এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফাইলকয়েন: কম্পিউটারের খালি হার্ড ডিস্ক হতে পারে আয়ের উৎস

 ফাইলকয়েন: কম্পিউটারের খালি হার্ড ডিস্ক হতে পারে আয়ের উৎস


আমরা সাধারণত ছবি বা ভিডিও সংরক্ষণের জন্য গুগল ড্রাইভ বা আইক্লাউড ব্যবহার করি। কিন্তু সেখানে আমাদের ব্যক্তিগত ফাইলগুলি একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির সার্ভারে জমা থাকে। কোম্পানি চাইলে আপনার ফাইল মুছে দিতে পারে, আবার হ্যাকাররা তাদের সার্ভার থেকে তথ্য চুরিও করতে পারে।


ফাইলকয়েন (Filecoin) এই ব্যবস্থার একটি আধুনিক ও নিরাপদ সমাধান। এটি কোনো কোম্পানির মালিকানাধীন নয়, বরং এটি বিশ্বের হাজার হাজার সাধারণ মানুষের কম্পিউটারে ছড়িয়ে থাকা একটি বিশাল নেটওয়ার্ক।


সহজ একটি উদাহরণ দেওয়া যাক: ধরুন কারো বিয়ের একটি ভিডিও আছে। গুগল ড্রাইভে রাখলে সেটি কেবল গুগলের সার্ভারে থাকবে। কিন্তু ফাইলকয়েনে সেই ভিডিওটি ১০০টি ছোট ছোট টুকরো হয়ে আমেরিকা, ইউরোপ বা এশিয়ার ১০০ জন মানুষের কম্পিউটারে জমা হবে। এর ফলে কোনো একজনের কম্পিউটার নষ্ট বা হ্যাক হলেও আপনার ভিডিওর কোনো ক্ষতি হবে না। বাকিদের থেকে তা সহজেই উদ্ধার করা যাবে। 


এটি ২০১৭ সালে Protocol Labs নামের একটা গ্রুপ শুরু করে। তখন তারা অনলাইনে সবচেয়ে বড় ফান্ড সংগ্রহ করে। মাত্র কয়েক মাসে ২৫৭ মিলিয়ন ডলার জোগাড় করে। ২০২০ সালের অক্টোবরে এর আসল সার্ভিস চালু হয়। এখন ২০২৫ সালে এর নেটওয়ার্কে Netflix-এর এক বছরের সব ভিডিওর সমান জায়গা তৈরি হয়েছে। এটি স্টোরেজের "Airbnb" এর মত কাজ করে। যার কম্পিউটারে খালি জায়গা আছে সে ভাড়া দেয়। যার ফাইল রাখতে হবে সে সেই জায়গা ভাড়া নেয়।

.


ফাইলকয়েন কীভাবে কাজ করে?


ফাইলকয়েন নেটওয়ার্ক মূলত দুই ধরনের মানুষের সমন্বয়ে চলে:


১. স্টোরেজ মাইনার (ভাড়া দাতা): এরা হলেন সেই সব মানুষ যাদের কম্পিউটারে অনেক খালি জায়গা (Hard Disk) পড়ে আছে। তারা সেই খালি জায়গা নেটওয়ার্ককে ভাড়া দেন। বিনিময়ে তারা FIL নামের একটি ডিজিটাল মুদ্রা (ক্রিপ্টোকারেন্সি) আয় করেন। 


এই FIL কয়েনগুলি বিন্যান্স (Binance) বা কয়েনবেস (Coinbase)-এর মত প্ল্যাটফর্মে আসল টাকায় রূপান্তর করা যায়। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ১টি FIL-এর দাম প্রায় ৪-৬ ডলার। তবে মাইনার হতে হলে ভাল মানের হার্ড ডিস্ক, দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন।


২. ক্লায়েন্ট (ভাড়া গ্রহীতা): এরা হলেন সাধারণ ব্যবহারকারী বা কোম্পানি যাদের ফাইল রাখার জন্য নিরাপদ জায়গা দরকার। তারা মাইনারদের কাছ থেকে খুব সস্তায় জায়গা ভাড়া নেন।


ফাইল জমার প্রক্রিয়া: আপনি যখন কোনো ফাইল আপলোড করেন, সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছোট ছোট এনক্রিপ্টেড (লক করা) টুকরাতে ভাগ হয়ে যায়। এই টুকরাগুলি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ১০ জিবির একটি ফাইল ১০০টি টুকরা হয়ে ১০০ জন মাইনারের কাছে জমা হতে পারে।

.


নিরাপত্তা


নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফাইলকয়েন কোনো ব্যক্তির ওপর বিশ্বাস না করে গাণিতিক প্রমাণের ওপর নির্ভর করে। এই পদ্ধতিটি মূলত দুটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়:


প্রুফ-অফ-রেপ্লিকেশন (Proof-of-Replication): এটি হল ফাইল জমা রাখার প্রাথমিক নিশ্চয়তা। যখন কোনো মাইনার আপনার ফাইলটি গ্রহণ করে, সেটিকে সে একটি বিশেষ ডিজিটাল সংকেত বা এনক্রিপশনের মাধ্যমে নিজের হার্ড ডিস্কে সিলগালা করে রাখে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেটওয়ার্ক নিশ্চিত হয় যে, মাইনার আপনার আসল ফাইলটির একটি অনন্য কপি তৈরি করে সফলভাবে জমা রেখেছে। 


এটি কেবল ফাইল রাখা নিশ্চিত করে না, বরং এটিও নিশ্চিত করে যে অন্য কোনো মাইনারের ফাইলের সাথে এটি মিলে যাচ্ছে না—অর্থাৎ আপনার ফাইলের একাধিক ব্যাকআপ কপি বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষিত আছে।


প্রুফ-অফ-স্পেসটাইম (Proof-of-Spacetime): ফাইলটি একবার রাখার পর মাইনার সেটি মাঝপথে মুছে ফেলল কিনা, তা যাচাই করার জন্য এই নিয়মটি কাজ করে। নেটওয়ার্ক প্রতি নির্দিষ্ট সময় অন্তর মাইনারকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চ্যালেঞ্জ পাঠায়। মাইনারকে তখন প্রমাণ দিতে হয় যে ফাইলটি এখনও তার কম্পিউটারে অক্ষত অবস্থায় আছে। একে বলা হয় সময়ের (Time) সাথে জায়গার (Space) প্রমাণ। 


যদি কোনো মাইনার এই প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় বা ফাইলটি মুছে ফেলে, তবে নেটওয়ার্ক তাকে জরিমানা করে এবং তার অর্জিত রিওয়ার্ড কেটে নেয়। ফলে মাইনার সবসময় আপনার ফাইলটি সযত্নে রাখতে বাধ্য থাকে।

.


ফাইলকয়েন ব্যবহারের সুবিধা


ফাইলকয়েন ব্যবহারের সুবিধাগুলিকে আমরা দুই দিক থেকে দেখতে পারি। যারা ফাইল জমা রাখতে চান তাদের জন্য এটি যেমন সাশ্রয়ী, যারা নিজেদের কম্পিউটারের খালি জায়গা ভাড়া দিতে চান তাদের জন্য এটি তেমনি আয়ের একটি উৎস।


১. ক্লায়েন্ট বা ব্যবহারকারী হিসাবে আপনার সুবিধা


আপনি যদি গুগল ড্রাইভ বা আইক্লাউডের বিকল্প হিসেবে ফাইলকয়েন ব্যবহার করেন, তবে সবচেয়ে বড় সুবিধা পাবেন খরচের ক্ষেত্রে। সাধারণ ক্লাউড স্টোরেজে ১ টেরাবাইট (TB) জায়গার জন্য বছরে যেখানে প্রায় ২৭,০০০ টাকা খরচ হয়, ফাইলকয়েনে সেই একই পরিমাণ জায়গা মাত্র ১,২০০ থেকে ২,৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া সম্ভব। দ্বিতীয়ত, এখানে নিরাপত্তার স্তর অনেক শক্তিশালী। আপনার ফাইলটি এনক্রিপ্টেড হয়ে বিশ্বের হাজার হাজার কম্পিউটারে ছড়িয়ে থাকে, তাই কোনো একক হ্যাকারের পক্ষে আপনার সম্পূর্ণ তথ্য চুরি করা অসম্ভব। এছাড়া এখানে কোনো কোম্পানি বা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই। গুগল বা অন্য কোম্পানি চাইলে যেকোনো সময় আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে, কিন্তু ফাইলকয়েনে আপনার ফাইলের ওপর মালিকানা শুধু আপনারই থাকে। এমনকি যে মাইনারের কম্পিউটারে আপনার ফাইল আছে, সেও সেটি খুলে দেখতে পারবে না।


২. মাইনার বা ভাড়া দাতা হিসাবে আপনার সুবিধা


আপনার যদি একটি ভাল মানের কম্পিউটার এবং অব্যবহৃত হার্ড ডিস্ক থাকে, তবে সেটি হতে পারে আয়ের নতুন একটি পথ। আপনার কম্পিউটারের খালি জায়গা ভাড়া দিয়ে আপনি ঘরে বসেই মাসে ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে আপনার বাংলাদেশের কম্পিউটারে বসে হয়ত আমেরিকার কোনো বড় কোম্পানির ডেটা সংরক্ষণ করছেন এবং বিনিময়ে 'FIL' নামক ডিজিটাল মুদ্রা পাচ্ছেন। যদিও মাইনিং সেটআপ করতে শুরুতে হার্ড ডিস্ক ও বিদ্যুতের পেছনে কিছু বিনিয়োগ (৫০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা) করতে হয়, কিন্তু একবার সেটআপ হয়ে গেলে এটি অনেকটা প্যাসিভ ইনকামের মত কাজ করে। বাজারে FIL মুদ্রার দাম বাড়লে আপনার আয়ের পরিমাণও কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে।

.


কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা 


সুবিধা অনেক থাকলেও ফাইলকয়েন ব্যবহারের কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এর মধ্যে অন্যতম হল ফাইলের গতি বা অ্যাক্সেস টাইম। গুগল ড্রাইভ বা আইক্লাউড থেকে কোনো ফাইল ক্লিক করার সাথে সাথে সেটি ওপেন হলেও, ফাইলকয়েন নেটওয়ার্ক থেকে ফাইল ফিরিয়ে আনতে কিছুটা বেশি সময় লাগে। সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফাইলের টুকরাগুলিকে খুঁজে এনে পুনরায় একত্রিত করতে ২ থেকে ৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।


এছাড়া মাইনার হিসাবে কাজ শুরু করাটা সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা কারিগরি জটিলতাপূর্ণ। এই সেটআপের জন্য ভাল মানের হার্ডওয়্যার, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রয়োজন হয়, যা শুরুতে ৫০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকার একটি বড় বিনিয়োগের দাবি রাখে। 


পাশাপাশি এটি যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি বা 'FIL' টোকেনের ওপর নির্ভরশীল, তাই বিভিন্ন দেশের সরকারি আইনি কড়াকড়ি বা ক্রিপ্টো বাজারের অস্থিতিশীলতা আপনার আয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই উচ্চ নিরাপত্তার পাশাপাশি এই ছোটখাটো সীমাবদ্ধতাগুলি মাথায় রেখেই ফাইলকয়েন ব্যবহার করা উচিত।

.


বাস্তব উদাহরণ


ধরুন, একটি ছোট সিকিউরিটি কোম্পানি তাদের ১০ বছরের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করতে চায়, যার মোট আকার প্রায় ২০ টেরাবাইট। গুগল ক্লাউড বা এই জাতীয় প্রথাগত প্ল্যাটফর্মে এত বিশাল ডেটা রাখার জন্য তাদের বছরে প্রায় ৫.৫ লাখ টাকা গুণতে হবে, যা একটি ছোট ব্যবসার জন্য অনেক বড় বোঝা। কিন্তু ফাইলকয়েন ব্যবহার করে তারা বিশ্বের বিভিন্ন মাইনারদের কাছ থেকে এই একই জায়গা মাত্র ২৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকায় পেতে পারে। 


যেহেতু ফাইলগুলি এনক্রিপ্টেড বা লক করা থাকে, তাই যার কম্পিউটারে ফুটেজগুলি জমা আছে সে নিজেও তা দেখতে পারবে না। এতে খরচ যেমন ৯০% কমে যায়, তেমনি তথ্যের গোপনীয়তাও শতভাগ নিশ্চিত হয়।

.


ফাইলকয়েন মূলত স্টোরেজ বা তথ্য সংরক্ষণের ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে। এটি সাধারণ মানুষকে তাদের অব্যবহৃত কম্পিউটারের জায়গা থেকে আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে, আর ব্যবহারকারীদের দিচ্ছে সাশ্রয়ী ও সর্বোচ্চ নিরাপদ একটি ব্যবস্থা। 


বড় সাইজের ফাইল, দীর্ঘমেয়াদী ব্যাকআপ বা ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সস্তায় এবং নিরাপদে রাখতে চাইলে ফাইলকয়েন একটি চমৎকার বিকল্প। যদিও ফাইল ফিরে পেতে গুগলের চেয়ে কয়েক মিনিট বেশি সময় লাগতে পারে এবং মাইনিং সেটআপে শুরুতে কিছুটা পরিশ্রম আছে, তবুও তথ্যের নিরাপত্তা ও মালিকানার প্রশ্নে এটি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা সমাধান।


#ডেট #নিরাপত্তা #ফাইলকয়েন

কোন মন্তব্য নেই:

সকাল ৭টার সংবাদ তারিখ : ২২-১২-২০২৫

 সকাল ৭টার সংবাদ তারিখ : ২২-১২-২০২৫ আজকের সংবাদ শিরোনাম ................................................... * চির নিদ্রায় শায়িত হলেন মহান মু...