বাঙালির বহুমাত্রিক বিনোদনের এক রসালো উপকরণ পাওয়া যায় পাবলিক টয়লেটে। এই ‘টয়লেট’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ একাধিক। এর মধ্যে গণব্যবহৃত সুপ্রচলিত শব্দ-পায়খানা। এই শব্দটি নিয়ে নজরুল ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ওটির নাম হওয়া উচিত ছিলো, ‘যায়খানা’। কারণ ওখানে খানা যায়, খানা পাওয়া যায় না!
যাই হোক, বাংলা অভিধান বলে, ‘পায়খানা’ শব্দটি ফারসি-‘পায়েখানাহ্’ শব্দ থেকে এসেছে। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয়, ‘পায়ু’ শব্দটির সঙ্গে ‘পায়খানা’-এর কোথায় যেন মিল আছে এবং তাতে কেবল ধ্বনিগত নয়, অর্থগত ও ভাবগত মিলও আছে। পায়ু মানে তো গুহ্যদ্বার- প্রাণীদেহের কঠিন বর্জ্য নির্গত হওয়ার পথ। তাই ব্যাকরণসিদ্ধ না হলেও আমার কেন যেন মনে হয় সেই পায়ু থেকেই পায়খানা শব্দটির জন্ম।
পায়ুপথে মানবদেহের দুর্গন্ধময় যে কঠিন বর্জ্য বের হয় তার সর্বপরিচিত নাম- ‘গু’। এর যে প্রতিশব্দ এই মুহূর্তে মনে পড়ছে তা হলো : বিষ্ঠা, মল, পুরীষ। এগুলো সংস্কৃত শব্দ। পায়খানাকেও আমরা মলের প্রতিশব্দ হিসেবেও ব্যবহার করি। ইতর প্রাণীর মলের আবার অন্য নাম। পাখির মলকে গ্রামের মানুষ ‘বিষ্ঠা’ বলে। আর পশুর মলকে বলে ‘ল্যাদা’। বিট ক্ষুদ্রার্থে আর ল্যাদা বৃহদার্থে ব্যবহৃত হয়। তবে গরুর মলকে বলা হয় গোবর। রস করে ছাগলের মলকে বলা হয়, ছাগলের বড়ি বার নাদি!
মলত্যাগের স্থানকে শিক্ষিত-ভদ্রলোকেরা সুন্দর-সুন্দর নামে ডাকে-টয়লেট, বাথরুম, শৌচাগার, প্রসাধনকক্ষ ইত্যাদি। কিন্তু বিদ্যালয় বা হিমালয়ের মতো কেউ তাকে মলালয় বা বিষ্ঠালয় বলে না।
পাবলিক টয়লেটকে আমরা বাংলায় বলি, গণশৌচাগার। এই গণশৌচাগার এদেশে কেবল অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধময় এবং ব্যবহার অযোগ্যই থাকে না, তাতে মজার মজার ‘বাণী’ও লেখা থাকে। এসব ‘বাণী’ কোনো কথাশিল্পী বা মহাজনরা লেখেন, তা আমরা জানি না। কিন্তু তাতে পাওয়া যায়, বাঙালির রসবোধের পরিচয়। সাধারণ বাঙালি যে এতো চিন্তাশীল, রসিক ও শিল্পগুণসম্পন্ন কথাসরিৎসাগর, তার সরস পরিচয় পাওয়া যায় গণশৌচাগারের দেয়াল ও দরোজার দিকে তাকালে।
: ভোগে নয়, ত্যাগেই শান্তি! : ডানে দেখুন। ডানে লেখা ছিলো...বামে দেখুন। বামে লেখা...পেছনে দেখুন। পেছনে লেখা...ওপরে দেখুন। ওপরে লেখা ছিলো... ঐ মিয়া, টয়লেটে বইয়া এতো মোচড়া-মুচড়ি করেন ক্যান?
: আপনার হাগু আপনার সম্পদ। দয়া করে অন্য কারো জন্য ফেলে যাবেন না।
: আপনার ত্যাগকৃত মল কোনো শিল্পকর্ম নয়। তাই অন্যকে প্রদর্শনের জন্য রেখে যাবেন না।
: ওগো মহাজ্ঞানী, মুতিয়া লইও পানি।
: তুই যে লাটের বেটাই হইস না ক্যান... আমার সামনে আইলে তোর পাজামার গিট্টু খোলা লাগবোই।
: হাই-কমোড ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারায় একটি দরোজায় লেখা ছিলো : আপনি যদি পা ঝুলাইয়া বসিয়া এই লেখা স্বাচ্ছন্দ্যে পড়িতে পারেন, তবে আপনি সঠিক অবস্থানেই বসিয়াছেন।
: টয়লেট কি তোর বাপের? ঢুকলে আর বাইর হইতে মন চায় না!
: যাহা ফেলিয়া যাইতেছেন তাহা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত সম্পদ হইলে সঙ্গে করিয়া নিয়া যান। না হইলে এক বদনা পানি ঢালিয়া যান।
:ওহে মহাজ্ঞানী, কর্ম করিয়া ঢালিও পানি। যে সবে হাগিয়া প্যানে না দেয় পানি/সে সবে কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।/হাগার জন্য সবাই বাঁচে, হাগায় নেইকো পাপ,/হেগেছে আমার ঠাকুরদাদা, হেগেছে আমার বাপ।
টয়লেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট আসছে।।।
😅😅😅
ডা: সাইদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন