🔲 আগামী ২৫ শে ফেব্রুয়ারি রোজ রবিবার দিবাগত রাত অর্থাৎ দিন শেষ হয়ে যেই রাতটি আসে সেই রাতটি হচ্ছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বান” তথা মধ্য শা'বানের রাত।
🔸 শবে বরাত হচ্ছে গুনাহ মাফের রজনী। তবে শবে বরাত শব্দটি কুরআন হাদীসে কোথাও বর্ণিত হয় নি। হাদীসের ভাষায় এ রাতকে “লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বান” তথা মধ্য শা'বানের রাত বলা হয়েছে।
🔹 আরবীতে শব শব্দের অর্থ রাত্রি, আর বারা'আত শব্দের অর্থ মুক্তি। তাহলে শবে বারা'আত শব্দের অর্থ দাঁড়ালো মুক্তির রাত৷ কিন্তু আমরা বাংলা ভাষায় এর অর্থটি পাল্টে দিয়ে শবে বারা'আতকে “শবে বরাত” তথা “ভাগ্য রজনী” বানিয়ে ফেলেছি। [শবে বরাত অর্থ হচ্ছে ভাগ্য রজনী]
🔸 অথচ আল্লাহ তা'য়ালা এই রাত্রিতে বান্দার গুনাহ সমূহ মাফ করে থাকেন, যেটা কিনা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
🔹 কিন্তু এই রাত্রিতে আল্লাহ তা'য়ালা বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন এই কথাটি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন.!! এই ব্যাপারে যতগুলো হাদীস পাওয়া যায়, তার সবগুলোই জাল হাদীস, আর তাফসীরে যে দু-একটি কথা বলা হয়েছে, সেটাকেও কোনো তাফসীরকারক সমর্থন করেন নি।
🔸 হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে, রাসূল সল্লল্ল-হু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহ তা'য়ালা মধ্য শা'বানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশ-রিক ও হিং-সুক ব্যক্তি ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করে দেন।” [সুনানে ইবনে মাজাহ- ১৩৯০]
🔹 অর্থাৎ এই রাত্রিতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা দুই শ্রেণীর মানুষ অর্থাৎ মুশ-রিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী (হিংসুক) ব্যতীত সকলকেই ক্ষমা করে দেন। তাই আমাদের সকলের জন্য উচিত হচ্ছে প্রতিদিনের ন্যায় এই রাত্রিতেও বেশি বেশি করে ক্ষমা প্রার্থণা করা।
🔸তবে বর্তমানে শবে বারা'আতকে কেন্দ্র করে যে সকল মিলাদ-মাহফিল, জলশা-জুলুশ, হালুয়া রুটি ইত্যাদী খাবারের আয়োজন করা হয়, এসবের কোনো ভিত্তি কুরআন হাদীসে নেই। এসব কাজকে সুন্নাহ এবং জরুরী মনে করে করলে বিদ'আত হবে। আর বিদআতকারীর কোনো ইবাদত আল্লাহ তা'য়ালা কবুল করবেন না এবং বিদআতী ব্যক্তি হাউযে কাউসারেরও পানি পাবে না। [সহীহ বুখারী- ৭২৭৭]
🔹 আবার অনেকে আছে যারা শবে বারা'আতকে কেন্দ্র করে শবে বারা'আতের নিয়তে নির্দিষ্ট করে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে থাকে। এসব আমলেরও কোনো ভিত্তি কুরআন হাদীসে নেই, এসবই মানুষের বানানো আমল
🔸 তবে একটি দুর্বল হাদীসে এই দিনে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। তাই এই দিনে রোযা রাখা সুন্নত আমল নয়, তবে মুস্তাহাব আমল বলা যেতে পারে। আর যেহেতু একটি দূর্বল হাদীসে নফল রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে, তাই কেউ চাইলে এই দিনে নফল রোজা রাখতে পারবে। আর রাসূল সল্লল্লহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে খুব বেশি পরিমাণে নফল রোজা রাখতেন, তাই এই মাসের যেকোনো দিন নফল রোজা রাখা যাবে ইন শা আল্লাহ।
🔹 আবার প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখা সুন্নত। এই রোজাকে আইয়্যামে বীজে রোজা বলা হয়। তাই সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই দিন সমূহে আইয়্যামে বীজের নিয়তে রোজা রাখা যেতে পারে ইন শা আল্লাহ। চলতি মাসের আইয়্যামে বীজের রোজা ২৪,২৫,২৬ শে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শনি, রবি এবং সোমবার রাখতে হবে।
🔸 সর্বোপরি মূল কথা হচ্ছে, আপনারা সকলেই রমাদানের প্রস্তুতি স্বরূপ এই রাত্রিতে সাধ্য মোতাবেক কিছু নফল নামাজ (যেমনঃ- সালাতুত তাসবীহ, সালাতুল হাজত, তাহাজ্জুদ, পূর্বের কাজা নামাজ), কুরআন তিলাওয়াত, জিকির আযকার, তাসবীহ তাহলীল ও তওবা এস্তেগফার পাঠ করতে পারবেন ইন শা আল্লাহ। তবে নির্দিষ্ট করে শবে বরাতের নিয়তে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করার প্রয়োজন নেই, অন্যথায় সেটা বিদ'আত হিসেবে গন্য হবে।
🔲 আমলের নিয়তে এবং দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে লিখাটি কপি করে নিজ নিজ আইডি, স্টোরি এবং গ্রুপগুলোতে পোষ্ট করে দিবেন ইন শা আল্লাহ। এতে করে অনেকেই শবে বারা'আত এবং আইয়্যামে বীজের রোজা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরে উপকৃত হবে ইন শা আল্লাহ 💝✅
ফেইসবুক থেকে নেওয়া