টোকিওর আকাশচুম্বী অফিস ভবনের এক কোণে হাজিমে স্যান তার ল্যাপটপের সামনে বসে আছেন। গত রাত তিনি অফিসের একটি জরুরি প্রজেক্ট শেষ করতে প্রায় সাড়ে তিনটে পর্যন্ত জেগে ছিলেন। এখন সকাল ১১টা—চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। কিন্তু তিনি চিন্তিত নন। কারণ তিনি জানেন, তার কর্মস্থল—টোয়োটা মোটরস—এখানে কর্মীদের অফিসে ঘুমানোকে দুর্বলতা না ভেবে সম্মানের চোখে দেখা হয়।
হাজিমে স্যান ডেস্কেই মাথা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। তার পাশের সহকর্মী মিয়ামোতো স্যান তা দেখেও বিরক্ত হলেন না, বরং নিজের কাজ চালিয়ে গেলেন নিঃশব্দে। কারণ জাপানি সংস্কৃতিতে এই দৃশ্য সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এটাকে বলা হয় "ইনেমুরি" (居眠り)—অফিসে সংক্ষিপ্ত ঘুম, যা কর্মীর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
কেন জাপানি কোম্পানিগুলো কর্মীদের ঘুমাতে উৎসাহিত করে? বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি মিতসুবিশি, সনি, প্যানাসনিক বা হিতাচি -র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অফিসে বিশ্রাম কক্ষ (nap pods) এবং নিরিবিলি সোফার ব্যবস্থা রেখেছে। গবেষণা বলছে, মাত্র ২০-৩০ মিনিটের পাওয়ার ন্যাপ:
✔ স্মৃতিশক্তি ২০-৩০% বাড়ায়,
✔ সৃজনশীলতা উন্নত করে,
✔ স্ট্রেস কমিয়ে মনোযোগ বাড়ায়।
মনোবিজ্ঞান বলছে, ২০-৩০ মিনিটের পাওয়ার ন্যাপ সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। জাপানি সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয়, একজন কর্মী যদি অফিসে ঘুমান, তার মানে তিনি হয়তো বাড়িতে অতিরিক্ত সময় দিয়ে কাজ করেছেন বা পরিবারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন অথবা অফিসে অতিরিক্ত কাজ করেছেন। যেটাই হোক না কেন, সেজন্য ঘুম ভাঙার পর তাকে তিরস্কার না করে উৎসাহ দেওয়া হয়।
এশিয়ার অন্যান্য দেশে, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা বা এমনকি পশ্চিমা বিশ্বে, কর্মক্ষেত্রে ঘুম নিয়ে আছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। এমন কি আমাদের দেশেও। বেশিরভাগ দেশেই অফিসে ঘুমানোকে অপেশাদারিত্ব মনে করা হয়। কিন্তু জাপান দেখিয়েছে, কর্মীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। টোয়োটা বা মিতসুবিশির মতো কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের বলছে, "ঘুমাও যখন প্রয়োজন, আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি।"
হাজিমে স্যান ২০ মিনিট ঘুমিয়ে উঠলেন। তার মস্তিষ্ক এখন সতেজ, কাজের গতি দ্বিগুণ। বিকেলে যখন তিনি তার ছোট মেয়েকে স্কুল থেকে নিতে যাবেন, তখন আর ক্লান্তিতে চোখ ঢুলবে না অথবা বাসায় ফিরে শিশু মেয়েটির সাথে খেলার সময়ও এবার তার ধৈর্য কমবে না। কারণ, অফিসের সেই ছোট্ট ঘুমটাই তাকে দিয়েছে নতুন শক্তি। কারণ, তার কোম্পানি তাকে একটি ছোট ঘুমের অধিকার দিয়েছে। আবারো বলছি, সুযোগ নয় - অধিকার দিয়েছে —যা তাকে কর্মক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত জীবনে সফল করে তুলেছে।
আপনার কী মনে হয়? আমাদের সমাজে কি এই চিন্তাধারা গ্রহণ করা উচিত? নাকি অফিসে ঘুমানোর অর্থই হলো "আলসেমি" এবং তার চাকরি চলে যাওয়া উচিৎ? মন্তব্যে জানান
শেখ মাসুদ পারভেজ
Shaikh Masud Pervez
#Japan #Worklife #Inemuri #LaborRights #Productivity ©️
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন