এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ১০ মে, ২০২৫

গল্পঃ চালাক বুড়োর টাকাকড়ি বইঃ আসামের লোককথা

 পাথর কুঁদেই দিন কাটত সেই বুড়োর। একদিন পাথর নিতে গিয়ে বুড়ো দেখে পাথরের একটা ফোকরের মধ্যে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে একটি সোনাব্যাঙ। ব্যাঙটার রঙ যেমন সোনালি সবুজ, ঠিক তেমনি তরতাজা সেই ব্যাঙটা।

     ব্যাঙটাকে দেখেই বুড়োর বুকে উথাল-পাতাল করে উঠল পরিবর্তনের ঢেউ। বুড়ো ভাবে, শুকনো খটখটে এই নীরস পাথরের মধ্যে থেকেও ব্যাঙটা কেমন হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে। এই পাথরের ফোকরেও তার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন বিধাতাপুরুষ।

     আর সে-সে কিনা এই বুড়ো বয়সেও দুটো খাবার জোগাড়ের জন্য দিনরাত কুঁদে যাচ্ছে এই পাথরের চাঙর।

     মনে মনেই ভাবে বুড়ো, ইস কি বোকা আমি। একবারও কেন মনে হয়নি, কপালে যা আছে তা জুটবেই। কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না তা থেকে। তাই বুড়ো ঠিক করে ফেলে। আর কাজ নয়, এবার সে ঘরেই দিন কাটাবে শুয়ে বসে। দেখবে বিধাতাপুরুষ কি মেপে রেখেছেন তার জন্য।

     যেমন ভাবা তেমন কাজ। বুড়ো সব কাজকর্ম ছেড়ে দিনরাত শুয়ে থাকে ঘরে। পাড়া প্রতিবেশী যারা তারা ভাবে, হল কি বুড়োর? কাজ ছেড়ে দিনরাত শুয়ে থাকে-ওর খাওয়া জোটে কোথা থেকে?

     সত্যি কথা বলতে কি, সারা গাঁয়ের মানুষ বুড়োর কাজ ছাড়ার কারণটা জানার জন্য ছটফট করতে থাকে। কিন্তু জানতে পারে না কিছুই। এমন কি বুড়িকেও কিছু বলে না বুড়ো। তাই বুড়ির কাছ থেকেও শুনতে না পেয়ে পেট যেন ফুলতে থাকে গাঁয়ের মানুষের।

     কিছু দুষ্টু লোক ঠিক করে নেয়, বুড়ো নিশ্চয় খোঁজ পেয়েছে কোনো গুপ্তধনের—সেই টাকাতেই কাটাচ্ছে দিন পায়ের ওপর পা তুলে। গাঁয়ের সেই দুষ্টুদের চারজন ঠিক করে, জানতে হবে রহস্যটা। চুরি করতে হবে বুড়োর টাকা।

     চার চোর রাতের অন্ধকারে আড়ি পাতে বুড়োর ঘরে। বুড়ো তখন বিছানায় শুয়ে দেখছে একটা স্বপ্ন। বিড়বিড় করে বলে চলেছে বুড়ো তার স্বপ্নের কথাগুলো।

     বুড়ি, ও বুড়ি, শোন না কেনে, কুয়োতলায় পাড়ে রয়েছে যে লেবুগাছটা—তার তলায় রয়েছে একটা কলসি। যেমন তেমন কলসি নয়, টাকা ভর্তি কলসি। কাল সকালেই লেবু গাছের গোড়াটা খুঁড়ে বের করে নিতে হবে টাকার কলসিটা।

     চার চোর শোনে বুড়োর স্বপ্নের কথা। তারপর বলে, থাক বুড়ো এখন শুয়ে, সকালে উঠে দেখবে সব ভোঁ-ভোঁ।

     বাড়ির কানাচ থেকে চার চোরে চলে যায় কুয়োতলায়। কুয়ো-তলার পাড়েই রয়েছে একটা লেবুগাছ। চারজনে এবার খুঁড়তে থাকে গাছের তলাটা। খানিকটা খোঁড়াখুঁড়ি করতেই ঠং করে শব্দ হয়। তারা টেনে তোলে সেটা—সেই কলসিটা।

     লোভে চিকচিক করে ওঠে চার চোরের চোখ। তাড়াতাড়ি তারা কলসির ঢাকনাটা খোলে। তারপরেই যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে ওঠে 'উফ' বলে। কলসির মুখে রয়েছে বোলতার চাক। নাড়া খেয়ে বেরিয়ে আসে বোলতা চাক ছেড়ে। হুল ফোটাতে থাকে চার চোরকে। বোলতার হুলে নাস্তানাবুদ চার চোর তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেয় ঢাকনা।

     বোলতার হুলের জ্বালা বড় জ্বালা। চার চোর সেই জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে বলে, হতচ্ছাড়া বুড়ো, আমাদের নাকাল করা, দেখাচ্ছি তোমাকে মজা।

     চার চোরে কলসিটা তুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বুড়োর ঘরে। বোলতার হুলে প্রাণ যাচ্ছে বুড়োর এই ভেবে চার চোর যেই ফিরেছে অমনি তারা শোনে টাকার ঝনঝন শব্দ। বুড়োর ঘরে কলসি থেকে পড়ছে টাকা।

     চার চোরের আক্কেল গুড়ুম। কোথায় বুড়োকে বোলতায় কামড়াবে, তা নয় মাটি খুঁড়ে তারা বের করল যে কলসি তার টাকা-গুলো পেয়ে গেল বুড়ো। আর তাদের ভাগ্যে জুটল কিনা লবডঙ্কা। বোলতার হুলে ফুলে ওঠা মুখে হাত বোলাতে বোলাতে তারা বলে, জেনে রাখ বুড়ো, ও টাকা তোমার ভোগে লাগতে দেব না কিছুতেই। কালকেই চুরি করে নেব তোমার ওই টাকা।

     বিষের জ্বালায় চোরগুলো বোধহয় একটু জোরেই বলেছিল কথাগুলো। তাই বুড়ো শুনে ফেলল তাদের কথা। সঙ্গে সঙ্গে চোখ মটকে বুড়োও ঠিক করে ফেলে মতলবটা। বুড়িকে ডেকে বলে, ও বুড়ি কাল আমি জিজ্ঞেস করলে যেমন শিখিয়ে দিচ্ছি—তেমনি উত্তর দিবি কিন্তু।

     বুড়ি বলে, তা আর বলতে। কিন্তু জিজ্ঞেস করবে কি আর আমিই বা উত্তরটা দেব কি?

     শোন, আমি বলব, ও বুড়ি টাকাগুলো কোথায় রেখেছিস? তুই বলবি খড়ের চালার নিচে মাচার ওপর, কেমন?

     বুড়ি জোরে জোরে মাথা নাড়ে তিনবার। তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ে তারা।

     পরদিন রাতে চার চোর বুড়োর বাড়ির কাছে আসতেই ঠিক টের পেয়ে যায় বুড়ো। তারপর চেঁচিয়েই বলে, ও বুড়ি, টাকাগুলো তুই কোথায় রেখেছিস?

     বুড়িও বেশ জোরেই বলে, কেন, চালার নিচে ওই মাচাটার ওপর।

     কথাটা শুনতে পেয়ে চার চোর বলে, বরাতটা আমাদের সত্যি ভাল। না হলে এত সহজে জানা যায় টাকাটা রয়েছে কোথায়?

     এবার সলা করতে বসে চার চোরে। ঠিক করে ঘরের চালার খড় সরিয়ে একজন টুক করে নেবে পড়বে মাচার ওপর। তারপর টাকার কলসিটাকে ওপরে তুলে দিয়ে সরে পড়বে সেখান থেকে।

     ফন্দি মাফিক ঘরের চাল ফাঁকা করে এক চোর তার পা-টাকে নামিয়ে দেয়; কিন্তু মাচার হদিশ পায় না। সে অন্যদের বলে, কই মাচা তো নেই! তার তিন সঙ্গী বলে, নিশ্চয় আছে—তুই দু-পা ঝুলিয়ে নেমে পড় ঝুপ করে।

     সেই প্রথম চোর তাই করে। সতিই কিন্তু চালার নিচে মাচা ছিল না। তাই চোরটা গিয়ে ধপাস করে শক্ত মাটির মেঝেতে পড়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে। বুড়ো তার পেছনে একটা লাথি মেরে বের করে দেয় ঘর থেকে। বলে, যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে—এইবার বাড়ি চাল যাও যাদু।

     প্রথম চোর ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে যায় তার সঙ্গীদের কাছে। চার চোরেই বলে, বেশ আজকের মতো রেহাই দিলাম। কালই দেখব, কেমন করে টাকা রাখ তুমি ঘরে।

     বুড়ো কিন্তু শুনে ফেলে এই কথাগুলোও। তাই বুড়িকে বলে, কাল যখন জিজ্ঞেস করব, বুড়ি টাকাগুলো কোথায় রেখেছিস; তখন বলবি চাল রাখার ওই বেতের পাত্রটার মধ্যে।

     পরদিন রাতে আবার আসে চার চোর। টের পেয়েই বুড়ো বলে, ও বুড়ি টাকাগুলো এবার কোথায় রেখেছিস? বুড়ি বলে, চাল রাখার ওই বেতের পাত্রটার মধ্যে।

     চার চোরে এবার সিঁধ কেটে ঘরে ঢোকে। ঘরের কোণে দেখতে পায় চালের পাত্রটা। তারপর সেটাকে টেনে নিয়ে বেরিয়ে যায় সিধকাটা গর্ত দিয়ে।

     এদিকে বুড়ো ছোট্ট একটা ধারালো দা নিয়ে আগে থেকেই ঢুকে ছিল ওই বেতের পাত্রে। তাই ওটা বেশ ভারি লাগে চোরদের। একজন বলে, এটা এত ভারি কেন বলত?

     অন্যজন বলে, দূর মুখ্যু। শুনলি না, চাল রাখার পাত্র— চাল আছে তাই ভারি।

     চোরেদের কথা শুনে মনে মনে হাসে বুড়ো। বেতের পাত্রে চোরদের কাঁধে চেপে বেশ আরামেই চলে বুড়ো। চলার পথে পড়ে একটা ছোট নদী। নদী পাড় হবার সময় জল ঢুকতে থাকে পাত্রে। সঙ্গে সঙ্গে বুড়ো চেঁচিয়ে বলে ওঠে, এই, হচ্ছেটা কি? আমি ভিজে গেলাম যে, তোল তোল ওপরে তোল।

     চমকে ওঠে চার চোর। আওয়াজ আসে কোথা থেকে? বুঝতে না পেরে তারা বেতের পাত্রটা নিয়ে এগিয়ে যায়। ভারি পাত্রটা আবার নিচু হতেই আবার জল ঢোকে পাত্রে। বুড়ো আবার চেঁচিয়ে ওঠে, আরে আরে আমার পেছনটা যে একেবারে ভিজে গেল। শিগগির ওপরে তোল পাত্রটা।

     চার চোর এবার বুঝতে পারে, আবার ঠকেছে তারা। বুড়োটা রয়েছে পাত্রের মধ্যে। আরাম করে সে চলেছে তাদের কাঁধে চড়ে। রেগেমেগে তারা পাত্রটা ফেলে দিয়ে রওনা হয়।

     বুড়ো বেড়িয়ে আসে পাত্র থেকে। তারপর তার সেই ছোট্ট দা'টা তুলে তার সে কী তড়পানি। ওরে পালাচ্ছিস কেন, আয় নিয়ে যা টাকা। তোদের টাকা নেবার সাধ আমি একবারে মিটিয়ে দেব—আয়।

     আর আয়—চার চোর তখন ছুট দিয়েছে জোরে তাই দেখে বুড়ো এবার হাসতে থাকে হি-হি করে।


গল্পঃ চালাক বুড়োর টাকাকড়ি

বইঃ আসামের লোককথা

কোন মন্তব্য নেই:

জানা প্রয়োজন গায়রত কী? *******************

 ★জানা প্রয়োজন গায়রত কী? ************************** প্রিয় নবীজীর সাহাবীরা তাদের স্ত্রী'র নাম পর্যন্ত পরপুরুষকে বলতো না। এটাই গায়রত।তথা-(...