"মোল্লা নাসিরুদ্দিনের উল্টো গাধার গল্প"
সকালের দিকে গ্রামের লোকজন দেখলো —মোল্লা নাসিরুদ্দিন গাধায় চড়ে যাচ্ছেন। মোল্লা তো প্রতিদিনই গাধার পিঠে চড়েন- আজকে সবাই তাকিয়ে আছে কেন?
তাকিয়ে থাকার কারণ মোল্লা নাসিরউদ্দিন তার চিরচেনা, অদ্ভুত ভঙ্গিতে—গাধার পিঠে বসে আছেন ঠিকই, কিন্তু মুখটা উল্টোদিকে করে বসা, লেজের দিকে।
লোক হেসে উঠল, “এই মোল্লা! তুমি উল্টো হয়ে চড়ে আছো কেন? পাগল হয়ে গেলা নাকি?”
নাসরুদ্দিন এক চিলতে হাসি নিয়ে জবাব দিলেন, “আমি ঠিকই আছি। গাধাটাই ভুল দিকে মুখ করে আছে।”
হাসির হো হো পড়ে গেল। তবু এক তরুণ, একটু জ্ঞানী সাজতে চেয়ে প্রশ্ন করল— “তুমি সামনে না তাকিয়ে কোথায় যাচ্ছো, তা বোঝো কীভাবে?”
নাসরুদ্দিন এবার একটু গম্ভীর হলেন। নরম স্বরে বললেন—
“আমি কোথায় যাচ্ছি তা দেখার দরকার নেই। আমার জানা দরকার, আমি কোথা থেকে এসেছি। কারণ ভুলটা তো সামনের পথে নয়, পেছনে ফেলে আসা পদচিহ্নে লুকানো থাকে।”
-
সুফি দর্শন বলে এই গল্পের ভেতরে একটা গভীর সত্য লুকানো আছে— নাসরুদ্দিনের গাধার পিঠ চড়া আসলে নিজের নফস বা অহংকারকে চালানোর প্রতীক, আর সেই গাধায় পেছন ফিরে বসা মানে নিজ অতীত, ভুল এবং অভ্যস্ত আত্মপ্রবঞ্চনাকে খোলা চোখে দেখা। এইভাবে, তিনি যেন জানান দেন—নিজেকে চেনার পথটা কখনো কখনো সমাজের চোখে অদ্ভুত লাগে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান ঠিক সেই অদ্ভুত কাজের মধ্যেই অপেক্ষা করে।
আমরা বারবার বলি অদ্ভুত এক উটের পিঠে দেশ চলছে। সেই চলার পথটাকে শুধরে নেয়ার একটা ভালো উপায় হতে পারে মাঝেমধ্যে উটের পিঠে উল্টো হয়ে বসে অতীতে ফেলে আসা পথের ভুলগুলোকে চিনে নেয়া- যেন সোজা হয়ে চলার সময় পুরাতন অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়।
- সংগৃহীত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন