দিনা ওয়াদিয়া
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একমাত্র মেয়ে,
ইতিহাস যেনো ফিরে ফিরে আসে
দিনার বিয়ের আগে জিন্নাহও তার মাঝের কথা, দিনা একজন পার্সিকে বিয়ে করেন নিজে মুসলিম হয়েও
জিন্নাহ : দিনা ভারতে মুসলিম ছেলের অভাব নেই, ভারতে লাখো মুসলিম ছেলে আছে। এত ছেলে থাকতে তাকে কেনো বিয়ে করবে? মুসলিম ছেলের কি অভাব পরেছে?
দিনা : বাবা ভারতে তো মুসলিম মেয়েরও অভাব ছিলোনা, ভারতে লাখো মুসলিম মেয়ে থাকতে আপনি কেনো পার্সিকে বিয়ে করতে গেলেন? মুসলিম মেয়ের কি অভাব ছিলো।
জিন্নাহ সেই সময় তার স্ত্রী মুসলিম হয়েছিলেন বলে এড়িয়ে যান।
জিন্নাহ বিয়ে করেন তার থেকে ২৪ বছরের ছোট এক পার্সি মেয়েকে যে ছিলে সকল প্রকার ধর্মে অবিশ্বাসী। পার্সিরা ইরান থেকে ভারতে আসে কয়েকশ বছর আগে ইরানে ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়ে। এখনো ভারত ও পাকিস্তানে পার্সি আছে।
জিন্নাহর বউয়ের নাম রতনবাই পেটিট। তার বাবা বিখ্যাত পার্সি ব্যবসাী ডিনশো পেটিট। তার বাবা বোম্বেতে থাকতেন। তার বন্ধু ছিলো জিন্নাহ। তখন জিন্নাহর বয়স ৪০, রতনবাইয়ের ১৬। জিন্নাহ রতনবাইয়ের মতো সবার অগোচরে সম্পর্ক গড়ে উঠে। রতনবাইয়ের বাবা কখনো কল্পনাও করতে পারেননি তার বন্ধু জিন্নাহ যার সাথে তার মেয়ের বাবা মেয়ের সম্পর্ক হওয়ার কথা তার এই অবস্থা। নিজের বন্ধু তার সাথে এই বিশ্বাসঘাতকতা করবে ভাবতেও পারেননি। জিন্নাহ যখন তাকে আন্তঃধর্মীয় বিয়ের কথা বলে তখন তিনি জিন্নাহকে বের করে দেন বাসা থেকে। শুধু ধর্ম আলাদা এই কারনে না, দুইজনের বয়সের পার্থক্য তার বাবা মানতেই পারেননি।
একমাত্র মেয়েকে অনেক আদর করতেন তিনি। বছরখানেক পর নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে রতনবাই ঘোষণা দেন তিনি জিন্নাহকেই বিয়ে করবেন। তিনি মুসলিম হন ও হিজাবের সহিত জিন্নাহকে বিয়ে করেন। কিন্তু রতনবাইয়ের জীবনে ইসলাম এই পর্যন্তই।শুধু ভালোবাসার আবেগের সাথে না পেরে মুসলিম হন।
পরবর্তীতে তিনি সারাজীবন না মুসলিম ইবাদাত করেছেন, না খাদ্যভাস মেনেছেন, না কোন প্রকার রীতি মেনেছেন। জিন্নাহও তাকে জোর করেনি কারন সে নিজেও খুব কম ধর্মকর্ম করতেন।
জানা যায় রতনবাই এত পাশ্চাত্য স্টাইলের কাপড় চোপড় পরতেন যে মুসলিম তো বটেই সেইসময়ের ব্রিটিশরাও অবাক হতেন তার কাপড়ের স্টাইল দেখে। ইউরোপে ছুটি কাটাতে যেতেন প্রায়ই বিয়ের পর। কয়েকবছর পর তাদের একমাত্র মেয়ে দিনা ওয়াদিয়ার জন্ম হয়। দিনা বাবা বা মা কারো খুব বেশি সান্নিধ্য পাননি। বাবা রাজনীতিতে ব্যস্ত, মা ঘোরাফেরা পার্টিতে। রতনবাইকে বিয়ের পর তার পরিবার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে।
বিয়ের কয়েকবছর পর রতনবাই ও জিন্নাহর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে কোলনের সমস্যায় মাত্র ২৯ বছর বয়সেই মারা যান রতনবাই।
দিনাকে দেখাশোনা করতেন ফাতিমা জিন্নাহ, জিন্নাহর বোন। তবে দিনাও তার মায়ের পথ অনুসরণ করেন। তার মা রতনবাই যেমন তার বাবার কথা এড়িয়ে একজন মুসলিমকে বিয়ে করেন তেমনি তিনি তার বাবার পছন্দ এড়িয়ে নেভিল ওয়াদিয়া নামের একজন পার্সি খ্রিস্টানকে বিয়ে করেন জিন্নাহ চেষ্টা করেন তার মেয়েকে থামাতে তবে ব্যর্থ হন তিনি।
শোনা যায় এরপর জিন্নাহ তার মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখেননি। তবে একটি সূত্র এইও বলে জিন্নাহ মেয়ের বিয়েতে গোপনে তার জন্য ফুলের তোড়া পাঠান ড্রাইভারকে দিয়ে। দিনার সাথে জিন্নাহর শেষ দেখা ১৯৪৬ সালে মুম্বাইয়ে। তার সাথে ছিলো তার ছেলে নেসলে ওয়াদিয়া। নিজের নাতিকে একটি হ্যাট উপহার দেন জিন্নাহ। দেশভাগের পর জিন্নাহ পাকিস্তান চলে যান। দিনা ভারতে, পরবর্তীতে ইংল্যান্ডেও থাকেন। পাকিস্তানে যান ৪৮ সালে জিন্নাহর মৃত্যুর পর তাকে দেখতে। ফুফু ফাতিমার সাথে তার যোগাযোগ ছিলো যদিও।
জিন্নাহর নাতি নেসলে ওয়াদিয়ার ছেলে নেস ওয়াদিয়া। যাকে আপনারা আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের খেলার সময় দেখতে পারবেন প্রীতি জিনতার সাথে। তার সাবেক বয়ফ্রেন্ডও বটে।
দিনা ওয়াদিয়া তার বাবাকে অনেক ভালোবাসতেন। তার বাবার রাজনৈতিক স্বপ্ন পাকিস্তানকেও সমর্থন করেছিলেন। তিনি পরবর্তীতে ইংল্যান্ড, আমেরিকায় থাকেন ও ২০১৭ সালে আমেরিকায় মারা যান। তার ছেলে নুসলি, নাতি নেস সবাই ভারতের বড় বড় ব্যবসায়ী, ব্রিটিশ ভারতীয়।
২০০৪ সালে পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে পাকিস্তান ভারত সিরিজ চলাকালে ভারত থেকে তার ছেলে ও নাতি সহ দিনা পাকিস্তান যান এত বছর পর প্রথম । সেখানে তার বাবার কবর পরিদর্শন করেন। বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন তিনি। তিনি পাকিস্তান সরকারের কাছে তিনটি ছবি চান। যার একটি এই ছবিটি যেখানে তাকে তার বাবা ও ফুফুর সাথে দেখা যাচ্ছে।
ইতিহাস বড়ই নির্মম। জিন্নাহ যিনি পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখলেন তার পুরো পরিবার, নাতি পুতি সব ভারতীয়, ব্রিটিশ ভারতীয়।
যদিও ছবিটি বাংলাদেশের সরাসরি সাথে সংশ্লিষ্ট না। তবে জিন্নাহ, ফাতিমা জিন্নাহ এই দেশের ইতিহাসে আছেন, ও তাদের একটি পুরনো ছবি ও আসন্ন ১৪ / ১৫ই আগস্টের স্মরনেই শেয়ার করা।
ছবিতে বিয়ের আগে জিন্নাহ, দিনা ও ফাতিমা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন