এম এ ক্লাসের পরীক্ষা দিতে বসে এক সমস্যা হল ছাত্রটির। সেইদিন ছাত্রটির প্রিয় বিষয় দর্শনের পরীক্ষা। সব প্রশ্নের উত্তরই জানা। কিন্তু প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই তিন ঘন্টা সময় চলে গেল। বাড়িতে ফিরে মন খারাপ। ভাবলেন বাকি পরীক্ষা আর দেবেন না। পরিবারের লোকেরা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করাতে বাকি পরীক্ষা দিলেন। ফল বেরোতে দেখা গেল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করছে সেই ছাত্রটিকে । শোনা যায়, ব্রজেন্দ্রনাথের সেই উত্তরপত্রে পরীক্ষকেরা মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ওই একটি উত্তরকেই মৌলিক গবেষণা হিসেবে গণ্য করা যায়।’’ সেনেটে এ নিয়ে জরুরি সভা বসেছিল। কী করা যায় ! সিদ্ধান্ত হয়েছিল, একটা প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা নম্বর পাবেন, বাকি অলিখিত প্রশ্নের জন্য তার শতাংশের হারে নম্বর ধরে দেওয়া হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটে এমন সিদ্ধান্ত সেই প্রথম ও শেষ। তিনিই একমাত্র ছাত্র যিনি ওই বছর দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে পাস করেছিলেন ! ভাবা যায় !
একবার কলকাতা থেকে মুম্বই যাচ্ছেন বিখ্যত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড থম্পসন। আচমকা দেখেন তাঁর প্রথম শ্রেণির কামরায় এলাহাবাদ স্টেশনে এক বাঙালি ভদ্রলোক উঠে পড়লেন | উঠেই তিনি শুরু করলেন কমলালেবু খাওয়া। থম্পসন ভাবলেন এই গেল ! বাঙালি ব্যাটা এ বার গোটা কামরাটা না কমলালেবুর খোসা ছড়িয়ে নোংরা করে ফেলে। কিন্তু তেমন কিছুই তো ঘটল না।বাঙালি ভদ্রলোকটি একটি প্যাকেটে তুলে রাখলেন কমলালেবুর খোসা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন থম্পসনও। শুরু হল আলাপ।
ইতিহাস নিয়েই শুরু কথাবার্তা। কিন্তু খানিক দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান— ভূ-ভারতে যতগুলি বিদ্যার শাখা আছে, তা সবই উঠে আসতে থাকল আলাপে। ঠিক আলাপ নয়, একতরফা বাঙালি ভদ্রলোকটিই বলে চলেছেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড শুধুই শ্রোতা। মুম্বই স্টেশনটাও যেন কেমন তাড়াতাড়ি চলে এল। নামার সময় থম্পসন বলে গেলেন, ‘‘আপনার নাম জানতে চাইছি না। ভারতবর্ষে একজনই আছেন, যাঁর প্রজ্ঞা এমন প্রসারিত। আমি নিশ্চিত, আপনিই সেই ব্রজেন্দ্রনাথ শীল।’’
আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল | ‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়’ তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘‘তাঁহার ন্যায় পণ্ডিত লোক বহু শত বৎসর ভারতবর্ষে জন্মে নাই এবং শীঘ্রই যে জন্মিবে তাহাও আমার মনে হয় না৷’’ ‘সুধীন্দ্রনাথ দত্ত’ জানিয়েছিলেন, ‘‘সক্রেটিস বংশের শেষ কুলপ্রদীপ’’৷ ‘চলন্ত বিশ্বকোষ’-এর মত বিশেষণে ভূষিত করেছিলেন ‘বিনয় সরকার’। ব্রজেন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর ‘গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ’ লিখেছিলেন, “… ‘সর্ববিদ্যাবিশারদ’ বলিয়া আখ্যা যদি কাহাকেও নিঃসংশয়ে দেওয়া যায় তবে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ তাহার উপযুক্ততম পাত্র।” ১৯৩৫ সালে তিনি ৭২ বছর বয়সে পদার্পণ করলে ভারতীয় দর্শন কংগ্রেস এক সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ ‘আচার্য শ্রীযুক্ত ব্রজেন্দ্রনাথ শীল সুহৃদবরেষু’ শীর্ষক এক প্রশস্তিবাণী প্রেরণ করেছিলেন। কবিগুরু সেই প্রশস্তিবাণীতে লিখেছিলেন –
‘‘জ্ঞানের দুর্গম উর্ধ্বে উঠেছে সমুচ্চ মহিমায়
যাত্রী তুমি, যেথা প্রসারিত তব দৃষ্টির সীমায়
সাধনা-শিখরশ্রেণী …’’
ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড থম্পসনের বন্ধু প্যাট্রিক সেডেড বলেছেন, ‘‘Seal was the greatest brain functioning in this planet’’।
আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল- কে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য |
© অহর্নিশ
তথ্য : আনন্দবাজার পত্রিকা (অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়), পত্রলেখা
=================
বাংলার ইতিহাস জানতে চান ? যদি প্রকৃত ইতিহাস জানতে চান তাহলে অবশ্যই পড়ুন ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই "বাঙ্গালার ইতিহাস" । বাংলার ইতিহাস নিয়ে এইরকম গবেষণামূলক বই একটিও নেই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3MP7d4v
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন