১.
৪২ কেজি ধান থেকে সর্বনিম্ন ৩০ কেজি চাল হয়। চাতাল মালিকের কাছে কৃষক ৪২ কেজি ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয় ৬০০/৭০০ টাকায়। আপনি ৩০ কেজি চাল কিনেন ১৮০০ টাকায়। মাঝখানে কোন পরিশ্রম ছাড়াই চাতাল মালিকের লাভ ৭০০/৮০০ টাকা। অর্থাৎ কৃষকের বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি মুনাফা করছে চাতাল মালিক এবং উৎপাদন যন্ত্রে কোন প্রকার অবদান না রেখেই। এখন এক একজন কৃষক যদি ২০ মন ধান বিক্রি করে আর এমন কৃষক যদি ১০০ জন হয় তবে চাতাল মালিকের বিনা শ্রমে মুনাফা এক মৌসুমে ১৪ লক্ষ টাকা। এখন এই চাতাল মালিক যদি ৩ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনে কুরবানি দেয় আর তখন যদি আপনি বলেন যে সে নিজের টাকা দিয়ে দামী গরু কিনেছে তাতে কার কি বলার আছে তাহলে আপনার বুদ্ধি, জ্ঞান, শিক্ষা নিয়ে সন্দেহ আছে। যেই কৃষক ছাড়া খাদ্য উৎপাদন অচল সেই কৃষক কেন ১৫০০ টাকায় এক মন ধান বিক্রি করতে পারছে না, কেন কৃষক এক মন ধান বিক্রি করে এক কেজি গরুর মাংসও কিনতে পারছে না অথচ কৃষকের উৎপাদিত ধান বিক্রি করে চাতাল মালিক ৩ লাখ টাকার গরু কিভাবে কিনে সেই প্রশ্ন যদি না করতে পারেন তবে আপনি কি শিখলেন আর কি শিক্ষিত হলেন?
২.
গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে পোশাক শ্রমিক ৭০০০/৮০০০ টাকা মজুরি পায়। অথচ তাদের পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরি হওয়া উচিৎ ২০,০০০ টাকা তাও প্রফিট শেয়ার ছাড়াই। ফলে ৩০০ শ্রমিকের শ্রমে চলা ফ্যাক্টরির মালিক উৎপাদিত পণ্যের মুনাফার বাইরেই শুধুমাত্র শ্রম ঠকিয়ে বাড়তি টাকা পকেটে ভরছে প্রতিমাসে ১২০০০ x ৩০০ = ৩৬ লক্ষ টাকা। আর শ্রমিকের মজুরি মেরে দিতে পারলে তো কথাই নেই। এখন এই ফ্যাক্টরি মালিকের ছেলে বছর শেষে যদি বাপকে ২ কোটি টাকা দামের গাড়ি উপহার দেয় আর আপনি যদি ভাবেন- নিজের টাকায় গাড়ি কিনে গিফট করতেই পারে, তাহলে আপনার জ্ঞান, বুদ্ধি, শিক্ষা নিয়ে সন্দেহ করাটা কি দোষ হবে? স্রেফ শ্রমের মূল্য ঠকিয়ে যেই টাকা পাওয়া যায় সেটারে মুনাফা বলে না, বলে ডাকাতি। চোখের সামনে শত সহস্র মানুষের প্রাপ্য হক ডাকাতি করে বড়লোকি ফুটানি মারাচ্ছে অথচ সেটা যদি আপনার চোখে স্বাভাবিক লাগে তবে পড়াশুনা করে কি শিখলেন? কি নৈতিকতা শিখলেন?
৩.
এলপি গ্যাস কোথা থেকে আসে? এলপি গ্যাসে প্রধানত আসে খনিজ পেট্রোলিয়াম রিফাইনারিতে শোধন করার সময় বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে। ১২ কেজির এলপি গ্যাস আপনি কিনছেন ১৫০০ টাকায় অথচ এই ১২ কেজি এলপি গ্যাস বসুন্ধরাওয়ালারা ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে নিচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ সিলিন্ডার প্রতি বসুন্ধরাগ্রুপের মালিকের মুনাফা সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা যা তার ক্রয়মূল্যের থেকেও বেশি। এটারে কি মুনাফা বলে নাকি ডাকাতি? এখন মাসে যদি ১০ লাখ সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হয় তবে বসুন্ধরাগ্রুপের মালিকের স্রেফ ফাওএর উপর মুনাফা একশো কোটি টাকা। বসুন্ধরার মালিক পুত্র সায়েম সোবহানের এমন একটা রোলস রয়েস আছে যেটা দুনিয়াতে মাত্র ২০ পিস আছে। এখন আপনি যদি বলেন তার টাকা আছে তাই সে কিনেছে তাহলে আপনার জ্ঞান, বুদ্ধি, শিক্ষা নিয়ে সন্দেহ হলে সেটা কি দোষ?
আপনার কি উচিৎ না সরকারকে চাপ দেয়া যেন বসুন্ধরাওয়ালারা ৫০০ টাকার গ্যাস ৮০০ টাকার চেয়ে বেশি দামে না বিক্রি করতে পারে? অথচ সেটা না করে বসুন্ধরা গ্রুপের টাকার গরম দেখে আহা উহু করছেন, লিবারেলিজমের বটিকা খেয়ে বলছেন যার টাকা আছে সে খরচ করতেই পারে। অথচ এটা ভাবছেন না যে সরকারকে যদি বাধ্য করানো যায় সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ৮০০ টাকায় নির্ধারণ করতে তাহলে বছর শেষে যেই দশটা হাজার টাকা সাশ্রয় হবে সেটা আপনারই হবে।
৪.
খুব সহজ অংক হচ্ছে- শোষণ, শ্রম ডাকাতি, দামে ঠকানো ছাড়া দুনিয়াতে উচ্চমাত্রার বড়লোক হওয়া সম্ভব না। অসম্ভব কোনভাবেই। সেটা বুঝানোর জন্যই উপরে ৩টা অংক দিলাম। আরো বুঝতে চাইলে কার্ল মার্ক্সের শ্রমের উদবৃত্ত মূল্যতত্ত্ব নিয়ে একটু পড়াশুনা করেন। আর কিছু না হোক, নিজে ঠকছেন কিনা এবং নিজের নৈতিক অবস্থান ঠিক আছে কিনা সেই অবস্থানটা সঠিক রাখতে এই জ্ঞান দরকার।
অতএব, নিজের জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে বিচার করেন যে কেউ বড়লোকি ফুটানি দেখালে সেটারে বাহবা দিবেন নাকি স্রেফ জবাবদিহিতায় আনবেন যে কোন আকাম করে এই ফুটানি মারাতে পারছে?
৫.
আল্লামা ইকবাল বলেছেন- যে দেশের বুকে পায় না চাষীরা পেটের ক্ষুধার অন্ন, সে মাটির প্রতিটি শষ্যকণায় আগুন ধরিয়ে দাও।
নৈতিকতা, মার্ক্সবাদী জ্ঞান এবং সচেতনতার আগুন জ্বলে উঠুক আপনাদের সবার ভিতরে, যেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাক লিবারেলিজমের বিষাক্ততা, সাম্প্রদায়িকতা ও শোষকের সকল কৌশল। সামনের দিন হোক সাম্যের।
(Post Courtesy :- Mehedi Minto)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন