এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

আমাদের ‘খিচুড়ি’ ইতিহাস। 

 আমাদের ‘খিচুড়ি’ ইতিহাস। 


খিচড়ি, ভাত এবং ডালের মিশ্রণে আমাদের সহজ পাচক এবং প্রিয় খাবার। আমাদের প্রাচীন ভারতে এর সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। যার উল্লেখ মহাভারত এবং বৈদিক সাহিত্যে গুলিতে উল্লেখ রয়েছে এবং মনে করা হয় এটি বহু শতাব্দী ধরে আমাদের একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল। যার বিভিন্ন আঞ্চলিক বৈচিত্র্যে মধ্যে দিয়ে বিকশিত হয়েছে। এটি মূলত ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার। প্রধানত চাল এবং ডাল দিয়ে সাধারণ খিচুড়ি ভাত রান্না করা হয়। তাছাড়া বজরা, মুগডাল এবং  সাবুদানা সহ অন্যান্য ডালের ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায় এতে। আমাদের ভারতে অঞ্চলভেদে খিচুড়ির বিভিন্ন আঞ্চলিকরূপ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। 


"খিচড়ি" শব্দটি সংস্কৃত শব্দ "খিচ্চা" থেকে এসেছে, যার অর্থ ভাত এবং ডাল জাতীয় খাবার। মহাকাব্য মহাভারতে এই খাবারটির উল্লেখ পাওয়া যায়, এমনকি বৈদিক সাহিত্যেও, দুধ, দই এবং তিলের মতো বিভিন্ন উপাদানের সাথে ভাত মিশিয়ে ‘কৃষার্ণ’ তৈরি করা হত। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায়, ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেও ভাত এবং ডাল একসাথে খাওয়া হত। অঞ্চলভেদে শব্দটির তৃতীয় ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ ও ব্যবহারে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। 


বাঙালি পরিমণ্ডলে খিচুড়ি উচ্চারণ করা হলেও কোথাও কোথাও ‘খিচুরি’ বলতে শোনা যায়। হিন্দীভাষীরা ‘ড়’ এবং উর্দুভাষীরা ‘র’ ব্যবহার করে থাকেন খিচুড়ি উচ্চারণে। ১২০০-১৮০০ সালের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে বাংলায় খিচুড়ির আবির্ভাব। হালে ডালকে গরিবের আমিষ বলা হলেও প্রথমদিকে ডাল ছিল উচ্চশ্রেণীর খাদ্য। “খিচুড়ির চার ইয়ার – ঘি-পাঁপড়-দহি -আচার” কথাটি চালু থাকলেও বাঙালি মানেই খিচুড়ি পাঁপড়। তবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রন্ধনপটীয়সীরা বলেছেন “দই দিয়ে খিচুড়ি খাইতে মন্দ লাগে না”। ঠিক তাই আমারও তাই মনে হয়। মনসামঙ্গল কাব্যে স্বয়ং শিব যে খাবারটি খাবার আবদার পার্বতীর কাছে জানিয়েছিলেন, তা হল খিচুড়ি।


পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরে প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের যে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়, তা লোকমুখে সংক্ষেপে “জগা- খিচুড়ি” নামে পরিচিত। যা কথ্যভাষায় আবার তালগোল পাকানোর প্রতিশব্দ। কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা যক্ষদেবতা কুবেরকে খিচুড়ি ভোগ উৎসর্গ করেন, যার নাম “খেতসিমাভাস”। তামিলনাড়ুতে খিচুড়িকে “পোঙ্গল” বলে। রাজস্থানে যে হাল্কা খিচুড়ি রান্না হয় , তাকে “তেহরি” বলে। মহারাষ্ট্রে খিচুড়ির সাথে মেশানো হয় সরষে দানা। মহামুনি চরক বলেছেন খিচুড়ি, পোলাও এর থেকে কিছু কম গুণাগুণ যুক্ত নয়। তাই আজও খিচুড়ির একটা আলাদাভাবে “নান- ক্যান- বিট” ব্যাপার আছে বইকি!! আর জিহ্বার জল আনার জন্য অনায়াসে দায়ী করা যায় আমাদের খিচুড়িকে।


রন্ধনসম্পর্কীয় উদ্ভাবনের জন্য পরিচিত মুঘলরা খিচুড়িকে নতুন রূপ এবং স্বাদ দিয়েছে। মুঘল সম্রাট আকবর, এক যুদ্ধ জয়ের পর এই খিচুড়ি যুবরাজ সেলিমকে পরিবেশন করেছিলেন বলে জানা যায় এবং তিনি একে "লাজিজান" (সুস্বাদু) নাম দিয়েছিলেন। খিচড়ি বহুমুখী একটি খাবার যার বিভিন্ন আঞ্চলিক স্বাদ এবং উপাদানের সাথে মিশে তৈরি হয়ে থাকে।  উদাহরণস্বরূপ, গুজরাটে, খিচুড়ি এক বাটি হালকা মশলাদার কড়ি (দই-ভিত্তিক তরকারি) দিয়ে খাওয়া হয়, অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে, ‘ভেন পোঙ্গাল’ প্রচুর পরিমাণে ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। হিমাচলি সংস্করণটি কিডনি বিন এবং ছোলা দিয়ে পরিপূর্ণ, এবং কর্ণাটকের বিসি বেলে হুলিয়ান্নায় রয়েছে তেঁতুল, গুড়, মৌসুমি সবজি, কারি পাতা, শুকনো নারকেল এবং কাপোকের কুঁড়িগুলির মতো সুস্বাদু সংযোজন।  খিচুড়ি কয়েকটা ভাগে বিভক্ত করা যায় যেমন নরম খিচুড়ি, ভুনা খিচুড়ি, মাংস খিচুড়ি, নিরামিষ খিচুড়ি ইত্যাদি।


বর্ষা, বাঙালি এবং খিচুড়ির মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে। বৃষ্টিদিনে আমরা বাঙালিরা খিচুড়ি খেতে খুবই পছন্দ করি। এর সঙ্গে যদি ইলিশ ভাজা কিংবা বেগুনি হয় তবে তা ভোজনরসিক বাঙালির কাছে নির্ঘাত অমৃত সমান। বাঙালির ঘরে খিচুড়ি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয় প্রচুর।  কখনও মাংস দিয়ে, কখনও মাছ দিয়ে বা কখনও সবজি সহযোগে। বাঙালির এই তালিকায় রয়েছে, মুগ ডালের খিচুড়ি, সবজি খিচুড়ি, মুসুর ডালের খিচুড়ি, গমের খিচুড়ি, সাবুর খিচুড়ি, মাংসের খিচুড়ি, ডিমের খিচুড়ি, মাছের খিচুড়ি, ভুনা খিচুড়ি এবং কাউনের খিচুড়ি।


সাধারণ এক থাল খিচুড়িতে প্রায় ১৭৭ ক্যালরি শক্তি, ৩২.৩ গ্রাম শর্করা, ৮.৪ গ্রাম প্রোটিন, ১.৫ গ্রাম চর্বি থাকে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন এবং ফাইবার বা আঁশ রয়েছে। যেহেতু খিচুড়ি তৈরিতে একেক ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয় তাই ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের উপস্থিতির কারণে বিভিন্ন ধরনের উপকারী ভূমিকা পালন করে। সবজি খিচুড়িতে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং বেশ কিছু খনিজ থাকে যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। মুগ ডালের খিচুড়ি দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখায় ওজন কমাতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। কাওনের খিচুড়ি প্রোটিন, ফাইবার, ফসফরাস এবং অ্যামাইনো অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। সাবুদানা খিচুড়িতে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়ামসহ একাধিক খনিজ রয়েছে।


বেশ সহজপাচ্য এবং শক্তিদায়ক বলে অসুস্থ এবং দুর্বল মানুষকে খিচুড়ি খেতে দেওয়া হয়। বাচ্চাদের পেটে সহজে শক্ত খাবার হজম হয় না বলে তাদেরকে খুব নরম খিচুড়ি খেতে দেওয়া হয়। খিচড়ি অন্যান্য দেশেও খাবারের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, যেমন মিশরের কোশারি, ছোলা এবং মুচমুচে পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি ভাত এবং বাদামি মসুর ডালের খাবার। ব্রিটিশ রাজত্বকালে ব্রিটিশরা খাবারটি পরিবর্তন করে, মসুর ডালের পরিবর্তে ধোঁয়াটে মাছ এবং শক্ত-সেদ্ধ ডিম ব্যবহার করে, কেজরি তৈরি করে। 

 

আধুনিক তাৎপর্য হিসেবে খিচড়ি আমাদের ভারতে একটি জনপ্রিয় এবং আরামদায়ক খাবার হিসেবে বিবেচিত, যা প্রায়শই প্রধান খাদ্য হিসেবে অথবা মন্দিরে প্রসাদ হিসেবে পরিবেশন করা হয়।  ২০১৭ সালে, ভারত সরকার খিচুড়ির সবচেয়ে বেশি পরিবেশনের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করেছিল, যা ভারতীয় রন্ধনসম্পর্কীয় ঐতিহ্যের সারমর্মকে মূর্ত করে তুলে।


By Chef Moonu

👇

#chefmoonuskitchen  #moonuandco  #travellermoonu  #thefoodietraveller  #kolkatablogger  #kolkatafood  #chefmoonu  #kolkata  #foodlovers  #foodblogger  #CulinaryJourney #bengalifood #foodculture #WestBengal

কোন মন্তব্য নেই:

সোশ্যাল মিডিয়াতে ইনকাম ও তার বাস্তবতা,,,,

 📲 সোশ্যাল মিডিয়াতে ইনকাম ও তার বাস্তবতা 🎥 বাস্তবতা না বুঝে রিলস বানানোর নামে জীবনের ভারসাম্য হারানো… বর্তমানে বহু তরুণ-তরুণী ফেসবুক, ইনস...