সাব স্টেশন কিভাবে কাজ করে
সাব-স্টেশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইন কিভাবে কাজ করে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হতে ট্রান্সমিশন লাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার স্টেশনে বা সাব-স্টেশনে আসে। ট্রান্সমিশন লাইনে প্রবাহিত বিদ্যুৎ হাই-ভোল্টেজ হয়ে থাকে। ঐ বিদ্যুৎ যদি কারো বাড়িতে ডিস্ট্রিবিউট করা হয় তাহলে বাড়িতে কোন ইলেকট্রনিক্স এর যন্ত্রপাতি বেঁচে থাকবে না। সেই হাই ভোল্টেজ এবং হাই ফ্রিকোয়েন্সিকে কন্ট্রোল করার পর, পাওয়ার স্টেশন বা সাব-স্টেশন থেকে বিতরণ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বাড়িতে বাড়িতে পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে যে তার গুলো আসে সেগুলো পাওয়ার স্টেশনে বাসবারের সাথে জোড়া হয়। ট্রান্সমিশন লাইন গুলোকে সরাসরি বাসবারের সাথে জুড়ে দেওয়া হয় না কারণ ট্রান্সমিশন লাইনের মধ্যে হয়তো ভোল্টেজ কম বেশি হতে পারে এমনকি কারেন্ট কম বেশি হতে পারে। এজন্য ঐ লাইন গুলোকে বাসবারের সাথে জোড়ার আগে ভোল্টেজ রেগুলেটর দিয়ে পাস করতে হয়। ট্রান্সমিশন লাইনের বিভিন্ন কারণের জন্য হাইভোল্টেজ জেনারেট হয়ে যেতে পারে। সাব-স্টেশনে ঐ ভোল্টেজ সব ঠিকঠাক আসছে কিনা তার জন্য ভোল্টেজ রেগুলেটরের দিয়ে মেপে নেওয়া হয়। ভোল্টেজ কম বেশি হলে সেটাকে কন্ট্রোল করার জন্য ব্যবহার করা হয় সার্চ এরেস্টার। যদি কোন কারণে বেশী বিদ্যুৎ চলে আসে তখন তাকে সার্চ বলা হয়। সার্চ এরেস্টারের কাজ হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোল্টেজকে পাস করবে বাকিটা গ্রাউন্ট করে দেবে।
বিদ্যুৎ প্রবাহের একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি থাকে। আমাদের দেশের ফ্রিকোয়েন্সি ৫০ হার্জ । আমরা যে ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি এগুলো ৫০ হার্জের ফ্রিকোয়েন্সিকে কন্ট্রোল করতে পারে। এর বেশী বা কম হলেই সমস্যা হয়। ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে যখন হাই ভোল্টের কারেন্ট আসে তখন এর ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক থাকে না। এজন্য সাবস্টেশনের ফ্রিকোয়েন্সিকে মেন্টেন করার জন্য ওয়েব ট্যাব নামক একটা ডিভাইস লাগানো থাকে যেটা বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সিকে সব সময় ৫০ হার্জেতে রাখে। তবে আমাদের বাড়িতে যে সমস্ত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো থাকে সেটা ৫০ হার্জ অপারেট করে ঠিকই কিন্তু প্লাস ফাইভ থেকে মাইনাস ফাইভ পর্যন্ত এদের টলারেন্সও সহ্য করতে পারবে। এর থেকে বেশি বা কম হয়ে গেলে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো প্রবলেম হয়ে যাবে। এজন্য ইলেকট্রিক ফ্রিকোয়েন্সিকে কন্ট্রোল করা খুবই দরকার।
ভোল্টেজ কন্ট্রোল হল, ফ্রিকোয়েন্সিকে কন্ট্রোল হল এবং সার্চ এরেস্টারের সাহায্যে অতিরিক্ত ভোল্টেজকে গ্রাউন্ড করে দেওয়া হল। কিন্তু তা স্বত্বেও হাই ভোল্টেজ কারেন্ট যখন সাব-স্টেশনের মধ্যে প্রবেশ করে তখন তাকে বন্ধ করার জন্য সুইচ দরকার। সাব-স্টেশনে কোন বিদ্যুৎ দুর্ঘটনা ঘটলে বা যদি দরকার হয় তাহলে সুইচের মাধ্যমে সাব-স্টেশনের পুরোপুরি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া যায়। সাব-স্টেশনে কারেন্ট মাপার জন্য ব্যবহার করা হয় কারেন্ট ট্রান্সফরমার। যা অ্যাম্পিয়ারকে পরিমাপ করে। একটি সাব-স্টেশন একটি নির্দিষ্ট অ্যাম্পিয়ারকে পরিমাপ সহ্য করতে পারে। কারেন্ট ট্রান্সফরমারের পর থাকে সার্কিট ব্রেকার। কারেন্ট বেশী হয়ে গেলে সার্কিট ব্রেকার অটোমেটিক্যালি ডিসকানেক্টেড হয়ে যায়।
সব ঠিক থাকলে বিদ্যুৎ যাবে ট্রান্সফরমারের কাছে। ট্রান্সফমারের যখন বিদ্যুৎ প্রবেশ করে তখন তার আগেও একটা সার্চ অ্যাসিস্ট্যার বসানো থাকে। যদি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চলে আসে তাহলে সেটাকে গ্রাউন্ড করে দেওয়ার জন্য। এখানে যে ট্রান্সফর্মার বসানো থাকে সেটা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার। বিদ্যুৎ হাই-ভোল্টেজ ট্রান্সফরমারের মধ্যে প্রবেশ করে এবং লো-ভোল্টেজ হয়ে ডিসট্রিবিউশন লাইনের মাধ্যমে আমাদের এলাকা পর্যন্ত আসে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাওয়ার স্টেশন পর্যন্ত যে লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আসছে সেটাকে বলা হয় ট্রান্সমিশন লাইন। আর পাওয়ার স্টেশন পর আমাদের এলাকা পর্যন্ত যে লাইনটা আসে সেটাকে বলা হয় ডিস্ট্রিবিউশন লাইন। এটা ছোট ছোট পোল এর মাধ্যমে আমাদের এলাকা পর্যন্ত পৌছানো হয়। আগেকার দিনে এই পোলগুলো কাঠের তৈরি হতো এমনকি লোহার পাইপের ও তৈরি হতো। তবে ওগুলো খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেত। এজন্য বর্তমানে রিইনফোর্সড কংক্রিটের ব্যবহার করা হয়। সাবস্টেশনের মধ্যে যে ট্রান্সফরমার থাকে তার নীচে ছোট দুটো পাথর থাকে এর পেছনে অনেক কারণ আছে। যদি তার ছিড়ে নিচে পড়ে যায় তাহলে গ্রাউন্ডটা বিদ্যুতায়িত হয়ে যাবে না। ফলে এর উপর দিয়ে হেঁটে গেল আপনার বিদ্যুতের শক লাগবে না। এছাড়া যেন পাওয়ার স্টেশনের মধ্যে কোন গাছপালা না গজিয়ে যায় সেটাকে খেয়াল রাখতে পাথর ব্যবহার করা হয়
কপি
পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন