ব্রয়লার মুরগি পালন: একটি সম্পূর্ণ নির্দেশিকা
ব্রয়লার মুরগি পালন লাভজনক একটি খামারব্যবস্থা যা দ্রুত মাংস উৎপাদনের জন্য করা হয়। সফল ব্রয়লার খামার গড়ে তুলতে সঠিক হাউজিং, ব্রুডিং, খাদ্য সরবরাহ, পানি প্রদান, টিকা প্রদান, বায়োসিকিউরিটি এবং সংগ্রহ (হারভেস্টিং) প্রক্রিয়া অনুসরণ করা জরুরি।
১. হাউজিং (বাসস্থানের ব্যবস্থা)
ব্রয়লার মুরগির ঘরটি প্রশস্ত, আলো-বাতাস চলাচলের উপযোগী এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
প্রতি বর্গফুটে ১-১.৫টি মুরগির ব্যবস্থা রাখা উচিত।
মেঝেতে পর্যাপ্ত লিটার (বিছানা) যেমন কাঠের গুঁড়ো বা ধানের তুষ বিছানো উচিত (৪-৬ ইঞ্চি)।
পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের জন্য জানালা ও ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. ব্রুডিং (প্রাথমিক পরিচর্যা)
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চাগুলো (চিকস) প্রথম ৭-১৪ দিন বিশেষ তাপমাত্রা ও যত্নের অধীনে রাখতে হয়।
প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা ৩২-৩৪°C রাখতে হবে এবং ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে।
মুরগির গতিবিধি দেখে বুঝতে হবে যে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে আছে কি না—
যদি তারা এক জায়গায় গাদাগাদি করে থাকে, তাহলে ঠান্ডা লাগছে।
যদি তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে, তাহলে তাপমাত্রা স্বাভাবিক।
যদি তারা দূরে দূরে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত গরম লাগছে।
পর্যাপ্ত আলো ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. খাদ্য সরবরাহ (ফিডিং)
ব্রয়লার মুরগির বৃদ্ধির জন্য ব্যালান্সড ফিড (পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাদ্য) প্রদান করতে হবে।
খাদ্য তিনটি ধাপে সরবরাহ করা হয়:
1. স্টার্টার ফিড (০-১০ দিন) – উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ফিড, দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
2. গ্রোয়ার ফিড (১১-২৫ দিন) – মাংসের বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন।
3. ফিনিশার ফিড (২৬-৩৫ দিন বা বাজারজাতকরণের সময় পর্যন্ত) – ওজন বাড়ানোর জন্য দেয়া হয়।
খাবার সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে এবং দিনে ৪-৬ বার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
৪. পানির সরবরাহ (ওয়াটারিং)
ব্রয়লার মুরগিকে সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা পানি সরবরাহ করতে হবে।
পানির পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে এবং এতে ভিটামিন ও ইলেক্ট্রোলাইট যোগ করা যেতে পারে।
গরমের সময় দিনে ৩-৪ বার পানির পরিবর্তন করা উচিত।
৫. টিকা প্রদান (ভ্যাকসিনেশন)
মুরগিকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য সময়মতো টিকা প্রদান করতে হবে।
সাধারণত ব্যবহৃত ভ্যাকসিন:
মারেক্স ডিজিজ ভ্যাকসিন – ১ দিন বয়সে
নিউক্যাসল ডিজিজ ও ইনফেকশাস ব্রোনকাইটিস – ৫-৭ দিন বয়সে
গাম্বোরো ডিজিজ (IBD) ভ্যাকসিন – ১২-১৪ দিন বয়সে
দ্বিতীয় নিউক্যাসল ডিজিজ ভ্যাকসিন – ২১-২৫ দিন বয়সে
ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় পরিষ্কার সিরিঞ্জ ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।
৬. বায়োসিকিউরিটি (জীবন-নিরাপত্তা ব্যবস্থা)
খামারে বহিরাগত মানুষের প্রবেশ সীমিত রাখতে হবে যাতে রোগজীবাণুর সংক্রমণ কমানো যায়।
খামারের চারপাশ পরিষ্কার রাখা এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।
মুরগির খাঁচা, পানি ও খাবারের পাত্র নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
রোগাক্রান্ত মুরগিকে আলাদা রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে।
৭. সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ (হারভেস্টিং)
সাধারণত ৩০-৩৫ দিন পর ব্রয়লার মুরগি বিক্রির উপযোগী হয় (ওজন ১.৮-২.৫ কেজি)।
বাজারে বিক্রির জন্য মুরগিগুলোকে পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর এবং সুস্থ রাখতে হবে।
সংগ্রহের সময় মুরগিকে অযথা আঘাত না দিয়ে সতর্কতার সাথে ধরতে হবে।
বাজারে নেওয়ার সময় তাদের আরামের জন্য পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহার
সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে ব্রয়লার মুরগি পালন থেকে লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব। উন্নত বাসস্থান, পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি, সময়মতো টিকা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে মুরগির দ্রুত বৃদ্ধি হবে এবং খামারটি লাভজনক হবে।
Dr. Omar Faruq #highlightseveryone #highlightseveryonefollowers #reelsfacebook #broilerchickens
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন