ট্রেনে ভীড় সেভাবে ছিল না। আরামসে দাঁড়িয়ে যাওয়া যাবে। দু একজন দাঁড়িয়েও আছে। দেখলাম, এক ভদ্রলোক জুতো পালিশ করাচ্ছেন। যিনি জুতো পালিশ করছেন তাঁর বয়স ওই পঞ্চাশের কাছাকাছি।
দেউলটি থেকে উঠল অল্প বয়সী একটি ছেলে আর মেয়ে। দেখে মনে হল কলেজ পড়ুয়া। বয়স উনিশ কুড়ি হবে। বসার জায়গা ছিল, তবুও বসল না। উঠেই দাঁড়িয়ে গেল একদম গেটের মুখেই।
এরপর শুরু হল ঘটনা। ছেলেটি আর মেয়েটি গেটের একদিকে, আর অন্য দিকে জুতো পালিশ যিনি করছিলেন ওই ভদ্রলোক, আরো দু একজন। যিনি পালিশ করছিলেন তিনি নিচে বসেই পালিশ করছিলেন। ছেলেটি আর মেয়েটি শুরু করল তাদের রঙ্গলীলা। মেয়েটি এমন একটা ভাব দেখাচ্ছে কখনো যেন ট্রেনে ওঠেই নি। ট্রেন চলতে শুরু করেছে ততক্ষণে। মেয়েটি কিছুতেই আর দাঁড়াতে পারছে না যেন। ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে না থাকলে পড়ে যাবে মনে হয়। অথচ বসার জন্য সীট ফাঁকা ছিলই। এদিকে ছেলেটিও দু হাতে মেয়েটিকে ধরেছে জড়িয়ে, একদম অশালীন ভাবে। ছেলেটি ফিসফিস করে কী সব বলছে, মেয়েটিও সেই বিচ্ছিরি রকমের হাসছে,অঙ্গভঙ্গিও বেশ দৃষ্টিকটু, পোশাক আশাকের কথা বাদ দিলাম। কতটা অসভ্য হলে তবেই এরকম নোংরামি প্রকাশ্যে করতে পারে?
ট্রেনের মধ্যে সবাই দেখছে ওই দৃশ্য। কেউ কিছুই বলছে না।দুজনের ওই কীর্তি কলাপ মোটেই দৃষ্টি নন্দন করছিল না।চোখকে তো বুজিয়ে ফেলতে পারি না। প্রেম করার নাম করে এই অসভ্যতা চলছে আজকাল। চোখে পড়লেও চোখ ফিরিয়ে নিতে হয়। তা নাহলে নিজের লজ্জা লাগে। একবার প্রতিবাদ করে ছিলাম বলে ছেলেটি বলেছিল, নিজে এসব করতে পারেন নি বলে হিংসে হচ্ছে?
জুতো পালিশ শেষ হতেই ওই ব্যক্তি মানে যিনি পালিশ করছিলেন উনি উঠে দাঁড়ালেন। মেয়েটির এই বিচ্ছিরি হাসির আওয়াজ আর জড়াজড়ি করা দেখে বলে উঠল,
-এই যে খুব হাসি হচ্ছে যে?
ছেলেটি বলল,
-আপনার অসুবিধার কী হলো? দেখে লোভ হচ্ছে?
হাতটা উঁচিয়ে বললেন, একটা থাপ্পড় খেলে একেবারে সোজা হয়ে যেতে। তোমরা এগুলো যা করছ, এত জন লোক তো আছে, জিজ্ঞেস করে দেখো, এগুলোকে কী বলে? প্রেম করছ তাই না? তোমাদের লজ্জা লাগে না? এই ভাবে রাস্তা ঘাটে চলো, এই যা করছো, এগুলো তোমাদের বাবা মায়ের সামনে করতে পারবে তো? তোমাদের বাবা মায়ের বয়সী কত লোক তো এখানে আছে ,একবার জিজ্ঞেস করো দেখো দেখি ঠিক করছ কিনা?প্রেম তো ভদ্র ভাবেও করা যায়। সীট ফাঁকা আছে না বসে এই সব করছ? কেউ কিছু বললেই দুটো কথা শোনাবে। তোমরাই তো প্রেমের নামে কলঙ্ক। এই সব আজে বাজে কাজ করবে, এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াবে, ফূর্তি করব, কিন্তু বিয়ে করবে না।তারপর এ ওকে ছেড়ে দিল, সে তাকে ছেড়ে দিল। এই তো কিছুদিন আগেই আমাদের পাড়াতে ছেলেটি সুইসাইড করল মেয়েটি অন্য ছেলেকে বিয়ে করল বলে। শোনো যেটা করছ,ওটাকে প্রেম বলে না। প্রেম আলাদা জিনিস। সবার দ্বারা হয় না। প্রেম করার নামে যেগুলো করো ওগুলোই খারাপ। আমি জুতো পালিশ করতে পারি,অশিক্ষিত নয়। তোমরা এরকম করছ, আর এই সামনে দাঁড়িয়ে এই বাচ্চাটা তোমাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। তোমাদের দেখে কী শিখবে? সমাজটাকে নোংরা করে দিচ্ছ?
এমন কথা শুনে যে মেয়েটি দাঁড়াতেই পারছিল না অবলম্বন ছাড়া ,দেখলাম সে তখন দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটিও মাথা নিচু করে একেবারে চুপ। পরের স্টেশন আসতেই ছেলেটি আর মেয়েটি মাথা নিচু করে নেমে গেল।
অপ্রিয় সত্য কথা কেউ বলে দিলে সেটা অনেকেই নিতে পারে না। আজকাল প্রায়ই দেখি এরকম দৃশ্য।সত্যিই তো প্রেম আলাদা অনুভূতি। তার ভাষাই আলাদা। আজকাল আর সত্যি প্রেম আর কতজন করে? প্রেম মানে ধান্দা, আর ক'দিনের খেলা। কয়েকদিন কথা বলে বিছানা পর্যন্ত না নিয়ে যেতে পারলে প্রেম হয় নাকি? সেদিন একজনের মুখে শুনলাম, সেক্স করতে রাজী হয়নি বলে ব্রেকাপ হয়ে গেছে তার। প্রেম যেন শরীর সর্বস্ব হয়ে উঠছে। শারীরিক খিদে মিটে গেলেই তারপর সব শেষ, সে ছেলেই হোক বা মেয়ে। তারপর অন্য কেউ, অন্য কারো সাথে। সত্যিই তো যে গল্প একবার পড়া হয়ে যায়, সে গল্প আর কতবার পড়তে ভালো লাগে?
(লেখাটা ভালো লাগলো তাই শেয়ার করলাম। কে লিখছে জানি না, আপনি জেনে থাকলে কমেন্টে জানাবেন)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন