মৌমাছির জগতে এক গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে—
যখন একটি মৌচাকে রানী মৌমাছি মারা যায়, সব কিছু থেমে যায়।
রানীই ছিল প্রাণের উৎস। তারাই ডিম দিতো, সমাজকে গড়ে রাখতো।
তার মৃত্যু মানে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
কিছু দিনের মধ্যেই পুরো মৌচাক ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়—
এই ছোট ছোট পোকারা তখন হতাশ হয়ে বসে থাকে না।
তারা বাইরে থেকে কোনো সাহায্যের অপেক্ষাও করে না।
বরং, তারা শুরু করে এক অবিশ্বাস্য রূপান্তর।
একটি সুনিয়ন্ত্রিত সমাজের মাঝে জেগে ওঠে তীব্র বুদ্ধিমত্তা ও চেতনাবোধ।
একটি সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে, তারা নেয় এমন একটি সিদ্ধান্ত,
যা অনেক মানুষের কাছেও কল্পনার বাইরে।
⸻
◆ এক সাধারণ লার্ভা, এক অসাধারণ সিদ্ধান্ত
সব কাজের মৌমাছিরা মিলে বেছে নেয় কিছু সাধারণ লার্ভা।
যারা স্বাভাবিক নিয়মে বড় হলে হতো কেবল একজন সাধারণ কর্মী।
তারা কোনো বিশেষ বংশধর নয়, কোনো জিনগত শ্রেষ্ঠত্বও নেই তাদের।
তবুও… তাদের ভাগ্য বদলে যায়।
তাদের খাওয়ানো হয় এক বিশেষ খাদ্য—রয়্যাল জেলি।
এটি এক অনন্য উপাদান, যা কেবল সুস্থ মৌমাছিরাই তৈরি করতে পারে।
এই খাদ্যে থাকে প্রোটিন, ভিটামিন, জীবন্ত সক্রিয় উপাদান।
সত্যিকার অর্থেই রাজকীয় খাবার।
এই খাবারে বড় হতে হতে সেই লার্ভার শরীর বদলে যায়।
তার ডিম পাড়ার ক্ষমতা জাগে, শরীর হয় বড়, শক্তিশালী।
তার জীবনকাল হয় বিশ গুণ দীর্ঘ।
সে আর কাজ করবে না—
সে নেতৃত্ব দেবে।
সে আর অনুসরণ করবে না—
সে সৃষ্টি করবে জীবন।
⸻
◆ নেতৃত্ব জন্ম নেয়, তৈরি হয়—উত্তরাধিকার নয়
রানী মৌমাছি তার জিনগত কারণে রানী হয় না।
সে হয়ে ওঠে রানী অন্যদের সিদ্ধান্ত, যত্ন আর পুষ্টির কারণে।
সাধারণ আর রানীর মাঝে জেনেটিক কোনো পার্থক্য থাকে না।
বিচার হয় খাবারে। যত্নে। সিদ্ধান্তে।
ভাবুন তো, যদি মানবসমাজেও এমনটা হতো—
একটি সাধারণ শিশুকে আমরা যদি সঠিক যত্ন, পরিবেশ, উৎসাহ দিই,
তাহলে সেও হয়ে উঠতে পারে এক অনন্য নেতা।
জেনেটিক পরিবর্তনের দরকার নেই।
কেবল দৃষ্টি, সহানুভূতি আর যথাযথ সিদ্ধান্ত।
⸻
◆ সংকটই আনে নেতৃত্বের জন্ম
এই রূপান্তর শুধু একটি লার্ভাকে নয়,
বাঁচায় পুরো মৌচাককে।
নতুন রানী ডিম পাড়ে, সমাজে ফেরে শৃঙ্খলা।
নতুন জীবন, নতুন প্রজন্ম, নতুন নেতৃত্বের সূচনা হয়।
আমাদের সমাজে এদের সাথে কাদের মিল খুঁজে পাচ্ছেন?
এরা কি সেই সাধারণ তরুণ যারা দেশে বিপ্লব করেছে? c.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন