এক রাজার ৪ স্ত্রী ছিল।
৪র্থ স্ত্রীকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। সোনা, হীরা, দামি পোশাক দিয়ে সাজাতেন তাকে। আর সবসময় তার খেয়াল রাখতেন।
৩য় স্ত্রী ছিল রূপসী ও আকর্ষণীয়। রাজা তাকে নিয়ে গর্ব করতেন, কিন্তু মনে মনে ভয়ও করতেন — এ হয়ত একদিন অন্য কাউকে ভালোবেসে তাকে ছেড়ে চলে যাবে!
২য় স্ত্রী রাজার পাশে থেকে সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করত, বিশ্বাসযোগ্যও ছিল, কিন্তু রাজার ভালোবাসার জায়গায় ৪র্থ এবং ৩য় স্ত্রীর মতো গুরুত্ব পায়নি সে।
১ম স্ত্রী ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। সে নীরবে সবকিছু সহ্য করত, স্বামীকে ভালোবেসে সবসময় পাশে থাকত, স্বামীর শরীর খারাপ করলে রাত জেগে সেবাযত্ন করত, কিন্তু কখনোই সে তার প্রাপ্য অধিকার পায়নি।
একদিন রাজা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি বুঝলেন, তার সময় ফুরিয়ে এসেছে। তখন ভাবলেন, মৃত্যুর পরে কে তার সঙ্গী হবে?
প্রথমে ৪র্থ স্ত্রীকে ডেকে বললেন,
“তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছি আমি, তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে?”
সে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল, “না, একদম না!” এবং রাজাকে ছেড়ে চলে গেল।
এরপর ৩য় স্ত্রীকে একই কথা জিজ্ঞাসা করলেন রাজা। জবাবে ৩য় স্ত্রী বলল, “আমি কেবল মৃত্যুর দিন পর্যন্ত থাকতে পারি, এরপর আমি নতুন জীবন শুরু করব।”
এবার ২য় স্ত্রীকে ডাকলেন তিনি। ২য় স্ত্রী বলল, “আমি কেবল তোমার কবর পর্যন্ত যাব, কিন্তু সেখানেই আমার পথ শেষ!”
হঠাৎ রাজা শুনলেন, কারও শান্ত কণ্ঠস্বর, “আমি তোমার সঙ্গে যাব, যেখানেই যাও না কেন!”
রাজা অবাক হয়ে দেখলেন, সেই কণ্ঠ ১ম স্ত্রীর। তাকে এতটাই ক্লান্ত, দুর্বল আর অবহেলিত দেখাচ্ছিল যে, রাজার চোখে পানি এসে গেল।
তিনি বললেন, “আমি যদি তোমার যত্ন নিতাম! আজ বুঝছি, আসলে তুমিই ছিলে আমার সবচেয়ে আপন!”
শিক্ষা: এই ৪ স্ত্রীর প্রত্যেকেই আমাদের জীবনের একেকটি প্রতীক।
৪র্থ স্ত্রী হলো আমাদের শরীর, যাকে আমরা সবচেয়ে বেশি যত্ন নিই, সাজাই; কিন্তু মৃত্যুর পর এটাই আমাদের সবার আগে ছেড়ে যায়।
৩য় স্ত্রী হলো সম্পদ, যেটা মৃত্যুর পর অন্যের হয়ে যায়।
২য় স্ত্রী হলো পরিবার ও বন্ধু, যারা কেবল কবর পর্যন্তই আমাদের সঙ্গে থাকে।
আর ১ম স্ত্রী হলো আমাদের আত্মা, যাকে আমরা সবচেয়ে বেশি অবহেলা করি, অথচ মৃত্যুর পরে একমাত্র ওটাই আমাদের সঙ্গে থাকে।
জীবনে ব্যস্ততা থাকবেই, কিন্তু আত্মার যত্ন নিতে ভুলবেন না। কারণ শেষ পর্যন্ত সেই আপনার চিরসঙ্গী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন