্রোগ্রামে নিলুফার ইয়াসমিন, ওমর ফারুক ও হোসনা ইয়াসমীন বানুর সঙ্গে গেয়েছেন। 

একদিন মানিকগঞ্জের ওসমান খান (গীতিকার ও সুরকার) তাদের বাড়িতে এলেন। তিনি নীনা হামিদের মেঝো বোন রাশীদা খানমকে দিয়ে এইচএমভি কোম্পানির জন্য একটা গান করাবেন। রাশীদা গাইতেন রবীন্দ্রসংগীত। প্রস্তাব শুনে রাশীদা ’না’’ করে বসলেন। তখন সুযোগটা নিলেন নীনা এবং ওই গানটা গাওয়ার আবদার করে বসলেন। ওসমান খান রাজি হলেন। এরপর সেই রেকর্ডিং। সেই গানের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ যন্ত্রশিল্পীরা ছিলেন কানাই লাল শীল (দোতারার স্রষ্টা), বাঁশিতে ধীর আলী মিঞা, তবলায় বজলুল করিম, একতারায় যাদব আলীসহ (তিনি সুপণ্ডিত আলাউদ্দীন আলীর বাবা) আরও অনেকে বাজালেন। এরপর ’কোকিল আর ডাকিস না...’ রেকর্ডটি বের হলো। এর কিছুদিন পর এইচএমভির আখতার আব্বাস বললেন, এ রকম বাংলা গানের এলপি রেকর্ডসের এত কাটতি অনেক দিন দেখিনি। 

নীনা হামিদের রূপবান পালার কথা অনেকেই জানেন। রূপবান যাত্রাপালা রেকর্ড করা হতো, এটার স্রষ্টা ছিলেন খান আতাউর রহমান। ছোট ছোট গান ছিল এতে। ’ও দাইমা কিসের বাদ্য বাজে গো আমার দাইমা দাই মা গো...’,

’শোন তাজেল গো মন না জেনে প্রেমে মইজো না’... ’সাগর কূলের নাইয়া...’ এমন অপূর্ব শক্তিশালী গান ছিল সেগুলো। সেগুলো এত জনপ্রিয় হলো, সেখান থেকে তৈরি হলো রূপবান ছবি। রূপবান ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৫ সালে। এর অনেক ডিমান্ড ছিল। গ্রাম থেকে নৌকায়,গরুর গাড়িতে বোঝাই করে দলবেঁধে মানুষ যেতো শুধু রূপবান দেখতে। সেই রূপবান-এর গানের পরে একটা হিড়িক পড়ে গেল ফোক ছবি বানানো। পাতালপুরীর রাজকন্যা, জংলি মেয়ে, সুয়োরানী দুয়োরানী, গুনাই বিবি, গোলাপী এখন ট্রেনে, কুচবরণ কন্যা এমন অনেক রূপকথার গানের ছবি। এই গানগুলোর জন্যই নীনা হামিদ ও আবদুল আলিম সারা পৃথিবী ঘুরেছেন। বিদেশে ওখানকার মানুষ বাংলা ভাষা না বুঝলেও সুরেই তারা চোখ ভাসাত। এখানেই নীনা হামিদের সার্থকতা। আমাদের গানের ইতিহাস, জসীমউদ্দীনের নকশিকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, পল্লীগানের ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত।

নীনা হামিদের বিখ্যাত গান গুলোর মধ্যে রয়েছে - আমার সোনার ময়না পাখি, ওহ কি গাড়িয়াল ভাই, আগে জানিনারে দয়াল, আইলাম আর গেলাম, আমার বন্ধু বিনোদিয়া, আমার গলার হার, আমায় কি যাদু করলি রে, এমন সুখ বসন্ত কালে, যারে যা চিঠি লিইখা দিলাম, যোগী ভিক্ষা লয় না, ওরে ও কুটুম পাখি, উজান গাঙের নাইয়া- এ রকম আরো অনেক গান।

আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জের মানুষ পল্লীগীতি শুনতে খুব পছন্দ করেন। এখন কেমন তা জানিনা, তবে আগেকার দিনে অর্থাৎ ষাটের দশকে গ্রামগঞ্জে বিয়ে-শাদি,খতনা ইত্যাদিতে কলের গান ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। কোনো অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত, জমজমাট করার জন্য কলের গান ছাড়া যেন ভাবাই যেত না। নীনা হামিদ, আব্বাসউদ্দিন, আবদুল আলীম, মুস্তফা জামান আব্বাসী, ফেরদৌসী রহমানের কণ্ঠে কলের গানের ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতির কথায় আজও গ্রামের প্রবীণরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

১৯৫০ সালে প্রকাশিত জসীমউদ্দীনের ’পদ্মাপার’ গ্রন্থে ৪২টি গান ও একটি গীতিনাট্য স্থান পেয়েছে। এ বইয়ের গানগুলোয়ও পল্লীর সাধারণ মানুষের জীবনযাপন তাদের হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ, ঘরকন্না, আধ্যাত্মিক চেতনা ইত্যাদি নিপুণভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বেদে-জীবনের নিখুঁত চিত্র পাই এই গানটিতে - ও বাবু সেলাম বারেবার, আমার নাম গয়া বাইদ্যা বাবু, বাড়ি পদ্মাপার। মোরা পঙ্খি মারি পঙ্খি ধরি মোরা পঙ্খি বেইচা খাই, মোদের সুখের সীমা নাই, পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের লেখা এই গানটি সুর করেছেন আলতাফ মাহমুদ। বেদের মেয়ে ছবিতে এই গানটি গেয়েছেন আবদুল আলীম ও নীনা হামিদ। গানটি রেকর্ড করা হয় ১৯৬৮ সালে। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালে। নীনা হামিদ বেশ কিছু ছায়াছবির গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন।

নীনা হামিদের আরেকটি বিখ্যাত গান - ওহ কি গারিয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে...অসাধারণ গেয়েছেন। নীনা হামিদের মত এমন শিল্পী আর হবে না। তখনকার দিনের আব্বাসউদ্দিন, আবদুল আলীম, নীনা হামিদ, ফেরদৌসী রহমান, আঞ্জুমান আরা, বশির আহমেদ, নিলুফার ইয়াসমিন, শাহনাজ রহমত উল্লাহ, মাহমুদুন্নবী, আব্দুল জব্বার, আপেল মাহমুদ, রুনা লায়লা এবং সাবিনা ইয়াসমিন সহ আরো অনেকেই আমাদের সংগীতের পিপাসা মিটিয়েছেন নিঃশব্দে, যার জন্য আমরা আরো বেশী সংগীত পিপাসু হয়েছি। আমার মতে সেই সময়টা বাংলা গানের স্বর্ণযুগ ছিল। সে সময়ে গানের যেমন ছিল সুর তেমনি ছিল গানের কথা।

নীনা হামিদ দেশ ছেড়ে যাবার অনেক পরে তাকে দেয়া হয়েছে একুশে পদক। ১৯৯৪ সালে একুশে পদক পেলেন পল্লীগীতি সম্রাজ্ঞী শিল্পী নীনা হামিদ। তার পক্ষে তার ছোট ভাই সেই পদক গ্রহণ করেছিলেন।

শিল্পী  নীনা হামিদ দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে বাস করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। 

রওশন আরা বিউটি

সঙ্গীত গবেষক ও প্রাবন্ধিক


✍️মানিক বিশ্বাস ✍️

কোন মন্তব্য নেই:

সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে।

 সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে। ক্লিওপেট্রা ....মিশ...