ছবিটি দেখে আঁতকে উঠবেন না। এর নাম ডাস্ট মাইট
ছবিটি দেখে আঁতকে উঠবেন না।
আপনার বসার ঘরের সুদৃশ্য কার্পেটে, শোয়ার ঘরের বালিশে, চাদরে, কম্বলে, ম্যাট্রেসে এরা হাজারে হাজারে ছেয়ে থাকে। আপনি খালি চোখে এদের দেখতে পান না বলে চিনতে পারছেন না।
এরা হচ্ছে ডাস্ট মাইট। এরা কোনো পোকা নয়, বরং মাকড়সার সঙ্গে বেশ কিছু মিল আছে এদের। আটটি ঠ্যাং, সর্বাঙ্গে লোম-- সব মিলিয়ে খুবই ভয়ানক দেখতে এদের। একটা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে আপনার বালিশটার দিকে তাকালে আপনি তার ওপর আর কিছুতেই ঘুমোতে পারতেন না।
ডাস্ট মাইট বেশির ভাগ লোকের কোনো ক্ষতি করে না, কিন্তু যাদের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে বলে আমরা বলি, তাদের আসলে অ্যালার্জিটা এদেরই জন্য হয়। না, এরা স্বয়ং আমাদের ক্ষতি করে না, করে এদের মল এবং পচাগলা দেহাংশ। আবার মলত্যাগ এরা খুব বেশিই করে, দিনে প্রায় কুড়ি বার। কারো কারো শরীরে এই বস্তুগুলি খুবই মারাত্মক অ্যালার্জিক রিয়্যাকশান ঘটায়। ফুলের রেণুর পর ডাস্ট মাইটের ড্রপিংই হচ্ছে সবচেয়ে কমন অ্যালার্জেন।
হাঁচি, সর্দি, কাশি, সাইনাস কনজেশান, চোখ লাল হওয়া, চামড়ায় লাল দাগ, চুলকুনি, একজিমা-- এমনকি শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে এদের জন্য।
গরম, আর্দ্র, অন্ধকার পরিবেশ এদের স্বর্গরাজ্য। ৫০% এর চেয়ে কম আর্দ্রতায় এরা বাঁচে না। কিন্তু বর্ষাকালে যখন ঘরের মধ্যে দড়ি টাঙিয়ে ভিজে কাপড় মেলে রাখেন, তখন এদের আর পায় কে! মহানন্দে বংশবিস্তার করে যায় ঘরের জমে থাকা ধুলোর মধ্যে। আপনারই ঝরে যাওয়া চামড়ার কুচি খেয়ে। আপনি পঞ্চাশটা হাঁচি দিয়ে ভাবেন, এই রে বাইরে বৃষ্টি ভিজেই ঠাণ্ডা লেগে গেল। অথচ আপনার শত্রু ঘরের মধ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
করোনা ভ্যাক্সিনের সম্ভাব্য সাইড এফেক্ট হিসেবে আমাদের অনেকেরই অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশান, মাস্ট সেলের ক্ষরণ অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আগে যে অ্যালার্জিতে একটা হাঁচি হয়ে বন্ধ হয়ে যেত, এখন সেই অ্যালার্জিতে শ্বাসকষ্ট হয়ে ইনহেলার অবধি নিতে হচ্ছে। অ্যাণ্টিঅ্যালার্জিক খেয়ে খেয়ে ঝিম খেয়ে যাচ্ছেন। তাহলে উপায়?
শত্রুকে আইডেণ্টিফাই করতে পারলে উপায়ও বেরুবে। কিন্তু এ যে ঘরের শত্রু। ঘর ছেড়ে যাবেন কোথায়? তাহলে ঘরটাকেই নিজের বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। শত্রুর যাতে বাড়বাড়ন্ত না হয়। কীভাবে?
১. ধুলোর হাত থেকে বাঁচতে ঘরের সব কটা জানলা দরজা বন্ধ করে দেবেন ভাবছেন? একদম ভুল। দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ধুলোটারে রুখি, আলো বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি? এরা আলো সইতে পারে না। তাই সব কটা জানলা খুলে দাও না।
২. নিয়মিত বিছানার চাদর, বালিশের ওয়াড় বদলাতে হবে। বিছানা, বালিশ মাঝে মাঝে রোদ খাওয়াতে হবে। রোজ নারকোল ঝাঁটা দিয়ে বিছানা ঝেড়ে ধুলোমুক্ত রাখতে হবে। ঘরের কার্পেট, আলমারির মাথা, পর্দা, মশারি, আসবাবের ধুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। ঝাড়ার সময় ধুলো উড়তে থাকলে মাস্ক পরে থাকুন, তবে এটা সমাধান নয়, মাস্ক পরে তো কেউ ঘুমোয় না। আপনি যখন নিশ্চিন্তে বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমোবেন, তখন এরা সারি সারি ঢুকে যাবে আপনার নাক দিয়ে। ওয়াশিং মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার থাকলে এই বেলা কাজে লাগান।
৩. ঘরকে যথাসম্ভব শুকনো রাখুন। ঘরের মধ্যে ভিজে কাপড় টাঙানো বন্ধ করুন। বন্ধ ঘর ঝাঁট দেওয়া, মোছা করবেন না। জানলা খুলে, ফ্যান চালিয়ে শুকিয়ে নিন। বেশি বাদলার দিনে ঘর অত মোছার দরকার নেই।
৪. যাদের শ্বাসকষ্ট আছে, তারা বিশেষ ধরনের এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
৫. অ্যালার্জি গুরুতর হলে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা শুরু করুন।
ইদানিং এই সমস্যা ঘরে ঘরে সাংঘাতিক বেড়ে গেছে। এই বিষয়ে আরো জানতে হলে ইণ্টারনেটে বিশদে পড়াশোনা করে দেখতে পারেন।
collected
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন