#গল্পের_নামঃ_ত্যাগ
{{{{{ পর্ব-৩}}}}}
//
কিছু দিন পরের কথা!
ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা শেষ তাই লামিয়ার সাথে আর দেখা হয় না, আমিও তার সাথে আর যোগাযোগ করি নি। থাক সে ভালো থাক।
ক্লাশ নাই, আমি এমনি পড়ছিলাম, তখন দেখলাম কিছু মানুষ রাস্তার পাশে ভিড় করছে, এক ছাত্র কে জিজ্ঞেস করলাম, সে বলল ওখানে নাকি কমিশনার দোকান আর নিজের বসার যায়গা করবে।
।।
আমি এগিয়ে ওখানে গেলাম।
আমি- কি সমস্যা কি?
একজন-এটা সরকারী মাটি, এটার রাস্তার মাটি, তাই এই দেওয়াল ভাঙতে হবে।
আমি- আপনারা কারা?
একজন-আমরা কমিশনার ভাইয়ের লোক।
আমি- সেটা তো বুঝলাম, তো আপনারা কারা যে এই দেওয়াল ভাঙবেন?
একজন- এই দেখেন উকিল ভাড়া করে নিয়ে এসেছি।
।।
প্রধান শিক্ষক- ইমরান! তুমি এদের পারবা না, আমি অনেক চেষ্টা করেছি যে স্কুলের সামনে ক্লাব করবেন না কিন্তু কে শুনে কার কথা?
আমি- আপনি শান্ত হন, আমি দেখছি।
আমি- কয় নোটিশ কোথায়?
একজন-উকিল ভাই, কাগজ দেখান।
।।
উকিল আমাকে একটা কাগজ দেখালো?
আমি সেটা দেখে হাসতে শুরু করলাম।
আমি- কোন স্কুল থেকে পড়ে ওকালতি শেষ করেছেন?
উকিল- মানে?
আমি-কোন কাজ করলে সেটা শক্ত ভাবে করতে হয়, বিশেষ করে সেটা যদি কোন খারাপ কাজ হয়, এখানে কি লিখা আছে? সরকারী সম্পত্তি সরকার চাইলে দখল করতে পারে।
উকিল- হ্যাঁ সেটায়।
আমি-ধারা ১০৭(খ) মনে আছে?
।।
উকিল- না মানে?
আমি- ১০৭(খ) সরকারী সম্পত্তি যদি সরকার সেটা পুনরায় দখল করতে চাই তবে সেটার জন্য বসবাস করার মানুষ বা দখলদার কে ৯০ দিনের আগে নোটিশ দিতে হবে, যদি তারপর ও সে স্থান পরিবর্তন না করে তবে, সরকার সেটা ভেঙ্গে নিজে দখল করতে পারবে।
।।
উকিল- না মানে?
আমি- ধারা ৯৫(ক) সরকারী সম্পত্তি যদি কোন সরকারী বা আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাবহার করে তবে সেটা ভাঙতে হলে অবশ্যই অন্য যায়গা আগে বরাদ্ধ করতে হবে।
উকিল- ...
আমি- ধারা ১৫৬(চ) সেবা বা শিক্ষা মুলক প্রতিষ্ঠান যেমন স্কুল,কলেজ বা হাসপাতাল বা কোন আশ্রম এসব যদি সরকারী সম্পত্তিতে স্থাপিত হয় তবে প্রয়োজনের বেশি ভাঙ্গা যাবে না আর ভাংলেও সেটার ক্ষতিপূরণ সরকার দিতে বাধ্য থাকবে।
।।
উকিল- ...
আমি- কোন স্কুল থেকে পাশ করে উকিল হয়েছেন?
উকিল-আপনি তো শিক্ষক, এসব জানেন কীভাবে?
আমি- এমএসসি করার পাশাপাশি আমি এলএলএম কমপ্লিট করেছি, সামনে মাসে ঢাকায় যাবো পরীক্ষা দিতে। সার্টিফিকেট টা বড় কথা না বড় কথা হলো, আপনি কি শিখলেন আর আপনি সেটা কীভাবে ব্যাবহার করছেন?
।।
আপনার শিক্ষা যদি আপনি ভালো উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করেন তবে সেটা সেবা, যেটা আপনাকে দুয়া দিবে আপনার সামনে পথ আরও প্রসস্থ করবে, আর যদি আপনার শিক্ষা আপনি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করেন তবে সেটা আপনার আত্তা-ই আপনাকে বদ দুয়া দিবে।
সবার কাছে অভিনয় করলেও আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড়িয়ে কি অভিনয় করতে পারবেন?
।।
একজন- হয়েছে হয়েছে আর জ্ঞান দিতে হবে না।
আমি- যে দিন তুমি স্কুলে পড়তা সে দিন যদি কোন শিক্ষক খারাপ ব্যাবহার করার জন্য তোমার পিঠে বেত ভাংতো তবে তুমি আজ এই রকম মানুষ হতে পারতা না...
উকিল- ভাই চলেন, এটা ভাঙ্গা যাবে না।
।।
কমিশনার- কাজটা কিন্তু তুমি ভালো করলা না...
আমি- প্রায় ৮-৯ বছর আগে যখন আমি কলেজের ছাত্র তখন ও একজন কমিশনার আমাকে এভাবে হুমকি দিয়েছিলো, যে তোকে শান্তিতে বাড়ীতে থাকতে দিবো না। আজ সে কেস খেয়ে জেল খাটছে, গত কাল গেছিলাম জেল খানায়, আমাকে দেখে বলল, আমার ছেলে মেয়েদের একটু খেয়াল রাখিস, জীবনে অনেক ভুল করেছি, তারা যেন আমার মতো না হয়, তোর মতো মানুষ করিস।
।।
আমি- আর হ্যাঁ যাবার আগে বেড়া টা আবার দিয়ে দিয়ো।
।।
প্রাধান শিক্ষক- তুমি এতো পড়াশুনা করে এই চাকুরী করছো কেন? আর তোমার মেধাও অনেক ভালো, সাথে তোমার কথার যে বচন, তুমি জীবনে অনেক বড় হবা, এটা আমার ৩০ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলছি।
।।
আমি- আমার বাবা বলে, জীবনে একা সামনে গেলে কোন সুখ থাকে না, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকেই সত্যি কারের সাফল্য থাকে। আমি এই স্কুলে এসেছি আমি যদি বছরে ৫ জন ছাত্র ও আমার মতো করে বের করতে পারি তবে আপনার সমান বয়সে আমার মতো কতো জন ছাত্র বের হবে?
প্রাধান শিক্ষক- একটা কথা বলবো?
আমি-জি বলেন।
।।
প্রাধান শিক্ষক- আমি প্রথম দিন যখন তোমার কাজ কর্ম দেখলাম তখন মনে হলো, আমার স্কুলের খারাপ সময় চলে এসেছে, কিন্তু এই দুই মাসেই অনেক পরিবর্তন এসেছে, এখন ভরসা করি সামনে পরীক্ষাতে অনেক ছাত্রই পাশ করবে।
আমি- দুয়া করবেন।
প্রাধান শিক্ষক- আরেকটা কথা বলতাম, একটু পারিবারিক।
আমি-বলেন।
।।
প্রাধান শিক্ষক- আমার একটা মেয়ে আছে, নাম অনন্যা! এবার ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে, অনেক বিয়ে আসে তার কিন্তু বাবা হিসাবে আমার দায়িত্ব একটা ভাল ছেলের হাতে মেয়েটাকে তুলে দিতে। আমি তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চাই, আমি জোর করছি না, আমার মেয়ের সাথে দেখা করো, কথা বলো। ভালো লাগলে হ্যাঁ বলো। কথা টা তোমার বাবাকে বলতাম, কিন্তু তোমারা এই যুগের ছেলে-মেয়ে তাই ভাবলাম আগে তোমাকে বলি।
।।
আমি- আমাকে আপনার মেয়ের যোগ্য মনে করেছেন এজন্য আমি আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। আমি আগে একবার বিসিএস পরীক্ষা দিতে চাই। জিবনের এখন ও মনে হয় কিছু পাওয়া কিছু দেখা বাকী থেকে গেছে।
।।
প্রাধান শিক্ষক- কোন সমস্যা নাই, তুমি যখন খুশী বিয়ে করবা, শুধু দেখে তোমার পছন্দ হলে বিয়ে ঠিক করে রেখে দিতাম।
আমি- স্যার আমাকে মাফ করবেন, ঝুলিয়ে রাখা কোন কিছু আমি পছন্দ করি না, বিশেষ করে সেটা যদি কোন সম্পর্ক হয়।
আপনি আমার তরফ থেকে না ধরে রাখেন, ভালো ছেলে পেলে আপনি বিয়ে দিয়ে দিবেন।
স্যার থাকেন! ছাত্র রা আমার অপেক্ষা করছে, খেলা এখন ও একটু বাকী আছে।
।।
//
>>>>>>> পরবর্তী পর্ব >>>>>>
ফেইসবুক থেকে নেওয়া