এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫

ভালোবাসা_নাকি_মোহ  লেখিকা_শেখ_মরিয়ম_বিবি  পর্ব ১

 মাঝ রাতে নিজের ঘর্মাক্ত স্বামীকে বড় বিধবা জা'য়ের ঘর থেকে এলোমেলো অবস্থায় বের হতে দেখে ঠিক কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত তা যেন এই মুহূর্তে ভুলেই গেছে প্রভাতি! নির্বাক হয়ে শুধু দেখছে মানুষটার বলিষ্ঠ শরীরে মাত্র লাগিয়ে আসা চিহৃ,বোঝাই যাচ্ছে খুব চট জলদি বের হয়েছে কাজ শেষ করে যাতে কেউ জানতে না পারে আর তাই তো গায়ের এলোমেলো পোশাক ও ঠিক করে আসতে পারেনি! কিন্তু ভাগ্য হয়তো সহায় ছিলো না তাই না হাতে ধরা পড়ে গেল! 


ধরা পড়ে গেছে? আদৌ কি এমনই! না প্রভাতি তো জানতো এই বিষয়ে আগে থেকেই কিন্তু কখনো তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেনি কারন তাতে সমস্যা বাড়তো, সংসারে জটিলতা সৃষ্টি হতো! তারা অস্বীকার করতো , উল্টো আমার উপর আরোপিত হতো সংসার বিচ্ছেদের বদনাম ! লোক মুখে রটিত হতো বিধবা জা''য়ে'র প্রতি হিংসা করেই এরকম মিথ্যা কথা রটাচ্ছি, মৃত ভাসুরে'র সন্তানদের দায়িত্ব না নেওয়ার জন্য‌ই এই পরিকল্পনা রচিত হয়েছে! তাই তো হাতে নাতে ধরার অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু তাতে কি হতো? 


এক বছরের জানা শোনার পর বিয়ের আসরে বসে ছিলাম আমি প্রভাতী মিনহাজ আবদুল্লাহ আল রাফি'র সাথে! পারিবারিক ভাবে ঠিক হ‌ওয়া বিয়েটা আমাদের জন্য‌ই এক বছরের সময় দেওয়া হয়েছিলো যাতে একে অপরকে জানতে পারি,বুঝতে পারি! সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী ই চলছিলো! বিয়েও হলো প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর! আড়াই বছরের একটা মেয়েও আছে! অথচ? 


মাস পাঁচেক হলো মাত্র বড় ভাসুর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে গেছেন,রেখে গেছেন পরিপূর্ণ এক যুবতী স্ত্রী আর ছয় বছরের একটি ছেলে এবং দুই বছরের একটি মেয়ে! এক কথায় ভরপুর সংসার! আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির দুই ছেলে এক মেয়ে! মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দুই ছেলে নিয়ে যৌথ সংসার গড়ার ইচ্ছায় উনি দুই ছেলে ব‌উকে নিয়েই এক ছাদের নিচে থাকেন! সুখেই ছিলো সব কিছু!  বিয়ে করে এই বাড়িতে আসার পর থেকেই দেখেছি আমার স্বামী আর বড় জা মুক্তার মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব! অনেকে এটাকে ভালো চোখে দেখে তো অনেকেই খারাপ! আমার কাছে কোনরকম লেগেছে তা বুঝতে পারিনি কারন আমি এসব নিয়ে ভাবার ই সময় পাই না! বিয়ের আগে চাকরি করতাম, বাচ্চা হ‌ওয়ার আগ অবধি সেই চাকরি‌ই করতাম তাই ঘরোয়া এইসব বিষয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করি নি! তাছাড়া আমার শ্বাশুড়ির মতে তাদের মধ্যে ভাই বোনের মতো পবিত্র সম্পর্ক আমিও তাই বিশ্বাস করতাম কারন আমিও তো আমার ছোট ভাই আর বড় ভাবির মাঝে ভালো বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক দেখেছি! সত্যি বলতে আমার ভাবীর কাছে আমরা দুই ভাইবোন হলাম সন্তানের মতোই তাই সেই সম্পর্ক নিয়ে খারাপ চিন্তা করাও আমার জন্য গুনাহ মনে হতো! তাছাড়া আমার স্বামী অথবা জা কে কখনো কোন বাজে অথবা চক্ষুশূল কাজ করতে দেখিনি তাহলে সেই সম্পর্ক নিয়ে কোনরকম বাজে চিন্তা করার মতো বিচ্ছিরি কাজ কেমনে করি!


তবে সব টা যেন হঠাৎ ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গেলো।আর সেই ঝড় ছিলো আমার ভাসুরে'র হঠাৎ মৃত্যু! আল্লাহ জানেন কেন এই বয়সে ঐ রকম তরতাজা একজন মানুষ কে নিয়ে গেলেন তবে ( আল্লাহর) তার কোন কাজের কৈফিয়ত চাওয়ার দুঃসাহস তো আমার মতো নগন্য বান্দির নেই তাই আর সেই বিষয়ে কথা না ই বলি।


ভাসুরে'র মৃত্যুতে বাড়ি হলো নির্জন নিরব! সব কিছু কেমন থমথমে হয়ে গেছে ! পৃথিবীর নিয়ম অনুসারে এখন ভাসুরে'র বিধবা আর এতিম শিশুদের দায়িত্ব আমাদের মানে আমার স্বামীর উপর ই বর্তায়! তাতে আমার বিশেষ কোন অসুবিধা থাকার কারন নেই, কারন আমি বাস্তবতা বুঝি! আর হয়তো এই বোঝাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো! 


ভাসুরে'র তার স্ত্রী হিসেবে বড় জা যেমন ভেঙে পড়ে, অসহায় হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি আমার স্বামী রাফিও বড় ভাইয়ের হঠাৎ প্রয়ানে স্তব্ধ হয়ে যায়! আর এটাই স্বাভাবিক! 


হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়া দুই নর নারী একে অপরের সহায়ক হতে চেষ্টা করে, আমিও চুপচাপ দেখে যাই, দেখে যাই বললো মিথ্যা বলা হবে সমর্থন করে যাই!হৃদয়ের আত্নীয়,আ*ত্নার আত্নীয় বিয়োগে একে অপরকে শান্তনা দিতে চেষ্টা করে, তার জন্য ই তাদের বেশির ভাগ সময় কাছাকাছি থাকতে হয়। কিন্তু কে জানতো তারা এক অপরের সহায় হতে গিয়ে আমাকে অসহায় করে দিবে! তারা কাছাকাছি থাকতে গিয়ে এতটাই কাছাকাছি হবে যে আমাকেই ছিটকে পড়ে যেতে হবে!


বাড়িতে আজ মিটিং বসেছে! স্বামী মারা যাবার নয় মাসের মাথায় কিভাবে মুক্তা ভাবী গর্ভবতী হয়! তাও পুরো সাড়ে চার মাসের!এত দিন নাকি বুঝতে পারে নাই তাই কাউকে কিছু বলতে পারে নাই কিন্তু হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ অসুস্থ মনে হ‌ওয়ায় শ্বাশুড়ি মা জোর করেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় আর তখনই বিস্ফোরিত হয় পুরো বিষয়টি!


আমার স্বামী বসে আছে আমার শ্বশুরের পাশে,তার থেকে কিছুটা দুরে দাঁড়িয়ে আছে আমার জা মুক্তা! শ্বশুরের সামনা-মুখী হয়ে বসেছেন আমার ননাস রাজিয়া সুলতানা, আর তার স্বামী মোতাহার হোসেন এবং আমার শ্বাশুড়ি মা! আর আমি লজ্জায় চুপ করে বসে আছি নিজ ঘরের খাটের দাসা চেপে ধরে! কি ভাবছেন কাঁদছি? উহু কাঁদছি না ! এরকম বিষয়ে কাঁদার কোন কারন ‌ই নেই! কেন কাঁদবো? কেন কাঁদবো আমি! আমি কি কোন অপরাধ করেছি? আমি তো কেদেঁছিলাম প্রথম দিন! উহ দিন নয়! রাত! প্রথমবার যখন আমার স্বামী আমার গভীর ঘুমের সুযোগ নিয়ে নিজের শরীরের জ্বালা মেটাতে বড় ভাইয়ের বিধবার ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ছিলো! যখন ঘুম ভেঙ্গে তাকে পাশে না পেয়ে সন্দেহে বশত ভাসুরে'র দরজায় কান পেতে ছিলাম! শুনতে পেয়েছিলাম তাদের সুখ আর্তনাদ! বুঝতে পেরেছিলাম তাদের মনোবাসনা পূরনের সর্বোচ্চ চেষ্টা! 


সন্দেহ কেন করেছিলাম? হঠাৎ কি আর সন্দেহ হয়? না! ধীরে ধীরে হয়! যখন ই অনুভব করলাম শান্তনা'র বানী আওড়াতে আওড়াতে তিন মাসের বিধবা ভাবীর সাথে আমার স্বামী প্রেম বানী'ও আওড়াচ্ছে! সকলের কাছে তা কেবল রসিকতা মনে হলেও আমার কাছে তা রস নিগাড়ানো'র প্রথম ধাপ‌ই মনে হয়েছিলো! পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিক প্রেমিকাকে পটাতে যেই বাক্য আওড়ায় তা নিশ্চয়ই ভাবীর সাথে আওড়ায় না তাও কিনা সদ্য বিধবা ভাবীর সাথে আবার সেই পুরুষ যদি হয় এক বাচ্চার বাপ! সে যাই হোক দিনদুপুরে তাদের কর্মকান্ড ই আমাকে সন্দেহ বাতিক হতে বাধ্য করেছে। আর তার প্রমান ও পেয়ে যাই সেই রাতে! তবে বুঝতে পারছিলাম ঘটনা একদিনে নয় কারন প্রথম বারেই কেউ এতটা সাবলীল ভাবে কারো ঘরে প্রবেশ করতে পারে না তার মানে প্রায় সময়‌ই এরকম কাজ করা হতো আমার নাকের ডগায় তা আমার মতো নির্বোধ বুঝতে পারে নি আর তার ই খেসারত এখন দিতে হচ্ছে!


আমার স্বামীকে হাতে নাতে ধরেছি তাও আজ প্রায় সাড়ে তিন মাস হয়ে গেছে! তাকে দেখে নিরবে ঘরে প্রবেশ করি,সে কিছু সময় আতংক,ভয় লজ্জায় কিংবা হতভম্ব হয়েই হয়তো দাঁড়িয়ে ছিলো দরজার সামনে! বুঝতে পারেনি বেচারা! তার মানবিক কাজের বহিঃপ্রকাশ যে এমনে ঘটবে,তার মানব দরদী মনের ভেতরের পাতা যে এভাবে আমার

 সামনে উন্মোচিত হবে তা হয়তো ক্ষুনাক্ষরে'ও আন্দাজ করে নি! 


এর পর থেকে আলাদা হলো আমাদের বিছানা! সে খাটে আর আমি আড়াই বছরের শিশু কে নিয়ে মেঝেতে মাদুর পেতে থাকতে শুরু করলাম! আর যাই হোক অন্যের একবার ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার করার অভ্যাস আমার নাই! রুচিতে কুলোয় না! আর এটা তো আস্তো একটা মানুষ! যদিও এটা প্রথম আমি‌ই ব্যবহার করেছি তবুও এটা এখন আরো একজনের ব্যবহৃত ! বলা যায় আমার বেড়ে রাখা খাবারের মধ্যে হঠাৎ করেই অন্য একজন নিজের নোং*রা হাত দিয়ে দিলো সেটা নিশ্চয়ই আমি খাবো না! এটার ক্ষেত্রে ও তেমনি!


তবে তাতে আমার স্বামীর উপর বেশি একটা প্রভাব ফেললো না কারন যত‌ই বলি সেও পুরুষ মানুষ! আর তাদের কাছে শরীরের ক্ষুধা মেটানো'ই জরুরী সেটা হোক হালাল কিংবা হারাম! তার ক্ষেত্রে সেই বানী মিথ্যা হ‌ওয়ার কোন সুযোগ ই নেই। 


অবশ্য প্রথম ১৫ দিন সে কিছুটা শান্ত ছিল, একদম আদর্শ স্বামী হ‌ওয়ার প্রচুর প্রচেষ্টা করলো তাতে আমার হৃদয়ে এক চুল পরিমান টনক ও নড়লো না!  অবশ্য সে সেই রাত থেকে শুরু করে পরের পনেরো দিন হাজার ভাবে আমাকে বোঝাতে চেয়েছে,তার করা কাজের হাজারটা যুক্তি দেখাতে চেয়েছে , ক্ষমাও চেয়েছে এমনকি দুই চারবার পায়ে ধরেও ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রতিবারই আমি এড়িয়ে গিয়েছি! আমি কোন কথা শোনার বা বোঝার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাই নি কারন প্রতিবার ই আমার মন বলেছে একবার যে ঠকাতে পারে সে বারবার পারে! সুতরাং এইরকম বিশ্বাসঘাতক, বেইমান, প্রতারক, ছলনাকারীদের দ্বিতীয় সুযোগ দিতে নেই!আমিও তাই করেছি! তবে ভেবেছি হয়তো শুধরে যাবে কিন্তু তেমন কিছু হলো না‌। বরং পনেরো দিন পরেই সে আমাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবারও নিজের কাজে লেগে পড়ে! আর ধীরে ধীরে দূরে সরে যায় আমার মন মস্তিষ্ক থেকে!


দীর্ঘ দেড় ঘন্টা মিটিং চললো তাতেও কোন সুফল পাওয়া গেছে বলে মনে হলো না,এর মধ্যেই সম্ভবত 

মুক্তা ভাবীর মা বাবা ও চলে এসেছে।আমি যদিও দেখিনি তবুও বাইরের চিৎকার চেঁচামেচিতে তাদের গলার ও শব্দ পাচ্ছি! তাই ধারনা করেই বললাম।পুরো সময়'টাই থেমে থেমে শুনতে পেলাম আমার ননাসে'র মুখ থেকে নির্গত হ‌ওয়া কিছু বিচ্ছিরি শব্দ যা ছিলো আমার জায়ের জন্য! তার পাশাপাশি নিজের ভাইকে ও দিলো লানত! আর আমার জন্য চিরায়িত শান্তনা'র বানী শুধু শুনতে পেলাম না তাদের কোন শব্দ! 


আমি জানি এই সমস্যার সমাধান আপাতত নাই! কারন যত‌ই হোক আপাতত জা মহিলা গ*র্ভবতী, আর এই অবস্থায় বিচার বলতে যা হ‌ওয়া উচিত তা আমাদের মডার্ন জগতে চলে না। ঐদিকে যত‌ই হোক পেটের বাচ্চাটা এই বাড়ির সম্পদ বলেই আখ্যায়িত হচ্ছে যদিও এটা কেবল বাচ্চাকে বাঁচানোর একটা প্রচেষ্টা জা"য়ের মা বাবা করছে।আমিও অবশ্য তাতেই খুশি কারন যাই হোক এতে ঐ গর্ভে থাকা অবুঝ প্রাণের কোন দোষ নেই। তাছাড়া এমন একটা সময়ে জানাজানি হলো যে এবরশন ও করানো যাবে না ,মা বাচ্চার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে! তাহলে এখন কি হবে? বাচ্চা পেটে থাকতে বিয়ে তো হয় না,আর সবচেয়ে বড় কথা আমার স্বামীর তো ব‌উ আছে! একটা চান্দের মতো বাচ্চা মেয়েও আছে তাহলে? কিভাবে কি হবে! এইদিকে এই কথা যদি বাইরে জানাজানি হয় তাহলে তো এই বাড়ির এত বছরের অর্জিত সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে! আবার আমার স্বামী মহাশয় গোঁ ধরে বসে আছে,সে বিয়ে করতে পারবে না! কোন মতেই সে তার স্ত্রী সন্তানদের অধিকার ভাগ করতে পারবে না! তার এইসব ছ্যাবলা কথায় আমার পেট ফাটানো হাসি আসছে! মানে শোয়ার সময় মনে হয়নি তার স্ত্রী অধিকার সে ভাগ করছে এখন যখন জানাজানি হলো, বাচ্চার দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপার আসলো তখন তার মনে হচ্ছে অধিকার ভাগ করার যাবে না!  


ভালোবাসা_নাকি_মোহ 


লেখিকা_শেখ_মরিয়ম_বিবি 


পর্ব ১


নেক্সট পর্ব এই পেজে দিয়ে পোস্ট করা হবেনা নেক্সট পর্ব (গল্পের শহর) পেজে পোস্ট করা হবে সকল পর্ব সবার আগে পেতে নিচের সবুজ (গল্পের শহর) লেখা চাপ দিয়ে পেজটি ফলো দিয়ে রাখুন।

.

 👉 পূর্ণতার শহর  

.

..

কোন মন্তব্য নেই:

নিজে ভালো থাকুন! পরিবার কে ভালো রাখুন!

 অনেকেই শোকেসে গাদাগাদি করে অনেক বছর ধরে জিনিস জমিয়ে রাখেন।  নিজেরা মেলামাইন ব্যবহার করেন।  মেহমান আসলে কাঁচের জিনিস বের করেন আবার ধুয়ে তুলে...