এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫

যুদ্ধ মানেই যারা J*ঙ্গি বিবান, মিসাইল, ড্রোন বা পারমানবিক পাওয়ার বুঝেন তারা চিন্তা ভাবনা আরো আপডেট করেন। এতোদিন পারমানবিক বোমার পাওয়ার দেখা হতো। সামনের দিনে এটাও হয়তো শুধু নামে থাকবে। এখনি আসলে নামে আছে। 

 যুদ্ধ মানেই যারা J*ঙ্গি বিবান, মিসাইল, ড্রোন বা পারমানবিক পাওয়ার বুঝেন তারা চিন্তা ভাবনা আরো আপডেট করেন। এতোদিন পারমানবিক বোমার পাওয়ার দেখা হতো। সামনের দিনে এটাও হয়তো শুধু নামে থাকবে। এখনি আসলে নামে আছে। 


যেমন ধরেন বর্তমানে বিমান থেকেও বেশি জনপ্রিয় ড্রোন, পাইকারী দরে বিমান হাMলার থেকেও জনপ্রিয় টার্গেট কি- লিং। AI দিয়ে ট্রেক করে স্পেসিফিক যায়গায় বো*মবিং।


কিছুদিন আগে মৌমাছির মত মাইক্রো ওয়েপন আবিষ্কার হইছে যেইটা আপনার বেডরুমে এসে মেরে রেখে যাবে কোন প্রমান থাকবে না। 


কিছুদিন আগে লেবাননে ওয়াটকি থেকে বি-স্ফোরণের কথা মনে আছে না? আমাদের প্রত্যেকের হাতে হাতে এন্ডরয়েড ফোন আছে, স্মার্ট ওয়াচ আছে, অলরেডি মাইক্রোচিপ লাগানো শুরু হয়ে গেছে। সিনারিওটা একবার ডিপলি চিন্তা করেন। 


মিলিটারি জগতে আরো এমন অনেক কিছু তারা তৈরি করে রাখছে যেইটার খবর আমরা মৃত্যু পর্যন্ত জানতেও পারবো না। 


যেমন আমরা জানি ইন্টারনেট প্রথম চালু হইছে ১৯৬৯ সালে। কিন্তু এইটা যে ইউএস নেভি সামরিক স্বার্থে ৫০ এর আগেই তৈরি করে নিজেরা সব কিছু পরিক্ষার নিরীক্ষা চালায়া বেনিফিটের জন্য মার্কেটে ছাড়ছে ৬৯ এ সেইটা কয়জনে জানি? 


আজকে চারদিকে Ai এর জয়জয়কার। কিন্তু এগুলা কি এই কয় বছর ধরেই আছে নাকি আরো আগে থেকেই তাদের কাছে ছিলো? আমরা কি জানতে পারবো কখনো? 


সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট এইটাও একটা সামরিক প্রজেক্ট, এখন ইলন মাস্ক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যেই নেট দিচ্ছে সেটা সামরিক বা গোপন কোণ এজেন্ডা না এইটার শিউরিটি কি? 


মুসলিম দেশ গুলার যেসব অ-স্ত্র তার প্রায় সবই তো অন্যদের তৈরি। যু-দ্ধে ব্যবহৃত সিক্রেট জিনিস কখনো একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে নরমালি বিক্রি করে? যদি নিজের জন্য নূনতম থ্রেটও থাকে বা সেগুলার থেকে বহু আপডেট ওয়েপন তাদের কাছে না থাকে তাইলে কি তারা সেটা অন্য কারো কাছে বিক্রি করবে?  


সম মিলিয়ে সামরিক পাওয়ার বলতে আমরা যা বুঝি এইগুলা যে আইওয়াশ না সেইটার কি কোন নিশ্চয়তা আছে?

---


তাই মুসলিমরা শুধু পড়ালেখায় বড় হয়ে কিছু করে ফেলবে আমি এই থিওরিতে বিশ্বাসী না। কারন পুরা সেটাপ এমনভাবে দেওয়া আছে যেইটা থেকে বের হতে মহা প্লাবন লাগবে আর সেইটা একমাত্র যুদ্ধ/জি*হাদ দিয়ে পসিবল। 


এইযে মুসলিম ছেলে মেয়েদের চরিত্র দিন দিন অধপতন হচ্ছে, নামে আমরা মুসলিম হয়ে আছি, ঈমানের লেভেল মাপা গেলে নিজেরাই লজ্জায় মরে যেতাম- এগুলা কি এমনি এমনি হচ্ছে বলে মনে করেন?? 


ট্রিলিয়ন অক্ট্রালিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে এসবের জন্য, সামনে আরো বেশি হবে। লক্ষ একটাই এরা যেন নিজেদের অতীতের মত বীর যো-দ্ধা হতে না পারে। 


এক সময় মুসলিম মেয়েরাও যুদ্ধ যেতো, সেই এবেলিটি তাদের ছিলো কিন্তু এখন ফতোয়াই দেওয়া হয় মেয়েরা যেন ঘর থেকে বের না হয়। পুরুষরা যেন শুধু মসজিদ খানকায় ইসলাম পালন করে। এজন্য দেখবেন অনেকেই রাজনীতি থেকে ইসলামকে দূরে রাখতে চায়।  

----


শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না, আগে ঈমান ঠিক করো, নামাজ না পড়ে কেমনে Fiলি-স্থিন মুক্ত করবা, শুধু সৌদির দোষ নাকি? আর কাউরে চোখে দেখো না? Haমাস হটকারী স্বীদ্ধান্ত না নিলে আজকে এরকম হতো না ব্লা ব্লা যত কিছু দেখেন এইসব ওয়েল প্লান করা জিনিস। ইভেন দেশে বিদেশে যারা এগুলার প্রচারক তারা নিজেরাও হয়তো জানেনা কাদের হয়ে কি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।  


তাই নামের সাথে শায়খ, পীর, আল্লামা, হযরত, মাওলানা, মুফতি, মুফাসসের, ফকিহ ইত্যাদি থাকলেই যারে তারে সত্য মনে করা শুরু কইরেন না। 


শেষ কথা হলো, চিন্তা শক্তি বাড়ান, জ্ঞানী হইলে এমন জ্ঞানী হন যেইটা পাহারের উপর দিয়া জাহাজ নিয়ে যাওয়ার মত হয় যেন স্বপ্নেও কেউ কল্পনা না করতে পারে। তাইলে জ্ঞান দিয়া কিছু সম্ভব কিন্তু প্রচলিত জ্ঞান দিয়া, বড় বড় ডিগ্রী দিয়া খুব বেশি কিছু করা কঠিন।  


এতো বড় লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

মুখ ফিরিয়ে দাও- কাজী শামসুল হক ফেইসবুক স্পনসর থেকে নেওয়া

 মুখ ফিরিয়ে দাও-

কাজী শামসুল হক


প্রত্যেকেরই একটি গন্তব্য থাকে,

যেখানে সে তার হৃদয়ের কম্পাস স্থির করে—

কেউ ফেরে পাহাড়ের দিকে, কেউ পুঁজি আর জাগতিক নগরীর আলোয় বিভ্রান্ত,

আর তোমাকে বলা হয়েছে—

সৎ কাজের দিকে ছুটে চলো,

হয়ে ওঠো অদৃশ্য আলোর এক যাত্রী,

কারণ যেখানেই তুমি থাকো,

একদিন তিনি তোমাদের সকলকে ডেকে নেবেন,

একসাথে, এক কেন্দ্রবিন্দুতে—

যেখানে কোনো ছায়া নেই, শুধু তাঁর আরশের প্রশান্তি।


তুমি যখন বেরিয়ে পড়ো,

মুখ ফিরিয়ে দিও সেই ঘরের দিকে

যেখানে প্রথম আদেশ এসেছিল—

উঠো, পড়ো, জানো, হয়ে ওঠো আলোর বাহক।

এটা কোনো ভূগোলের কেন্দ্র নয়,

এটা সত্যের কেন্দ্র,

যার দিকে মুখ ফেরানো মানে—

মিথ্যাকে অস্বীকার, আর আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেয়া।


তোমরা যারা ছড়িয়ে আছো দূর দূরান্তে,

যেখানেই থাকো,

মুখ তুলে তাকাও সেই দিকেই—

যাতে অন্যেরা—

যারা এখনো অন্ধকারে রয়েছে,

তারা যেন তোমাদের নিয়ে বলার কিছু না পায়।

তাদের ভয় কোরো না,

ভয় করো একমাত্র তাঁকে

যিনি তোমাদের বুকের স্পন্দনও শোনেন,

যিনি তোমাদের প্রতি তাঁর নি‘মাত পূর্ণ করতে চান—

হৃদয় খুলে দিতে চান হেদায়েতের জন্য।


তোমাদেরই মধ্য হতে এক রসূল এসেছিলেন,

যিনি তোমাদেরকে শেখাতেন শব্দের পবিত্রতা,

তোমাদের অজ্ঞতার গহ্বর থেকে তুলে আনতেন আলো,

তোমাদেরকে শিখিয়েছেন কিতাবের বর্ণমালা,

জ্ঞান ও সুন্নাহর সূত্রে বেঁধেছেন জীবন,

যা আগে তোমরা জানতে না—

সে সবও তিনি শেখালেন।


তাই এখন,

তোমরা তাঁকে স্মরণ করো,

যিনি কখনো বিস্মৃত হন না—

তিনিও তোমাদের স্মরণ করবেন

তাঁর অপার রহমতের সুরে।


শোকর করো,

জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে,

কেননা কৃতজ্ঞতাই হলো প্রেমের নিঃশব্দ প্রার্থনা—

আর না-শোকরী যেন অন্ধকারে একাকী হারিয়ে যাওয়া পথিক।

উপমহাদেশের দীর্ঘতম নদী কোনটা?

 বলতে পারো, উপমহাদেশের দীর্ঘতম নদী কোনটা?


সেই কন্টিনেন্টাল ড্রিফটের সময়, ভারত উপমহাদেশ দৌড়ে এসে বুডুম করে ধাক্কা মেরে বসলো ইউরেশিয়ান প্লেট আর বার্মা প্লেট-কে। তাদের মাঝখানে গজিয়ে গেল হিমালয়সুদ্ধ তামাম পাহাড়ের দেয়াল, আর তিনদিকে দেয়াল তুলে আলাদা হয়ে বসে রইলো আমাদের উপমহাদেশ। পশ্চিমে যার একটা দরজা, বিখ্যাত খাইবার পাস, আরেক দরজা পূবে, পাটকাই। উপমহাদেশের এই দেয়াল থেকে নেমে কত কত হিমশৈল নদী হয়ে বয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। 


এর মাঝে সবচে লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছে যে, তার নাম ব্রহ্মপুত্র। কৈলাস রেঞ্জে তার উৎপত্তি, সোজা পূবমুখে গড়িয়ে গোটা তিব্বত পেরিয়ে অরুণাচলে এসে বাঁক নিলো দক্ষিণে। অল্পদূর পরেই ডিব্রুগড়ে মোড় ঘুরে রওনা দিল পশ্চিমে, যাব আসাম-মেঘালয়। বাবারে তাতেও শান্তি নেই, কোচবিহারের আগে কী মনে করে মোড় ঘুরে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়লো বর্তমানের বাংলাদেশে, কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে। জিরোবি না তা বুঝলাম বাপু, তা সোজাসুজিও চলবিনে—বাহাদুরাবাদ এসে আবার মোচড় মেরে চললো পূবে—সেই পূবে, উৎপত্তির পর যেদিকে প্রথম রওনা দিয়েছিল ব্রহ্মপুত্র। ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ হয়ে তার যাত্রা ফুরলো মেঘনা নদীতে।


ব্রহ্মপুত্র যে সে নদী নয়, নামেই বলে, একে তো নদ, তায় ব্রহ্মার পুত্র। তার জন্ম আর গতিপথ নিয়ে চমৎকার এক গল্প আছে। গল্প যদিও জুড়ে গেছে পৌরাণিক চরিত্রের সাথে, কিন্তু তাতে ইতিহাসের উপস্থিতি স্পষ্ট। তা পুরাণ থেকেই শুরু করি?


ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের হাত থেকে অবশেষে কুঠার খসে পড়লো। মাতৃহত্যার পাপে হাতের সাথে তাঁর কুঠার জুড়ে গেছিল। জড়বৎ হাত থেকে কিছুতেই তা সরছিল না। সে কুঠার অবশেষে মুক্ত হলো হিমালয়ে ব্রহ্মকুন্ড খুঁজে পাবার পর। পর্বতের গায়ে ক্ষুদ্র কুন্ড, তাতে জমা হয়ে আছেন স্বয়ং ব্রহ্মার পুত্র। তাঁর মাঝে স্নানে পাপক্ষয় ঘটে, পুণ্যলাভ হয়। যেমন হলো পরশুরামের। কিন্তু এই স্থানে লুকায়িত কেন ব্রহ্মপুত্র? পুণ্যার্থীদের তবে কী উপায় হবে, এতদূর দুর্গম পথ পেরিয়ে তারা পুণ্যস্থানে আসবেই বা কেমন করে?


উপায় বের করলেন পরশুরাম। ব্রহ্মপুত্র নিজেই যাবেন, পথ বানাবেন পরশুরাম। কীভাবে? নিজের কুঠারকে লাঙলের মতো ব্যবহার করে পাহাড়ের গায়ে ফাটল কাটলেন তিনি, নদীপথ টেনে নিয়ে চললেন হিমালয় থেকে ভাটিতে। দৈবগুণে বিশাল আকারপ্রাপ্তি ঘটেছে তাঁর, পাহাড়-পর্বত তাঁর কাছে তুচ্ছ। এই মহাত্রার শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র অবশ্য সাবধান করেছিলেন, "থামবে না। যেখানে তোমার লাঙল থামবে, সেখানেই রহিত হবে আমার যাত্রা।" পরশুরাম থামলেন না, পাড়ি দিলেন দীর্ঘ পথ, পার্বত্য হিমালয় ছাড়িয়ে এসে পৌঁছুলেন ভাটি বঙ্গে। অবশেষে নারায়ণগঞ্জে এসে লাঙল থামলো তাঁর। শেষ হলো ব্রহ্মপুত্র'র গতিপথ আঁকা। যে স্থানে পরশুরামের লাঙল থেমেছিল, নারায়ণগঞ্জের সে স্থানের নাম হলো 'লাঙলবন্দ'।


"আপনি এখানেই থাকুন, নিজ মহিমায় বঙ্গ অঞ্চলে বিরাজ করুন। আমি আপনার কথা প্রচারে যাত্রা করবো সমগ্র অঞ্চলে।" বলে কাশী যাত্রা করলেন পরশুরাম। এদিকে, সুন্দরী শীতলক্ষ্যা কাছেই প্রবাহিত হচ্ছে শুনে নিজের সংযম হারালেন ব্রহ্মপুত্র। প্রবল বিক্রমে এগিয়ে চললেন তার সাথে মিলিত হতে, পথে প্লাবিত করে চললেন জনপদ। বহু প্রাণক্ষয় হলো, কৃষিজমি তলিয়ে গেল। এদিকে শীতলক্ষ্যা ভীত হলেন ব্রহ্মপুত্রের আস্ফালনে। নিজের যৌবন লুকিয়ে পরিণত হলেন বুড়িগঙ্গায়। কিন্তু বার্ধক্যে দেখেও শীতলক্ষ্যাকে চিনতে ভুল করলেন না ব্রহ্মপুত্র। তার ওপর উপগত হয়েই ক্ষান্ত হলেন। এবং চিরদিনের জন্য হয়ে পড়লেন মিতমহিমা।


ততক্ষণে পরশুরাম উপস্থিত হয়েছেন ঘটনাস্থলে। ভর্ৎসনা করে ব্রহ্মপুত্রকে বললেন, "এ আপনি কী করলেন! নিজের সংযম ভুলে গিয়ে কৌমার্য হারালেন, ঘটালেন প্রাণক্ষয়!"

কাতর মিনতি করলেন ব্রহ্মপুত্র, "আমার যৌবন হারিয়ে গেছে। আমার ধারা মিশে গেছে শীতলক্ষ্যায়। আমি আগে বুঝতে পারিনি। এখন আমার কী করার আছে?"

- "আমি আপনাকে অভিশাপ দিলাম। আপনার মৃত্যু হবে। এই পাপেই আপনি মরে যাবেন।"

- "কিন্তু এই যে পুণ্য জল, তার কী হবে? যে নদের জলে স্নান করতে আপনি দিক-বিদিক বলে এসেছেন, সে পুণ্যার্থীদের কী উপায় হবে?"

- "সে উপায় আর নেই। আপনার পুণ্যধারা এখন বিলুপ্ত।"


ব্রহ্মপুত্রের বহু অনুনয়ের পরে অভিশাপ শিথিল করলেন পরশুরাম। চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে ব্রহ্মপুত্রের পুণ্যদানের ক্ষমতা থাকবে। তার বাইরে, সারা বছর এই নদ আর সকল জলধারার মতোই, সাধারণ।


সেই যে ব্রহ্মপুত্রের মরণের কথা বলেছিলেন পরশুরাম, সে মরণ আদতেই ঘটেছিল। ইতিহাস বলে, ১৭৮৭ সালে তিস্তা নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে, ভূপ্রকৃতির বিপুল পরিবর্তন ঘটিয়ে নদীটি এসে পতিত হয় ব্রহ্মপুত্রে। এর আগে সরাসরি পদ্মায় যেয়ে মিশত তিস্তা। কিন্তু এই পরিবর্তনের ফলে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের মিলিত বিপুল জলধারা সোজা দক্ষিণে প্রবাহিত হতে শুরু করে যমুনা নামে। আর ব্রহ্মপুত্র নদের আদি গতিপথ, জামালপুর থেকে লাঙ্গলবন্দ, হয়ে পড়ে শীর্ণ, মৃতপ্রায়।


কিন্তু সে জলধারায়, লাঙলবন্দে, প্রতি বছর চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় পুণ্যস্নান। এখন—বাংলা মাস, আর চান্দ্র তারিখ-টা মিলিয়ে বলো দেখি, আজ কোন তিথি?

সঠিক। চৈত্র মাস, শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথি।


মিথ এবং ফ্যাক্ট হুবহু মেলানো যায় না, আবার মিথের মাঝে ফ্যাক্ট খুঁজে পেলে তাকে ফেলে-ও দেওয়া যায় না। তবে মিথ সর্বদা এডাপ্টিভ, ইতিহাসের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, নতুন বয়ানের সাথে জন্ম দিতে পারে নতুন মিথের। তাই পরশুরামের অভিশাপ আগে ঘটেছিল নাকি তিস্তার গতিপরিবর্তন, সে প্রশ্ন অবান্তর। গল্প শোনাতে তোমাদের ডেকে এনেছিলাম, সে গল্প এইক্ষণে ফুরলো।


তথ্যসূত্র :

১। বঙ্গদেশি মাইথলজি (২য় কিস্তি) -রাজীব চৌধুরী - সতীর্থ প্রকাশনা

২। Teesta River, wikipedia

৩। Brahmaputra River, wikipedia

৪। Google Map


#musarboijatra2025 #Puranas #indianmythology #RiversofBangladesh

OPC এবং PCC সিমেন্টের মধ্যে পার্থক্যঃ

 OPC এবং PCC সিমেন্টের মধ্যে পার্থক্যঃ


এই বিষয়ে সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞান থাকা উচিতঃ


বাজারে সাধারনত দুই ধরনের সিমেন্ট দেখা যায়। একটা হচ্ছে 

OPC: Ordinary Portland Cement.

অপরটি হচ্ছে, PCC: Portland Composite Cement.

OPC সিমেন্টে ক্লিংকারের পরিমান ৯৫ শতাংশ থেকে একশ ভাগ পর্যন্ত থাকে। আর জিপসাম থাকে সর্বোচ্চ ০-৫ শতাংশ। PCC সিমেন্টে ক্লিংকারের পরিমান ৬৫ শতাংশ থেকে ৭৯ শতাংশ। স্লাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও লাইম স্টোনের পরিমান ২১ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং জিপসামের পরিমান সর্বোচ্চ ০-৫ শতাংশ।


বাজারের সিমেন্টের ব্যাগে এই তথ্যগুলো দেখে খুব সহজেই বোঝা যায় কোনটি PCC আর কোনটি OPC সিমেন্ট।


OPC:

1. OPC এর পূর্ণরূপ হলো ordinary portland cement.

2. OPC তে clinker এর পরিমান 95%- 100%.

3. পানি যোজিত এলাকায় কাঠামো নির্মাণে OPC cement ব্যবহার করা হয়।

4. জমাট বাধার সময় সময় প্রাথমিক 30 মিনিট এবং চুড়ান্ত 10 ঘন্টার কম।

5. OPC Cement এর শক্তি PCC Cement এর চেয়ে 100 psi বেশি।


PCC:

1. PCC এর পূর্ণরূপ হলো Portland composite cement.

2. PCC তে clinker  এর পরিমাণ 65%-79%.

3. সাধারণ কাঠামো নির্মাণে PCC Cement ব্যবহার করা হয়। 

4. জমাট বাধার প্রথমিক সময় 30 মিনিট এবং চুড়ান্ত 10 ঘন্টা। 

5. PCC Cement এর শক্তি OPC এর চেয়ে 100 Psi কম।


নির্মাণের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে পিসিসি এবং ওপিসি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।


যখন PCC সিমেন্ট ভালো:

==========><======


>মাটির সার্বিক পরিস্থিতি সাধারণ পর্যায়ে থাকলে।

>মাটিতে রাসায়নিক পদার্থ সংক্রান্ত কোন সমস্যা না থাকলে।

>কংক্রিট খুব দ্রুততার সাথে শক্ত হবার প্রয়োজন না হলে।

>কংক্রিটে ঢালাইয়ের সময় উৎপন্ন তাপমাত্রা হিসাবে ধরা না হলে।

>বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সব ধরনের পাইলিং, ফাউন্ডেশন, গাথুনী, ছাদ এবং প্লাস্টারের কাজে পিসিসি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।


যখন OPC সিমেন্ট ভালো:

================

>বহুতল ভবন নির্মাণে।

>উচ্চশক্তিসম্পন্ন শিল্পকারখানার কাঠামো নির্মাণে।

>পানির নিচে কংক্রিটের কাজে।

>ব্রিজ, কালভার্ট ও সেতু নির্মাণের কাজে।

>মাটি পরীক্ষায় (সয়েল টেস্ট) সালফারসহ কংক্রিটের জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর পাওয়া গেলে


এবং কংক্রিট খুব দ্রুততার সঙ্গে শক্ত হবার প্রয়োজন হলে OPC সিমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।


#cement #industry #naeemcivilnote #Bangladesh

#materials #engineering #civilengineering

সকাল ৭টার সংবাদ  তারিখ : ১০-০৪-২০২৪ খ্রি:

 সকাল ৭টার সংবাদ 

তারিখ : ১০-০৪-২০২৪ খ্রি:


আজকের সংবাদ শিরোনাম:


বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন উদ্বোধন করে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের  বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা।


দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে ব্রিটেনের আরও সহযোগিতা চাইলেন অধ্যাপক ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস।


আসন্ন বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বিশ্ব শান্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে -জানালেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।


আজ শুরু হচ্ছে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা - অংশ নেবে ১৯ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী।


আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ  আইসিটি’র - তদন্ত শেষ করতে হবে দুই মাসের মধ্যে।


শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে মুজিববর্ষ উদযাপনের নামে চার হাজার কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।


উচ্চতর মার্কিন শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ ডোনাল্ড ট্রাম্পের - চীনের সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য যুদ্ধ।


আজ লাহোরে আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে থাইল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

গরিব থেকে ধনী হওয়ার সহজ ৫ টি উপায়

 গরিব থেকে ধনী হওয়ার সহজ ৫ টি উপায়


বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষেরই একটি স্বপ্ন থাকে—বেশি অর্থ উপার্জন করা, আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, গরিব অবস্থান থেকে ধনী হওয়ার পথ অনেক কঠিন মনে হয়। তবে বাস্তবে কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করলে যে কেউ তার জীবন পরিবর্তন করতে পারেন।


এখানে এমন ৫টি উপায় তুলে ধরা হলো, যা গরিব থেকে ধনী হতে সাহায্য করতে পারে।


১. শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করুন

আপনার শিক্ষার স্তর এবং দক্ষতার উন্নতি না করলে আপনি কখনই উচ্চ আয়ের সুযোগ পাবেন না। আজকের যুগে, যারা বিশেষ কোনো দক্ষতায় পারদর্শী, তারা সহজেই বড়ো চাকরি বা ব্যবসা শুরু করতে পারে। নতুন কিছু শিখতে সময় নিন, বিশেষ করে প্রযুক্তি, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কোডিং, বা যে কোন সৃজনশীল দক্ষতা আপনার আয়ের সুযোগ বাড়াতে পারে।


২. বাজেট ও সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন

ধনী হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনার আয় এবং খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। একদিকে আয় বাড়ানো যেমন জরুরি, তেমনি অন্যদিকে খরচের দিকে নজর দেওয়া সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে নিজের বাজেট তৈরি করুন এবং তার মধ্যে সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন। মাসের শেষে কিছু পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আপনার ধনসম্পত্তি বাড়াতে পারেন।


৩. বিনিয়োগ করুন

অর্থ সঞ্চয় করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সেই সঞ্চিত অর্থের সঠিক বিনিয়োগও অতি জরুরি। শেয়ার বাজার, রিয়েল এস্টেট, মিউচুয়াল ফান্ড, বা অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে টাকা রাখলে তা দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক হতে পারে। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকলেও, সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে আপনি কম ঝুঁকিতে ভালো লাভ অর্জন করতে পারেন।


৪.নতুন ব্যবসা শুরু করুন

আপনার যদি কিছু পুঁজি থাকে, তবে একটি ছোট ব্যবসা শুরু করা খুবই লাভজনক হতে পারে। ব্যবসার ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা ও নতুন ধারণা নিয়ে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, আপনি অনলাইনে কিছু পণ্য বিক্রি করতে পারেন, অথবা নিজস্ব কোনো সেবা প্রদানের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। স্বল্প মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করে পরবর্তীতে তা বড় করতে পারবেন।


৫. পরিস্কার লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা তৈরি করুন

গরিব থেকে ধনী হওয়ার পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো একটি পরিস্কার লক্ষ্য নির্ধারণ করা। আপনি কীভাবে ধনী হতে চান, কেমন জীবনযাপন করতে চান—এগুলো চিন্তা করে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করুন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে কাজ করলে, জীবনের নানা বাঁধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আপনি সফল হতে পারবেন। মনে রাখবেন, ধনী হওয়া কেবলমাত্র অর্থের ব্যাপার নয়, এটি সময়ের সাথে কঠোর পরিশ্রম এবং মনোযোগের ফলস্বরূপ।


গরিব থেকে ধনী হওয়ার কোন ম্যাজিক পদ্ধতি নেই, তবে সঠিক পরিকল্পনা, শিক্ষার গুরুত্ব, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের কৌশল এবং নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে আপনি সফল হতে পারেন। আপনার সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে, শুধু সেগুলো চিনে নিন এবং সঠিক সময়ে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করুন

বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫

ছুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 ছুটি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল, নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়া ছিল; স্থির হইল, সেটা সকলে মিলিয়া গড়াইয়া লইয়া যাইবে।


যে-ব্যক্তির কাঠ, আবশ্যককালে তাহার যে কতখানি বিস্ময় বিরক্তি এবং অসুবিধা বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল।


কোমর বাঁধিয়া সকলেই যখন মনোযোগের সহিত কার্যে প্রবৃত্ত হইবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময়ে ফটিকের কনিষ্ঠ মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই গুঁড়ির উপরে গিয়া বসিল; ছেলেরা তাহার এইরূপ উদার ঔদাসীন্য দেখিয়া কিছু বিমর্ষ হইয়া গেল।


একজন আসিয়া ভয়ে ভয়ে তাহাকে একটু-আধটু ঠেলিল কিন্ত সে তাহাতে কিছুমাত্র বিচলিত হইল না; এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল।


ফটিক আসিয়া আস্ফালন করিয়া কহিল, 'দেখ্‌, মার খাবি! এইবেলা ওঠ্‌।'


সে তাহাতে আরো একটু নড়িয়াচড়িয়া আসনটি বেশ স্থায়ীরূপে দখল করিয়া লইল।


এরূপ স্থলে সাধারণের নিকট রাজসম্মান রক্ষা করিতে হইলে অবাধ্য ভ্রাতার গণ্ডদেশে অনতিবিলম্বে এক চড় কষাইয়া দেওয়া ফটিকের কর্তব্য ছিল-- সাহস হইল না। কিন্তু এমন একটা ভাব ধারণ করিল, যেন ইচ্ছা করিলেই এখনই উহাকে রীতিমত শাসন করিয়া দিতে পারে কিন্তু করিল না, কারণ পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে, তাহাতে আর-একটু বেশি মজা আছে। প্রস্তাব করিল, মাখনকে সুদ্ধ ঐ কাঠ গড়াইতে আরম্ভ করা যাক।


মাখন মনে করিল, ইহাতে তাহার গৌরব আছে; কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিংবা আর-কাহারো মনে উদয় হয় নাই।


ছেলেরা কোমর বাঁধিয়া ঠেলিতে আরম্ভ করিল-- 'মারো ঠেলা হেঁইয়ো, সাবাস জোয়ান হেঁইয়ো।' গুঁড়ি একপাক ঘুরিতে না ঘুরিতেই মাখন তাহার গাম্ভীর্য গৌরব এবং তত্ত্বজ্ঞান-সমেত ভূমিসাৎ হইয়া গেল।


খেলার আরম্ভেই এইরূপ আশাতীত ফললাভ করিয়া অন্যান্য বালকেরা বিশেষ হৃষ্ট হইয়া উঠিল, কিন্তু ফটিক কিছু শশব্যস্ত হইল। মাখন তৎক্ষণাৎ ভূমিশয্যা ছাড়িয়া ফটিকের উপরে গিয়া পড়িল, একেবারে অন্ধভাবে মারিতে লাগিল। তাহার নাকে মুখে আঁচড় কাটিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে গৃহাভিমুখে গমন করিল। খেলা ভাঙিয়া গেল।


ফটিক গোটাকতক কাশ উৎপাটন করিয়া লইয়া একটা অর্ধনিমগ্ন নৌকার গলুইয়ের উপরে চড়িয়া বসিয়া চুপচাপ করিয়া কাশের গোড়া চিবাইতে লাগিল।


এমনসময় একটা বিদেশী নৌকা ঘাটে আসিয়া লাগিল। একটি অর্ধবয়সী ভদ্রলোক কাঁচা গোঁফ এবং পাকা চুল লইয়া বাহির হইয়া আসিলেন। বালককে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।'


বালক ডাঁটা চিবাইতে চিবাইতে কহিল, 'ঐ হোথা।' কিন্তু কোন্‌দিকে যে নির্দেশ করিল কাহারো বুঝিবার সাধ্য রহিল না।


ভদ্রলোকটি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কোথা।'


সে বলিল, 'জানি নে।' বলিয়া পূর্ববৎ তৃণমূল হইতে রসগ্রহণে প্রবৃত্ত হইল। বাবুটি তখন অন্য লোকের সাহায্য অবলম্বন করিয়া চক্রবর্তীদের গৃহের সন্ধানে চলিলেন।


অবিলম্বে বাঘা বাগদি আসিয়া কহিল, 'ফটিকদাদা, মা ডাকছে।'


ফটিক কহিল, 'যাব না।'


বাঘা তাহাকে বলপূর্বক আড়কোলা করিয়া তুলিয়া লইয়া গেল, ফটিক নিষ্ফল আক্রোশে হাত পা ছুঁড়িতে লাগিল।


ফটিককে দেখিবামাত্র তাহার মা অগ্নিমূর্তি হইয়া কহিলেন, 'আবার তুই মাখনকে মেরেছিস!'


ফটিক কহিল, 'না, মারি নি।'


'ফের মিথ্যে কথা বলছিস!'


'কখ্‌খনো মারি নি। মাখনকে জিজ্ঞাসা করো।'


মাখনকে প্রশ্ন করাতে মাখন আপনার পূর্ব নালিশের সমর্থন করিয়া বলিল, 'হাঁ, মেরেছে।'


তখন আর ফটিকের সহ্য হইল না। দ্রুত গিয়া মাখনকে এক সশব্দ চড় কষাইয়া দিয়া কহিল, 'ফের মিথ্যে কথা!'


মা মাখনের পক্ষ লইয়া ফটিককে সবেগে নাড়া দিয়া তাহার পৃষ্ঠে দুটা-তিনটা প্রবল চপেটাঘাত করিলেন। ফটিক মাকে ঠেলিয়া দিল।


মা চীৎকার করিয়া কহিলেন, 'অ্যাঁ, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস!'


এমন সময়ে সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, 'কী হচ্ছে তোমাদের।'


ফটিকের মা বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হইয়া কহিলেন, 'ওমা, এ যে দাদা, তুমি কবে এলে।' বলিয়া গড় করিয়া প্রণাম করিলেন।


বহুদিন হইল দাদা পশ্চিমে কাজ করিতে গিয়াছিলেন, ইতিমধ্যে ফটিকের মার দুই সন্তান হইয়াছে, তাহারা অনেকটা বাড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে, কিন্তু একবারও দাদার সাক্ষাৎ পায় নাই। আজ বহুকাল পরে দেশে ফিরিয়া আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে দেখিতে আসিয়াছেন।


কিছুদিন খুব সমারোহে গেল। অবশেষে বিদায় লইবার দুই-একদিন পূর্বে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে ছেলেদের পড়াশুনা এবং মানসিক উন্নতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে ফটিকের অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খলতা, পাঠে অমনোযোগ, এবং মাখনের সুশান্ত সুশীলতা ও বিদ্যানুরাগের বিবরণ শুনিলেন।


তাঁহার ভগিনী কহিলেন, 'ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।'


শুনিয়া বিশ্বম্ভর প্রস্তাব করিলেন, তিনি ফটিককে কলিকাতায় লইয়া গিয়া নিজের কাছে রাখিয়া শিক্ষা দিবেন। বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।


ফটিককে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কেমন রে ফটিক, মামার সঙ্গে কলকাতায় যাবি?'


ফটিক লাফাইয়া উঠিল বলিল, 'যাব।'


যদিও ফটিককে বিদায় করিতে তাহার মায়ের আপত্তি ছিল না, কারণ তাঁহার মনে সর্বদাই আশঙ্কা ছিল-- কোন্‌দিন সে মাখনকে জলেই ফেলিয়া দেয় কি মাথাই ফাটায় কি কী একটা দুর্ঘটনা ঘটায়, তথাপি ফটিকের বিদায়গ্রহণের জন্য এতাদৃশ আগ্রহ দেখিয়া তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ন হইলেন।


'কবে যাবে', 'কখন্‌ যাবে' করিয়া ফটিক তাহার মামাকে অস্থির করিয়া তুলিল; উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না।


অবশেষে যাত্রাকালে আনন্দের ঔদার্যবশত তাহার ছিপ ঘুড়ি লাটাই সমস্ত মাখনকে পুত্রপৌত্রাদিক্রমে ভোগদখল করিবার পুরা অধিকার দিয়া গেল।


কলিকাতায় মামার বাড়ি পৌঁছিয়া প্রথমত মামির সঙ্গে আলাপ হইল। মামি এই অনাবশ্যক পরিবারবৃদ্ধিতে মনে মনে যে বিশেষ সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, তাহা বলিতে পারি না। তাঁহার নিজের তিনটি ছেলে লইয়া তিনি নিজের নিয়মে ঘরকন্না পাতিয়া বসিয়া আছেন, ইহার মধ্যে সহসা একটি তেরো বৎসরের অপরিচিত অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলে ছাড়িয়া দিলে কিরূপ একটা বিপ্লবের সম্ভাবনা উপস্থিত হয়। বিশ্বম্ভরের এত বয়স হইল, তবু কিছুমাত্র যদি জ্ঞানকাণ্ড আছে।


বিশেষত, তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধে-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগল্‌ভতা। হঠাৎ কাপড়চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করিয়া বেমানানরূপে বাড়িয়া উঠে; লোকে সেটা তাহার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরূপ জ্ঞান করে। তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায়, লোকে সেজন্য তাহাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিন্তু এই সময়ের কোনো স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্য বোধ হয়।


সেও সর্বদা মনে মনে বুঝিতে পারে, পৃথিবীর কোথাও সে ঠিক খাপ খাইতেছে না; এইজন্য আপনার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সর্বদা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া থাকে। অথচ এই বয়সেই স্নেহের জন্য কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত কাতরতা মনে জন্মায়। এই সময়ে যদি সে কোনো সহৃদয় ব্যক্তির নিকট হইতে স্নেহ কিংবা সখ্য লাভ করিতে পারে, তবে তাহার নিকট আত্মবিক্রীত হইয়া থাকে। কিন্তু তাহাকে স্নেহ করিতে কেহ সাহস করে না, কারণ সেটা সাধারণে প্রশ্রয় বলিয়া মনে করে। সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়।


অতএব, এমন অবস্থায় মাতৃভবন ছাড়া আর-কোনা অপরিচিত স্থান বালকের পক্ষে নরক। চারি দিকের স্নেহশূন্য বিরাগ তাহাকে পদে পদে কাঁটার মতো বিঁধে। এই বয়সে সাধারণত নারীজাতিকে কোনো-এক শ্রেষ্ঠ স্বর্গলোকের দুর্লভ জীব বলিয়া মনে ধারণা হইতে আরম্ভ হয়, অতএব তাঁহাদের নিকট হইতে উপেক্ষা অত্যন্ত দুঃসহ বোধ হয়।


মামির স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হইতেছে, এইটে ফটিকের সবচেয়ে বাজিত। মামি যদি দৈবাৎ তাহাকে কোনো-একটা কাজ করিতে বলিতেন, তাহা হইলে সে মনের আনন্দে যতটা আবশ্যক তার চেয়ে বেশি কাজ করিয়া ফেলিত-- অবশেষে মামি যখন তাহার উৎসাহ দমন করিয়া বলিতেন, 'ঢের হয়েছে, ঢের হয়েছে। ওতে আর তোমায় হাত দিতে হবে না। এখন তুমি নিজের কাজে মন দাওগে। একটু পড়োগে যাও।' -- তখন তাহার মানসিক উন্নতির প্রতি মামির এতটা যত্নবাহুল্য তাহার অত্যন্ত নিষ্ঠুর অবিচার বলিয়া মনে হইত।


ঘরের মধ্যে এইরূপ অনাদর, ইহার পর আবার হাঁফ ছাড়িবার জায়গা ছিল না। দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়িয়া কেবলই তাহার সেই গ্রামের কথা মনে পড়িত।


প্রকাণ্ড একটা ধাউস ঘুড়ি লইয়া বোঁ বোঁ শব্দে উড়াইয়া বেড়াইবার সেই মাঠ, 'তাইরে নাইরে নাইরে না' করিয়া উচ্চৈঃস্বরে স্বরচিত রাগিণী আলাপ করিয়া অকর্মণ্যভাবে ঘুরিয়া বেড়াইবার সেই নদীতীর, দিনের মধ্যে যখন-তখন ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া সাঁতার কাটিবার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, সেই-সব দলবল, উপদ্রব, স্বাধীনতা এবং সর্বোপরি সেই অত্যাচারিণী অবিচারিণী মা অহর্নিশি তাহার নিরুপায় চিত্তকে আকর্ষণ করিত।


জন্তুর মতো একপ্রকার অবুঝ ভালোবাসা-- কেবল একটা কাছে যাইবার অন্ধ ইচ্ছা, কেবল একটা না দেখিয়া অব্যক্ত ব্যাকুলতা, গোধূলিসময়ের মাতৃহীন বৎসের মতো কেবল একটা আন্তরিক 'মা মা' ক্রন্দন-- সেই লজ্জিত শঙ্কিত শীর্ণ দীর্ঘ অসুন্দর বালকের অন্তরে কেবলই আলোড়িত হইত।


স্কুলে এতবড়ো নির্বোধ এবং অমনোযোগী বালক আর ছিল না। একটা কথা জিজ্ঞাসা করিলে সে হাঁ করিয়া চাহিয়া থাকিত। মাস্টার যখন মার আরম্ভ করিত তখন ভারক্লান্ত গর্দভের মতো নীরবে সহ্য করিত। ছেলেদের যখন খেলিবার ছুটি হইত, তখন জানালার কাছে দাঁড়াইয়া দূরের বাড়িগুলার ছাদ নিরীক্ষণ করিত; যখন সেই দ্বিপ্রহর-রৌদ্রে কোনো-একটা ছাদে দুটি-একটি ছেলেমেয়ে কিছু-একটা খেলার ছলে ক্ষণেকের জন্য দেখা দিয়া যাইত, তখন তাহার চিত্ত অধীর হইয়া উঠিত।


একদিন অনেক প্রতিজ্ঞা করিয়া অনেক সাহসে মামাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, 'মামা, মার কাছে কবে যাব।' মামা বলিয়াছিলেন, 'স্কুলের ছুটি হোক।' কার্তিক মাসে পূজার ছুটি, সে এখনো ঢের দেরি।


একদিন ফটিক তাহার স্কুলের বই হারাইয়া ফেলিল। একে তো সহজেই পড়া তৈরি হয় না, তাহার পর বই হারাইয়া একেবারে নাচার হইয়া পড়িল। মাস্টার প্রতিদিন তাহাকে অত্যন্ত মারধোর অপমান করিতে আরম্ভ করিলেন। স্কুলে তাহার এমন অবস্থা হইল যে, তাহার মামাতো ভাইরা তাহার সহিত সম্বন্ধ স্বীকার করিতে লজ্জা বোধ করিত। ইহার কোনো অপমানে তাহারা অন্যান্য বালকের চেয়েও যেন বলপূর্বক বেশি করিয়া আমোদ প্রকাশ করিত।


অসহ্য বোধ হওয়াতে একদিন ফটিক তাহার মামির কাছে নিতান্ত অপরাধীর মতো গিয়া কহিল, 'বই হারিয়ে ফেলেছি।'


মামি অধরের দুই প্রান্তে বিরক্তির রেখা অঙ্কিত করিয়া বলিলেন, 'বেশ করেছ, আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারি নে।'


ফটিক আর-কিছু না বলিয়া চলিয়া আসিল-- সে যে পরের পয়সা নষ্ট করিতেছে, এই মনে করিয়া তাহার মায়ের উপর অত্যন্ত অভিমান উপস্থিত হইল; নিজের হীনতা এবং দৈন্য তাহাকে মাটির সহিত মিশাইয়া ফেলিল।


স্কুল হইতে ফিরিয়া সেই রাত্রে তাহার মাথাব্যথা করিতে লাগিল এবং গা সির্‌সির্‌ করিয়া আসিল। বুঝিতে পারিল তাহার জ্বর আসিতেছে। বুঝিতে পারিল ব্যামো বাধাইলে তাহার মামির প্রতি অত্যন্ত অনর্থক উপদ্রব করা হইবে। মামি এই ব্যামোটাকে যে কিরূপ একটা অকারণ অনাবশ্যক জ্বালাতনের স্বরূপ দেখিবে, তাহা সে স্পষ্ট উপলব্ধি করিতে পারিল। রোগের সময় এই অকর্মণ্য অদ্ভুত নির্বোধ বালক পৃথিবীতে নিজের মা ছাড়া আর-কাহারো কাছে সেবা পাইতে পারে, এরূপ প্রত্যাশা করিতে তাহার লজ্জা বোধ হইতে লাগিল।


পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না। চতুর্দিকে প্রতিবেশীদের ঘরে খোঁজ করিয়া তাহার কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না।


সেদিনে আবার রাত্রি হইতে মুষলধারে শ্রাবণের বৃষ্টি পড়িতেছে। সুতরাং তাহার খোঁজ করিতে লোকজনকে অনর্থক অনেক ভিজিতে হইল। অবশেষে কোথাও না পাইয়া বিশ্বম্ভরবাবু পুলিসে খবর দিলেন।


সমস্ত দিনের পর সন্ধ্যার সময় একটা গাড়ি আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ির সম্মুখে দাঁড়াইল। তখনো ঝুপ্‌ ঝুপ্‌ করিয়া অবিশ্রাম বৃষ্টি পড়িতেছে, রাস্তায় একহাঁটু জল দাঁড়াইয়া গিয়াছে।


দুইজন পুলিসের লোক গাড়ি হইতে ফটিককে ধরাধরি করিয়া নামাইয়া বিশ্বম্ভর-বাবুর নিকট উপস্থিত করিল। তাহার আপাদমস্তক ভিজা, সর্বাঙ্গে কাদা, মুখ চক্ষু লোহিতবর্ণ, থরথর করিয়া কাঁপিতেছে। বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করিয়া তাহাকে অন্তঃপুরে লইয়া গেলেন।


মামি তাহাকে দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন, 'কেন বাপু, পরের ছেলেকে নিয়ে কেন এ কর্মভোগ। দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।'


বাস্তবিক, সমস্তদিন দুশ্চিন্তায় তাঁহার ভালোরূপ আহারাদি হয় নাই এবং নিজের ছেলেদের সহিতও নাহক অনেক খিট্‌মিট্‌ করিয়াছেন।


ফটিক কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, 'আমি মার কাছে যাচ্ছিলুম, আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।'


বালকের জ্বর অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিল। সমস্ত রাত্রি প্রলাপ বকিতে লাগিল। বিশ্বম্ভরবাবু চিকিৎসক লইয়া আসিলেন।


ফটিক তাহার রক্তবর্ণ চক্ষু একবার উন্মীলিত করিয়া কড়িকাঠের দিকে হতবুদ্ধিভাবে তাকাইয়া কহিল, 'মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি।'


বিশ্বম্ভরবাবু রুমালে চোখ মুছিয়া সস্নেহে ফটিকের শীর্ণ তপ্ত হাতখানি হাতের উপর তুলিয়া লইয়া তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন।


ফটিক আবার বিড় বিড় করিয়া বকিতে লাগিল, বলিল, 'মা, আমাকে মারিস্‌ নে, মা। সত্যি বলছি, আমি কোনো দোষ করি নি।'


পরদিন দিনের বেলা কিছুক্ষণের জন্য সচেতন হইয়া ফটিক কাহার প্রত্যাশায় ফ্যাল্‌ফ্যাল্‌ করিয়া ঘরের চারি দিকে চাহিল। নিরাশ হইয়া আবার নীরবে দেয়ালের দিকে মুখ করিয়া পাশ ফিরিয়া শুইল।


বিশ্বম্ভরবাবু তাহার মনের ভাব বুঝিয়া তাহার কানের কাছে মুখ নত করিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, 'ফটিক, তোর মাকে আনতে পাঠিয়েছি।'


তাহার পরদিনও কাটিয়া গেল। ডাক্তার চিন্তিত বিমর্ষ মুখে জানাইলেন, অবস্থা বড়োই খারাপ।


বিশ্বম্ভরবাবু স্তিমিতপ্রদীপে রোগশয্যায় বসিয়া প্রতিমুহূর্তেই ফটিকের মাতার জন্য প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন।


ফটিক খালাসিদের মতো সুর করিয়া করিয়া বলিতে লাগিল, 'এক বাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে--এ--এ না।' কলিকাতায় আসিবার সময় কতকটা রাস্তা স্টীমারে আসিতে হইয়াছিল, খালাসিরা কাছি ফেলিয়া সুর করিয়া জল মাপিত; ফটিক প্রলাপে তাহাদেরই অনুকরণে করুণস্বরে জল মাপিতেছে এবং যে অকূল সমুদ্রে যাত্রা করিতেছে, বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না।


এমন সময়ে ফটিকের মাতা ঝড়ের মতো ঘরে প্রবেশ করিয়াই উচ্চকলরবে শোক করিতে লাগিলেন। বিশ্বম্ভর বহুকষ্টে তাঁহার শোকোচ্ছ্বাস নিবৃত্ত করিল, তিনি শয্যার উপর আছাড় খাইয়া পড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিলেন, 'ফটিক, সোনা, মানিক আমার।'


ফটিক যেন অতি সহজেই তাহার উত্তর দিয়া কহিল, 'অ্যাঁ।'


মা আবার ডাকিলেন, 'ওরে ফটিক, বাপধন রে।'


ফটিক আস্তে আস্তে পাশ ফিরিয়া কাহাকেও লক্ষ্য না করিয়া মৃদুস্বরে কহিল, 'মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।'

এই অভিজ্ঞতা রাশিয়ান ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার 'ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি'র। তাঁর কাছে শেষ একটি মিনিট এক অসহ্য অনন্তকাল হয়ে উঠেছিল।

 মৃত্যুর জন্য তাঁর হাতে সময় ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট। ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখে দাঁড়িয়ে এই পাঁচ মিনিট সময়কেই সে নিখুঁতভাবে ভাগ করে নিলো। প্রথম দুই মিনিট খরচ করা হবে তাঁর সাথেই ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড়ানো বন্ধুদের কাছে থেকে বিদায় নিতে। পরের দুই মিনিট সে ভাববে নিজের সমগ্র জীবন নিয়ে। আর অবশিষ্ট এক মিনিট শেষবারের মতো দেখে নেবে এই প্রিয় পৃথিবীকে।


কিন্তু ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সেই পাঁচ মিনিটই তাঁর কাছে মনে হচ্ছিল অন্ততকাল। সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে, নিজের জীবনের সব উল্লেখযোগ্য স্মৃতি রোমন্থন করেও পৃথিবী দেখার শেষ এক মিনিট সে কিছুতেই শেষ করতে পারছিল না। সময় এতোটাই ধীর গতিতে আগাচ্ছিল যে, যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সে বলে উঠেছিল- ‘আমাকে তাড়াতাড়ি গুলি করো! আর সহ্য হচ্ছে না!’


এই অভিজ্ঞতা রাশিয়ান ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার 'ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি'র। তাঁর কাছে শেষ একটি মিনিট এক অসহ্য অনন্তকাল হয়ে উঠেছিল।


সেইন্ট পিটার্সবার্গ, ১৮৪৯ সাল। আট মাস ধরে তিনি জেলে বসে অপেক্ষা করেছিলেন ফায়ারিং স্কোয়ারের সামনে দাঁড়ানোর আশঙ্কা নিয়ে। প্রথম দিকে তিনি আশায় ছিলেন, ঘটনাটা বোধহয় ঘটবে না। পরবর্তীতে তিনি মনস্থির করে নেন, যখন হবে তখন দেখা হবে। শেষের দিকে তিনি চাইছিলেন ঘটনাটা এখনই ঘটে যাক, যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল। কারণ মৃত্যুর থেকেও মৃত্যুর এই প্রতীক্ষা আরও অসহ্য।


অবশেষে যন্ত্রণামুক্তি। একদিন সকালে হঠাৎই অন্যান্য সহবন্দীদের সঙ্গে তাকেও শেকলে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল সেমোনোভস্ক চত্ত্বরে,নেভার কিনারায়।


কমান্ডারের কণ্ঠে বাজল প্রথম নির্দেশ। বন্দুকধারী সেপাইরা মৃত্যুপথযাত্রীদের চোখ বেঁধে দিল। দ্বিতীয় নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে সবগুলো বন্দুক থেকে 'কক' করার ক্লিক-ক্ল্যাক শব্দ ভেসে এল। তৃতীয় নির্দেশ এল। 'লক্ষ্য স্থির করো'। শেষবারের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা, গোঙ্গানি, ফুঁপিয়ে কান্না...। তারপর সব চুপচাপ।


নীরবতা।


আরও নীরবতা। মনে হচ্ছিল যে এই নৈশব্দ আর ফুরোবেই না। শেষে তাদের বলা হল, রাশিয়ার মাহান সর্বশক্তিমান জার, পরম করুণাময় তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।


১৮৪৮ সালের কোনো একটা সময় থেকে তিনি বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী পেত্রাশেভস্কির প্রগতিশীল পাঠচক্রে যাতায়াত শুরু করেন। পরে পেত্রাশেভ্ স্কির জনৈক সহযোগী পরিচালিত গোপন বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করে নিষিদ্ধ সাহিত্য ছাপিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে উৎসাহিত হয়ে পড়েন। এক বছর এই কাজ করার পর ১৮৪৯ সালের এপ্রিল মাসে পেত্রাশেভ্ স্কির পাঠচক্রের অন্য ২১ জন সদস্যের সঙ্গে ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি গ্রেপ্তার হন। বিচারাধীন বন্দি হিসেবে তাঁকে পিটার-পল কারাদুর্গের নির্জন ঘরে আট মাস বন্দি করে রাখা হয়। বিচারে অন্যদের সাথে তাঁকেও প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হয়।


১৮৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর। হাড়কাঁপানো শীতের ভোরে দস্তয়েভস্কিকে অন্যান্যদের সঙ্গে বধ্যভূমিতে উপস্থিত করা হয়। কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্ত্র পাঠ করিয়ে তাঁকে বন্দুকের সামনে দাঁড় করানো হয়। জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধান। এই সময় জার প্রথম নিকোলাইয়ের দূত ঘোড়া ছুটিয়ে হাজির হয় ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে। জারের নির্দেশে সমস্ত বুদ্ধিজীবী রাজদ্রোহীদের মৃত্যুদন্ড রদ করে সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়। দস্তয়েভস্কিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাইবেরিয়ার বন্দি শিবিরে। সেইদিন সন্ধ্যায় দাদা মিখাইলকে লেখা চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন,


"আমি হতাশ হইনি, ভেঙে পড়িনি। জীবন সর্বত্রই জীবন, বাইরের নয়, আমাদের নিজেদের ভিতরের জীবন। আমার আশেপাশে মানুষজন থাকবে, মানুষের মাঝখানে মানুষ হয়ে থাকা, যত বড়ো সংকটই দেখা দিক না কেন, চিরকাল মানুষ হয়ে থাকা, হতাশ না হওয়া, ভেঙে না-পড়া -- এই হল জীবন, এই হল জীবনের লক্ষ্য।"


পরবর্তী কালে সমস্ত লেখায় তাঁর এই জীবন অভিজ্ঞতা গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। চার বছর নির্বাসন দন্ড ভোগ করার পর ১৮৫৪ সালে দস্তয়েভস্কিকে পাঠানো হয় বাধ্যতামূলক সৈনিকের চাকরিতে। ১৮৫৯ সালে তাঁর সৈনিক জীবন শেষ হয়। আবার তিনি সেন্ট পিটার্স বার্গে পাকাপাকিভাবে বসবাসের অনুমতি পান।


'ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি'কে সাধারণত সর্বকালের সেরা ঔপন্যাসিকদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাহিত্যিক আধুনিকতাবাদ, অস্তিত্ববাদ, মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, ধর্মতত্ত্ব এবং সাহিত্য সমালোচনা তার ধারণা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। দস্তয়েভস্কি'র রচনাগুলিকে প্রায়শই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বলা হয়, কারণ তিনি রাশিয়ার বিপ্লবীরা ক্ষমতায় এলে কেমন আচরণ করবে তা এত নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। যা পরবর্তীতে দেখা যায়। সেই সময়ে তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে তার কার্যকলাপের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন।


তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে,


'দি হাউজ অফ দি ডেড' (The House of the Dead), প্রকাশকাল ১৮৬০। 'এ ন্যাস্টি স্টোরি'(A Nasty Story), প্রকাশকাল ১৮৬২। 'নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড' (Notes from Underground), প্রকাশকাল ১৮৬৪। 'ক্রাইম এ্যান্ড পানিসমেন্ট' (Crime and Punishment), প্রকাশকাল ১৮৬৬। 'দি গ্যাম্বলার' (The Gambler), প্রকাশকাল ১৮৬৭। 'দি ইডিয়ট' (The Idiot), প্রকাশকাল ১৮৬৯। 'দি র ইউথ' (The Raw Youth), প্রকাশকাল ১৮৭৫। 'দি ব্রাদারস কারামাজভ' (The Brother Karamazov), প্রকাশকাল ১৮৮০। 'এ রাইটার্স ডায়েরী' (A Writer's Diary), প্রকাশকাল ১৮৭৩-১৮৮১, দুইখন্ডে প্রকাশিত।


ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি লেখক হওয়ার আগে ছিলেন একজন প্রকৌশলী। তিনি যা আয় করতেন তার সব অর্থই উড়িয়ে দিতেন জুয়া খেলে। বলা হয়ে থাকে জুয়া খেলে সর্বশান্ত হয়ে তিনি সাহিত্য রচনায় হাত দিয়েছেন।


জুয়ায় বার বার হেরে গেলেও সাহিত্য রচনায় বহু বাজি তিনি জিতে নিয়েছিলেন। যদিও নানা রকম শারীরিক অসুস্থতা অথবা অর্থকষ্ট তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিত প্রতিনিয়ত। অবশেষে ১৮৮১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে।

মূলঃ এদোয়ার্দো গালিয়ানো ( Children of the days )

রাত ৮ টা ৩০ মিনিটের সংবাদ। তারিখ: ০৯-০৪-২০২৫ খ্রি:।

 রাত ৮ টা ৩০ মিনিটের সংবাদ।

তারিখ: ০৯-০৪-২০২৫ খ্রি:।


আজকের শিরোনাম:


বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন উদ্বোধন করে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের  বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা।


দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে ব্রিটেনের আরও সহযোগিতা চাইলেন অধ্যাপক ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস।


আসন্ন বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বিশ্ব শান্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে -জানালেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। 


আগামীকাল শুরু হচ্ছে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা - অংশ নেবে ১৯ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী।


আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ  আইসিটি’র - তদন্ত শেষ করতে হবে দুই মাসের মধ্যে।


শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে মুজিববর্ষ উদযাপনের নামে চার হাজার কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।


গাজা একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।


আগামীকাল লাহোরে আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

সকাল ৭টার সংবাদ  তারিখ : ০৯-০৪-২০২৪ খ্রি:

 সকাল ৭টার সংবাদ 

তারিখ : ০৯-০৪-২০২৪ খ্রি:


আজকের সংবাদ শিরোনাম:


বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের বিশেষ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করবে দক্ষিণ কোরিয়া - প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জানালো দেশটির বিনিয়োগকারীরা।


নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে কারখানা স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে একটি সুইডিশ কোম্পানির সমঝোতা স্মারক সই।


চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কোনও নিরাপত্তা হুমকি নেই - জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।


বিএফডিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার - বললেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা। 


শীগগিরই বাংলাদেশে অবস্থানরত সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার নাম যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করবে মিয়ানমার।


আগামী ২৯শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে হজ্ব ফ্লাইট - জানালেন ধর্ম উপদেষ্টা।


গাজাকে হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র অভিহিত করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব - ইসরাইলী প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে তৎপর হতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর।


ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের তিনটি খেলা আজ বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।

রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫

 রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫ আজকের সংবাদ শিরোনাম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা --- পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টি...