বৈশ্বিক আধুনিকতায় বহু বিবাহ ও বহুগামিতার দ্বন্দ্ব!
বহু বিবাহ বলতে একাধিক বিবাহকে বোঝায়। বর্তমান আধুনিক যুগে একাধিক বিবাহ করার নজির খুবই কম। কেবল স্ত্রীর অসুস্থতা এবং স্ত্রী সন্তান ধারণে অক্ষম হলে পুরুষেরা একাধিক বিবাহ করে। এর বাহিরে একাধিক বিবাহের প্রচলন নাই বললেই চলে। শুধু তাই নয়! একাধিক বিবাহকে সমাজে খারাপ চোখে দেখা হয়। সমাজ মনে করে চরিত্রগত সমস্যার কারণেই মানুষ একাধিক বিবাহ করে। আসলেই কি তাই?
বিবাহ হচ্ছে দুইটা সম্পর্কের মাঝে সামাজিক চুক্তি। যার মাধ্যমে দুইটা সম্পর্কের বৈধতা দেওয়া হয়।
অথচ, বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ককে তেমন খারাপ নজরে দেখা হয়না যতটা একাধিক বিবাহকে(বৈধ) দেখা হয়।
বিবাহ বহির্ভূতভাবে একাধিক নারীর কাছে যাওয়া-আসা যেটাকে বহুগামী বলা হয়। বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ককে বৈশ্বিক আধুনিকতার দোহায় দিয়ে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। যার দরুন অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়া ও বহুগামিতা সহজলভ্য হয়ে গেছে। অন্যদিকে নারী-পুরুষের বয়স, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় আইন ও কিছু মনস্তাত্ত্বিক নীতিকথা দিয়ে বিবাহকে কঠিন করা হয়েছে। এটা ধোঁকাবাজি বৈকি!
পশ্চিমা থেকে কিছু ধার করা বস্তাপঁচা দর্শন এদেশে বাস্তবায়ন করতে আমাদের সাথে ঢের ধোঁকাবাজি করা হয়েছে। যার বিষবাষ্প সমাজ ও রাষ্ট্রের অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। অবৈধ প্রেম, পরকীয়া ও বহুগামিতা আড়ম্বরপূর্ণ ভাবেই চলছে। অথচ যথা সময়ে বিবাহ ও বহুবিবাহ নামক বৈধ সম্পর্ককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হয়েছে।
বহু বিবাহের কিছু সুফল বলা যেতে পারে।
*যে সকল পুরুষের যৌনশক্তি অতিরিক্ত, এক স্ত্রীতে তাদের চাহিদা নিবারণ হয়না, এমন পুরুষদের জন্য একাধিক বিবাহ জরুরী। যাতে করে অতিরিক্ত চাহিদা নিবারণের জন্য তার বৈধ রাস্তা সুগম হয়। তা না হলে তিনি অতিরিক্ত চাহিদা নিবারণের জন্য অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়া বা বহুগামিতায় লিপ্ত হয়ে যেতে পারেন। যেটা সমাজের জন্য হুমকি স্বরুপ। পুরুষেরা সাধারণ বৈচিত্র্যময় স্বাদ আস্বাদন করতে চায়। তবে তারা যদি সেটা বৈধ পন্থায় না পান তাহলে, অবৈধ পন্থায় স্বাদ আস্বাদন করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক।
*পুরুষের কামবাসনা জোয়ারভাটার মতো। যখন-তখন কামবাসনা জেগে উঠতে পারে। এমতাবস্থায়, যদি তার স্ত্রী অসুস্থ বা গর্ভবতী অথবা বাড়িতে না থাকে, তাহলে তিনি জৈবিক চাহিদা নিবারণের জন্য নৈতিক পন্থা খুঁজে পাবেন না। এমন পরিস্থিতিতে সে অনৈতিক পন্থা খুঁজতে পারে। যেটা তার জন্য কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
এমন পরিস্থিতিতে একাধিক স্ত্রী থাকলে তার অনৈতিক পরিমন্ডলে পা বাড়ানোর কোনো সুযোগ থাকেনা। কেননা, তার জরুরত একাধিক স্ত্রীর মাধ্যমে পুরা করতে পারছে।
*আমাদের দেশে পুরুষের থেকে নারীর সংখ্যা ঢের বেশি। একটা জরিপে দেখা গেছে যে, প্রায় ১ কোটি ত্রিশ লক্ষ নারী স্বামীহীন জীবনযাপন করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই অসহায়। অনেকে দারিদ্রতা ঘোচানোর জন্য বাধ্য হয়ে গার্মেন্টস বা মিল কলকারখানায় কাজ করছে। যেখানে তারা অহরহ যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। যার কারণে, নারী মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে দিনদিন।
যে সকল নারীরা অসহায়, সমাজের সামর্থবান পুরুষেরা যদি তাদেরকে একাধিক বিবাহের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করে, তাহলে এদেশে নারী অসহায়ত্ব কমে আসবে এবং নারী মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটবেনা।
এতে করে অসহায় এবং স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন হবে বলে মনে করি।
তবে, এদেশের মানুষের মানব মননে একাধিক বিবাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে। এবং নারীদেরকে "নারী জাগরণের" নামে যথাস্থান থেকে রাস্তায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এবং তাদেরকে ভোগের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অফিসের কলিগ, অফিসের বস সহ এমনকি অফিসের পিয়ন পর্যন্ত একই নারী ব্যবহার করছে। পাশের বাসার আঙ্কেল, পাশের বাসার দেবর-ভাসূর সবাই একই নারী ব্যবহার করছে। এতে কোনো সমস্যাই নেই!
অথচ, বৈধ পন্থায় একাধিক বিবাহ করলে তার চরিত্রের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
নারীবাদি নামক কিছু ভুঁইফোঁড় মাথামোটা নারী, এদেশে পশ্চিমের এজেন্ডা ও পশ্চিমা আদর্শ বাস্তবায়ন করতে "নারী প্রগতি" নামক কিছু স্লোগান উত্থাপন করে এদেশের নারীসমাজকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার বাহানায় নিমজ্জিত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের নারী সমাজ নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে পশ্চিমা আদর্শ চর্চায় নিজেদেরকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিবেদন করছে।
বৈশ্বিক আধুনিকতার পেছনে বিশাল এক পাপী সম্রাজ্য বাস করে। আধুনিক বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম থাকলেও এর অন্তরালে রয়েছে চরিত্র অবক্ষয়ের গুরুত্বপূর্ণ রসদ। প্রযুক্তির আদলে গড়ে ওঠা এই পাপী সম্রাজ্যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কের মতো নোংরা কাজ সহজলভ্য হয়ে গেছে।
যার কারণে, বিবাহের প্রতি যুবক-যুবতীদের অনীহা তৈরি হয়ে গেছে। কেননা, জৈবিক চাহিদা যদি সহজ ভাবেই পূরণ করা যায় তাহলে, অর্থদণ্ড দিয়ে কে-ইবা বিয়ে করতে চায়!
তার মানে হলো; বিবাহ কঠিন! এবং অশ্লীলতা সহজ!
পশ্চিমা বিশ্বে বিবাহ রীতি ভিন্ন। সহজে কেউ বিবাহে জড়ায় না! তবে একসঙ্গে
থাকে। যার যখন মনে চাচ্ছে যারতার সাথেই শারীরিক সম্পর্ক করছে। যাকে আমরা বহুগামিতা বলি।
পশ্চিমা আদর্শ লালনকারী বহুগামী সুশীলদের কাছে প্রশ্ন;
আচ্ছা, একাধিক নারীর সাথে অবৈধভাবে যৌনমিলন করতে পারলে বৈধভাবে একাধিক বিবাহ করলে সমস্যা কী?
আমাদের দেশে বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধের আইন আছে! অথচ যারা বাল্যকালে ঝোপঝাড়ে গিয়ে নিজেদের সতীত্ব হারায় এবং বাল্যকালে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাদের ব্যাপারে কোনো আইন নাই। আজিব!
তাহলে কি মূল সমস্যা বিবাহেই?
দুঃখিত! মূল সমস্যা হল আমাদের মাথায়!
পশ্চিম থেকে আমদানি করা কিছু অযাচিত চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার কারনে, আমাদের চিন্তাগত পরিবর্তন ঘটেছে, ফলশ্রুতিতে আমরা সবকিছুতে পশ্চিম কেদ্রিক চিন্তাভাবনা করি।
বহুগামিতা বা অবৈধভাবে একাধিক নারী-পুরুষের যাথে যৌন মিলন করার কিছু কুফল উল্লেখ করা যেতে পারে।
*প্রথমত বহুগামী পুরুষ-নারী কেউই যৌনমিলনের আসল স্বাদ গ্রহন করতে পারেনা। কারণ, অবৈধ মিলনের মধ্যে আবেগ-ভালোবাসা থাকেনা। এজন্য অবৈধ মিলনের মাধ্যমে চরম যৌন অনুভূতি অনুভাব করা সম্ভব না। পক্ষান্তরে, বিবাহের মাধ্যমে বৈধ আবেগ-অনুভূতি তৈরি হয়, যা যৌন মিলনের সময় অনুভূতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
অবৈধ মাধ্যমে কখনোই বৈধতার স্বাদ আশা করা যায়না।
*বহুগামী নারী-পুরুষের বহুগামিতার কারণে, বিভিন্ন ধরণের রোগের জন্ম নেয়। এর মধ্যে অন্যতম রোগ হলো "এইডস"। যা নারী এবং পুরুষের জীবনে কালোমেঘ হয়ে নেমে আসে। এই রোগ এমনই মারাত্মক! যে, আস্তে আস্তে মানুষকে ভেতর থেকে শেষ করে ফেলে। অত:পর চিরতরে ধংস করে দেয়।
*সুন্দর একটা সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে, নৈতিক ও চরিত্রবান একটা জাতি দরকার। নৈতিক ও চরিত্রবান জাতি ছাড়া একটা সুস্থ ও সুন্দর সমাজ আশা করা যায়না!
যারা পরকীয়া, অবৈধ সম্পর্ক ও বহুগামিতায় লিপ্ত, তাদের নৈতিকতা ও চরিত্রের অবক্ষয় ঘটে। যার কুপ্রভাব জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ভোগ করতে হয়। এই অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া জাতি, সমাজের জন্য ব্যাপক হুমকিস্বরূপ!
এজন্য, সুস্থ, সুন্দর ও নৈতিকতা সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে হলে যথা সময়ে বিবাহ বা একাধিক বিবাহের বিকল্প নেই।
অবৈধভাবে একাধিক পরকীয়া, একাধিক প্রেম, একাধিক নারী গমন করতে পারলে বৈধ ভাবে একাধিক বিবাহ করাটা দোষের কী?
যারা এটাকে দোষনীয় চোখে দেখে তারা মূলত নারীদেরকে রাস্তায় নামিয়ে বিনামূল্যে ভোগ করতে চায়!
আধুনিক বাস্তবতা: বর্তমান সময়কালটা আধুনিক সময়কাল। বিশ্ব আজ প্রযুক্তির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তি মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করলেও নীতি-নৈতিকতার উন্নতি সাধন করতে পারেনি। যার পুঁজি হচ্ছে অশ্লীলতা এবং বেহায়াপনা, সে কিভাবে নীতি-নৈতিকতার উন্নতিসাধন করবে?
বর্তমান প্রজন্ম আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া চলতেই পারেনা। তথ্য-প্রযুক্তিতে খুবই আসক্তি, বিশেষ করে ইন্টারনেট এবং সোশ্যালমিডিয়াতে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও বর্তমান জেনারেশনের নৈতিক মূল্যবোধকে ধংস করে দিয়েছে।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মারফতে, অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়া, পর্ণগ্রাফি মহামারী আকারে পদার্পণ করেছে। পরকীয়া নামক নোংরা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কত সাজানো-গোছানো সংসার ধংস হয়েছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই।
তরুণ-তরুণীদের অযাচিত পর্ণগ্রাফিতে আসক্তি, অল্প বয়সেই তাদের যৌবন ধংস করে দিচ্ছে।
এতে করে তারা পরবর্তী বৈবাহিক জীবন নিয়ে বিড়ম্বনায় ভুগছে।
যেখানে বিবাহ পূতপবিত্র সম্পর্ক।
মোদ্দকথা হলো; কোনোভাবেই অবৈধ পথে না হেটে সামর্থবান পুরুষদের যথা সময়ে এক বা একাধিক বিবাহ করে পূতপবিত্র সুখময় দাম্পত্যজীবন লাভ করা উচিত।
#Admin_post
মুহাম্মাদ আবু রায়হান গিফারী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন