রঞ্জনা! প্রকৃতির এক অনিন্দ্য সুন্দর দান
। গাছ জুড়ে সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় রক্ত বিন্দুর ছোঁয়া যেন সবুজের কপোলে সিধুরে লাল টিপ৷ শৈশবে আমরা একে রক্ত চন্দনের বীজ বলে জানতাম। মা কাকীমার নারিকেল তেলের শিশিতে প্রথম দেখা। একটা সময় ছিলো সবাই খোলা নারিকেল তেল ব্যবহার করতেন। এখনও কেউ কেউ করেন। তখন কাঁচে শিশিতে করে তেল আনা হতো ছটাকের দরে। হাঁস মার্কা রজনীগন্ধা তেল আর তিব্বত কদুর তেল ছিলো গরীবের বিলাসিতা। আমাদের কাছে ওই কাঁচে শিশি ছিলো বিস্ময়কর এক খেলনা। তেল মাঝে দুয়েকটা লাল দাদা কি এক বিস্ময় নিয়ে দেখতাম আমরা। আর দেখতাম ছেকড়ার দোকানে রক্ত লাল বীজ দিনে রতি রতি সোনা ওজন করত তখন। বহুদিন এই বীজের সন্ধান করেও মিলেনি কোথায়। কাজের সূত্রে ভারত থেকে বীজ আনিয়ে কাজ করেছিলাম। কিন্তু হাতের নাগালের বাইরে থাকায় সাহস হতো না এত দাম দিয়ে বীজ সংগ্রহ করে কাজ করার। মুশকিল হলো বীজ ছিদ্র করা। তবু শখের বসে কিছু কাজ করতাম। তারপর খুঁজতে খুঁজতে একদিন সন্ধান পেলাম আমার শহরে। Monjurul Azim Palash দা'কে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। ওনিই পরিচয় করিয়ে দিলেন সরল দা'র সাথে। সরল দা সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন বীজ সংগ্রহ করতে। মজার ব্যাপার হলো মুন্সেফ বাড়ীর সেই পুরাতন দুতলা বাড়ীটা কতোবার দেখেছি কতো ছবি তুলেছি কখনও চোখে পড়েনি রঞ্জনাকে। এই বাড়ী আমাদের কুমিল্লার তথা ঘোটা বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী। সরল দা'র মা ছিলেন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আজ অনেক দিন বাদে আবার সরল দা'কে বিরক্ত করতে গেলাম। নিজ হাতে বীজ তুলে দিলেন গাছ থেকে। আমাকে তুলতে দিচ্ছিলো যদি ছাদ থেকে পরে যাই! বীজ তুলে ব্যাগে পুরতেই সরলদা বললেন পাশে ওই কামরাঙা গাছ খেলে নিয়ে যান। বীজের সাথে বড়ো বড়ো কামরাঙাও উপহার পেলাম। প্রকৃতির এই দান আমার জন্য আশীর্বাদ।
বাড়ীতে প্রবেশ করতেই দেখি ডেভেলপারদের সাইনবোর্ড টানানো। জিজ্ঞেস করলাম এই বাড়ী কি প্রমোটারকে দিয়ে দিবেন নাকি। ওনি মৃদু স্বরে জবাব দিলেন এক প্রকার কথা চলছে। আফসোস পুরনো বলে আর কিছু রইলো হয়তো আর থাকবে না। এই বাড়ী এই গাছও একদিন থাকবে না। থেকে যাবে এই সব দিনগুলি। আমাদের নানা রঙের দিনগুলি.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন