ফেসবুকে ইদানিং একটা লেখা খুব ভাইরাল হয়েছে। লেখাটা ছিলো এমন “আমি যখন জন্মেছিলাম তখন আমার স্বামী হাঁটতে পারতো। তারপরও সে আমায় দেখতে আসে নি। এখন কী আমার তার সাথে সংসার করা উচিৎ হবে?”
লেখাটা আমার বউ শ্রাবণী দেখে আমাকে মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে বলে,
- “আমি যখন জন্মে ছিলাম তখন তুমি আমায় দেখতে গিয়েছিলে”
রাত ১টার সময় বউ যখন এমন কথা বলবে তখন কার না মেজাজ খারাপ হবে। রাগটা কোনো রকম কন্ট্রোল করে বউকে বললাম,
– হ্যাঁ দেখতে গিয়েছিলাম।তুমি ময়মনসিংহ মেডিকেলে দুপুর ২টা বেজে ১৭মিনিটে জন্মে ছিলে। আমি যখন দেখতে যাই তখন দেখি তুমি মামীর পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে আছো।
-“শুধু দেখেছো, আমায় কোলে নাও নি?”
আমি বউয়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
– তোমায় আমি কোলে নিবো কি করে? আমি তো নিজেই আমার মায়ের কোলে ছিলাম। ৩বছরের বাচ্চা ছেলে কি করে একটা সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুকে কোলে নিবে?
বউ আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো, “ তোমার সাথে আসলে সংসার করাই উচিত না। কোন আক্কেলে যে ফুপাতো ভাইয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করতে গেলাম।”
।
।
বউ জন্ম নেওয়ার সময় আমি কেন তাকে কোলে নেই নি সেই গুরুতর অপরাধের জন্য বউ সকালে আজ নাস্তা বানায় নি। বাধ্য হয়ে না খেয়েই অফিস গেলাম। আমার পাশের চেয়ারে বসা মামুন সাহেবের দিকে খেয়াল করে দেখি উনি মনমরা হয়ে বসে আছে। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
– ভাই কোনো সমস্যা?
উনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
- “ বউ জন্মানোর সময় আমি কেন তাকে দেখতে যাই নি এটা নিয়ে বউ আমার সাথে ঝগড়া করেছে। চিন্তা করেন ভাই, আমার বউ জন্মায়ছে নোয়াখালি আর আমার বাড়ি বরিশাল। আমি কিভাবে তাকে দেখতে যাবো? তাছাড়া আমি জানতাম নাকি কোন মেয়ে আমার বউ হবে। আর ঝগড়ার সময় ভুল করে বউকে হাতির বাচ্চা কেন বললাম এজন্য বউ আমাকমাঝরাতে রুম থেকে বের করে দিয়েছিলো।
মামুন সাহেবের কথা শুনে মনে একটু স্বস্তি পেলাম। জগতে শুধু আমার বউটা ব্রেইন বিহীন জন্মায় নাই। আমার মতো আরো অনেকের বউ ব্রেইনহীন ভাবে জন্মেছে।
আমি মামুন সাহেবকে বললাম,
–দেখেন ভাই, স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করার সময় স্ত্রীকে কখনোই জন্তু জানোয়ারের নাম বলে গালি দিবেন না। বউ আপনাকে কু*ত্তার বাচ্চা বলুক কিংবা গাধার বাচ্চা বলুক আপনি তাকে এইসব বলে ভুলেও গালি দিতে যাবেন না। আপনি বউকে গালি দিবেন ক্যাটরিনা, দীপিকা, আলিয়া বলে। বউ যদি আপনাকে বলে, “তুই একটা কু*ত্তা” আপনি তখন তাকে বলবেন, “তুই একটা ক্যাটরিনা। তোর গালে দীপিকার মতো টোল পড়ে। আর তুই হাসলে তোকে আলিয়ার মতো কিউট লাগে। তখন তোকে এতো সুন্দর লাগে ছিঃ ছিঃ ছিঃ ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরি।
এইভাবে গালি দিলে বউ রুম থেকে বের করবে না বরং আদর সোহাগ দিবে।
আমার কথা শুনে মনে হয় না মামুন সাহেব খুশি হয়েছেন বরং উনার চেহারা দেখে এটা মনে হচ্ছে নেক্সট টাইম উনি উনার বউকে গন্ডারের বাচ্চা বলে গালি দিবেন…
।
।
৫মিনিট ধরে বসের রুমে বসে আছি বস কিছু বলছেন না। উনি শুধু সিলিং ফ্যানটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি হালকা গলা কেশে বললাম,
–স্যার, কোনো সমস্যা?
বস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- “বলো তো মেয়েদের বুদ্ধি কোথায় থাকে?”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
–এটা তো সবাই জানে। মেয়েদের বুদ্ধি হাটুর নিচে থাকে।
বস বললো,
- “তুমি ভুল জানো। মেয়েদের বুদ্ধি বলে কোনো জিনিসই থাকে না। ওরা জন্মানোর পর প্রথম যখন হিসু করে তখন হিসুর সাথে তাদের বুদ্ধিও বের হয়ে যায়। তা নাহলে বিয়ের ১০বছর পর কেউ এটা নিয়ে ঝগড়া করে আমি কেন সে জন্মানোর সময় দেখতে গেলাম না। এজন্যই মাঝে মধ্যে মনে হয় এই সিলিং ফ্যানে ঝু*লে পড়ি।”
বসের কথা শুনে মনটা একদম জুড়িয়ে গেলো। আর একটা ব্রেইনহীন মেয়ে মানুষের সন্ধান পেলাম। আমি বসকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য বললাম,
–স্যার বাদ দেন এইসব পাগল-ছাগলের কথা।
আমার কথা শুনে বস রেগে গিয়ে বললো,
- “তুমি আমার বউকে ছাগল বলো কোন সাহসে?”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
– সরি স্যার, আমার হয়তো ভেড়া বলা উচিত ছিলো…
স্যার রেগেমেগে আমাকে বেয়াদব বলে রুম থেকে বের করে দিলো।
।
।
বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই শ্রাবণী দরজা খুললো। এই মেয়েটাকে যতবার দেখি ততবার প্রথম থেকে প্রেমে পড়ি। যে মেয়েটা আমাকে পাবার জন্য হারপিক খেয়ে ফ্যামিলিকে রাজি করিয়েছিলো সেই মেয়েটার টুকটাক ছেলেমানুষি আমার সহ্য করা উচিত।
শ্রাবণী ধমক দিয়ে বললো, “এমন হা করে কি দেখছো?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
–আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে তোমার জন্মের পর তোমায় কোলে না নেওয়া। তাই চিন্তা করেছি যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার এই গুরুতর অন্যায়ের ক্ষমা না করবে ততক্ষণ আমি তোমাকে কোলে রাখবো।
এইকথা বলে শ্রাবণীকে আমি কোলে তুলে নিলাম। ভেবেছিলাম আমি কোলে তুলে নিলেই সে নেমে যাবে কিন্তু দুই মিনিট হতে চললো তার নামার কোনো নাম গন্ধ নাই। আর ঐদিকে ৫০কেজি ওজনের লবণের বস্তাকে আমার কোলে তুলে আমার মেরুদন্ড বেঁকে যাচ্ছে।
হঠাৎ শ্রাবণীকে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। আমি তখন ওকে বললাম,
–হাসছো কেন?
শ্রাবণী বললো,
- “তুমি আমাকে যেভাবে কোলে নিয়েছো সেভাবে মা তার সন্তানকে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ায়।”
শ্রাবণী আমার বুকের দিকে তাকাতেই আমি তাড়াতাড়ি ওকে কোল থেকে নামিয়ে দুইহাত দিয়ে নিজের বুক ঢেকে বললাম,
– এই মেয়ে! তোর নজর এতো খারাপ কেন? বাড়িতে কি বাপ ভাই নাই?
আমার কথা শুনে শ্রাবণী হাসতে লাগলো। আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখতে লাগলাম। মেয়েরা আসলেই মায়াবতী হয়। ওরা হাসলেও মুক্তা ঝড়ে আবার কাঁদলেও মুক্তা ঝড়ে । ওরা ২৫-৩০ বছর বয়স হলেও যেমন স্বামীর সাথে ছেলেমানুষি করে তেমনি ১৬-১৭ বছর বয়সে ওদের বিয়ে হয়ে গেলেও পুরো একটা সংসার বুক পেতে আগলে রাখে। স্ত্রী ছেলেমানুষি করলে বিরক্ত হবেন না। হাসি ঠাট্টা করার জন্য বাহিরে আপনার বন্ধু-বান্ধব, অফিস কলিগ অনেকেই আছে কিন্তু আপনার স্ত্রীর আপনি বাদে কেউ নেই। তাই দিনের কিছুটা সময় হলেও আপনার স্ত্রীর সাথে হাসি ঠাট্টা ছেলেমানুষি করে কাটান…
ছেলেমানুষি
আবুল বাশার পিয়াস
এরকম সুন্দর গল্পো পেতে পেজটি ফলো দিন 👉 লেখক - সাহেব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন