এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪

গাছেরাও কথা বলে! (পর্ব ১)

 গাছেরাও কথা বলে! (পর্ব ১)

******************************************

নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী ও সবুজ বিপ্লবের জনক নরম্যান বোরলগ বলেছিলেন, ‘গাছেরা কথা বলে ফিস ফিস করে। সে কথা শুনতে হলে যেতে হবে তাদের কাছে।’ অর্থাৎ গাছেরাও কথা বলে! গাছ কি আসলেই কথা বলে? ওদের ঠোঁট-মুখ-দাঁত নেই যে ওরা কথা বলবে। মানুষের এগুলো আছে বলেই সে অন্যের সঙ্গে কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। বিভিন্ন প্রাণী প্রজাপতি, পাখি, ঝিঁঝিঁ পোকা—এদেরও নিজস্ব ভাষা আছে। ফুলের কি সেরকম কোনো ভাষা আছে, যা দিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে বা অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে পারে? অনেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানীই এসব নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন, জানতে চেয়েছেন আসলে উদ্ভিদের ভাষা কী? কীভাবে তারা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে?


ফুলে ফুলে মৌমাছি ঘোরে কেন? পাতায় কেন শুঁয়াপোকার মা এসে বসল, ডিম পাড়ল, আর সেসব ডিম ফুটে সেখানে বাচ্চা বেরিয়ে পাতাটাকে খাওয়া শুরু করল? কেন এসব ঘটছে? লক্ষ্যণীয় বিষয়, কিছু পোকা নির্দিষ্ট গাছ ছাড়া অন্য গাছে বসতেই চায় না। কিছু প্রজাপতি নির্দিষ্ট কিছু গাছের ফুলেই ঘুরে বেড়ায়। বিজ্ঞানীরাও তা দেখেছেন। তাঁরা বলছেন, প্রতিটি উদ্ভিদের বিশেষ একধরনের গন্ধ আছে। বলা যায় সিগন্যাল দেওয়ার পদ্ধতি। উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশের গন্ধ বিভিন্ন রকম। তাই সেসব গন্ধ শুঁকে গাছের সে অংশ খুঁজে পেতে পোকাদের কোনো অসুবিধা হয় না। এই গন্ধ তৈরি করে উদ্ভিদের কিছু উদ্বায়ী জৈব যৌগ, যাকে ইংরেজিতে বলে ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড (VOCs)।


উদ্ভিদ এসব জৈব রাসায়নিক বাতাসে ছড়িয়ে দিলে, সে গন্ধ পেয়ে ছুটে আসে পতঙ্গরা। এমনকি ছাগলও হয়তো তা বোঝে। এ কারণে ছাগলের প্রথম পছন্দ কাঁঠাল পাতা। আর একেবারে অপছন্দ অড়হর গাছের পাতা। কাঁঠাল পাতা ছাগলের দেহে প্রোটিন তৈরিতে দারুণ ভূমিকা রাখে। তাই ছাগল এটা বেশি পছন্দ করে। কিন্তু ছাগল এটা বুঝল কী করে? গাছ এই উদ্বায়ী জৈব যৌগ দিয়ে শুধু যে বিভিন্ন প্রাণীকে তার কাছে টেনে আনে, ব্যাপারটা শুধু তা নয়। কোনো গাছ যখন বিপদে পড়ে, তখন তার কথা সে পাশের গাছকে জানিয়ে দেয় বিশেষ একরকম উদ্বায়ী যৌগ নিঃসরণ করে। আবার অনেক সময় গাছ তার দেহ থেকে এমন কিছু উদ্বায়ী জৈব যৌগ বা জৈব রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়ে, যার কারণে আগত প্রাণীরা বিভ্রান্ত ও বিতাড়িত হয়। গাঁদা ফুলগাছের শিকড় এমন একধরনের জৈব রাসায়নিক যৌগ মাটিতে নিঃসরণ করে, যার কারণে গাঁদা ফুলগাছের আশপাশে থাকা গাছেদের শিকড়ের কাছে শিকড়ে গিঁট সৃষ্টিকারী কৃমিরা ঘেঁষতে পারে না। কৃমিদের জন্য গাঁদা ফুলগাছ বিতাড়ক বা বিকর্ষক হিসেবে কাজ করে। ফলে সেসব গাছে আর কৃমির সংক্রমণ হয় না। কৃমি রোগও সৃষ্টি হতে পারে না।


প্রতিটি গাছই প্রকৃতিতে অনেক রকম ধকল ও ঝুঁকির মধ্যে বেঁচে থাকে। গাছকে সইতে হয় রোগের যন্ত্রণা, পোকার কামড়, মানুষের কুঠারের আঘাত ও কাঁচির খোঁচা, আবহাওয়ার চরম তাপদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা ইত্যাদি। এজন্য গাছকে এসব ধকল সহ্য করে টিকে থাকতে হলে খাপ খাওয়ানোর কিছু কৌশল রপ্ত করতে হয়। ঘটাতে হয় কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। কী করতে হবে, তা বুঝতে হলে গাছকে নিজের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য উদ্বায়ী জৈব যৌগভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়।


গাছ যখন কোনো বিপদে পড়ে, তখনই তারা এই উদ্বায়ী জৈব যৌগ নিঃসরণ করে বলে জানা গেছে। শুধু বিপদে নয়, গাছের নিজেদের কিছু বিশেষ প্রয়োজনেও সে এটা নিঃসরণ করে। যেমন, একটি উভলিঙ্গ ফুলের ভেতরে থাকে পুরুষ ও স্ত্রী জননাঙ্গ। পুরুষ জননাঙ্গের পরাগধানীতে থাকে পরাগরেণু আর স্ত্রী জননাঙ্গের গর্ভদণ্ডের মাথায় থাকে গর্ভমুণ্ড। যখন ফুল ফোটে তখন গর্ভমুণ্ড একধরনের আঠালো পদার্থ নিয়ে পরাগরেণু গ্রহণের জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করে। গর্ভমুণ্ডের মাথায় সেই পরাগরেণু পড়লে হয় পরাগায়ন। পরাগায়নের পর হয় গর্ভাধান ও নিষিক্তকরণ। তারপর জন্ম নেয় ফল ও বীজ। প্রাকৃতিকভাবে বাতাস বা অন্যভাবে কিছুর মাধ্যমে ফুলের পরাগায়ন ঘটে। তবে ফুলের পরাগায়ন বেশি ঘটায় পতঙ্গরা। তাই ফুলের এই কাজটি করার জন্য ফুল আমন্ত্রণ জানায় পতঙ্গদের। ফুল তার পাঁপড়ি থেকে বাতাসে এমন একধরনের উদ্বায়ী জৈব রাসায়নিক যৌগ বাতাসে ছেড়ে দেয়, পাঁপড়িতে বিভিন্ন রঞ্জকের সমন্বয়ে এমন রং সৃষ্টি করে, যাতে পতঙ্গকুল সেসব ফুলের দিকে আকৃষ্ট হয়। আবার আমন্ত্রণ দিয়ে ফুল অতিথির কাছ থেকে উপকৃত হলে সেও অতিথিকে আপ্যায়ন করে তার মধু খাইয়ে। পরস্পরের মধ্যে এই যোগাযোগকে প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম বললেও আসলে এর পেছনে রয়েছে এক রহস্যময় বৈজ্ঞানিক ঘটনা।


একটা গাছ যখন বিপদে পড়ে বা আক্রান্ত হয়, তখন তার প্রতিক্রিয়া গাছের মধ্যে দেখা যায়। গাছ তখন পাশের গাছকে সে কথা জানিয়ে দেয় একধরনের জৈব যৌগ উত্পাদন ও নিঃসরণের মাধ্যমে। বাতাসে সেই উদ্বায়ী পদার্থ ভেসে ভেসে চলে যায় পাশের গাছগুলোর কাছে। আক্রান্ত গাছটি ওসব গাছকে তখন সেই যৌগের মাধ্যমে বিপদ সংকেত পাঠায়। বলে—ভাই আমি বিপদে পড়েছি, তুমি শিগগিরই তোমার মধ্যে এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোল। নিজেদের আরও শক্তিশালী করো। ভারী অদ্ভুত বায়ুবাহিত সেসব ভাষা! গ্রহীতা গাছই যে কেবল সে ভাষা বা সংকেত বুঝতে পারে, শুধু তাই না; সেসব গাছের রক্ষাকারীরাও সে ভাষা কিছুটা বুঝতে পারে। তাই তারাও তখন সে গাছকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। 


একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। জাব পোকা নামে একধরনের ক্ষতিকর পোকা আছে। শিমগাছে এদের প্রচুর দেখা যায়। এরা সেসব গাছ থেকে রস চুষে খেয়ে গাছের সর্বনাশ করে। গাছের মধ্যে ভাইরাস জীবাণু ঢুকিয়ে দেয় সেসব বাহক পোকারা। কিন্তু পোকাদের কাছে এই ভাইরাস আসে কোথা থেকে। জাব পোকা যখন কোনো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত গাছের রস চুষে খায়, তখন সে রসের সঙ্গে গাছের ভাইরাস ওদের মুখের মধ্যে চলে আসে। মুখের মধ্যে তিন ঘণ্টার বেশি সময় সেসব ভাইরাস জীবাণুরা সক্রিয় থাকে। যখন জাব পোকারা অন্য কোনো সুস্থ শিমগাছে বসে ও সেখান থেকে রস চুষে খাওয়া শুরু করে, তখন সেসব ভাইরাস সেই সুস্থ গাছের কোষে ঢুকে পড়ে ও মোজাইক ভাইরাস রোগ রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগের কারণে শিমের পাতায় হলদে-সবুজ নকশাতে মোজাইকের মতো দাগ তৈরি হয়। পাতা কুঁকড়ে যায়, ফুল শুকিয়ে যায়, বিকৃত হয় শিম। এটি কোনো গাছে ঘটলে সেসব গাছ অন্য গাছদের খবর পৌঁছে দেয়। অন্য গাছেরা সে খবর জানতে পারে আক্রান্ত গাছ থেকে একধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থের গন্ধ থেকে। তখন গাছেরা সেই শত্রুর বিরুদ্ধে নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। দেখা গেছে, লেডি বার্ড বিটল নামে একধরনের পরভোজী পোকা জাব পোকাদের শিকার করে খায়। তখন গাছ এমন একধরনের উদ্বায়ী রাসায়নিক যৌগ নিঃসরণ করে, যার গন্ধে লেডি বার্ড বিটলরা আকৃষ্ট হয় ও সেই গাছে এসে বসে। জাব পোকারা পাশের গাছ থেকে এসে সেই গাছে বসলে তখন লেডি বার্ড বিটল তাদের ধরে শিকার করে। ফলে গাছ জাব পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। 


গবেষকরা দেখেছেন, প্রতিটি গাছের প্রজাতি ও ঘটনা বা পরিস্থিতির সঙ্গে এসব উদ্বায়ী জৈব রাসাযনিক যৌগের উপাদানও বদলে যায়। কখনো তা এককভাবে, আবার কখনো কয়েকটি যৌগের সংমিশ্রণে হয়। ভারী অদ্ভুত আর নাটকীয় এসব বিষয়! গবেষকরা একই গাছের মধ্যে সংকেত পাঠানো ও একটি গাছ থেকে অন্য গাছে সংকেত আদান প্রদানের এসব ভাষার রহস্য বুঝতে অনেক গবেষণা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, গাছেরা যোগাযোগের জন্য একটি যৌগ ব্যবহার করে, নাকি কয়েকটি জৈব রাসায়নিক যৌগের মিশ্রণ ব্যবহার করে? গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, যখন অক্ষত পপলার ও সুগার ম্যাপল গাছ কোনো ক্ষতিগ্রস্ত গাছের কাছে অবস্থান করে, তখন দেহের মধ্যে কিছু ফেনলিক যৌগ ও ট্যানিন জমা করে। সেজব্রাশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Artemisia tridentata) নামে এক প্রজাতির উদ্ভিদ মিথাইল জেসমোনেট (MeJA) নামে এক প্রকার রাসায়নিক যৌগ নিঃসরণ করে, যা পত্রভূক জীবের বিরুদ্ধে উদ্ভিদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আর ক্ষতিগ্রস্ত গাছ এটা করতে অক্ষত গাছকে উদ্দীপ্ত করে সংকেত পাঠায়। যদিও গবেষকরা আসলে এই ধরনের যোগাযোগের বিষয়ে এখনও খুব স্পষ্ট ধারণা পাননি। তবে এটা যে ঘটছে, তা তাঁরা নিশ্চিত। 

তথ্যসূত্রঃ- প্রথম আলো 

ভূগোলিকা_Bhugolika

কোন মন্তব্য নেই:

সোশ্যাল মিডিয়াতে ইনকাম ও তার বাস্তবতা,,,,

 📲 সোশ্যাল মিডিয়াতে ইনকাম ও তার বাস্তবতা 🎥 বাস্তবতা না বুঝে রিলস বানানোর নামে জীবনের ভারসাম্য হারানো… বর্তমানে বহু তরুণ-তরুণী ফেসবুক, ইনস...