জৈব বালাই ব্যবস্থাপনার সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা সমূহ।
ফসলের সুরক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বালাইনাশক (pesticide) ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। সাধারণত, এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়: জৈব বালাইনাশক (biopesticides) এবং রাসায়নিক কীটনাশক (chemical pesticides)। এদের মধ্যে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জৈব বালাইনাশকের সংজ্ঞা ও ধরন:
জৈব বালাইনাশক হলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রস্তুত কীটনাশক, যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস, উদ্ভিদ নির্যাস এবং অন্যান্য জীবিত বা জৈব উপাদান থেকে তৈরি হয়ে থাকে।
জৈব বালাইনাশকের প্রধান ধরন তিনটি:
১. মাইক্রোবিয়াল বালাইনাশক – ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা অন্যান্য জীবাণু থেকে তৈরি।
যেমন: Bacillus thuringiensis (Bt) ব্যাকটেরিয়া, যা শুঁয়োপোকা দমনে ব্যবহৃত হয়।
২. বোটানিকাল বালাইনাশক – উদ্ভিদের নির্যাস থেকে তৈরি।
যেমন: নিম পাতা /তেল, তামাক পাতা, পেঁয়াজ-রসুনের নির্যাস, ছাই, মরিচের গুঁড়ো, পেপারমিন্ট তেল ইত্যাদি।
৩. বায়োকন্ট্রোল এজেন্টস – শত্রু পোকা দমনকারী উপকারী পোকা বা জীবাণু।
যেমন: Trichogramma পরজীবী বোলতা, যা ক্ষতিকর পোকার ডিম ধ্বংস করে।
* এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকার ফাঁদ: বালাইনাশক সরাসরি গাছে প্রয়োগ না করে বিভিন্ন প্রকার ফাঁদ স্থাপন করে শত্রু পোকা দমন করা।
যেমন: ফেরমন ফাঁদ, বিষ টোপ, হলুদ আঠা।
* এ ছাড়া ফ্রুট ব্যাগিং করে ফলের মাছি পোকা দমন অত্যান্ত কার্যকারী একটি পদ্ধতি।
জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে সুবিধা:
* এটা পরিবেশ বান্ধব: জৈব বালাইনাশক সাধারণত প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি হয়, তাই এগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
* জৈব বালাইনাশক মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য নিরাপদ: জৈব বালাইনাশক রাসায়নিক কীটনাশকের তুলনায় মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জৈব বালাইনাশকের বিকল্প নেই।
* মাটির উর্বরতা রক্ষা করে: জৈব বালাইনাশক মাটির প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে এবং উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
* উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি করে না: জৈব বালাইনাশক সাধারণত নির্দিষ্ট কীটপতঙ্গকে লক্ষ্য করে, তাই উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি করে না।
* দীর্ঘমেয়াদী উপকার: জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে কীটপতঙ্গের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সীমাবদ্ধতা সমূহ:
* ধীর কার্যকারিতা: জৈব বালাইনাশক রাসায়নিক কীটনাশকের তুলনায় ধীরে কাজ করে।
* সংরক্ষণ ও ব্যবহার জটিল: জৈব বালাইনাশক সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা কিছুটা জটিল হতে পারে।
* খরচ বেশি: কিছু জৈব বালাইনাশকের দাম রাসায়নিক কীটনাশকের তুলনায় বেশি হতে পারে।
* কার্যকরিতা কম: কিছু ক্ষেত্রে জৈব বালাইনাশক রাসায়নিক কীটনাশকের মতো কার্যকর নাও হতে পারে।
পরিশেষে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জৈব বালাইনাশকের বিকল্প নেই। তাই এই দিকে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন