‘মুর্শিদাবাদ – নবাবী আমলের বাংলার রাজধানী’
– রানা চক্রবর্তী
একদা অবিভক্ত বঙ্গের অর্থাৎ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ – খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ এক ঐতিহাসিক পীঠস্থান। যেখানে পাশাপাশি দেখা গিয়েছিল – জ্বলন্ত দেশপ্রেম ও ঘৃণ্য বিশ্বাসঘাতকতা। নবাব আলীবর্দী, সিরাজদ্দৌলা, মীরজাফর, মীরকাশেমের স্মৃতি বিজড়িত সেই মুর্শিদাবাদ – যে বাংলার ইতিহাসের বহু উত্থান পতনের নীরব সাক্ষী। নবাবী আমলের রাজধানী মুর্শিদাবাদের আড়ম্বর ও জাঁকজমকের কথা ইতিহাসে লেখা আছে। আয়তনে, জনসংখ্যায় আর ঐশ্বর্য্যে সেই মুর্শিদাবাদ ছিল লণ্ডনের চেয়েও বড়। পলাশীর যুদ্ধের পরে স্বয়ং ‘লর্ড ক্লাইভ’ লিখেছিলেন –
“The city of Murshidabad is as extensive, populous and rich as the city of London with this difference that there are individuals in the first possessing infinitely greater property than in the last city.”
খৃষ্টীয় আঠারো শতকের বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদের এলাকা ছিল ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে খোসবাগ থেকে বড়নগর, আর পূর্ব তীরে অবস্থিত মতিঝিল থেকে মহিমাপুর পর্যন্ত। এই বিশাল নগরী জুড়ে ছিল অসংখ্য প্রাসাদ, অট্টালিকা ও রমণীয় উদ্যান। কুলুরীতে মুর্শিদকুলীর প্রাসাদ, চকবাজারে বিশাল দরবারগৃহ – ‘চেহেল সেতুন’, আলীবর্দীর প্রাসাদ, সিরাজের মনসুরগঞ্জ প্যালেস (হীরাঝিল প্যালেস), ঘসেটি বেগমের মতিঝিল প্রাসাদ – যেটার নাম ছিল ‘সিংহদালান’, মহিমাপুরে জগৎ শেঠের ইন্দ্রপুরী তুল্য প্রাসাদ ছাড়াও ছিল আমির-ওমরাহদের সুরম্য অট্টালিকা। হীরাঝিলের এক মাইল উত্তরে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরেই ছিল মোরাদাবাদ প্যালেস, যেখানে ব্যবসায়ী ইংরেজরা এসে উঠতেন। রেনেলের মানচিত্রেও মোরাদাবাদ প্যালেসের উল্লেখ পাওয়া যায়, সেখানেই লর্ড ক্লাইভ, ওয়ারেন হেস্টিংস, ভ্যান্সিষ্টার্ট প্রমুখরা এসে উঠেছিলেন। এছাড়াও ছিল লালবাগ প্যালেস, যেখানে ১৭০৭ সাল থেকে ১৭১২ সাল পর্যন্ত, বাদশাহ হওয়ার আগে এসে বাস করেছিলেন ফারুকশিয়ার। বড়নগরে ছিল রাণী ভবানীর প্রাসাদ, হীরাঝিলের দক্ষিণ দিকে ছিল রায়দুর্লভের প্রাসাদোপম অট্টালিকা, ডাহাপাড়া আর ভট্টবাটিতে ছিল বঙ্গাধিকারীদের রাজবাড়ী। পিলখানায় ছিল নবাব নাজিমদের হাতিশালা। হুমায়ুন মঞ্জিলে ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোর্ট হাউস বা বিচারালয়। এছাড়াও ছিল রোশনীবাগ, ফর্হবাগ। কিন্তু সেসব প্রাচীন বনেদি গৌরবের কোন চিহ্নই আজ অবশিষ্ট নেই। বর্তমানের মুর্শিদাবাদ যেন খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের ইতিহাসের ‘ফসিল’। পুরানো অনেক স্মৃতিচিহ্নই আজ ভাগীরথীর গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। সামান্য যা কিছু অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও বর্তমানে অযত্নে আর অবহেলায় জাদুঘরের নিষ্ঠুর হৃদয়হীন ব্যাঙ্গে পরিণত হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বর্তমানের অবিন্যস্ত দরিদ্ররূপ ইতিহাসের বাতাবরণে তো বটেই এমনকি আজকের দর্শকদের চোখেও করুণার উদ্রেক করে।
মুর্শিদাবাদের নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। কারও মতে খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের আগে এই শহরের নাম ছিল মুখসুদাবাদ, আবার কারও মতে নাম ছিল মুখসুসাবাদ। প্রবাদ আছে – বাদশাহ হোসেন শাহের সময় মুখসুদন দাস নামে এক নানকপন্থী সন্ন্যাসী বাদশাহের রোগ নিরাময় করে এই স্থানটি লাখেরোজ-স্বরূপ পেয়েছিলেন। পরে তাঁর নামানুসারেই এই স্থানের নাম হয় মুখসুদাবাদ। আবার কেউ কেউ বলেন - মুখসুদ খাঁ-এর নাম থেকেই মুখসুদাবাদ। রিয়াজ-উস-সালাতীনের মতে – মুখসুস খাঁ নামে কোন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ীর নামানুসারে মুখসুদাবাদ নামটির উৎপত্তি। ওদিকে আইন-ই-আকবরীতে লেখা আছে যে, মুখসুদাবাদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাংলার শাসনকর্তা সায়েদ খাঁর ভাই মুখসুস খাঁ। এখন রিয়াজ-উস-সালাতীন এবং আইন-ই-আকবরীতে উল্লেখিত মুখসুস খাঁ একই ব্যক্তি কিনা সেটা সঠিকভাবে জানা যায় না। যদিও পুরোনো দলিলপত্রে মুখসুদাবাদ ও মুখসুসাবাদ – এই দুটি নামই পাওয়া যায়। পঞ্চদশ অথবা ষষ্ঠদশ শতকে রচিত ভবিষ্যৎপুরাণ-এ এই শহরকে মোরাসুদাবাদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা একজন যবন (মুসলমান)। সায়র-উল-মুতক্ষীরণ গ্রন্থের অনুবাদক রেমণ্ড সাহেবের মতে, প্রথমে এই জায়গার নাম ছিল কোলারিয়া (Colaria), পরে নাম হয় ম্যাকসুদাবাদ (Macsoodabad), এবং তারও পরে নাম হয় মুরসুদাবাদ (Moorsoodabad)। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, মুর্শিদাবাদ শহরের পূর্বদিকে কূলূরী নামে একটি মৌজা আছে এবং অতীতে সেই জায়গাতেই মুর্শিদকুলি খাঁ বাস করতেন। ১৬৬৬ সালে এই শহর পরিদর্শন করে ফরাসী পর্যটক তাভের্নিয়ে (Travernier) নিজের লেখনীতে এই শহরের নাম 'Madasoubazarki' বলে উল্লেখ করেছিলেন। ঐতিহাসিক টিফেনথেলারের মতে সম্রাট আকবর এই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এই শহরের পূর্বদিকে আকবরপুর নামের একটা মৌজা ও গ্রাম রয়েছে। প্রথমে এই জায়গার নাম কি ছিল, তা নিয়ে বিস্তর মতভেদ থাকলেও, ঐতিহাসিক ও গবেষকরা একটি বিষয়ে একমত - মুর্শিদকুলি খাঁ তাঁর দেওয়ানী দপ্তর ঢাকা থেকে পুরানো মুখসুদাবাদ বা মুখসুসাবাদ-এ স্থানান্তরিত করবার পরে নবাবের নামানুসারে এই জায়গার নাম হয় মুর্শিদাবাদ। সেটা ছিল ১৭০৪ সাল। ১৭০৪ সালে তৈরি মুদ্রায় সর্বশেষ মুখসুসাবাদ নামটি দেখা যায় এবং ১৭০৫ সালে স্থানীয় টাঁকশালে তৈরি মুদ্রায় সর্বপ্রথম মুর্শিদাবাদ নামটি পাওয়া যায় (Notes on Gour and other historical places, Monomohan Chakravarty)।
দেওয়ানীর সদর দপ্তর তথা রাজধানী রূপে মুর্শিদাবাদকে নির্বাচিত করবার পিছনে ছিল মুর্শিদকুলি খাঁর দূরদৃষ্টি, তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও বিচক্ষণতা ছিল। এই প্রসঙ্গে উইলিয়াম হান্টার লিখেছিলেন –
“It seems probable that Murshid Kuli Khan was induced to take his step by political considerations ... the bank of Bhagirathi afforded a more central position for the management of the three provinces of Bengal, Bihar and Orissa. The new city also was situated on the line of trade …”
রিয়াজ-উস-সালাতীনের মতে –
“An excellent site where news of all four quarters of the Subah could be easily procurable and which like the pupil of the eye was situated in the centre of the important places of the Subah.”
সপ্তদশ শতকের প্রথমদিকে মুর্শিদাবাদ মূলতঃ রেশম শিল্পের জন্যই বিখ্যাত ছিল। এই শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এই শহর মুঘল কর্মচারীদের আবাসস্থল রূপে প্রসিদ্ধি লাভ করে। সপ্তদশ শতকে কাশিমবাজারে ছিল ফরাসীদের কারখানা। ১৬৬৫ সালে সম্রাট ঔরঙ্গজেবের ফরমান বলে একদল অর্ম্মেনিয়ান সৈদাবাদে বসবাস শুরু করেন। কালিকাপুরে ডাচরাও তাঁদের নিজস্ব কারখানা তৈরি করে। তাঁদের সবারই এক উদ্দেশ্য ছিল – রেশমের ব্যবসা। বার্নার লিখেছিলেন যে, ডাচদের কারখানায় আটশোজন দেশীয় শ্রমিক কাজ করত, সেই তুলনায় ইংরেজ বা অন্যান্যদের কারখানায় দেশীয় শ্রমিকের সংখ্যা ছিল নগন্য। নবাবী আমলে বাংলার রেশম খুবই উন্নত ছিল। রেশমের উৎকৃষ্ট ও সূক্ষ্ম কাপড়ের কদরও ছিল বেশি। বঙ্গদেশে সেইসময় বিভিন্ন ধরনের মসলিন কাপড় তৈরি হত, শ্রেষ্ঠ মসলিনের নাম ছিল – আভরণ। তখনকার দিনে একখানি অভরণের দাম ছিল চারশো টাকার মত (তখনকার মুদ্রার হিসেবে)। ওজন ছিল মাত্র পাঁচ ভরি। প্রধানতঃ নবাব-বাদশাহরা সেই কাপড় ব্যবহার করতেন। শোনা যায় যে, সম্রাট ঔরঙ্গজেবের এক কন্যা মসলিন কাপড় পড়ে সম্রাটের সামনে এসে দাঁড়ালে সূক্ষ্ম কাপড়ের আড়ালে তাঁর রোমাবলী দেখে সম্রাট ক্রুদ্ধ হয়ে কন্যাকে ‘বেশরম’ বলে অভিহিত করলে, কন্যা তাঁর পিতাকে জানিয়েছিলেন যে সাতখানা কাপড় দিয়ে তাঁর শরীর ঢাকা রয়েছে।
সেই সময়ে মুর্শিদাবাদের রেশম শিল্পের বিদেশে কত কদর ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাভর্নিয়ে প্রদত্ত বিবরণে। তাঁর বক্তব্য অনুসারে, কাশিমবাজার থেকে বছরে বাইশ হাজার গাঁট (এক গাঁট = একশো পাউন্ড) রেশমের কাপড় বিদেশে রপ্তানি করা হত। রেশম, তুলো আর হাতির দাঁতের তৈরি বিভিন্ন জিনিষের জন্য সেকালের মুর্শিদাবাদ সমগ্র এশিয়া ও ইউরোপে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, কাশিমবাজার কুঠির অধ্যক্ষ ছিলেন জন কেন। তাঁর সহকারী ছিলেন জোব চার্নক। ১৬৮০ সালে জোব চার্নক কাশিমবাজার কুঠির প্রধান অধ্যক্ষ পদে উন্নীত হয়েছিলেন।
মুর্শিদাবাদে ছিল সরকারি টাঁকশাল। নবাবী আমলে প্রথম টাকশাল তৈরি হয়েছিল ১৭০৫ সালে, কেল্লা নিজামতের কাছে। পরে ১৭১৭ সালে মহিমাপুরে নতুন করে টাঁকশাল তৈরি হয় – জগৎ শেঠের পুরোনো বাড়ির সামনে। সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধেও মুখসুদাবাদে যে টাঁকশাল ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯১৪ সালের মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে লেখা হয়েছিল –
“A rupee of Aurangzeb preserved in the Lahore museum shows that Mukhsudabad was a mint town as early as 1679 AD.” (District Gazetteer Murshidabad, edited by L.S.S.O’Malley, 1914)
১৭৬০ সালে মীরকাশেম মসনদে বসার পরেই কলকাতা টাকশালের উন্নতি ঘটে। প্রধানতঃ, এই সময় থেকেই মুর্শিদাবাদের টাকশালের গুরুত্ব কমে যায়। ১৭৭৭ সালে তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের অনুরোধে নবাব মোবারকদ্দৌল্লার আদেশে মুর্শিদাবাদের টাঁকশাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৭৮৫ সালে মাত্র কিছু দিনের জন্য সেটাকে পুনরায় জীবিত করা হয়। ১৭৯৬ সালে সরকারি আদেশানুসারে সমস্ত প্রাদেশিক টাঁকশাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৭৯৯ সালে মুর্শিদাবাদ থেকে টাঁকশালের যাবতীয় যন্ত্রাংশ কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং বাড়িটি প্রকাশ্য নীলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
১৮০২ সালের আদমশুমারি অনুসারে মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় দেড়লক্ষ। পাঁচজন বেহারা সমেত একটি পালকির একদিনের ভাড়া ছিল এক টাকা। কলকাতা থেকে আড়াই তোলা ওজনের একটি চিঠি মুর্শিদাবাদে পাঠাতে খরচা হত দু’-আনা। ১৭২৯ সালে মুর্শিদাবাদে একমণ দশ সের অতিমিহি বাঁশফুল চাল পাওয়া যেত এক টাকায়। তিন মণ গমের দাম ছিল এক টাকা। এক টাকায় সাড়ে দশ সের গাওয়া ঘি পাওয়া যেত। ১৭৭৬ সালে প্রতি ষোল সের সর্বোৎকৃষ্ট মিহি চালের দাম মুর্শিদাবাদে ছিল এক টাকা। ১৮২২ সালে মুর্শিদাবাদে তিন টাকায় এক মণ ভালো চাল পাওয়া যেত। ঐ একই সময়ে এক মণ গাওয়া ঘিয়ের দাম ছিল সাতাশ টাকা। আর এই একই সময়ে একটা প্রমাণ আকৃতির ইলিশ মাছের দাম ছিল এক পয়সা।
প্রচণ্ড বর্গী হাঙ্গামার পরেও মুর্শিদাবাদের জৌলুষ ছিল অম্লান, সম্পদ ছিল অফুরন্ত। এরপরে ইংরেজদের প্রভুত্ব বিস্তারের পর থেকেই মুর্শিদাবাদের গৌরব খর্ব হতে শুরু করে। একটি একটি করে সরকারি দপ্তর কলকাতায় স্থানান্তরিত হতে শুরু হয়। ১৭৯৩ সালে শেষটুকু সমাধা করে দেন লর্ড কর্ণওয়ালিস। ঐ সালেই ফৌজদারি সদর দপ্তর মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরেই শুরু হয়, কলকাতার উন্নতি আর মুর্শিদাবাদের অবনতি। এরপরে কলকাতা উঠেছে, মুর্শিদাবাদ ডুবেছে। কলকাতা গড়েছে, মুর্শিদাবাদ ভেঙেছে। ভাগ্যলক্ষ্মী এসেছিল, একসময়ে চলেও গিয়েছে। মুর্শিদাবাদ ধরে রাখতে পারেনি।
বর্তমানের মুর্শিদাবাদে অবশিষ্ট আছে অতীতের কয়েকটি মলিন স্মৃতি আর ইতিহাসের ধ্বংসস্তূপ। অথচ কত প্রাচীন ঐ গৌড় – এখনও সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে তার কঙ্কাল। কিন্তু ক্ষয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ। তার প্রাচীন গৌরব আর জৌলুষ সবই আজ মহাকালের গর্ভে। অতীত গৌরব আজ যেন শুধুই রূপকথা। নবাব নাজিমদের জৌলুষ আর বিলাসিতার কথা আজ যেন শুধুই গল্প। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে মুর্শিদকুলীর প্রাসাদ আর – ‘চেহেল সেতুন’। মুছে গিয়েছে ফার্হবাগ আর রোশনীবাগের সৌন্দর্য্য। সিরাজের সাধের হীরাঝিল প্রাসাদ আজ ভাগীরথীর গর্ভে বিলীন। মোরাদবাগ আর লালবাগ প্যালেসের অস্তিত্ব আজ সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত। ঘসেটি আর নওয়াজেসের মোতিঝিল প্রাসাদ তলিয়ে গিয়েছে মহাকালের গর্ভে। তাপদগ্ধ ক্লান্ত দুপুরে জগৎ শেঠের পুরানো ভিটায় এখন ঘুঘু ডাকে।
আজও মুর্শিদাবাদের কোন কোন পুরনো ভিটে বা জমির নীচে পাওয়া যায় পুরনো আমলের বাদশাহী মোহর বা প্রাচীন কোন দেবদেবীর মূর্তি। অনুসন্ধিৎসুর জানতে চেষ্টা করেন সেই জায়গার ইতিহাস। শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক তর্ক-বিতর্ক। আজকের মুর্শিদাবাদ অন্ধকারাচ্ছন্ন, মৃতপ্রায়, সম্ভবতঃ অভিশপ্তও। তবুও আজ পর্যটক আর অনুসন্ধিৎসুদের কাছে মুর্শিদাবাদের আকর্ষণ কম নয়। বর্তমানের পর্যটকরা অনেক উৎসাহ আর কৌতুহল নিয়ে মুর্শিদাবাদে এসে জানতে চান মুর্শিদাবাদের ইতিহাস। বর্তমানের আয়নায় দেখতে চেষ্টা করেন অতীতকে। ইতিহাসের ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে শুনতে পান অতীতের দীর্ঘশ্বাস, শুনতে পান ইতিহাসের বোবাকান্না। তাই আজও আছে মুর্শিদাবাদ, আর আছে তার ইতিহাস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন