🐄 গরমের পরে বৃষ্টি হলেই গবাদিপশুর জন্য বিপদ!
নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় প্রতিদিনই মরছে গরু-ছাগল, আপনি জানেন কি?
বছরের কিছু সময় প্রকৃতি যেন এক চরম পরীক্ষা নেয়। দীর্ঘদিন প্রচণ্ড গরম, খরা, পানির সংকট—এসব পার হওয়ার পর একদিন হঠাৎ আসে এক পশলা বৃষ্টি। জমিনে প্রশান্তির ছোঁয়া লাগে। মৃতপ্রায় মাঠে সবুজ ঘাস গজাতে শুরু করে। এই সময় কৃষক ও খামারিরা খুশি হয়ে সেই কচি ঘাস পশুকে খেতে দেন। কিন্তু জানেন কি, এই এক পশলা বৃষ্টিই হতে পারে আপনার প্রিয় গরু-ছাগলের মৃত্যুর কারণ?
❗এটা একটা মারাত্মক বিষক্রিয়া—নাইট্রেট পয়জনিং
এই রোগটি নাইট্রেট নামক একটি রাসায়নিক যৌগের কারণে হয়ে থাকে, যা সাধারণত কচি ঘাসে থাকে বেশি। বিশেষ করে বৃষ্টির পরে যেসব ঘাস গজায়—যেমন শ্যামা, হেলেঞ্চা, বোরো, রাই ঘাস, ধনচা ইত্যাদি, এসব ঘাসে নাইট্রেটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
নাইট্রেট সরাসরি প্রাণিকে মেরে ফেলে না। কিন্তু গরুর পেটে থাকা উপকারী অণুজীব (রুমেন মাইক্রোফ্লোরা) নাইট্রেটকে রূপান্তর করে নাইট্রাইটে, আর সেটিই বিপদ ডেকে আনে। নাইট্রাইট রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে বিক্রিয়া করে মিথোহিমোগ্লোবিন তৈরি করে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে প্রাণি শ্বাস নিতে পারে না এবং অক্সিজেনের অভাবে ধীরে ধীরে মারা যায়।
⚠️ কখন এই রোগ বেশি হয়?
মে থেকে জুলাই মাসে, যখন গরমের পর বৃষ্টি হয়
খালি পেটে গরুকে মাঠে দিলে
অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করা জমির ঘাস খেলে
হঠাৎ বেশি পরিমাণে কচি ঘাস খাওয়ালে
দূর্বল, রোগাক্রান্ত বা অনাহারে থাকা পশুদের ক্ষেত্রে
🐮 লক্ষণগুলো কী কী?
হাপরের মতো শ্বাস নেয়
গা কাপতে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না
পাতলা পায়খানা
নাক-মুখ থেকে লালা ঝরে
জিহ্বা, চোখ ও নাকের চারপাশে নীলচে রঙ
খাওয়া বন্ধ করে দেয়
দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়
বেশি মাত্রায় হলে ২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু ঘটে
⚰️ মৃত পশুর শরীরে যা দেখা যায়
চকলেট রঙের রক্ত (অক্সিজেনবিহীন রক্ত)
টিসু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাদামী বা গাঢ় বর্ণের
হৃদস্পন্দন থেমে যায়, মস্তিষ্কে অক্সিজেন না পৌঁছালে মূর্ছা যায়
❌ কখনোই করবেন না যেসব ভুল
✅ বৃষ্টির পরপরই মাঠ থেকে ঘাস কেটে গরুকে খাওয়াবেন না।
✅ ঘাস শুকিয়ে, ভালোভাবে পরীক্ষা করে তারপর দিন।
✅ খালি পেটে কচি ঘাস খাওয়াবেন না। আগে কিছু শুকনা খাবার দিন।
✅ সন্দেহ হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন, নিজে কিছু করার চেষ্টা না করাই ভালো।
✅ ইউরিয়া সারের পরিমাণ কমান। জমি থেকে গজানো ঘাসে কতটুকু নাইট্রেট আছে তা পরীক্ষার সুযোগ থাকলে অবশ্যই তা করুন।
❗পরিবেশের জন্যও এটা ভয়ংকর!
যেসব জমিতে অতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়, সেই জমি থেকে নাইট্রেট ধুয়ে গিয়ে আশপাশের পানিতে মিশে যায়। এর ফলে নদী, খাল-বিল, পুকুরের পানি দূষিত হয়। জলে থাকা প্রাণিকুল যেমন মাছ, শামুক, ব্যাঙ প্রভৃতির প্রাণহানি ঘটে। জলজ উদ্ভিদও বাড়তে থাকে অস্বাভাবিকভাবে—যাকে বলা হয় ইউট্রোফিকেশন। ফলে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট হয়।
📣 এখন আপনার কথা বলার পালা!
আপনার খামারে বা আশপাশে কি গরু হঠাৎ মারা গেছে? আপনি কি এই নাইট্রেট বিষক্রিয়ার কথা আগে জানতেন?
আপনার অভিজ্ঞতা অন্য খামারিদের চোখ খুলে দিতে পারে।
👇
কমেন্টে জানান—এই বিষয় নিয়ে আপনি কী জানেন? কেউ কি এর শিকার হয়েছেন আপনার আশেপাশে?
☔ বৃষ্টির পর মাঠে গজানো সুন্দর সবুজ ঘাস দেখে যদি আপনি খুশিতে গরুকে তা খাওয়াতে দেন—তবে একটু থামুন!
এই ঘাসে থাকতে পারে বিপজ্জনক নাইট্রেট, যা একরাতে আপনার প্রিয় গরুকে মেরে ফেলতে পারে।
⚠️ শ্বাসকষ্ট, লালা পড়া, খাওয়া বন্ধ—সবই হতে পারে নাইট্রেট বিষক্রিয়ার লক্ষণ।
বিশেষ করে মে-জুলাই মাসে এবং বৃষ্টির পরপর এই সমস্যা বেশি হয়।
👉 আপনার পশু নিরাপদ তো?
👇 কমেন্টে লিখুন—আপনি এই রোগ সম্পর্কে জানতেন কি?
📢 শেয়ার করে অন্য খামারিদের সতর্ক করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন