"ঈশপের গল্প’" গোটা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে
আছে। কিন্তু কে ছিলেন এই Aesop? কী
করে এই গল্পগুলো তৈরি হয়েছিল?
এই প্রশ্নগুলো আমাদের অনেকের
মধ্যে ঘোরাফেরা করে বহুদিন ধরে।
আর অদ্ভুত কথা, যার তৈরি করা গল্পগুলো কয়েক হাজার বছর ধরে জীবিত রয়েছে, তার স্রষ্টার সম্পর্কে খুবই কম জানা যায়। অনেকটাই ধোঁয়াশায় ভরা। মনে করা হয়, খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৬২০ থেকে ৫৬০-এর মধ্যে বর্তমান ছিলেন ঈশপ। বর্তমান তুর্কির কাছাকাছি কোনো একটা অঞ্চলে জন্মেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে যখন ঈশপের জনপ্রিয়তা কিংবদন্তির আকার নিল, তখন অন্যান্য জায়গা থেকেও একই দাবি জানানো হল। কখনও আফ্রিকা, কখনও আবার জাপান, ইংল্যান্ড— সবাই চায় তাঁর জন্মস্থানের ভাগীদার হতে। তবে আদতে সেটি ঠিক কোথায়, তা নিয়ে অবশ্য আজও গবেষণা জারি আছে।
হেরোডোটাস, অ্যারিস্টটলের মতো প্রাচীন দার্শনিক ও ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে জানা যায়, ঈশপ আদতে ক্রীতদাস ছিলেন। আর সেই সময় ক্রীতদাসদের জীবন ঠিক কেমন ছিল, সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মনে রাখা দরকার, তখনও গ্রিস আর রোমের সভ্যতা অস্ত যায়নি। জ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস চর্চার মাঝে এমন অদ্ভুত রীতিও জারি ছিল। আর তারই দাস ছিলেন ঈশপ। কিন্তু কোথায় বলে না, জীবন সবাইকেই কিছু না কিছু সুযোগ দেয়। আর সঙ্গে দেয় প্রতিভাও। দ্বিতীয় বিষয়টি ঈশপের মধ্যে ভরপুর ছিল। তাঁর সহজাত বুদ্ধি, হাস্যরস, বিচক্ষণতার ঝলক প্রায়শই দেখা যেত। প্রকৃতির মাঝে বসে সেখান থেকেই গল্পের রসদ খুঁজে পেতেন। আর ছিল মানুষ। এই সবকিছু মিলেই তৈরি হত জাদু। তৈরি হত ঈশপের গল্প।
কিন্তু ভাগ্য সঙ্গ না দিলে যা হয়। ক্রীতদাসের জীবন থেকে এত সহজে তো মুক্তি মিলছে না। এদিকে দেখতেও খুব একটা ভালো নন তিনি। তাঁর চেহারা দেখে আর গলার আওয়াজ শুনে বাকি লোকেরা ঠাট্টা-তামাশাও করত। সেইসঙ্গে ছিল মালিকরা। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, নিজের জীবনে মোট দুজনের দাসত্ব করেছিলেন ঈশপ। প্রথম মনিবের কাছ থেকে অবহেলাই জুটেছে। কিন্তু দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা তেমনটা নয়। ঈশপের বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁর দ্বিতীয় মনিব। এবং তারপরই তিনি দাসত্ব থেকে মুক্তি দিলেন তাঁকে। মুক্ত হলেন ঈশপ, একটা অন্য জগত যেন খুলে গেল তাঁর সামনে…
নিজের জীবনকালে নানা জনের কাছে গল্প বলে বেরিয়েছেন ঈশপ। তাঁর বলার ধরণ এবং গল্পের জন্য অচিরেই লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল নাম। সাধারণ সব গল্প, কিন্তু সেই সহজতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবনের মানে। গ্রিস, রোমের রাস্তায় রাস্তায় ঈশপের গল্প ছড়িয়ে পড়ল। শোনা যায়, বন্দি অবস্থায় কারাগারের ভেতর বসে সক্রেটিস নাকি ঈশপের কিছু গল্পই লিখে রাখার কাজ করেছিলেন। কিন্তু ঈশপের জীবনকালে কখনও লিপিবদ্ধ করা হয়নি এই কাহিনিগুলো। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ডেমেত্রিয়াস প্রথমবার ঈশপের গল্পগুলিকে একসঙ্গে করে সংকলন বের করেন। তখনই প্রথমবার লিখিত আকারে পাওয়া গেল এই কাহিনি। বাকিটা তো এক কিংবদন্তির যাত্রা। আমাদের জীবনের সঙ্গে যা জড়িয়ে গেছে ওতপ্রোতভাবে। সুত্র… ডিড ইউ নো?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন