ক্যালেন্ডার
ক্যালেন্ডার বরাবরই মানুষের জীবনের জরুরি একটা জিনিস। সময় গুছিয়ে চলা, চাষের কাজ ঠিকমত করা আর ধর্মীয় উৎসবের দিন ঠিক রাখার জন্য এটা দারুণ কাজে লাগে।
এই ক্যালেন্ডারের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়—মানুষ সময় মেপে চলার জন্য কতটা বুদ্ধি খাটিয়েছে, আর কতটা নিখুঁত হতে চেয়েছে।
পদ্ধতির দিক থেকে ক্যালেন্ডার অনেক রকম, অনেক জটিল। কিন্তু সবারই লক্ষ্য এক—সূর্য আর চাঁদের ছন্দের সাথে মিলিয়ে আমাদের কাজকর্ম ঠিক রাখা।
.
ক্যালেন্ডারের অর্থ
‘ক্যালেন্ডার’ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘ক্যালেন্ডে’ (kalendae) থেকে—যার অর্থ "মাসের প্রথম দিন।"
প্রাচীন রোমে, মাসের প্রথম দিন, অর্থাৎ ক্যালেন্ডের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হত। আসলে, রোমান পুরোহিতরা নতুন চাঁদ পর্যবেক্ষণ করে মাসের শুরু নিশ্চিত করতেন। এরপর তারা জনসমক্ষে ঘোষণা করতেন যে নতুন মাস শুরু হয়েছে এবং এটিই হল মাসের প্রথম দিন বা 'ক্যালেন্ডে'।
এই ঘোষণার মাধ্যমে কেবল মাসের শুরুই জানানো হত না, বরং সেই মাসের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলি, যেমন নোনাস (Nones), ইদুস (Ides) কবে পড়বে সেটাও ঠিক করা হত। আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল, এই ঘোষণা তাদের ঋণ পরিশোধ করার নির্দিষ্ট দিনটি মনে করিয়ে দিত। এই ঋণ ও পরিশোধের হিসাব রাখা হত যে খাতায় রোমানরা সেই খাতাগুলিকে বলত ‘ক্যালেন্ডারিয়া’ (calendaria)।
ক্যালেন্ডার শব্দটির উৎপত্তি আর পেছনের গল্প জানা গেল। কিন্তু সময়কে হিসাবের ফ্রেমে বাঁধার জন্য মানুষ কেবল এক ধরনের ক্যালেন্ডারই ব্যবহার করেনি। ইতিহাস জুড়ে, মানুষ বিভিন্ন ধরনের ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে—কিছু সূর্য এবং চাঁদের গতিবিধির ওপর ভিত্তি করে, আবার কিছু সংখ্যাপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে। এখন, আমরা প্রধানত ৩ ধরনের ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি—সৌর (Solar), চান্দ্র (Lunar) এবং চান্দ্রসৌর (Lunisolar)।
.
সৌর ক্যালেন্ডার—আমাদের চেনা ক্যালেন্ডার
সময় মাপার যত পুরোনো উপায় আছে, সৌর ক্যালেন্ডার তার মধ্যে অন্যতম। আর আজও কিন্তু পৃথিবীর নানা প্রান্তে এর ব্যবহার চলছে! এর মূল ব্যাপারটা হল, আমাদের পৃথিবী সূর্যের চারপাশে কীভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেই হিসাবের ওপর ভিত্তি করেই এই ক্যালেন্ডার তৈরি হয়েছে।
পৃথিবী যে সূর্যের চারপাশে একবার চক্কর দিয়ে আসে, সেটাই হল একটা সৌর বছর। এই বছরে থাকে ১২টি মাস বা ৩৬৫টি দিন। তবে হিসাব মেলানোর জন্য কখনও কখনও একটা বাড়তি দিন, মানে লিপ ডে (Leap Day), যোগ করা হয়। আমরা এখন যে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি, সেটাও কিন্তু আসলে এই সৌর ক্যালেন্ডারই।
তবে জানতেন কি, সৌর ক্যালেন্ডারেরও দুটি আলাদা ধরন আছে? একটা হল ট্রপিক্যাল সৌর ক্যালেন্ডার, আরেকটা সাইডেরিয়াল সৌর ক্যালেন্ডার। দুটিই পৃথিবীর সূর্য-প্রদক্ষিণের হিসাব রাখে, কিন্তু মাপার কৌশলটা একটু ভিন্ন। ট্রপিক্যাল ক্যালেন্ডার (Tropical Calendar) নজর রাখে ঋতু বদলের ওপর, আর সাইডেরিয়াল ক্যালেন্ডার (Sidereal Calendar) বছর মাপে দূরের স্থির তারাগুলির সাপেক্ষে।
.
ট্রপিক্যাল ক্যালেন্ডার—ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে
ট্রপিক্যাল ক্যালেন্ডার এক ধরনের সৌর ক্যালেন্ডার যা আমরা বর্তমানে ব্যবহার করি। এই ক্যালেন্ডার সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘূর্ণনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
ক্যালেন্ডারটির নাম ‘ট্রপিক্যাল’ কেন হল?
কারণ এটি ঋতু পরিবর্তনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকলে, ঋতু পরিবর্তিত হয়। ট্রপিক্যাল ক্যালেন্ডার এই ঋতু পরিবর্তনের চক্র ট্র্যাক করে।
একটি ট্রপিক্যাল বছর হল পৃথিবীর সূর্যের চারপাশে একবার পূর্ণ ঘূর্ণন করতে যে সময় লাগে সেটুকু—যা প্রায় ৩৬৫ দিন। এই সময়ের মধ্যে আমরা গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত এবং বসন্ত এই ৬ ঋতু অনুভব করি। ট্রপিক্যাল ক্যালেন্ডার ঋতু পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার কারণে আমরা কৃষিকাজ, উৎসব এবং অন্যান্য কাজের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করতে পারি।
যে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আমরা ব্যবহার করি তা আসলে ট্রপিক্যাল ক্যালেন্ডার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার।
‘ট্রপিক্যাল’ শব্দটি এসেছে ‘ট্রপিক অফ ক্যান্সার’ এবং ‘ট্রপিক অফ ক্যাপ্রিকর্ন’ থেকে, যা পৃথিবীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ অক্ষাংশ। বছরে দুবার এমন সময় আসে যখন সূর্য নিরক্ষরেখা থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে। এই দিনগুলিকে অয়নান্ত বলে।
একটি অয়নান্ত থেকে পরবর্তী অয়নান্ত পর্যন্ত সময়কে ধরা হয় এক বছর। বছরে দুবার এমন সময় আসে যখন দিন ও রাত সমান হয়। এই দিনগুলিকে বলে বিষুব। একটি বিষুব থেকে পরবর্তী বিষুব পর্যন্ত সময়কেও এক বছর ধরা হয়।
প্রাচীনকালে মানুষের কাছে জ্যোতির্বিদ্যার সরঞ্জাম ছিল না। তবুও তারা অয়নান্ত ও বিষুব চিহ্নিত করতে পারত। সূর্যের অবস্থান দেখে তারা বুঝতে পারত কখন ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে। এইভাবে তারা কৃষিকাজের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করত।
.
সাইডেরিয়াল ক্যালেন্ডার—একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ক্যালেন্ডার
একটি সাইডেরিয়াল সৌর ক্যালেন্ডার, অয়নান্ত ও বিষুব উপেক্ষা করে এবং বহুদিন ধরে রাতের আকাশে ১২টি রাশিচক্রের মধ্য দিয়ে সূর্যের যাত্রা পর্যবেক্ষণ করে সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিমাপ করে। সাইডেরিয়াল নামটি লঅতিন শব্দ ‘sideris’ (নক্ষত্রের) থেকে এসেছে।
যেখানে ট্রপিক্যাল ক্যালেন্ডার পৃথিবী এবং তার ঋতুগুলির ওপর মনোযোগ দেয়, সেখানে সাইডেরিয়াল ক্যালেন্ডার গুরুত্ব দেয় নক্ষত্র এবং সূর্যকে। কারণ সাইডেরিয়াল ক্যালেন্ডারের জন্য আকাশ, গ্রহ এবং নক্ষত্রের গতিবিধি দেখা প্রয়োজন—তাই এটি জ্যোতির্বিদ্যার সাথে সম্পর্কিত।
.
চন্দ্র ক্যালেন্ডার—অসম্পূর্ণ হলেও দরকারি
চান্দ্র ক্যালেন্ডার চাঁদের আবর্তনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই ক্যালেন্ডারে মাস শুরু হয় অমাবস্যায়, আর শেষ হয় পরের অমাবস্যায়।
একটা চান্দ্র মাস বা lunation প্রায় ২৯.৫৩ দিন ধরে চলে, যা সৌর ক্যালেন্ডারের মাস (৩০ বা ৩১ দিন) থেকে একটু কম। চান্দ্র ক্যালেন্ডার সাধারণত ১২ বা ১৩ মাসে ভাগ করা হয়—ব্যবহারকারী নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে ঠিক করে থাকে মাসের সংখ্যা কত হবে।
চাঁদের কক্ষপথ একটু উপবৃত্তাকার হওয়ায়, চান্দ্র মাসের দৈর্ঘ্য প্রতি মাসে কিছুটা বদলায়। এর সঙ্গে ক্যালেন্ডারের দিনের সংখ্যা মিলিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যায়, বিশেষত কৃষিকাজের মত ক্ষেত্রে যখন নির্ভুল হিসাবের দরকার পড়ে। তাই শুধু চাঁদকে কেন্দ্র করে একটা ঠিকঠাক ক্যালেন্ডার বানানো বেশ ঝামেলার।
এত সমস্যা সত্ত্বেও, চন্দ্র ক্যালেন্ডার হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, আর এখনও অনেক কাজে লাগে। কীভাবে? কারণ সব ক্ষেত্রে যে খুব বেশি নিখুঁত হিসাব দরকার হয়, তা নয়। অনেক সময় প্রাকৃতিক চক্র আর প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল রাখাটাই জরুরি।
ধর্মীয় উৎসব আর ঘটনাগুলি প্রায় সব সময় চাঁদের চক্রের সঙ্গে মিলে যায়। এজন্যই চান্দ্র ক্যালেন্ডার এখনও রমজান, দিওয়াল, ইস্টার, রোশ হাশানাহ, চীনা নববর্ষের মত উৎসবের তারিখ ঠিক করতে ব্যবহৃত হয়।
.
লুনিসোলার ক্যালেন্ডার
লুনিসোলার ক্যালেন্ডার হল এমন ক্যালেন্ডার, যেটা চাঁদ (luni) আর সূর্য (solar) দুয়েরই গতিবিধির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এতে বছরে ১২ মাস থাকে, প্রতিটি ২৯ বা ৩০ দিনের, যা চাঁদের দশা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। তবে বছরের দৈর্ঘ্য ঠিক রাখা হয় সূর্যের হিসাব মেনে, সৌর ক্যালেন্ডারের মত।
সৌর আর চন্দ্র চক্রকে মিলিয়ে রাখতে লুনিসোলার ক্যালেন্ডারে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত দিন বা মাস যোগ করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে intercalation। একে বলা যায় ‘লিপ বছর’—যখন বছরের শেষে এক মাস বা কয়েকটি দিন যোগ করা হয়।
কারণ চান্দ্র মাস সৌর মাসের চেয়ে ছোট, তাই ১২টা চন্দ্র মাস দিয়ে ৩৬৫ দিন পূর্ণ হয় না। যেমন, প্রাচীন রোমান ক্যালেন্ডারে বছরে মাত্র ৩৫৫ দিন ছিল, যা সৌর বছরের চেয়ে ১০ দিন কম। ফলে রোমানদের ‘ইন্টারকালারিস’ নামে একটা অতিরিক্ত মাস যোগ করে এই ঘাটতি পূরণ করতে হত।
আজও লুনিসোলার ক্যালেন্ডার অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যেসব সংস্কৃতি ধর্মীয় উৎসব আর বিশেষ দিন ঠিক করার জন্য ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। চীনা ক্যালেন্ডার আর ইহুদি ক্যালেন্ডার লুনিসোলার ক্যালেন্ডারের ভাল উদাহরণ।
.
আজকের যুগে ব্যবহৃত ৩টি জনপ্রিয় ক্যালেন্ডার
১. গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার
বর্তমানের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার হল গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, যা একটি সৌর ক্যালেন্ডার। এটি খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অফিসিয়াল ক্যালেন্ডার হিসাবে তৈরি হলেও, সিভিল ক্যালেন্ডার হিসাবেই সারা বিশ্বে ব্যবহার করা হয়।
২০২১ সালের হিসাবে, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ১৬৮টি দেশে অফিসিয়াল ক্যালেন্ডার হিসাবে গৃহীত হয়েছে। মাত্র ৪টি দেশ এখনও এটি গ্রহণ করেনি—আফগানিস্তান, ইরান, ইথিওপিয়া ও নেপাল।
এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্তমান বছর—২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ।
২. ইসলামিক ক্যালেন্ডার
ইসলামিক ক্যালেন্ডার বা হিজরি ক্যালেন্ডার একটি চান্দ্র ক্যালেন্ডার, যেখানে ১২টি চান্দ্র মাস এবং ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিন রয়েছে। হিজরি ক্যালেন্ডার ইসলামী উৎসব এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন ঈদুল আজহা ও রমজানের তারিখ নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।
প্রায় সব ইসলামিক দেশ (যেখানে ইসলাম প্রধান ধর্ম) ধর্মীয় উদ্দেশ্যে হিজরি ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে, তবে নাগরিক পরিকল্পনার জন্য গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। ব্যতিক্রম হল ইরান ও আফগানিস্তান, যারা নিজস্ব সিভিল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে।
এই ক্যালেন্ডার অনুসারে বর্তমান সাল: ১৪৪৬ হিজরি।
৩. চীনা ক্যালেন্ডার
চীনা ক্যালেন্ডার একটি লুনিসোলার ক্যালেন্ডার, যেখানে সাধারণ বছরে ১২ মাস (প্রায় ৩৫৪ দিন) এবং লিপ বছরে ১৩ মাস (প্রায় ৩৮৪ দিন) থাকে। এটি চীন এবং বিশ্বের বিভিন্ন চীনা কমিউনিটিতে ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব যেমন লুনার নিউ ইয়ার নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। সিভিল উদ্দেশ্যে চীন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে।
চীনা ক্যালেন্ডারে বছর গণনা গ্রেগরিয়ান, ইহুদি এবং ইসলামিক ক্যালেন্ডারের মত অনন্ত সংখ্যা ধরে চলে না, এটি ৬০ বছরের চক্রে গণনা করা হয়। প্রতিটি বছরের নাম একটি উপাদান (যেমন গুই বা “স্থির পানি”) এবং একটি রাশিচক্র প্রাণীর (যেমন মাও বা “খরগোশ”) সংমিশ্রণে নির্ধারিত হয়।
বর্তমান বছর: চীনা নববর্ষ ২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল, এবং সেদিন থেকে সাপের বছর শুরু হয়েছে। চীনা রাশিচক্রে সাপকে জ্ঞানী, রহস্যময় এবং প্রজ্ঞাবান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ২০২৫ সাল কাঠের সাপের বছর হবে, যা প্রতি ৬০ বছরে একবার আসে। সর্বশেষ কাঠের সাপের বছর ছিল ১৯৬৫ সাল।
.
ক্যালেন্ডার আবিষ্কারের সম্ভাব্য কারণ
এই প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর নেই। অনেক ঐতিহাসিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং দার্শনিক এই বিষয়ে ভেবেছেন। মানুষের ক্যালেন্ডার আবিষ্কারের সম্ভাব্য কারণগুলি হতে পারে:
• কৃষিকাজ: মানুষ স্থায়ীভাবে কোনো অঞ্চলে বসবাস শুরু করার পর কৃষিকাজে জড়িয়ে পড়ে। তখন ফসল বোনা এবং ওঠানোর জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। এমন একটি ক্যালেন্ডার, যা সঠিকভাবে বলবে ঋতুর শুরু এবং শেষ কখন, ফসল উৎপাদন এবং জমির ফলন বাড়াতে সাহায্য করবে।
• ধর্ম: ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং উৎসব নিয়মিতভাবে পালন করতে সময়ের নির্দিষ্ট পয়েন্ট দরকার। এক উপায় ছিল প্রাকৃতিক চক্রগুলি অনুসরণ করা, যেমন চাঁদের দশা বা একটি নদীর বদ্বীপে বার্ষিক বন্যা।
• ক্ষমতা: বন্যা, মৌসুমি বৃষ্টিপাত বা রাতের আকাশে সাইরিয়াস নক্ষত্রের অবস্থান পূর্বাভাস দিতে পারা একজন ব্যক্তি সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এমন ব্যক্তিকে প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে দেখা হত—সে হতে পারে জ্ঞানী, শামান বা সরাসরি একজন নেতা বা গোত্রপ্রধান।
.
জ্যোতির্বিদ্যা আর ক্যালেন্ডার—একসঙ্গেই শুরু
ক্যালেন্ডার দিয়ে মানুষ সময় গুনে রাখা আর ভবিষ্যতের প্ল্যান করার আগে, তাদের তারার গতিবিধি জানতে হয়েছিল। কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যা আর ক্যালেন্ডার—কোনটা আগে এসেছে?
জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক আর জনপ্রিয় ব্লগার ড. ফিলিপ প্লাইট মনে করেন, এই দুইয়ের শুরুটা একসঙ্গেই হয়েছে। ড. প্লাইট তার ‘ব্যাড অ্যাস্ট্রোনমি’ (Bad Astronomy) বই আর ব্লগের জন্য বিখ্যাত। তিনি সহজ ভাষায় বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করেন।
ড. প্লাইট বলেন, “আমাদের ব্রেন প্যাটার্ন ধরার ক্ষেত্রে খুব ভাল। আপনি যদি এমন জায়গায় থাকেন, যেখানে আকাশ অন্ধকার আর তারা স্পষ্ট দেখা যায়, তাহলে দেখবেন কিছু নির্দিষ্ট নক্ষত্রমণ্ডল সূর্যাস্তের পর আকাশে ওঠে—যেমন যখন ঋতু বদলায়।”
তিনি আরও বলেন, “উত্তর গোলার্ধে, বসন্ত আসার সময় ওরিয়ন নক্ষত্রমণ্ডল দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে উঁচুতে থাকে। এটা খুব সহজেই চোখে পড়ে। তখন মানুষ ওই প্যাটার্নগুলি খেয়াল করতে শুরু করে। আর কিছুদিন পর বোঝা যায় যে এই প্যাটার্ন প্রতি ৩৬৫ দিনে একবার করে আসে। তাই আমার মতে, ক্যালেন্ডার আর আকাশের দিকে তাকানোটা হাতধরাধরি করেই শুরু হয়েছিল।”
#ক্যালেন্ডার #সময় #গণনা