অতি কৈশোর থেকেই কাজী সাইফুজ্জামান মুন্নু নানা ধরনের খেলাধূলা ও ক্রীড়ানুষ্ঠানের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিশেষ করে ফুটবল খেলা ও এ্যাথলেটিকস এর প্রতি নিবেদিত হয়ে কৃতি ক্রীড়াবিদে রূপান্তরিত হন। তাঁর জন্ম ১৯৩৭ সালের ১ এপ্রিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের গোপালপুর গ্রামে। পিতার নাম কাজী আব্দুল মোতালেব। পিতা কাজী আব্দুল মোতালেব প্রথম মহাযুদ্ধের রেজিমেন্টাল সৈনিকরূপে অংশগ্রহণ করেন এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অত্যন্ত অন্তরঙ্গ একনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। একাধারে কবি, সাংবাদিক, লেখক হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে ধুমকেতু পত্রিকার সহ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। “সওগাত” “মোসলেম ভারত”, “নওরোজ”, “মধুমিতা” সহ বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর বহু লেখা মুদ্রিত হয়। তিনি ১৯৪৭-এ কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ।
কাজী সাইফুজ্জামান কৃতি সন্তান হিসাবে অত্র এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। শিক্ষা জীবনে ১৯৫১ সালে নলডাঙ্গা ভূষণ হাই স্কুলে প্রবেশিকা, ১৯৫৩ সালে খুলনার দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে আই এ এবং ১৯৫৫ সালে এ বি এ, ১৯৫৭ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যে এম পাশ করেন। তিনি কর্মজীবনে মাগুরা হোসেন সোহারাওয়ার্দী কলেজে অধ্যাপনা, পরে অবসর গ্রহণ করেন। পেশার বাইরে তিনি নানা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে পূর্ব জার্মানীর রাজধানী বার্লিন কার্ল মার্কস পার্টি কলেজ থেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের উপর এক বছরের একটি মৌলিক শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৭৩ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত ১০ম বিশ্ব ছাত্র ও যুব উৎসবে অংশগ্রহণ। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি নানা সাফল্য ও শিরোপা স্বীকৃতি অর্জন করেন। এই সময়কালে তিনি নানা শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের বেষ্ট প্লেয়ার ট্রফি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫১ সালে আন্তঃ কলেজ ফুটবলের চূড়ান্ত খেলায় “ফিরোজ খান নুন ট্রফি”তে তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালে বি এল কলেজ চ্যাম্পিয়ন। ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন এ্যাথলেট হিসাবে পুরস্কৃত হন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত নানা সূত্রে তিনি খুলনা, যশোর রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলা একাদশের হয়ে ফুটবলে (কখনো দলীয় অধিনায়করূপে) অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৭-তে কলকাতা ১ম বিভাগ ফুটবল দল “এরিয়ান্স ক্লাব”এর পক্ষে তিনি আই এফ এ শিল্ড, ডুরাল্ড কাপ ও রোভার্স কাপে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে রাজশাহী জেলা একাদশের পক্ষে হুইলার শিল্ডে মুর্শিদাবাদ অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৭সালে ত্রিদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় ট্রাঙ্গুলার ফুটবলে পাকিস্তানের পক্ষে অংশ গ্রহণের অনুরোধে এমএ ফাইনাল পরীক্ষার কারণে তাকে অপেক্ষা করতে হয়। ক্রীড়া ক্ষেত্রে যশোর জেলা দলের বিশেষ অবদানের জন্য ‘চাঁদের হাট পদক’ মাগুরার ক্রীড়া ও শিক্ষাঙ্গণে অবদানের জন্য ‘মোখলেসুর রহমান পদক’-এ ভূষিত করা ছাড়াও ‘মাগুরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা’র আজীবন সদস্যপদে তাঁকে বরণ করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন