এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ইচ্ছা """ফেইসবুক গল্প

 ছোটবেলায় কিসমিস খেতে খুব ইচ্ছা করত।আম্মা খেতে দিত না।বাজার থেকে অল্প কিসমিস এনে আম্মা কুটুরিতে লুকিয়ে রাখত।শুধুমাত্র সেমাই রান্না করার সময় সেই কুটুরি খোলা হত।ঐ সময় হাতে দুই তিনপিস পেয়ে অতৃপ্ত  আমার বাল্যকালে খুশীর রঙ লেগে যেত।


যখন টাকা আয় শুরু করলাম তখন কিসমিস খাওয়া শুরু করলাম।মুঠো মুঠো করে কিসমিস খাইছি। হয়ত বাল্যকালের সেই তিনপিসের মত টেস্ট পাই নাই, তবে অতৃপ্ত বাল্যকালের উপর কিছুটা প্রতিশোধ নিতে তো পারছি।


ঐদিন এক সুপার শপে দেখলাম নসিলা।ছোটবেলায় টিভিতে শুধু এড দেখতাম, বাচ্চারা টিফিনে নসিলা দিয়ে পাউরুটি মাখিয়ে নিয়ে যায়। এড দেখে বুঝতাম এই জিনিস বিরাট সুস্বাদু,কিন্তু মধ্যবিত্ত বাবা মায়ের নসিলার বোতল কিনে দেয়ার আগ্রহ বা সক্ষমতা কোনটাই ছিল না।


ঐদিন এক বোতল নসিলা কিনে এনে আঙুল দিয়া চেটে পুটে খাইছি। যেটুকো সক্ষমতা আছে, সেটুকোর মধ্যে কোন  আক্ষেপ রাখা যাবে না। 


এক কলিগের  তেল আনতে নুন ফুরায় অবস্থা।একদিন দেখি  ফুল ফ্যামিলি কক্সবাজার যাবার বিমানের টিকেট সহ উপস্থিত । সবাই কানাঘুষা করতেছে।আমি ভাইরে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি?


সে বলল, আব্বা সারাজীবন স্বপ্ন দেখাইছে রোল ১ হইলে কক্সবাজার নিয়া যাবে। ক্লাসে সবসময় রোল ১ হইত, কিন্তু স্কুল শিক্ষক আব্বার  সক্ষমতা হয় নাই।আমিও ছেলেকে বলছিলাম রোল ১ হলে কক্সবাজার নিয়া যাব।একটাই জীবন,আমি আমার আব্বার মত হতে চাইনা।


জীবনটা তো ছোট। আজকে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার বয়স।টাকা জমিয়ে জমিয়ে কোন একদিন সময় করে বউ নিয়ে ঘুরতে যাবেন, ও স্বপ্ন সহজে পূরণ হবে না।সময়, টাকা, অবসর তিনটা একসাথে আপনার কোনদিন হয়ে উঠবে না।


জীবন একটু একটু চলে যাচ্ছে।আজকে যা গেল ওটাই শেষ। আজকে যা করতে পারেন নাই, ওটাই মিস করলেন।যেটুকো আপনার আছে এটুকুই অল্প করে উপভোগ করার মানেই জীবন।


জীবনটাকে নসিলা ভেবে চেটেপুটে খেতে থাকুন, কিসমিসের মত ভবিষ্যতের আশায় কুটুরিতে জমা করে রাখলে শুধু আফসোস বাড়বে।


ফেইসবুক থেকে কপি করা 

তাবলীগ জামাত ফেইসবুক গল্প

 -যে গল্পে অশ্রু ভিজে.🍂


রাসুল (সাঃ) এর  প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) মারা যাওয়ার আগে রাসুল (সাঃ) এর দুটো হাত ধরে বললেন....


 আমাকে কথা দিন,,, আপনার গায়ের জোব্বা দিয়ে আমার কাফনের কাপড় বানাবেন, আর নিজ হতে  আমাকে কবরে নামিয়ে দিয়ে আমার সওয়াল-জবাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি কবরের পাশেই থাকবেন। আমাকে একা ফেলে যাবেন না। রাসুল (সাঃ)  অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন,  " হে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী, আমি কথা দিচ্ছি... "।  খাদিজা (রাঃ)  শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। 


গোসল, জানাজা শেষ করে রাসুল (সাঃ)  তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিজেই কবরে শুইয়ে দিলেন, এবং কবরের পাশে অশ্রুজল চোখে কবরের পাশে দাড়িয়ে রইলেন। হাবীবের এমন বিমর্ষ মানসিক অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ ফেরেস্তা জিবরাইল (আঃ) কে পাঠালেন। 


জিবরাইল (আঃ) এসে সালাম দিয়ে জানতে চাইলেন,  হে আল্লাহর রাসুল আপনি এভাবে আপনার স্ত্রীর কবরের পাশে এভাবে দাড়িয়ে  আছেন  কেন? রাসুল (সাঃ)  বললেন, " হে জিবরাইল,  আমি  প্রিয়তমা স্ত্রীকে  কথা দিয়েছি তাঁর সওয়াল-জবাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে নড়বো না।


জিবরাইল (আঃ)  বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি জেনে রাখুন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, খাদিজা (রাঃ)  কে করা মুনকার-নাকীর এর সওয়ালের জওয়াব আল্লাহ আরশে আজীম থেকে নিজেই দিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ :-')


এই সেই খাদিজা (রাঃ), যাকে মহান আল্লাহ সালাম দিয়েছেন। যেখানে তিঁনিই কবরের সওয়াল-জবাবকে ভয় পেয়েছেন। সেখানেই আমরা যেন চিন্তাই করিনা কবরের জীবন নিয়ে। আল্লাহ আকবর। :-'(


খাদিজা (রাঃ)  এর মৃত্যুর পর প্রায় প্রতি রাতেই আয়িশা (রাঃ) এর ঘুম ভেঙে গেলে, উঠে এসে দেখতেন রাসুল (সাঃ)  কান্নারত অবস্থায় আল্লাহর কাছে মিনতি করছেন, 

হে আল্লাহ!  যখন শেষ বিচারের দিন ছেলে বাবাকে চিনবে না,বাবা ছেলেকে চিনবে না,স্বামী স্ত্রীকে আর  স্ত্রী স্বামীর চেহারা দেখে বিস্তৃত হবে  তখন যেনো আমি আমার আমার প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাকে চিনতে পারি এবং তাঁকে দেখে যেন বিস্তৃত না হই। 


খাদিজা (রাঃ)  গোশত খেতে পছন্দ করতেন।যদিও খুব কম সুযোগ হতো।কিন্তু কখনো হঠাৎ  কোন উট, দুম্বা কিংবা খাসির গোশতের ব্যবস্থা হতো,তিনি তৃপ্তি করে খেতেন। উনার মৃত্যুর পর রাসুল (সাঃ)  যখনি কোন গোশত হাদিয়া পেতেন কিংবা কোনোদিন হঠাৎ কোন

পশু জবাই হতো, তখন রাসুল (সাঃ) খুব যত্নে এক ভাগ মাংস  সরিয়ে রাখতেন।


সেটা একটা পোটলায় ভরে মদীনার রাস্তায় চোখ মুছতে মুছতে হাটঁতেন, প্রিয়তমা খাদিজা (রাঃ)  এর কোন পুরনো বান্ধবীর দেখা পান কিনা,,, সেই আশায়। কোনো বান্ধবীকে দেখলে, পোটলাটা  দিতেন। 


আল্লাহ সকল হালাল সম্পর্কের বারাকাহ দান করুক।

প্রত্যেক সংসারকে আল্লাহ  ভালবাসা এবং স্নেহের আঁচলে আবৃত করুক....

আমিন।

অতীত ফেইসবুক গল্প পেইজ

 পাঁচ বছর পর তার সাথে আমার আজকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা।দুজনের মুখেই হাসি, উনার মুখে অপরাধীর আর আমার মুখে ব্যথা লুকানোর হাসি। নিজের স্ত্রীকে নিয়ে দাওয়াতে এসেছেন। কোলে একটা বাচ্চা মেয়েও আছে দেখছি। কাকতালীয় ভাবে দেখা। পাঁচ বছর পরেও আমার অনূভুতি গুলো কেমন আগের মতই আছে। বুঝতে পারছি না, কথা বলা উচিৎ নাকি নয়,বললেই কীভাবে কথা বলবো, কথা বলতে চাচ্ছি কিন্তু ঠোঁট নাড়িয়ে বলতে পারছি না।এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।গলা যেনো শুকিয়ে কাঠ,পানি খেয়েও তৃষ্ণা মিটছে না।জ্বর ,সর্দি হলে যেমন হয়,ঠিক তেমন আমার গলার দশা।এর মধ্যেই উনার পাশে থাকা মহিলাটি বলে উঠলো


-"আরে আপনি সেই? গতকাল এসেছি থেকে ঝুমুর মুখে আপনার প্রশংসা শুনছি। আসলেই আপনার পছন্দ একদম আপনার মতোই সুন্দর।"


কেউ কারুর প্রশংসা করলে, উত্তরে কী বলতে হয় তা আমি খুঁজে পাচ্ছি না।তাই বোকার মতো কেমন হাসলাম। হেঁসেই খুব অনাকাঙ্ক্ষিত এক প্রশ্ন করলাম,,

উনার কোলে থাকা বাচ্চা মেয়েটির হাত ধরে জিজ্ঞেস করলাম,


-"আপনার মেয়ে বুঝি?"


-"জ্বী আমার মেয়ে।আর উনি আমার বর।"


বাচ্চা মেয়েটার হাত ধরে পূনরায় জিজ্ঞেস করলাম,


-"নাম কী মেয়ের?"

 

মেয়ের মা টুক করে জবাবে বললেন ,

 

-"হুমাইরা ইয়াসমিন ইফতি।"


আমি চমকালাম,এই নাম নিয়ে আমরা একটা সময় কত গল্প করেছি। জানেন আমাদের একটা মেয়ে হবে। টুকটুকে লাল, আপনার নামের সাথে নাম মিলিয়ে তার নাম রাখবো হুমাইরা ইয়াসমিন ইফতি।


আজকে সত্যি সত্যি উনার একটা লাল টুকটুকে মেয়ে হয়েছে। নাম টাও ঠিক সেটাই হয়েছে। কিন্তু মেয়ের মায়ের জায়গায় আমি নই অন্য কেউ। নিঃসন্দেহে ইফতির মা অনেক সুখী মানুষ।যেখানে এতো এতো ভালোবাসা দিয়ে মেয়ের নাম ঠিক করলাম আমি, কল্পনায় লাল টুকটুকে মেয়ে চাইলাম,আর উনাকে যতটা চেয়েছি তা আর কী বলবো,,

চাওয়ার পরিমাপ বোঝার জন্য হলেও একটা মেশিন আবিষ্কার করা উচিৎ ছিলো,যাতে কে কাকে কতটা সত্যি কারেই চায় তা বোঝা যেতো। কোন ফেইক মানুষের সাথে,জীবন জড়িয়ে যেতো না, হয়তো তখন কারুর।আর যাদের আমরা তীব্র ভাবে চাই তারাও হয়তো এই পরিমাপ যন্ত্রের সাহায্যে চাওয়ার পরিমাণ দেখতে পেরে আমাদের ছেড়ে যেতে বা ধোঁকা দিতে একটু হলেও কলিজা কাঁপত বোধহয়।


আমার সামনে দাঁড়ানো মহিলাটি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী। যাকে হাজার বার চেয়েও আমি পেলাম না।আর উনি তা কী সহজ স্বাভাবিক ভাবে পেয়ে গেলেন। এটাকে আমি আমার দূর্ভাগ্য বলবো নাকি কর্মের ফল? বুঝতে পারছি না।


 আমার কী বুকে ব্যথা হচ্ছে নাকি। চোখের পানি বিদ্রোহ করছে বোধহয় কোপল বেয়ে গড়ানোর জন্য। আমি এসবের কিছু বুঝতে পারছি না। শুধু এইটুকু বুঝতে পারছি এই মুহূর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ রাজ্যের রানী আমি। পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ছে।এই রাজ্যে সুখ ছাড়া কিছুই নেই।ব্যথা কি এই রাজ্যের মানুষ জানে না। আমি সুয়ে আছি একটা হীরের পালঙ্কে।


আমার কল্পনা বেশ কাজে দিলো, দুঃখ রা সব পালালো। আমি এখন আছি ফূর্তিতে। আমার সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির সামনে আমাকে জীবন দিয়ে হলেও সুখী থাকতে হবে।কান্না করার অনেক সময় পাবো। আজকের এই মুহূর্তের কান্না আমার জীবনের কলঙ্কের মতো।তাই ইফতির মাকে হাসি হাসি মুখে বললাম,


-"বাহ, অসাধারণ নাম মেয়ের।তা কে রেখেছেন এই নাম?"


-"ওর বাবাই,এই নাম না রাখলেই নাকি নয়।ইফতি যখন পেটে, তখন ওর বাবাই কী বলেছে জানেন?ছেলে হলে নাম রাখার দায়িত্ব আমার,আর মেয়ে হলে উনার।মেয়ে হলেই যে উনিই রাখবেন তা নয়, মেয়ে যদি টুকটুকে সুন্দরী হয় তাহলে উনি রাখবেন আর না হলে আমি যা খুশি রাখবো।মেয়ে হওয়ার আগে অনেক বার নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিন্তু উনি আমাকে নামটা অবধি বলেননি।নামটা নাকি অনেক দামী,তাই বলা যাবে না। সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করছি, তিনি আমাকে  টুকটুকে মেয়েই ভিক্ষে দিয়েছেন।"


উনার স্ত্রী বেশ সরল নয়তো এই ঘটনা টুকু উনার খুব সুখের। নয়তো এইভাবে অপরিচিত কাউকে এসব বলবেন কেন। উনার স্ত্রী যখন এসব কথা বলছেন,উনি কেমন অস্থতিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলেন। মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দেখলাম।


আমিও আবার হাসি  মুখে বললাম,


-"নামের সাথে আপনার মেয়ের চেহারার অনেক মিল মাশআল্লাহ। আল্লাহ আপনার মেয়েকে নেক হায়াত দান করুন।"


উনি উনার স্ত্রী কে নিয়ে একটা ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলেন। আমি জানি এখানে আমি বেশি সময় থাকতে পারবো না।দ্রুত বাসায় যেতে হবে। এখানে বিয়েতে ইনভাইট করেছে আমাকে।যার বিয়ে সে আমার পূর্ব পরিচিত নয়, গতকাল বিকালেই সদরে দেখা গয়নার দোকানে। আমি গিয়েছিলাম একটা আংটি আনতে।তখন যার বিয়ে মানে ঝুমুর উপস্থিত সেই দোকানে। আমার আংটিটি দেখে বললো,


-"আরে বাহ্ আপনার পছন্দ তো চমৎকার! আমাকেও কিছু পছন্দ করে দিন তো।"


পরে জানতে পারলাম উনার বিয়ের গয়না, কেনাকাটা শেষে আমাকে খুব করে যেতে বললো। ফোন নাম্বার নিয়ে গেলো। কিছু কিছু মানুষের আতিথেয়তা না করার মতো উপায় থাকে না।তাই বাধ্য হয়েই আজকে আসা। কিন্তু এত বছর পর উনার সাথে আমার দেখা হবে তা আমি মনের ভুলেও ভাবিনি।শুধু উনিই নয়, উনার স্ত্রী, সন্তান। অতীতের করা ভুল গুলো আমাদের ভবিষ্যতে গিয়ে দুঃখ নামের সারপ্রাইজ হিসাবে সামনে এসে চমকে দেয়।


আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বিয়ের কনেকে পরে কল করে কিছু একটা বলে দিবো।দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে। আজকে আমি অনেক আয়োজন করে কাঁদবো।কজন কাঁদতে পারে,কত মানুষ কাঁদতে চেয়েও পায় না, চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তাদের।আর আমার চোখে এখনও সাগর সমান পানি।দ্রুত হাঁটছি। রাস্তায় গিয়ে গাড়ি নিতে হবে। অনেক টা পথ সরু কাঁচা মাটির রাস্তা। এখানে গাড়ি আসে না।


-"এখনো অনেক ঘৃণা করো আমাকে?"


আমি চমকে পিছন ফিরে চাইলাম। উনি আমার পিছনে। কথার জবাব না দিয়ে হাঁটছি।


-"আমি সত্যিই প্রচণ্ড ভালোবেসেছিলাম তোমাকে!তা না হলে তোমার দেওয়া নামটাই মেয়ের নাম রাখতে এত পাগলামী করতাম না।"


এইবার আমার মুভিতে খল নায়ক যেমন হাসি দেয় নয়তো হুট করেই কেউ পাগল হয়ে গেলে যেমন হাসি দেয়,ঠিক তেমন গগন বিধারি , আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হো হো হো করে হাসতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেভাবে হাসলাম না। বেশি হয়ে যাবে। স্বাভাবিক ভাবেই মৃদু হেসে বললাম,


-"আপনি ঠিক আগের মতোই আছেন।কথার ধরন দেখে মনে হবে সত্যি সত্যিই ভালোবাসতেন। আপনি আগের মতো থাকলেও আমি আগের মতো নেই,যে আপনার কথা বিশ্বাস করে, হাউমাউ করে কেঁদে বলবো, আমাকে বিয়ে করুন।সতীনের ঘর করতে আমি রাজি। আপনার স্টাটাসের সাথে না মিললেও আমি কারুর এঁটো জিনিসে হাত দেই না।আর ভালোবাসেননি আমি কখন বলেছি? আমি আগেও বলিনি এই কথা আর এখনো বলছিনা।ভালোবাসেন ভয়ংকর ভালোবাসেন,ঠিক সিনেমার মতো। সিনেমাতে যেমন দেখায়,নায়ক নায়িকার ভালোবাসা। কিন্তু সেই ভালোবাসাটুকু শুধু সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ বাস্তব জীবনে নয়। সেরকম আপনার ভালোবাসা অভিনয়ে সীমাবদ্ধ ছিলো বাস্তবে নয়। আমার মন নিয়ে খেলেছেন মাত্র। আপনার স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। আপনি আমার জন্য এক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ মানুষ।তাই পিছন পিছন এসে কথা বলবেন না দয়া করে। আমি কথা বলতে চাইনা।"


-"তুমি সেদিনের রাগের বশে বলা কথা গুলো এখনো ধরে আছো। একটা বার আমার রাগের কারণ খোঁজার চেষ্টা করোনি।সেসব কথা বাদ দাও।আমি তোমার সাথে একদিন কথা বলতে চাই।"


-"কী কথা বলবেন? আপনি আমাকে মিথ্যা মোহে বেঁধেছিলেন তার গল্প?নাকি আপনার বিবাহিত জীবন কতটা সুখে কাটছে তার গল্প?


-"প্লীজ অনু আমি তোমাকে মিথ্যে মোহে বাঁধিনী কখনো। তোমার চলে যাওয়ার একাকিত্ব আমি মানতে পারিনি।"


-"তাই বুঝি বিয়ে করে, একাকিত্ব মিটিয়েছেন?তা বেশ! ভালো করেছেন, আমার সাথে আপনার আর কী কথা?


-"বিয়ে করে নাও অনু!সুখে থাকবে।"


-"বিয়ে করবো না কখন বলেছি? অবশ্যই বিয়ে করবো।"


উনি কেমন চুপ করে গেলেন কথা খুঁজে পাচ্ছেন না হয়তো।তাই আমি আগ বাড়িয়ে বললাম।


-"আপনি চিন্তা করবেন না। আপনাকে আমি না ঘৃণায় রেখেছি আর না ভালোবাসায়। আপনার সাথে কখনো প্রেম ছিলো আমার, আমি সেটাই ভুলে গেছি। নিজেকে অপরাধী ভাববেন না।সব সময় হাসিখুশিতে থাকবেন।হাসি খুশিতেই আপনাকে মানায়। আপনি এখন ফিরে যান।"


-"আমাকে পারলে মাফ করে দিও অনু। তোমাকে ভালোবাসতে কোথাও না কোথাও হয়তো ভুল ছিলো আমার। তোমাকে হয়তো তোমার মতো করে ভালোবাসতে পারিনি।তাই হারিয়েছি। আমি দোয়া করি, তোমার জীবনে এমন কেউ আসুক যে, তোমাকে তোমার মতো করেই ভালোবাসুক। তুমি তার ভালোবাসায় সব সময় ভালো থেকো।"


-"মনে আছে আপনার? আপনাকে  বলেছিলাম, আমার মা নেই, বাবা নেই, আমার কোন পরিবার নেই। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মতো অসংখ্য কারণ নেই। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ আপনি। আপনাকে ছাড়া যেহেতু বেঁচে থাকতে শিখেছি, তাহলে অবশ্যই ভালো থাকবো।তার জন্য আমার কারুর ভালোবাসার প্রয়োজন হবে না।আপনি আর আমার পেছনে হাঁটবেন না।"


উনি থেমে গিয়েছিলেন সেদিন, হয়তো কথা বলার মতো কিছু খুঁজে পাননি।


আমি একটু মৃদু হেসে হাঁটতে লাগলাম,আর অল্প একটু পথ পেরুলেই পাকা রাস্তা। পিছন ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করছে।এই সামান্য ইচ্ছে পূরণ করতে কোটি টাকা লাগবে না কিংবা কোন আয়োজন করতে হবে না। পিছন ফিরলেই ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি পিছন ফিরে চাইলাম না। পিছনে আছে আমার আবেগী বয়সের মায়া। বর্তমানে একজন নারীর ভালোবাসা আর একজন মেয়ের আর্দশ পিতা। সুখী পরিবারের প্রধান কর্তা। আমি চিরদুখী। আমি চাইনা আমার দুঃখ চোখের নজর উনার জীবনে পড়ুক।


পুনশ্চঃ সেই ঘটনার ছয় বছর পর আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে।চিঠিটি লিখেছে ইফতির মা।চিঠিটা ছিলো এমন।


প্রিয় অনু

তোমার দুঃখময় জীবনের সূচনা আমি। তারপরেও আমার জীবনে তার কোন প্রভাব ফেলোনি তুমি। তুমি চাইলে এক ইশারায় ইফতির বাবাইকে তোমার জীবনে নিয়ে নিতে পারতে। কিন্তু তুমি তা করোনি। আমি তোমার পরিচয় জানার পর থেকেই খুব অপরাধ বোধে ভুগী। আমার জন্য না তুমি সুখী হতে পারলে না ইফতির বাবাই আর না আমি।ইফতির বাবাইকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু প্রচণ্ড ভালোবাসি। উনাকে ছাড়া একটা নিঃশ্বাস নেওয়ার কথাও আমি ভাবতে পারি না। ছেড়ে থাকবো কীভাবে।উনার ভালোবাসাকেও কম মনে হয়,সব ভালোবাসা যেনো তোমার জন্য তুলে রাখা, যেটুকু পাই তা উনার দায়িত্ব আর তোমার দেওয়া করুণা মনে হয়।ইফতির বাবাইও সুখী নয়, তোমার একাকিত্বময় জীবনের জন্য নিজেকে দায়ি মনে করেন। তুমি অনেক সুখী হয়ে তোমার অভিশাপ থেকে আমাদের নাম দুটি কেটে দিও প্লীজ!


ইতি 

তোমার করুণার পাত্রী।


আমি চিঠিটা পড়া শেষে। সম্পূর্ণ বেখেয়ালে বলে ফেললাম,ভালো থাকুন অন্য কারুর ভালোবাসায়। দুঃখ নামের ছায়া না পড়ুক আপনার জীবনে। আমিও নাহয় ভালো থাকবো ফাইলে চোখ বুলানোর তাড়ায়।


#ফেইসবুক থেকে কপিকরা

#ভালো থাকুন অন্য কারুর ভালোবাসায়

#লিখনীতে কপি পেস্ট করা

K F C প্রতষ্ঠাতার জীবনী

 * মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান

* ১৬ বছর বয়সে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়েন

* ১৭ বছরের মাথায় মোট ৪ বার চাকরী হারিয়েছিলেন

* ১৮ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন

* ১৯ বছর বয়সে তিনি বাবা হন

* ২০ বছর বয়সে তার স্ত্রী তাঁকে ফেলে রেখে চলে যায় আর কন্যা সন্তানটিকেও নিয়ে যায় সাথে

* সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং সেখানে ব্যর্থ হন

* ইনস্যুরেন্স কোম্পানীতে যোগদান করেন এবং সেখানেও সফলতার দেখা পান নি

* নিজের মেয়েকে নিজেই অপহরণ করতে গিয়েছিলেন এবং সেখানেও ব্যর্থ হন

* চাকরী নিয়েছিলেন রেললাইনের কন্ডাকটর হিসেবে, সুবিধে করতে পারেন নি

* অবশেষে এক ক্যাফেতে রাধুনীর চাকুরী নেন

* ৬৫ বছর বয়সে তিনি অবসরে গিয়েছিলেন।

* অবসরে যাবার প্রথম দিন সরকারের কাছ থেকে ১০৫ ডলারের চেক পেয়েছিলেন।

* তাঁর কাছে মনে হয়েছিল জীবন তাঁর মূল্যহীন

* আত্মহত্যা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

* এরপর একটী গাছের নিচে বসে জীবনে কি কি অর্জন করেছেন তাঁর একটা লিস্ট বানাতে শুরু করলেন।

* হঠাত তাঁর কাছে মনে হল জীবনে এখনো অনেক কিছু করবার বাকি আছে আর তিনি বাকি সবার চাইতে একটি জিনিসের ব্যাপারে বেশি জানেন- রন্ধনশিল্প

* তিনি ৮৭ ডলার ধার করলেন সেই চেকের বিপরীতে আর কিছু মুরগী কিনে এনে নিজের রেসিপি দিয়ে সেগুলো ফ্রাই করলেন।

* এরপর Kentucky তে প্রতিবেশীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সেই ফ্রাইড চিকেন বিক্রি করা শুরু করলেন!

* জন্ম নিল KENTUCY FRIED CHICKEN তথা KFC র...


* ৬৫ বছর বয়সে তিনি দুনিয়া ছাড়তে  চেয়েছিলেন আর ৮৮ বছর বয়সে এসে Colonel Sanders বিলিয়নার বনে গিয়েছিলেন।


* স্মরণীয় হয়ে আছেন KFC এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে!


-----হতাশ হবার কিছু নেই, আপনার হাতে এখনো অনেক সময় আছে বিলিয়নার হবার...শুধু চেষ্টাটি প্রয়োজন।

সংগীত 

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কিছু ইংরেজি ট্রান্সলেশন ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 ১) সাতদিন যাবৎ বৃষ্টি হচ্ছে।- It has been raining for seven days.

২) সে সাতদিন যাবৎ বাসায় একা। He is alone at home for seven days.

৩) সাতদিন যাবৎ আকাশ মেঘলা।- The sky is cloudy for seven days.

৪) সে সাতদিন যাবৎ ঢাকায় ।- He has been in Dhaka for seven days.

৫) সে সাতদিন যাবৎ খুবই অসুস্থ্য।- He has been very ill for seven days.

৬) সে সাতদিন যাবৎ ঘুমাইতেছে।- He has been sleeping for seven days.

৭) সে সাতদিন যাবৎ রাস্তায়।- He has been on the road for seven days.

৮) সে সাতদিন যাবৎ বেড়াইতেছে।- He has been traveling for seven days.

৯) সে সাতদিন যাবৎ রান্না করতেছে।- He has been cooking for seven days.

১০) সে সাতদিন যাবৎ কান্না করতেছে।- She has been crying for seven days.

১১) সে সাতদিন যাবৎ হাসপাতালে।- He has been in the hospital for seven days.

১২) সে সাতদিন যাবৎ বইটি পড়ছে।- He has been reading the book for seven days.

১৩) সে সাতদিন যাবৎ বইটি লিখছে।- He has been writing the book for seven days.

১৪) সে সাতদিন যাবৎ কাজটি করছে।- He has been doing the work for seven days.

১৫) সে সাতদিন যাবৎ এই বাড়িতে আছে।- He has been in this house for seven days.

১৬) সে সাতদিন যাবৎ জ্বরে ভুগতেছে।- He is suffering from fever for seven days.

১৭) সে সাতদিন যাবৎ অংক করতেছে।- He has been doing math for seven days.

১৮) সাতদিন যাবৎ সুর্যের তাপ বাড়তেছে।- The heat of the sun has been shining for seven days.

১৯) সে সাতদিন যাবৎ ইংরেজি পড়তেছে।- He has been studying English for seven days.

রাসুল (সাঃ) কি উম্মি ছিলেন? উম্মি অর্থ কি? রফিকুল ইসলাম বিন সাঈদ ফেইসবুক

 প্রশ্ন: রাসূল (ﷺ) কি উম্মী বা নিরক্ষর ছিলেন? উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চাই।

▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬

ভূমিকা:আরবী أُمِّيّ বা উম্মী শব্দের প্রসিদ্ধ অর্থ নিরক্ষর। আরবরা এই পদবীতে সুবিদিত।[তাফসীরে কুরতুবী,বাগভী] উম্মী শব্দের সাধারণ অর্থ হলোঃ যে ব্যক্তি লিখতে জানে না এবং কোন গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে পারে না। এ শব্দের দ্বারা যদি উম্মী নবী উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এর অর্থ হবে আমাদের নবী মুহাম্মাদ( ﷺ)। কারণ তিনি লিখতে বা পড়তে পারতেন না। যা কুরআন-সুন্নাহর একাধিক দলিল দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (ﷺ) এর পড়াশোনা না জানা, এ ছিল এক বিরাট মু‘জিযা। কারণ তাঁকেই আল্লাহ আয়াত পাঠকারী এবং কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা দানকারী বানিয়ে দেন।(সূরা আলে ইমরান ১৬৪;সূরা জুম‘আহ্ ২)। আসমানের নিচে কুরআনই একমাত্র ইলাহী গ্রন্থ, যা তাওরাত ইত্যাদির ন্যায় ফলকে লিপিবদ্ধ আকারে দুনিয়াতে আসেনি। বরং সরাসরি উম্মী নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। সাথে সাথে মুহাম্মাদ (ﷺ)-ই একমাত্র নবী, যিনি পবিত্র কুরআনে النَّبِيُّ الْأُمِّيُّ বা ‘নিরক্ষর নবী’ হিসাবে অভিহিত হয়েছেন। (সূরা আ‘রাফ ৭/১৫৭, ১৫৮)। কুরআন আল্লাহর কালাম হওয়ার এটাও একটি বড় প্রমাণ যে, যার মুখ দিয়ে দুনিয়াবাসী বিজ্ঞানময় কুরআন শুনেছে, তিনি নিজে ছিলেন ‘উম্মী’ অর্থাৎ নিরক্ষর ব্যক্তি এবং মানুষ হয়েছিলেন নিরক্ষর সমাজে। (সূরা জুম‘আ ৬২/২)। এমনকি আল্লাহ বলেন, وَمَا كُنْتَ تَتْلُو مِنْ قَبْلِهِ مِنْ كِتَابٍ وَلاَ تَخُطُّهُ بِيَمِيْنِكَ إِذًا لاَرْتَابَ الْمُبْطِلُوْنَ ‘আর তুমি তো এর আগে কোন বই পড়োনি এবং স্বহস্তে কোন লেখাও লেখোনি, যাতে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতে পারে।’ (সূরা আনকাবূত ২৯/৪৮)। তিনি অন্যত্র বলেন, مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلاَ الْإِيْمَانُ ‘তুমি জানতে না কিতাব কি বা ঈমান কি?’ (সূরা শূরা ৪২/৫২)। তাই কুরআনের ভাষা ও বক্তব্যে নিজের থেকে যোগ-বিয়োগ করার সকল প্রকার সন্দেহের তিনি ঊর্ধ্বে ছিলেন। সূরা আরাফের ১৫৭ ও সূরা জুম'আ ২নং আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুটি পদবী ‘রাসূল’ ও ‘নবী’ এবং এর সাথে সাথে তৃতীয় একটি বৈশিষ্ট্য ‘উম্মী’ উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস বলেন, أمّي ‘উম্মী’ শব্দের অর্থ হল নিরক্ষর। যে লেখা-পড়া কোনটাই জানে না। [তাফসীরে বাগভী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন, “আমরা নিরক্ষর জাতি। লিখা জানি না, হিসাব জানি না।”(সহীহ বুখারী: ১০৮০ মিশকাত,১৯৭১)। অপর বর্ননায় এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রীলের সাথে দেখা করলেন। তিনি বললেন, হে জিব্রীল! আমি এক নিরক্ষর উম্মাতের কাছে প্রেরিত হয়েছি। এদের মধ্যে আছে প্রবীণা বৃদ্ধা, প্রবীণ বৃদ্ধ, কিশোর-কিশোরী। এমন ব্যক্তিও আছে যে কখনো লেখাপড়া করেনি। জিব্রীল বললেন, হে মুহাম্মাদ! (এতে ভয় নেই) কুরআন সাত রীতিতে (পড়ার অনুমতি নিয়ে) নাযিল হয়েছে। (তিরমিযী ২৯৪৪, সহীহ ইবনু হিববান ৭৩৯, আহমাদ ২১২০৪, ২১১৩২, নাসায়ী ৯৪১, আবূ দাঊদ ১৪৭৭, সহীহ আল জামি‘ ৭৮)। সাধারণ আরবদেরকে এ কারণেই কুরআন أمِّيِّنَ বা নিরক্ষর জাতি বলে অভিহিত করেছে যে, তাদের মধ্যে লেখা-পড়ার প্রচলন খুবই কম ছিল। কারও কারও মতে উম্মী শব্দটি ‘উম্ম’ শব্দের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বলা হয়েছে। আর উম্ম অর্থ, মা। অর্থাৎ সে তার মা তাকে যেভাবে প্রসব করেছে সেভাবেই রয়ে গেছে। কারও কারও মতে শব্দটি ‘উম্মত’ শব্দের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বলা হয়েছে। পরে সম্পর্ক করার নিয়মানুসারে ‘তা’ বর্ণটি পড়ে গেছে। তখন অর্থ হবে, উম্মতওয়ালা নবী। কারও কারও মতে, শব্দটি ‘উম্মুল কুরা’ যা মক্কার এক নাম, সেদিকে সম্বন্ধযুক্ত করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ মক্কাবাসী। (তাফসীরে বাগভী সূরা আরাফ,১৫৭ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

.

উম্মী শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকলেও বিখ্যাত এবং প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে যে, উম্মী অর্থ নিরক্ষর। যদিও নিরক্ষর হওয়াটা কোন মানুষের জন্য প্রশংসনীয় গুণ নয়; বরং ক্রটি হিসাবেই গণ্য। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞান-গরিমা,তত্ত্ব ও তথ্য অবগতি এবং অন্যান্য গুণবৈশিষ্ট্য ও পরাকাষ্ঠা সত্বেও উম্মী হওয়া তার পক্ষে বিরাট গুণ ও পরিপূর্ণতায় পরিণত হয়েছে। কারণ, শিক্ষাগত, কার্যগত ও নৈতিক পরাকাষ্ঠী যদি কোন লেখাপড়া জানা মানুষের দ্বারা প্রকাশ পায়, তাহলে তা হয়ে থাকে তার সে লেখাপড়ারই ফলশ্রুতি, কিন্তু কোন একান্ত নিরক্ষর ব্যক্তির দ্বারা এমন অসাধারণ, অভূতপূর্ব ও অনন্য তত্ত্ব-তথ্য ও সূক্ষ্ম বিষয় প্রকাশ পেলে, তা তার প্রকৃষ্ট মু'জিযা ছাড়া আর কি হতে পারে? পবিত্র কুরআনে একাধিকবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে উম্মী বলা হয়েছে। একই বিষয় কিছুটা ব্যাখ্যা আকারে উপস্থাপিত হয়েছে অন্য আয়াতে। আল্লাহ বলেন,وَمَا كُنتَ تَتْلُو مِن قَبْلِهِ مِن كِتَابٍ وَلَا تَخُطُّهُ بِيَمِينِكَ إِذًا لَّارْتَابَ الْمُبْطِلُونَ “আপনি তো এর পূর্বে কোনো কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় ডান হাত দ্বারা কোনো কিতাব লিখেননি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত।”(সুরা আনকাবুত : ৪৮)


উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাচ্ছীরীন বা মুফাচ্ছীরদের সরদার আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেনঃ كان نبيكم صلى الله عليه وسلم أميا لا يكتب ولا يقرأ ولا يحسب“তোমাদের নবী (ﷺ) ছিলেন উম্মী। তিনি লিখতেন না,পড়তেন না,গণনা করতেন না।”[তাফসির কুরতুবি ; সুরা আনকাবুত : ৪৮]। ইমাম কাতাদাহ ও ইমাম মুজাহিদ একই মত পোষণ করেছেন।(তাফসির তাবারি ; সুরা আনকাবুত : ৪৮)


ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ قد لبثت في قومك يا محمد من قبل أن تأتي بهذا القرآن عمرا لا تقرأ كتابا ولا تحسن الكتابة، بل كل أحد من قومك وغيرهم يعرف أنك رجل أمي لا تقرأ ولا تكتب “(আল্লাহর কথার অর্থ হচ্ছে) হে মুহাম্মদ (ﷺ), আপনি কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আপনার কওমের নিকট জীবনের বড় অংশ পার করেছেন। আপনি কোনো বই-পুস্তক পড়েননি, লিখেননি। বরং আপনার কওমের এবং বাইরের প্রত্যেক ব্যক্তি জানে যে, আপনি উম্মী। আপনি পড়েন না, লেখেন না।”(তাফসির ইবনে কাসির ; সুরা আনকাবুত : ৪৮)


তাফসির আল জালালাইনে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,নিরক্ষর হওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর একটি বড় শ্রেষ্ঠত্ব ও বড় মােজেজা। আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুয়ত সপ্রমাণ করার জন্য যেসব সুস্পষ্ট মােজেজা প্রকাশ করেছেন, তন্মধ্যে তাঁকে পূর্ব থেকে নিরক্ষর রাখাও অন্যতম। তিনি লিখিত কোনাে কিছু পাঠ করতে পারতেন না এবং নিজে কিছু লিখতেও সক্ষম ছিলেন না। এ অবস্থায়ই জীবনের চল্লিশটি বছর তিনি মক্কাবাসীদের সামনে অতিবাহিত করেন। তিনি কোনাে সময় কিতাবধারীদের সাথেও মেলামেশা করেন নি যে, তাদের কাছ থেকে কিছু শুনে নেবেন। কারণ মক্কায় কোনাে কিতাবধারী বাস করত না। চল্লিশ বছর পূর্তির পর হঠাৎ তার পবিত্র মুখ থেকে এমন কালাম উচ্চারিত হতে থাকে, যা বিষয়বস্তু ও অর্থের দিক দিয়ে যেমন ছিল মােজেজা তেমনি শাব্দিক বিশুদ্ধতা ও ভাষালঙ্কারের দিক দিয়েও ছিল অতুলনীয়। (তাফসীরে জালালাইন,৫ খণ্ড, ১৪ পৃষ্ঠা সূরা আনকাবুত,৪৮)


বস্ত্ততঃ মুহাম্মাদ (ﷺ) ব্যতীত দুনিয়াতে এমন কোন নবী আসেননি, যার পবিত্র যবান দিয়ে সরাসরি আল্লাহর কালাম বের হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি শেষনবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর শ্রেষ্ঠত্বের একটি বড় দলীল ও একটি বড় মু‘জেযা। মানছূরপুরী বলেন, খ্রিষ্টানদের সকলে এ বিষয়ে একমত যে, তাদের চারটি ইনজীলের একটিও মসীহ ঈসার উপরে আল্লাহর পক্ষ হতে সরাসরি নাযিল হয়নি। বরং এগুলি স্ব স্ব লেখকদের দিকে সম্পর্কিত। উক্ত প্রসিদ্ধ চারটি ইনজীল হল, মথি (إِنْجِيلُ مَتَّى), মুরকুস (مُرْقُس), লূক (لُوقَا) এবং ইউহান্না (يُوحَنَّا)। এগুলির পবিত্রতার পক্ষে খ্রিষ্টানদের যুক্তি হল এই যে, এগুলি পবিত্র রূহ মসীহ ঈসা (আঃ)-এর সাহায্য নিয়ে লেখা হয়েছে। তাদের এ দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে চারটি ইনজীলের পরস্পরের মধ্যে এত গরমিল কেন? যেগুলির বক্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে খৃষ্টান পন্ডিতগণ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি আদম ক্লার্ক, নূরটিন ও হারূণ প্রমুখ খ্রিষ্টান বিদ্বানগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এই যে, ইনজীলগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের কোন সুযোগ নেই। পাদ্রী ফ্রেঞ্চ স্বীকার করেছেন যে, ইনজীলগুলির মধ্যে ছোট-বড় ৩০ হাযার ভুল রয়েছে। কথা হলো, চারটি ইনজীলের মিলিত পৃষ্ঠা সংখ্যা একশ-এর বেশী হবে না।' (রহমাতুল্লিল আলামীন ৩/২৭৩)। অথচ তার মধ্যেই যদি ত্রিশ হাযার ভুল থাকে, তাহলে বিশুদ্ধ কতটুকু আছে? আর ঐসব বইয়ের গ্রহণযোগ্যতাই বা কি? একেই তো বলে ‘সাত নকলে আসল খাস্তা’। খ্রিষ্টান ধর্মনেতাদের এইসব দুষ্কৃতির প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন,فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ- ‘ধ্বংস ঐসব লোকদের জন্য, যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে। অতঃপর বলে যে, এটি আল্লাহর নিকট থেকে আগত। যাতে তারা এর মাধ্যমে সামান্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। অতএব ধ্বংস হৌক তারা যা স্বহস্তে লেখে এবং ধ্বংস হৌক তারা যা কিছু উপার্জন করে।’ (বাক্বারাহ ২/৭৯)।

.

নিজের জ্ঞানের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে বলেছেনঃ إِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا“আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” [সুনান ইবনে মাজাহ ; কিতাবুস সুন্নাহ]। তাই অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন না হওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য অমর্যাদাকর নয়। বরং এটি সায়্যিদুল মুরসালিন (ﷺ)-এর মহান এবং চিরস্থায়ী মুজিযার মধ্যে অন্যতম। যিনি কখনও একটি বাক্য লিখেননি, তিনি মানবজাতিকে মূর্খতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে জ্ঞানের আলোর দিকে নিয়ে গেছেন। রাসূল ( ﷺ) পড়াশোনা জানতেন না। এই মর্মে আরো দেখুন সূরা আলাক্ব ৯৬/১-৩ সহীহ বুখারী৩, ৩৩৯২, ৪৯৫৩, ৪৯৫৫, ৪৯৫৬, ৪৯৫৭, ৬৯৮২; মুসলিম ১/৭৩ হাঃ ১৬০, আহমাদ ২৬০১৮,আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩)

.

উল্লেখ্য যে, যারা উম্মী দ্বারা ভিন্ন অর্থ করেন, তাঁরা প্রমাণ হিসেবে কিছু পত্র উপস্থাপন করেন এবং দাবী করেন যে, এগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিজের হাতে লেখা পত্র লিখেছেন। আবার কোনাে কোনাে আলেম প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তিনি প্রথম দিকে নিরক্ষর ছিলেন। এরপর আল্লাহ তা'আলা তাঁকে লেখাপড়া শিখিয়ে দেন। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা হুদায়বিয়া ঘটনার একটি হাদীস উদ্ধৃত করেন, যাতে বলা হয়েছে, সন্ধিপত্র লেখা হলে তাতে প্রথমে (আরবি) লিখিত ছিল। এতে মুশরিকরা আপত্তি তুলল যে, আমরা আপনাকে রাসূল মেনে নিলে এই ঝগড়া কিসের? তাই আপনার নামের সাথে রাসূলুল্লাহ শব্দটি আমাদের কাছে গ্রহণীয় নয়। লেখক ছিলেন আলী (রা.) রাসূলুল্লাহ ও তাকে শব্দটি মিটিয়ে দিতে বললেন। তিনি আদবের খাতিরে এরূপ করতে অস্বীকৃত হলে রাসূলুল্লাহ - নিজে কাগজটি হাতে নিয়ে শব্দটি মিটিয়ে দিলেন এবং তদস্থলে (আরবি) লিখে দিলেন। এ রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ নিজে লিখে দিয়েছেন বলা হয়েছে। এ থেকে তারা বুঝে নিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ - লেখা জানতেন। কিন্তু সত্য এই যে, সাধারণ পরিভাষায় অপরের দ্বারা লেখানােকেও “সে লিখেছে" বলা হয়ে থাকে। আর সেই হাদীসে রাসূলুল্লাহ শব্দটি কাটতে আলী (রাঃ) অপারগতা প্রকাশ করলে তখন রাসূল (ﷺ) বলেন" জায়গাটি আমাকে দেখিয়ে দাও!" অতঃপর দেখিয়ে দেয়ার পরে তিনি নিজ হাতে তা কেটে দিলেন।এছাড়া যদি ধরে নেওয়া হয় রাসূল (ﷺ) কারো দেখানো ছাড়া নিজেই সেটি কেটেছেন তাহলে এটাও সম্ভবপর যে,এ ঘটনায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মােজেজা স্বরূপ। এতদ্ব্যতীত নামের কয়েকটি অক্ষর লিখে দিলেই কেউ নিরক্ষরতার সীমা পেরিয়ে যায় না। লেখার অভ্যাস গড়ে না উঠা পর্যন্ত তাকে অক্ষর জ্ঞানহীন ও নিরক্ষরই বলা হবে। রাসূলুল্লাহ লেখা জানতেন- বিনা প্রমাণে এরূপ বললে তার কোনাে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না; বরং চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নিরক্ষর হওয়ার মধ্যেই তার বড় শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত রয়েছে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন পত্র নিজ হাতে লিখেছেন বলে সরাসরি কোন প্রমাণ নেই। সাহাবীদের মধ্যে যারা কাতিব বা লেখক বলে পরিচিত ছিলেন, তাঁরাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী পত্র লিখতেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পত্রের নিচে সীলমোহর করে দিতেন। একইভাবে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কাতিব সাহাবীদেরকে নির্দেশনা দিয়ে দিতেন। তাঁরা নির্দেশনা অনুযায়ী আয়াত লিপিবদ্ধ করতেন। যত পত্র, যত সন্ধি, যত চুক্তি, যত ফরমান সবই এভাবে লেখা হয়েছে পাশাপাশি :ما مات رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى قرأ وكتب রাসূল (ﷺ) পড়া-লেখা না শিখে মারা যাননি।’ মর্মে বর্ণিত আসারটি মওযূ বা জাল।(সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৪৩)।মহান আল্লাহ সবাইকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুক আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

______________________,,,,,.....।

অন্য রকম বউ এর গল্প কিছু কথা কিছু হাসি ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 আমি কখনোই বউকে মার্কেটে নিয়ে যেতে পছন্দ করতাম না। 


বিয়ের পরপর  দুই তিনবার বোধহয় যাওয়া হয়েছিল। মার্কেটে এই দোকান থেকে ঐ দোকানে ঘোরাঘুরি ভালো লাগতো না। আমি টাকা দিতাম,সে কিনে আনতো। যখন বাচ্চারা হলো, তখনো আমি টাকা দিতাম,সে পছন্দ করে বাচ্চাদের জামা কাপড় কিনে আনতো।


 বিয়ের বহু বছর পর, কাজ সেরে একবার বসুন্ধরা সিটি গেছি একটা জনপ্রিয় ইংরেজি মুভি দেখতে। মুভি আরম্ভ হতে কিছুটা দেরি হবে,আমি টিকিট কেটে ফুডকোর্টের এক কোনায়  এককাপ কফি নিয়ে বসলাম টাইম পাস করার জন্য। 

 

কফি খাচ্ছি, সামনের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখি,আমার বন্ধু আরফান আর ওর বউ। আমি কফি হাতে নিয়ে ওদের টেবিলে গেলাম। আরফান আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। 


ওর বউকে বেশ উৎফুল্ল মনে হলো।


টেবিলের উপর অনেকগুলো ব্যাগ। বুঝা যাচ্ছে বেশ কেনাকাটা করেছে। আমি মজা করে  বললাম, ভাবী, আরফানকে আজ ফতুর করে ছেড়েছেন, দেখছি!


ভাবী বললেন, না ভাই, আমি এতোকিছু কিনতে চাইনি, আপনার বন্ধু পছন্দ করে জোর করে কিনে দিয়েছে।


ভাবী একটা একটা করে ব্যাগ খুলে আমাকে দেখাতে লাগলেন। ভাবী  একটা জিনিস দেখাচ্ছেন আর বর্ননা করছেন আরফান কীভাবে কোন জিনিসটা পছন্দ করেছে। তার খুশি উপচে উপচে পড়ছে!


আমি জিনিসপত্র দেখছি আর ভাবছি,আরফানের বউ  কতো আগ্রহ নিয়ে তার জামাইয়ের পছন্দ করে কেনা জিনিস দেখাচ্ছে। আচ্ছা,  আমার বউয়ের কী এমন ইচ্ছে করে ?


অনেকদিন পর আমার মনে হলো,আহা! কতদিন বউকে নিয়ে মার্কেটে আসা হয় না!


 তারও নিশ্চয় ইচ্ছে করে করে স্বামীর হাত ধরে মার্কেটে ঘুরে বেড়াতে। সেও চায় তার স্বামী তাকে পছন্দ করে কিছু কিনে দিক। মুখে হয়তো কিছু বলে না।


আরফান আর তার বউ চলে গেছে।


 আমি চুপচাপ খালি কফি মগ হাতে নিয়ে বসে আছি। নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো। মানিব্যাগ খুলে দেখলাম, বেশি টাকা  নাই,তবে এটিএম কার্ড আছে। 


মুভি দেখার টাইম চলে যাচ্ছে। আমার উঠা দরকার, উঠতে পারছি না। 


আমি মোবাইলটা হাতে নিলাম, বউকে ফোন দিয়ে বললাম, তুমি বাচ্চাদের রেখে এক ঘন্টার মধ্যে আমার এখানে চলে আসতে পারবে? একটা সিএনজি নিয়ে চলে আসো।


বউ ভয় পাওয়া গলায় বললো,কী হয়েছে তোমার?  শরীর খারাপ করেনি তো?


আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, মনে হচ্ছে শরীর কিছুটা খারাপই হয়েছে। তুমি কি আসতে পারবে?


বউ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, তুমি এখন কোথায়?


আমি বসুন্ধরা সিটির লেভেল এইটে আছি।


হায় আল্লাহ! তুমি ওখানেই বসে থাকো,আমি এক্ষুনি আসছি। আমি না আসা পর্যন্ত ওখান থেকে উঠবে না!


এক ঘন্টার কম সময়ে বউ এসে হাজির। সে এসেই আমার কপালে ঘাড়ে হাত বুলাতে লাগলো,জ্বর এসেছে কিনা যাচাই করার জন্য!


আমি হাসিমুখে  বললাম,  আমার কিছুই হয় নাই, আজ দুইজন মিলে একসাথে মুভি দেখবো,এজন্যই তোমাকে ফোন করে এনেছি। আগে এককাপ কফি খেয়ে ঠাণ্ডা হও।


তবুও তার উৎকন্ঠা যায় না, সে বারবার কপালে,বুকে হাত বুলাতে লাগল। ডাক্তার দেখাতে তাগাদা দিতে লাগল। লোকজন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। 


আমি দুটো কফি অর্ডার করলাম। 


বউ কফি খাচ্ছে আর আমার দিকে সন্দেহ নিয়ে  তাকাচ্ছে। সে পরিস্হিতি বুঝার চেষ্টা করছে।  এমন একজন মানুষকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছে,যার সাথে সে পরিচিত নয়!


আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। 


লজ্জা গোপন করে  হাসতে হাসতে বললাম, ভয় পাওয়ার কিছু নাই,তোমাকে খুন করার জন্য এখানে আনা হয় নাই। আমি জানি,তোমার নামে তোমার বাবা একটা জমি আলাদা করে রেখেছেন বাড়ি করার জন্য,এখন খুন করলে সেই জমি আমি পাবো না। তোমাকে খুন করলে আমার লস হয়ে যাবে। কফিটা আরাম করে খাও।


কফি খাওয়া শেষ করে বললাম, চল, মুভি দেখবো।


বউ অবাক হয়ে বলল, মাথা খারাপ! বাচ্চাদের বাসায় রেখে এসেছি না? আগে বললে বাচ্চাদের নিয়ে আসতাম!


আমি রোমান্টিক মুড নিয়ে বললাম,  আরে দূর! বাচ্চাদের সামনে তোমার সাথে প্রেম করতে পারতাম নাকি!


বুড়ো বয়সে ভীমরতি কেন হলো, জানতে পারি?


জানি না,হঠাৎ প্রেম করতে ইচ্ছে হল,কাউকে না পেয়ে ভাবলাম,তোমাকেই ফোন করি!


আচ্ছা, তাহলে এই ঘটনা!


একটা শাড়ির দোকানে গিয়ে আমি নিজে একটা শাড়ি পছন্দ করলাম,যা আগে কখনোই করিনি। বউকে বললাম, দেখ তো শাড়িটা পছন্দ হয় কিনা!


বউ বলল, তুমি একটা জিনিস পছন্দ করে দিবে,আমার পছন্দ হবে না, তা কি হয়? কিন্তু তুমি আজকে এই দামী শাড়ি কিনছো কেন? বাসায় তো আমার প্রচুর শাড়ি আছে। ওগুলোই ঠিক মতো পরা হয় না। কোন অনুষ্ঠানে গেলে একটু আধটু পরি।


শাড়ি কিনে গেলাম কসমেটিক্সের দোকানে। তার পছন্দসই অনেক জিনিস কিনলাম। বাচ্চাদের  জন্যও কিছু কেনাকাটা হলো। আগে তাকে নিয়ে দোকানে ঘুরতে বিরক্তি বোধ করতাম,আজকে সারাক্ষণ তার হাতটা ধরে রাখলাম।


কেনাকাটা করে খেতে গেলাম। সে খাচ্ছে আর গল্প করছে। আমার মনে হলো,বউ অনেকদিন আমার সাথে এতো আনন্দ নিয়ে গল্প করেনি। তার প্রতিটি কথায়,  খুশি উপচে উপচে পড়ছে।


 আনন্দিত মানুষের মুখ দেখাও আনন্দের।


নিজের অজান্তেই  মন থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল,হায়! জীবন থেকে অনেককিছুই মিস করে ফেলেছি, যা আমার হাতের মুঠোয় ছিল! 


খাওয়াদাওয়া শেষ করে সে বাচ্চাদের জন্যও কিছু খাবার প্যাক করে নিলো।


 সিএনজিতে উঠে বসে আমার একটা হাত চেপে ধরে রাখলো, যা আগে কখনো করেনি। তক্ষুনি আমার মনে হলো,  আরে!বউয়ের ভালবাসা পাওয়া কতো সহজ! অথচ আমরা বেশিরভাগ পুরুষ তা নিতেই জানি না!!


এখন যে কোন অনুষ্ঠানে গেলে,বেশিরভাগ জায়গায় সে এই শাড়িটা পরে যায়,যদিও এরচেয়ে দামী শাড়ি তার আছে। শাড়ি নিয়ে কথা উঠলে সে গর্ব করে বলে,এটা আমার হাজবেন্ড পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। আগ্রহ নিয়ে সে শাড়িটা অন্যকে দেখায়। আগে সে কখনোই এসব কথা বলতে পারতো না!


আগে বিভিন্ন অজুহাতে তাকে মার্কেটে নিয়ে যেতে চাইতাম না, এড়িয়ে যেতাম। এখন মন খারাপ হলেই বলি, চল মার্কেট থেকে ঘুরে আসি।, মন ভালো লাগবে। 


এখন সে আগের মতো যেতে চায় না। সেই মন আর নাই। 


 মনে মনে ভাবি, যদি আগের  জীবনটা ফিরে পেতাম, নিজেকে সংশোধন করে নিতাম।  


তা যে হওয়ার নয়!


আমার মনে হয়,বিয়ের পর একটা মেয়ের গর্বের একমাত্র  জায়গা হচ্ছে তার স্বামী। মা, বাবা, ভাইবোন বা অন্য আত্বীয় স্বজন নয়,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,


ব্যার্থ প্রেমের গল্প

ফেইসবুকে থেকে কপি করা,,,,

 গল্পঃ ভাবি_যখন_বউ

পর্ব_০২

.

আমি এম্বুলেন্স এর পেছনের দরজাটা খুলে ভাইয়ার লাশটা বের করলাম, আম্মু আব্বু, ভাবি সবাই এগিয়ে আসলো।


আব্বুঃ কিরে এম্বুলেন্স কেন? আর এটা কার লাশ?


আমি কোনো কথা না বলে ভাইয়ার মুখের উপর থাকা সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিলাম।


ভাইয়াকে দেখে আম্মু একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়, বাবা এসে জড়িয়ে ধরে। ভাবি ঠাস করে বসে যায়। 


অঝোর ধারায় সবাই কান্না করতে থাকে। এরপর ভাইয়ার কাফন দাপন শেষ হয়, আমি আর বাবা অনেক সময় ভাইয়ার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, বাবা বাসায় আসতে চায়নি। একসময় আমি জোর করে বাসায় নিয়ে আসি। 


বাসায় আসার পর ভাবি আর আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে, আমিও নিষেধ করিনি। 


আমি স্ট্রং ছিলাম, কারণ আমিও যদি ভেঙ্গে পড়ি ফ্যামিলির কেউই হয়তো ভালো থাকবে না। 


সেদিন থেকে আমাদের পরিবারের মুখের হাসি টা উড়ে গেলো। ভাবি একদম স্তব্ধ হয়ে যায়। 


ভাইয়া মারা যাওয়ার পর ফ্যামিলিতে ক্রাইসিস শুরু হয়, কারণ আগে ভাইয়ার টাকা দিয়েই সব খরচ হতো। আব্বুর দোকানটাও বিক্রি করে দিছে। 


আর আব্বুর এখন যে অবস্থা তার দ্বারা কোনো কাজ করা পসিবল না। বাধ্য হয়ে আমি নেমে গেলাম জীবন যুদ্ধে। 


অনার্স টা শেষ না করার কারণে ভালো কোনো চাকরি পাইনি,একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিই। 


আমার কাজ হচ্ছে বাজারের প্রত্যেকটা দোকানে গিয়ে কার কি মাল রাখবে সেটা লিখে এনে মাল গুলো আবার পৌঁছে দেওয়া। যাকে বলা হয় এস আর,,, 


ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়তো, কতো কষ্ট করে ভাইয়া টাকা ইনকাম করতো এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। 


বেতন ছিলো কম, মাত্র ৮ হাজার টাকা। যেটা দিয়ে ফ্যামিলি কোনোমতে চললেও আব্বু আম্মুর মেডিসিন কেনা প্রায় অসম্ভব।


তাই বন্ধুদের বলে কয়েকটা টিউশনি নিয়ে নিলাম। 


সকাল ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত আমার এই যুদ্ধ চলতে থাকে। নিজের পড়ালেখা প্রায় শেষ করেই দিলাম, কিন্তু ভাবিরটা কন্টিনিউ রাখলাম। 


এরমাঝে ভাবির বাবা মা অনেক বার এসেছে আমাদের বাসায় ভাবিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আব্বু উনার হাত ধরে অনেক রিকুয়েস্ট করে ভাবিকে রেখে দেয়। 


ভাবিকে এতো ভালোবাসতো যে অন্য কারো ঘরে পাঠানোর চিন্তাও আব্বু আম্মু করতো না। 


সেদিন আমি কাজ শেষ করে টিউশনি করিয়ে বাসায় আসলাম, রুমে গিয়ে চেইঞ্জ করে নিলাম তখন বাবা আমার রুমে আসলো.... 


আমিঃ আরে আব্বু! আসো ভিতরে আসো। 


বাবাঃ আমার পাশে বস,,,, 


আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম,,,, বাবা আমার হাত ধরে বললো.... 


বাবাঃ তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনারে? 


আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলো? 


বাবাঃ তোর জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি, তুই আমাদের মাফ করে দিস। 


আমিঃ আব্বু তুমি কি পাগল হইছো, এগুলো কি বলো। আমার ফ্যামিলি আমি না দেখলে কে দেখবে? আর আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না। 


বাবাঃ অবন্তীর বাবা আসছিলো। 


আমিঃ হুম কি বললো? 


বাবাঃ ওরে নিয়ে যেতে চায়, এভাবে নাকি দিন যায় না। 


আমিঃ তুমি কি বললে? 


বাবাঃ আমি তো বলে দিয়েছি আমি আমার মেয়েকে জীবনেও দিবো না। 


আমিঃ ও আচ্ছা। 


বাবাঃ বেয়াই যদি আবার আসে? 


আমিঃ আসবে না, টেনশন করার দরকার নেই। 


বাবাঃ তোর কাছে কিছু টাকা হবে? (করুনার সুরে)


আমিঃ এভাবে কেন বলো? কত টাকা লাগবে সেটা বলো। 


বাবাঃ অবন্তীর বই নাই, বই কিনতে হবে তাই। 


আমি মানিব্যাগ চেক করে দেখলাম মাত্র ৫৭৬ টাকা আছে, যেটা আমার পুরো মাসের পকেট ও যাতায়াত খরচ। এটা যদি দিয়ে দিই তাহলে পুরো মাস পায়ে হেটে কাজ করতে হবে। 


ধুর এতো কিছু চিন্তা করে লাভ নেই, পুরো টাকাটা বাবার হাতে দিয়ে দিলাম। 


বাবা টাকা হাতে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে গেলো। 


পরেরদিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম কেননা আমাকে পায়ে হেটে যেতে হবে, গাড়ি ভাড়া নাই। 


তাই তাড়াতাড়ি উঠে রওনা দিলাম। তারপরও অফিস পর্যন্ত যেতে ২০ মিনিট দেরি হয়। বস ইচ্ছা মতো ঝাড়ি দিলো। তারপর গত কালকে রে মাল গুলোর রিসিট কেটে নিয়ে আসছি সেগুলো দোকানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা কভার ভ্যান নিয়ে রওনা দিলাম। 


অন্য একজন ভ্যান চালাচ্ছে আমি পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। হাতে অনেক গুলো মালের সেম্পল,,, 


একটা দোকানে মাল দিয়ে আসার পথে ভাবিকে দেখলাম অনেক গুলো মেয়ের সাথে, মনে হয় ক্লাস শেষ করে বাসায় যাচ্ছে। ভাবির চোখ দেখেই চিনে ফেললাম যে এটা ভাবিই হবে। 


আমি তখন ভ্যান ঠ্যালতেছি। ভাবি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আমি উনার চোখে স্পর্শ পানি দেখলাম। আমি ভাবিকে দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে গেলাম। 


এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছে। বাস্তবতা কি জিনিষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। 


আজকে শুক্রবার, চাকরি টিউশনি সব কিছুই বন্ধ। তাই ঘুমিয়ে আছি, অনেক দিন ধরে ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না। 


ভাবি আমার রুমে আসলো,,,,


ভাবিঃ জুয়েল! এই জুয়েল,,,, 


আমিঃ আরে ভাবি আপনি কখনো আসলেন? 


ভাবিঃ এই তো একটু আগে, অনেক বেলা হইছে এবার ঘুম থেকে উঠো। 


আমিঃ হুম উঠতেছি, আসলে শরীরটা কেমন যেন ব্যাথা করতেছে, তাই ঘুমটা একটু বেশিই হলো। 


ভাবিঃ তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? 


আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলেন, আমি তো সুন্দর লাইফ 

কাটাচ্ছি। কোনো প্রবলেম হচ্ছে না। 


ভাবিঃ আমি দেখেছি কেমন সুন্দর লাইফ কাটাচ্ছো।


আমিঃ আচ্ছা আপনার পড়ালেখার কি অবস্থা? (কথা ঘুরিয়ে নিলাম)


ভাবিঃ মোটামুটি  তুমি আর পড়বে না? 


আমিঃ দেখি কি করা যায়, কলেজে যাওয়ার মতো তো সময় নাই। পরীক্ষাটা দিবো। যদি কপালে পাশ লেখা থাকে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ্‌,,,,


ভাবিঃ হুম, আসো খেয়ে নাও। 


আমিঃ আপনি যান, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। 


তারপর ভাবি চলে গেলো, আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। 


এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছিলো, এমন একটা লাইফ কাটাচ্ছি যেটাতে নিজের স্বাধীনতা বলে কিছু নাই। পরিবারের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে সব ত্যাগ করতে হয়।


একদিন খেয়াল করে দেখলাম মায়ের শাড়ি গুলো সব পুরাতন হয়ে গেছে, ভাবিও প্রতিদিন একটা ড্রেস গায়ে দিয়ে কলেজে যায়। বাবারও পাঞ্জাবি গুলোতে ময়লা জমে গেছে। ভাবির মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে যায় এরপর আর মোবাইল নেয়নি। তারপর লজ্জায় আর আমাদের কাওকে বলেনি।  সব কিছু মিলিয়ে সবারই অবস্থা খারাপ। 


নিজের শখের জিনিষ গুলা বিক্রি করে দিলাম, হুম আমার কম্পিউটার, গিটার, হাতের ঘড়ি এবং শখের মোবাইলটাও বিক্রি করে দিলাম সবার অজান্তে। 


তারপর আব্বু আম্মু আর ভাবিকে নিয়ে শপিং এ গেলাম। আব্বুর জন্য কয়েকটা লুঙ্গি, পাঞ্জাবি আর গেঞ্জি নিয়ে নিলাম। আম্মুর জন্য শাড়ি, ছায়া, ব্লাউজ আরো টুকটাক জিনিষ নিলাম। 


ভাবিকে উনার পছন্দ মতো নিতে বললাম, উনি কয়েকটা থ্রি পিছ, জুতা, কিছু কসমেটিক্স নিলো। 

.


.

আম্মু বললো..... 


আম্মুঃ তোর জন্য কিছু নিবি না? 


আমিঃ নাহ! আমার সব আছে। (মুছকি হাসি দিয়ে) 


তারপর উনাদের বাইরে দাঁড়িয়ে রেখে আমি একটা মোবাইলের দোকানে গেলাম, আমার জন্য একটা নরমাল মোবাইল নিলাম আর ভাবির জন্য একটা স্মার্ট ফোন নিলাম। 


তারপর উনাদের নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। 


রাতের বেলা সবাই আমার রুমে আসলো,,,,


আমিঃ কি ব্যাপার সবাই একসাথে?


আম্মুঃ কেন আসতে পারি না? 


আমিঃ আরে আজব না পারার কি আছে? আসো,,,,, 


সবাই এসে বসলো, আমি ব্যাগ থেকে ভাবির জন্য কেনা মোবাইলটা ভাবির হাতে দিলাম। 


ভাবিঃ কি এটা? 


আমিঃ মোবাইল আপনার জন্য নিলাম। 


ভাবিঃ আমার তো এখন মোবাইলের কোনো দরকার নেই, টাকা নষ্ট করলে কেন?


বাবাঃ সত্যি করে বলতো তুই টাকা কোথায় পেলি?


আমিঃ আমার কাছে জমানো ছিলো। 


আম্মুঃ মিথ্যা বলিস কেন? সত্যি করে বল টাকা কোথায় পাইছিস? 


আমিঃ কম্পিউটার, গিটার আর মোবাইলটা বিক্রি করে দিয়েছি। (মাথা নিচু করে) 


বাবাঃ কেন তোরে এগুলো বিক্রি করতে কে বলেছে? 


আমিঃ তোমাদের সবার কাপড়চোপড় গুলো পুরাতন হয়ে গেছে, দেখতেই তো খারাপ লাগে। সেজন্য,,,,, 


ভাবিঃ তাই বলে এগুলো বিক্রি করে দিবে? 


আমিঃ আরে কোনো সমস্যা নাই, আমি এখন কম্পিউটার চালানোর মতো সময় পাই না। আর গিটার তো বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। এগুলো একটারও আমার দরকার নেই? 


ভাবিঃ মোবাইল কেন বিক্রি করলে? 


আমিঃ এতো দামি মোবাইলের কাজ নেই এখন, সারাদিন কাজে থাকি মোবাইল চালানোর সময় কই, আর মোবাইলের প্রতি এতো শখ নাই। একটা নরমাল হলেই চলবে। 


কেউ আর কিছু বললো না, নির্বাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। সবার চোখে যে পানি চলে আসছে সেটা আমি ভালো করেই দেখছি।


কিছুদিন পর আমি শুয়ে আছি, সকাল ১০.০০ টার মতো বাজে,, সোফা রুমে চিল্লাচিল্লি শুনে তাড়াতাড়ি সেখানে গেলাম, গিয়ে দেখি তালোই মানে ভাবির বাবা আর মা এসেছে। 


আমি গিয়ে সালাম দিলাম, কৌশল বিনিময় করে বাজারে গেলাম বাজার আনতে, কারণ মেহমান আসছে ভালোমন্দ কিছু না হলে খারাপ দেখা যায়। 


আমি বাজার থেকে কিছু বাজার করে নিয়ে আসলাম। তারপর রান্না ঘরে দিয়ে আসলাম ভাবি আর মা রান্না করতেছে। 


আমি গিয়ে উনাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম। 


দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়া করে সবাই সোফা রুমে গিয়ে বসলাম। আমি বসিনি আব্বু আম্মু আর ভাবির বাবা মা সবাই বসছে, মনে হয় কিছু বলবে। ভাবি দরজা পাশে ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 


কিছুক্ষণ পরই ভাবির আব্বু মানে আংকেল বললো.... 


আংকেলঃ দেখেন বেয়াই সাব যেজন্য আমরা আসছিলাম। 


বাবাঃ জ্বি বেয়াই বলুন। 


আংকেলঃ আমার মেয়েটার বয়স খুব একটা বেশি না। এই বয়সে সে বিধবা হয়ে যাবে কল্পনাও করিনি। যাইহোক আল্লাহর যা পছন্দ হয়েছে তাই করেছে। আমার মেয়েটা মাত্র দুইমাস জামাইয়ের সাথে ছিলো। তারপর কি হলো সেটা তো জানেন। 


এখন কথা হচ্ছে ওর তো একটা ভবিষ্যৎ আছে, এভাবে তো আর তার জীবন চলবে না। 


বাবাঃ তো এখন কি করতে পারি? 


আংকেলঃ আপনাদের কিছু করতে হবে না, আমাদের মেয়েকে আমরা নিয়ে যাবো। ওর অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবো। এভাবে থাকলে তো আর হবে না। 


বাবাঃ না বেয়াই এটা করবেন না, আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন না। 


আংকেলঃ দেখেন আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না। বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। 


হুম এটা ঠিক যে আমার মেয়ের কপাল অনেক ভালো, আপনাদের মতো শ্বশুর শাশুড়ি পেয়েছে। খুব কম মেয়েই এই রকম শ্বশুর শাশুড়ি পেয়ে থাকে।  কিন্তু আপনারা তো আর ওর কিছু করতে পারবেন না। ওকি আপনাদের সাথে জীবন কাটাতে পারবে? আপনাদের ওতো বয়স হয়েছে। মরতে তো হবেই। আপনাদের কিছু হয়ে গেলে আমার মেয়েটার কি হবে? 


ভাবি নির্বাক দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে, না পারছে বাবার পক্ষে কিছু বলতে না পারছে শ্বশুরের পক্ষে কিছু বলতে। 


বাবাঃ কিন্তু এখানে তো ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব ঠিকঠাক মতো আছে। 


আংকেলঃ হুম সব আছে বাট স্বামী তো নাই। একটা মেয়ে কি এভাবে লাইফ কাটাতে পারে? আপনিই বলুন, আপনার মেয়ে হলে আপনি কি করতেন? 


বাবাঃ..........(মাথা নিচু করে বসে আছে)


আংকেলঃ আমি জানি আপনি অবন্তীকে অনেক ভালোবাসেন, নিজের মতোই দেখেন। কিন্তু অবনন্তীকে আমরা আর এখানে থাকতে দিতে পারি না। অন্তত পক্ষে ওর বাবা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।


বাবাঃ আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে, আমি আমার মেয়েকে যেতে দিবো না। 


আংকেলঃ আপনি এসব কি বলছেন? 


বাবাঃ হুম, আমার এক ছেলে হয়তো আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আরেকজন তো আছে, আপনি না অবন্তীকে বাইরে বিয়ে দিতে চেয়েছেন? বাইরে দেওয়ার দরকার নেই। আমার ছোট ছেলের কাছেই ওর বিয়ে দিবো। এবার তো আর বলতে পারবেন না যে আপনার মেয়ে বিধবা? ওর স্বামী নাই। এগুলো তো আর বলতে পারবেন না। 


আমি বাবার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম, এটা কেমনে হয়, এখনো আমি অবন্তীকে ভাবি ডাকি আর সে নাকি আমার,,,, 


না এটা কিছুতেই সম্ভব না, আমার মাথা ঘুরতেছে। হঠ্যাৎ করে বাবা আমার দুহাত চেপে ধরে বলে.....


বাবাঃ প্লিজ বাবা, তুই না করিস না। তুই অবন্তীকে বিয়ে কর, আমার মেয়েকে আমার কাছে থাকতে দে। প্লিজ বাবা, আমার অনুরোধ টা রাখ। নাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না।


বাবার কথা শুনে আমি কি বলবো কিছুই বুঝতেছি না, আম্মুও করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। 


আম্মুঃ জুয়েল! বাপ আমার প্লিজ না করিস না। 


আমি বাবার হাত ধরে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম। ভাবির দিকে তাকিয়ে দেখি উনি চোখ মুছতে মুছতে রুমে চলে গেলো। 


ভাবির আব্বু বললো.....


আংকেলঃ বেয়াই (বাবাকে) আপনি মানুষ না, ফেরেশতা। একটা মানুষ এতো ভালো হয় কেমনে? আমি নিজেও জীবনে আমার মেয়ের জন্য এতোকিছু করিনি যেটা আপনি করলেন। 


বাবাঃ আচ্ছা বেয়াই মশাই, বিয়েটা আজকেই হয়ে যাক। আমি কাজী ডেকে নিয়ে আসি। 


আংকেলঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আমার ছেলেকে আর ছেলের বউকে আসতে বলি। আর অবন্তীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে সাজিয়ে আনার জন্য বলবো। 


বাবাঃ আচ্ছা আমি বাজারে গেলাম। 


কোনো রকম অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেলো। ভাবি কে আজকে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে। প্রথম বিয়ের ছেয়েও বেশি, শুধু একটা জিনিষের অভাব। সেটা হচ্ছে মুখের হাসিটা। 


ভাইয়ার সাথে যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন ভাবির মুখে খুব সুন্দর হাসি ছিলো, আজকে সব আছে সেটাই নেই। হয়তো এমন কিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি। 


তারপর..........

.

চলবে_কি??

.

আজব প্রাণী ফেইসবুকে থেকে নেওয়া

দুধের বাচ্চা নিয়ে বাসরঘরে বসে আছি। অনেকে বলেছিল বাচ্চাকে মা চাচিদের দিয়ে দিতে। বাসর রাত বলে কথা৷ কিন্তু রাজি হয়নি। বাচ্চাটা একটু থেকে একটু হলেই কান্না করে দেয়। যে শান্ত করতে পারতো সে এখন আমার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে কবরে আরাম করে ঘুমিয়ে আছে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে৷ আমার এখনের স্বামির নাম ফারাবী। ঘরোয়াভাবেই বিয়েটা হয়েছে আজ আমাদের। আত্মীয় স্বজন বেশি নেই। গোটা বিশেক লোক হবে এসেছে।


মাত্র আমার মেয়েটা ঘুমালো। একটু পরই ফারাবী এসে ঢুকলেন রুমে। দরজা মারলেন নিঃশব্দে। আমি পা দুটো আরো গুটিয়ে নিয়ে মেয়েটাকে আরেকটু জোরে জাপটে ধরলাম। তিনি এসে বসলেন আমার কাছে। আমি মাথা নিচু করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। কতক্ষণ নীরব থাকার পর তিনি বললেন, জানেন তো আমাদের দুজনেরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে? আমি মাথা নাড়লাম। তিনি তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, কেন আমার স্ত্রী ছেড়ে গেছে এটা জানেন? আমি আবারও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। তিনি মৃদু হেসে বললেন, আমাদের সাত বছরের প্রেম আর এক বছরের সংসার জীবন ছিল। কিন্তু আমাদের সবটা প্রেমই রয়ে গেল ভালোবাসা হয়ে ওঠেনি। আমি তাকে মাতৃত্বের সুখ দিতে পারব না জেনেই ছেড়ে চলে গেল। আমি চুপ করে রইলাম।


- কি নাম ওর?


- মাইশা।


- বাহ্, অনেক সুন্দর নাম তো।


- ওর বাবার দেওয়া।


- দেখতেও কি বাবার মতো হয়েছে? 


- হুম। 


- আমার কোলে দেবেন একটু?


এবার আমি তার দিকে তাকালাম। মুখে আকুতিভরা, চোখ পানিতে ভরে উঠছে। দিলাম তাঁর হাতে। মেয়ে আমার যদিও জেগে গিয়েছিল কিন্তু কাঁদলো না। ফারাবী খেলল কতক্ষণ তার সাথে। আর মাইশা হাসছে। আমি অবাক হয়ে তাদের দিকে আছি। তাকে মেহরাজ, আমার প্রাক্তন স্বামীর মতো লাগছে। খেলা শেষে ওকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বললেন, জানেন আমার মেয়ের খুব শখ ছিল। নুপুরকে বলতাম আমরা মেয়ে নেবো। কিন্তু বুঝতেই পারিনি সে ক্ষমতা আমার নেই। মাইশা না থাকলে হয়ত এ বিয়েটাও হতো না। কে জাইবে এমন ছেলের কাছে মেয়ে দিতে?


মাইশাকে পাশে শুইয়ে দিয়ে বললেন, আপনি ঘুমিয়ে যান। সারাদিন খাটুনি গেছে অনেক। বলে মাইশার পাশে শুয়ে পড়লেন। আমি তখনো তাকিয়ে আছি। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম। গভীর রাতে হঠাৎ অজানা অনিশ্চিত ভয়ে জেগে উঠলাম। পাশে ফিরে দেখলাম মাইশা ঠিক আছে কি না। ফারাবী একহাত দিয়ে রেখেছেন মাইশার উপর। যেন ঘুম পাড়াতে পাড়াতে নিজেও ঘুমিয়ে গেছে। কি করে পরের মেয়েকে এত আপন করতে পারলেন!


সকালে চোখ খুলতেই দেখলাম মাইশা ফারাবী কেউই নেই। আমি ধড়মড় করে উঠে বসে আশেপাশে তাকাতেই বারান্দায় চোখ পড়ল। ফারাবী রকিং চেয়ারে বসে ঘুম পাড়াতে চাইছে মাইশাকে। আমি কাছে যেতেই বললেন, কান্না করছিল, আপনার ঘুম ভেঙে যাবে দেখে এদিকে নিয়ে এসে ঘুম পাড়াতে চাইছিলাম। দুষ্ট বাচ্চাটা কিছুতেই ঘুমাতে চাইছে না। আমি দেখলাম মেয়ে হাত দিয়ে ফারাবীর দাড়ি নিয়ে খেলছে৷ আমি ফিক করে হেসে দিলাম। তিনি বললেন, হাসছেন যে বড়?


- মেয়ের আমার আপনার দাড়ি পছন্দ হয়েছে। 


- তা হয়েছে। ভাবছি আরো বড়ো করব দাড়ি মেয়ে যাতে খেলতে পারে। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।


আমি মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে গেলাম। নাস্তা খেতে বসেছি। ফারাবী বললেন, আপনি বেলের আচার বানাতে পারেন? আমি বললাম, দেখেছিলাম। আমার প্রাক্তন শ্বাশুড়ি বানাতেন খুব ভালো। তার আচারের স্বাদই আলাদা ছিল। তিনি রুটিটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললেন, আমার বেশ প্রিয় বেলের আচার।


- ঝোলটা আরেকটু দেবো?


- দিন। আপনার রান্নার হাতও বেশ ভালো।


আমি হেসে বললাম, রুটিটা একটু পুড়ে গেছে। তাও বলছেন? ফারাবী শেষটুকু খেয়ে বলল, ভালো হাতের পোড়া রুটিও অমৃত হয়। বলে উঠে চলে গেলেন মাইশার কাছে। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে দোলনায়। মাথায় হাত বুলিয়ে ল্যাপটপটা খুলে পাশে বসলেন।


পরদিন থেকে অফিস। মাত্র তিন দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। বলতে গেলে পেয়েছেন আর কি। প্রথম বিয়ে হলে হয়ত সপ্তাহ খানেক ছুটি পেতেন। বের হওয়ার সময় জুতো পরতে পরতে বললেন, আমার খুব শখ ছিল কাজে যাওয়ার আগে বউয়ের কপালে ভালোবাসার চিহ্ন দিয়ে যাবো। কিন্তু নুপুরের কাছে এটা ন্যাকামি ছিল। তাই কখনো এই শখ পূরণ হয়নি। আপনারও কি অপছন্দ? আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়ালাম। তিনি হেসে আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন। 


রান্না করতে করতে মেহরাজের কথা অনেক মনে পড়ল। মেহরাজেরও বেলের আচার অনেক প্রিয় ছিল। এক বসাতে একটা বয়াম শেষ করে ফেলে বলতো কাল বেল কিনে আনবো, মাকে বোলো তো আচার বানাতে। আমিও শিখেছিলাম। একবছর হলো ও নেই। তাই বানানো হয়নি আর। মাইশা যখন পেটে তিন মাস হবে তখনই হঠাৎ কার এক্সিডেন্টে চলে গেল না ফেরার দেশে। মেয়েটাকে দেখে যেতে পারেনি। আমরা নাম ঠিক করে রেখেছিলাম। ওর পছন্দের নামটাই দিলাম আকিকার সময়। কত ঝগড়া করেছিলাম নাম নিয়ে ওর সাথে! চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়ালো। সেগুলো টুপ করে পড়ার আগেই ফোনটা বেজে উঠল। তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি ফারাবী কল দিয়েছেন। ধরতেই বললেন, কি করছেন? নাক টানছেন যে। কাঁদছিলেন নাকি? আমি নাকটা মুছে নিয়ে বললাম, পেঁয়াজ কাটছিলাম।


- ও, রান্না করবেন তাহলে। আমার মেয়ে কি করে?


- খেয়ে দেয়ে ঘুমাচ্ছে এখন।


- আমি তো দুপুরে এখানে লাঞ্চ করি। আপনার অসুবিধা হবে না তো? 


- না সমস্যা নেই। আপনি খেয়ে নেবেন।


- আপনিও। কোনো ফাঁকিবাজি যাতে না করেন। খেয়ে তারপর কাজ থাকলে করবেন। 


- আচ্ছা। 


- রাখছি তাহলে?


- হুম


ফারাবী ফোন কেটে দিলেন। আমি রান্নাঘরে যেতে যেতে ভাবলাম, দুজন মানুষ কি করে একই হয়!


রাত আটটায় বেল বাজলো। আমি মাইশাকে কোলে নিয়ে টিভি দেখছিলাম। গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম ফারাবী দাঁড়িয়ে আছেন। ঘেমে আছেন পুরোটা। আমি দরজা খুলতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। সোফায় বসতেই ফ্যান ছেড়ে দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলাম। সেটা খেয়ে ফ্রেশ হতে গেলেন। আমি সোফায় বসে আছি। তিনি ব্যাগ থেকে পাঁচটা বকুল লতা বের করে বললেন, আম্মুর কাছে শুনেছি আপনার নাকি বকুল পছন্দ। তাই আনলাম। সে একটা লতা নিয়ে মাইশার হাতে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, এটা আমার মেয়ের। বাকি চারটা লতা আমার খোঁপায় লাগিয়ে দিয়ে বললেন, আর এগুলো আমার মেয়ের আম্মুর। আমি লজ্জায় মুচকি হাসলাম। তিনি বললেন, লজ্জা পেলে আপনাকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগে।


সাত মাস চলছে আমাদের সংসারের। ফারাবী বেশ খেয়াল রাখেন। আমার টুকটাক ভালো লাগাগুলো তিনি বেশ গুরুত্ব দেন। আর মাইশা বলতে পাগল। মেয়েটাও বাবার কোলে কোলে ঘুরে বেড়ায় যতক্ষণ বাসায় থাকে। অফিসে গেলেই মেয়ের কি কান্না! এখন হাঁটতে পারে একটু আধটু। কলিং বেলের শব্দ পেলেই সব ফেলে বসার ঘরে চলে আসে বাবার কোলে ওঠার জন্য। ভালোই কাটছিল। এর মধ্যে হঠাৎ তার প্রাক্তন স্ত্রী এসে হাজির। আমি তখন রান্নায় ব্যস্ত। প্রায় শেষ। জুম্মার নামাজ পড়ে এসে মেয়েকে নিয়ে খেলা করছিলেন তিনি। তখনই কলিংবেল বাজল। দরজা খুলতেই নুপুর এসে ঢুকল। 


ফারাবী চুপ করে চেয়ে আছে তার দিকে। নুপুরকে বেশ বিধ্বস্ত লাগছে। ঢুকেই ফারাবীর দিকে কাঁদো কাঁদো হয়ে এগিয়ে এসেছিল জড়িয়ে ধরার জন্য। তিনি মাইশাকে কোলে নিয়ে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললেন, কেন এসেছো?


- একটু ঠাঁই পেতে এসেছি, ফারু। 


- দুঃখিত। এটা কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নয়। 


- প্লিজ ফারু আমাকে ফিরিয়ে দিও না। রায়হানের সাথে বিয়ে হওয়ার পর বুঝেছি আমি কি হারিয়েছি। ও আমার সাথে খুবই বাজে বিহেভ করে। ওকে ডিভোর্স দিয়ে আমি ফিরে আসতে চাই ফারু।


- সরি নুপুর, আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।


- তাহলে রেখে দাও ওকে। এমনিতেও তো তুমি বাবা হতে পারবে না। আমরা দুজন ওকে মানুষ করব।


এবার বেশ রেগে গেলেন ফারাবী। বললেন, তোমার মতো স্বার্থপর মেয়ে আমি দুটো দেখিনি। যখন সময় ছিল তখন নিজের স্বার্থ দেখে আমাকে ভেঙেচুরে চলে গিয়েছিলে। আজ এসেছো ফিরতে। তাও আমার স্ত্রীর সামনে এমন কথা বলেছো? আর যাই হোক সে তোমার মতো নয়। আমি বেশ সুখে আছি। তুমি সুখে নেই এটা তোমার সমস্যা। এখন আসতে পারো। তোমার মতো মানুষের ছায়া আমার সুখের সংসারে পড়ুক আমি চাই না। চলে যাও। নুপুর অনেক কাকুতি মিনতি করতে চেয়েছিল কিন্তু ফারাবী সুযোগ দিল না। তাকে গলাতে না পেরে হতাশ হয়ে বেরিয়ে গেল নুপুর।


বিকালে বারান্দায় মাইশাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ আমার হাত ধরে বলল, আমার সাথে এসো তো। ছাদে নিয়ে গেল। দেখলাম রংধনু উঠেছে৷ অনেকদিন দেখা হয় না। তিনি আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন, মেহরাজ ভাই আমার জন্য রত্ন রেখে গেছেন। এই রত্ন আমি হারাতে চাই না, আয়েশা। বলেই মাইশা আর আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন।


গল্প রংধনু 🦅🦅🦅

সমাপ্ত 

আজব প্রানি ফেইসবুক থেকে নেওয়া

-মিসেস স্নেহা আপনাকে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় ফাঁসি দেওয়া হবে।আপনার কি কোন শেষ ইচ্ছে আছে?"

কথাটি পুলিশ অফিসার আসিফ সাহেব শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমাকে বলেন।আমি মুচকি হেসে কিছুক্ষণ তার পাণে চেয়ে বললাম - " অফিসার সাহেব আমার শেষ দুইটা ইচ্ছে আছে।পুরন করবেন?"


অফিসার সাহেব আমার মুচকি হাসির বিপরীতে মুচকি হেসে বলেন-" মানুষের দেখি হাজারো ইচ্ছে থাকে। আপনার দেখি দুটো।না-কি দুটো বলে আবার অনেকগুলো পরবর্তীতে বলবেন?"


আমি উচ্চস্বরে হেসে বলি-"অফিসার সাহেব আমি খুনি হতে পারি মিথ্যাবাদী নই।কিংবা কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করি না।"


অফিসার সাহেব দুই হাত বুকের মাঝে গুটিয়ে বলেন-"বাহ্!আজকাল দেখি খুনিও ডিজিটাল হয়ে গেছে।ওকে! আপনি যখন বলেছেন দুটো ইচ্ছের কথা আমি না হয় শেষ আপনার ইচ্ছেটা পুরন করবো।"


কথাটুকু শেষ করে তিনি চলে যান।মাথার উপরে থাকা হলুদ বাতিটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জীবনের কিছু হিসাব মেলাচ্ছি।কোথায় ছিলাম আমি, আজ কোথায় আছি?ভাগ্য কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় বলা বড় দ্বায়।কারো মনে কি প্রশ্ন জাগে না, আমি কেন আজ খুনি?কিভাবে খুনি হলাম?এ সমাজে আমি শুধু একা খুনি নই,আমার আড়ালেও রয়েছে হাজারো খুনি।কেউ আসে পুলিশের প্রকাশে তো কেউ রয়ে যায় পুলিশের আড়ালে।এ খুনি হওয়ার পিছনে যে রয়েছে এক বিশাল অতীত কেউ কি তা দেখেছে?উহু!আমরা যে বাঙ্গালী।হায় বাঙালি তুমি বড়ই মহান,সত্য না খুঁজে খোঁজ সত্যকে বানানো মিথ্যার পাহাড়। 


পরদিন দুপুর ৪টা।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় চ্যানেল সময় টিভির লাইভে আমার কথায় আমাকে আনা হয়।আজ সন্ধ্যা ৬টায় আমার ফাঁসি।অথচ আমার মাঝে নেই কোন ভাবান্তর।এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আগে আমাকে যে বলতে হবে আমার না বলা কিছু কথা।জানাতে যে হবে কেউ নিজের ইচ্ছে খুনি হয় না।তাকে বাধ্য করা হয় খুনি হতে।সারা দেশের জনগণ খুব আগ্রহ নিয়ে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছে।পৃথিবীর এই প্রথম কোন ফাঁসির আসামি মনে হয় তাদের মতে নিজের ইচ্ছে পুরন করতে টিভিতে লাইভে আসছে।কি অদ্ভুত নিয়ম। ও আপনাদের তো বলা হয়নি।আমার দুটো ইচ্ছে সম্পর্কে।এক. আমার ইচ্ছে ছিলো আমার মতো মানুষেরা কিভাবে খুনি হয় সে সম্পর্কে পৃথিবীকে জানানো।দুই. আমার বাবাকে পাশে বসিয়ে নিজের নিকৃষ্ট অতীতের গল্প শোনানো।হ্যাঁ?!অফিসার সাহেব আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছেন।


একজন উপস্থাপক এসে আমার ও আমার বাবার সাথে কৌশল বিনিময় করে আমাকে প্রশ্ন করেন -" আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এই প্রথম কোন খুনি লাইভে এসে পৃথিবীকে তার খুন সম্পর্কে জানাবে।আমার লাইফে অনেক নারী খুনির কথাই শোনেছি।কিন্তু আপনার মতো কারো কথা শোনা হয় নি।তাও আবার কি-না সাইলেন্ট কিলার। আপনি সত্যি এক সাহসী নারী।"


আমি মুচকি হেসে বলি- "তাহলে আজ শোনে নি এক ভীতু নারী থেকে সাহসী নারী হওয়ার গল্প।শোনে নিন সাহসী থেকে খুনি হওয়ার অন্য আরও একটি সত্য।"


তিনি আমার কথার বিপরীতে মুচকি হেসে বলেন-"তাহলে আমরা আমাদের কাজ শুরু করতে পারি কি বলেন?"


মুচকি হেসে আমি মাথা নেড়ে "হ্যা" বুঝাই।


ক্যামেরা অন করা হয়।চারপাশের লাইট ক্যামেরা আমার দিকে ফোকাস করা হয়।জনগণ আমার কথা শোনার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন টিভির সামনে।আমি শান্ত ভাবে বলা শুরু করি-


"আমি মিসেস স্নেহা রহমান।সচারাচর সবাই আমাকে একজন খুনি হিসেবেই চিনেন।কেউ তো আবার অবাকও হচ্ছেন আমি একজন মেয়ে হয়ে কিভাবে সাইলেন্ট কিলার হলাম?এটা আপনাদের কাছে যেমন অবাক হওয়ার তেমনই আমার কাছে অবাক হওয়ার মতোই ছিলো।কিন্তু এখন আমি স্বাভাবিক।হ্যাঁ! একদম স্বাভাবিক ভাবে বলতে পারি আমি সেই মেয়ে যে একজন সাইলেন্ট কিলার।কয়েকশত খুন আমি নিজ হাতেই করেছি।কেন করেছি আজ সে গল্প আপনাদের সাথে করার জন্যই এই লাইভে আসা।আপনারা সবাই জানেন আজ সন্ধ্যা ৬টায় আমার ফাঁসি।এখন আমার ভয় পাওয়ার কথা।সরকারের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে ফাঁসি না দেওয়ার আকুতি জানানো। কিন্তু আমি সে সব করবো না।আমিও চাই আমার ফাঁসি হউক।অন্তত এই নিকৃষ্ট সমাজ থেকে তো বেঁচে যাবো।চাইলে আমি আত্মহত্যা করতে পারতাম।করিনি কেন জানেন?আত্মহত্যা পাপ বলে।যার জন্য আমার কাজ শেষ করে আমি প্রশাসনের কাছে নিজের আত্মসমর্পণ করি।"


দীর্ঘ এক শ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করি-


"এবার আসি আসল কথায়।আমি খুবই সাধারণ পরিবারের সন্তান ছিলাম।বাবা দিন মজুরের কাজ করতেন।মা গৃহিণী ছিলেন।আমরা তিন বোন দুই ভাই ছিলাম।টানা পোড়ার সংসার ছিলো আমাদের।ভাই বোনদের মাঝে আমি ছিলাম চার নাম্বার।বড় দুই বোনকে বাবা কোন রকম বিয়ে দেন।এক ভাইকে চট্রগ্রাম কাজের জন্য পাঠান।বাকী ছিলাম আমি আমার ছোট ভাই।হঠাৎ একদিন আমার বাবা-মা,ভাই বাসায় ছিলেন না।বাবা কাজে বের হয়ে যান।মা পাশের কোন এক চাচির কাছে যান।ছোট ভাই স্কুলে ছিলো।বাসায় আমি একা ছিলাম।সেদিন আমার এক খালাতো ভাই আসে আমাদের বাসায়।আমি সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলাম।কারণ ভাইয়া এসেছে।বড় ভাই বলে কথা।তিনি এসে আমাকে ভালোর কথা জিজ্ঞাসা করে বলেন " মা কোথায়?" আমি হেসে বলি -"ভাইয়া মা পাশের বাসায় গেছেন।আপনি বসেন আমি ডেকে আনি।"হুট করে তিনি আমায় টেনে তার পাশে বসিয়ে বলেন "তোর যেতে হবে না।তুই আমার পাশে বস।"


আমি বোকার মতো ভাইয়ার পাশে বসি।তখন বয়স আমার কতই আর হবে?৯ কিংবা ১০ হবে।আমি হেসে হেসে ভাইয়াকে খালা-খালু,ভাবির কথা জিজ্ঞাসা করি।ভাইয়া হেসে বলেন "আছে সবাই ভালো।" কথার এক পর্যায় ভাইয়া আমার নিষিদ্ধ স্থানে হাত ছুঁয়ে দেন।আমি যখন চেচিয়ে বলি ভাইয়া আপনি কি করেন এগুলো?তিনি আমায় বলেন-"তেমন কিছু না। যা করতেছি করতে দে।আর একটু চুপ থাক।"ভাইয়ার এমন অদ্ভুত কথায় আমি কিছু না বুঝে চিৎকার করতে যায় ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি আমার মুখ চেপে ধরেন।"


কয়েক মিনিট চুপ থেকে আমি আবার বলা শুরু করি,


"সেদিন আমি ধর্ষিতা হয়।হ্যাঁ! খালাতো ভাই নামক মানুষটির কাছে আমি খুব বাজে ভাবে ধর্ষিতা হই।তখন তো আর বুঝতাম না ধর্ষিতার মানে কিন্তু এখন তো সেটা বুঝি।মায়ের কাছে অনেক বার কাঁন্না করে বলেছিলাম -" মা ভাইয়া আমাকে খুব বাজে ভাবে ছুঁয়েছে।মা আমায় সেদিন ধমক দিয়ে বলেন আমি মিথ্যা বলি।ভাইয়া এসব করতে পারেন না।এভাবেই চলছিলো আমার জীবন।যখনই তিনি আসতেন আমার সাথে কিছু না কিছু করতে চেষ্টা করতেন।আমি তখন এতটুকুই বুঝতাম তিনি খারাপ। খুব বাজে লোক।ভয়ে সেদিনের পর আর যাওয়া হয়নি ওনার কাছে।একদিন ভাইয়াদের বাড়িতে দাওয়াত পড়ে।আমি না করলেও মা আমায় জোর করে নিয়ে যান।সেদিনও ছিলো আমার জীবনের আরও ভয়ংকর রাত।মানুষ বেশি হওয়ায় ভাইয়ার মেয়ে আর আমাকে দেওয়া হয় ভাইয়ার সাথে ঘুমানোর জন্য।আমি যাবো না বলায় মা আমাকে খুব করে বকা দেন।শেষ আমাকে মেরে ভাইয়ার রুমে পাঠান।ভয়ে ভয়ে আমি ভাইয়ার মেয়েকে ওনার পাশে রেখে খাটের এক কোণে শুয়ে পড়ি।সেদিনও এই নরপিশাচ আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে ছাড় দেয়নি।তারপর দিন যখন বাসায় আসি সে থেকে ওনার সাথে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।একা কখন ওনার সামনে যেতাম না।আস্তে আস্তে বড় হয়।ভালো-মন্দ বুঝতে শিখি।তখন বুঝতে পারি ঐ লোকটি ঘরে বউ সন্তান রেখেও অন্যান্য মেয়েদের সাথে খারাপ কাজ করে।এমন কি এক মেয়ে তার সন্তানের মা হতে চলেছে শোনেও লোকটি অস্বীকার করে।এক সময় মেয়েটি আত্মহত্যা করে।"


বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা একপলকে জলভরা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার পাণে।আমি মিষ্টি এক হাসি দিয়ে আবার বলা শুরু করি-


"যখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তখন বাবা তার পছন্দ করা ছেলের কাছে আমায় জোর করে বিয়ে দেন।বিয়ের দিন রাতে জানতে পারি তার পরকীয়া চলছে নিজ বড় ভাইয়ের বউয়ের সাথে।তখন নিজের উপর নিজেরই ঘৃণা শুরু হয়।একদিন সকালে ভাবির মেয়ে তানহা এসে আমায় ভয়ে ভয়ে বলে-" কাকীমনি কাকা আমায় বাজে ভাবে ছুঁয়েছে আজ।" ছোট বাচ্চার কথাটি শোনে আমার পুরনো অতীত মনে পড়ে যায়।সেদিন চিন্তা করেছে যে দেশে ধর্ষকের বিচার হয়না সে দেশ থেকে তাদেরকে আমিই দূর করবো।একজন সাধারণ মেয়ে থেকে আমাকে সাহসী হতে হবে হাজারো স্নেহা,হাজারো তানহার মতো মেয়েদের জন্য।আমি চুপ করে থাকলে দেশ চুপ করে থাকবে।আমি রুখে দাঁড়ালেই তবে দেশ রুখে দাঁড়াবে।সে শপথ নিয়ে সর্বপ্রথম আমি আমার স্বামীকে খুন করি।খুন করে নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য ছোট একটা মিথ্যা নাটক সাজাই।বাস আমার নাটকই আমার জন্য সেদিন যথেষ্ট ছিলো।রোড এক্সিডেন বলেই খুনটা ধামাচাপা পড়ে যায়।তারপর শুরু হয় ধর্ষকদের খুঁজে খুন করার প্ল্যান।খালাতো ভাই নামক নরপিশাচ কে মারার অনেক সুযোগ খুঁজেছি।কিন্তু সে আর হয়ে উঠেনি।একদিন সে আমার জালে পা রাখে।সেদিন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে খুন করে দেই।অত:পর প্রশাসনের কাছে আমি আত্মসমর্পণ করি।


আজ আমি মেয়েদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো, তোমরা কখনো কোন পুরুষকে সুযোগ দিবেনা।না কখনো নিজের সন্তানের কথা মিথ্যা বলে চালিয়ে দিবে।ছোট বাচ্চারা কখনো মিথ্যা বলে না।তারা নিষ্পাপ হয়।কখনো নিজের সিন্তানকে পরপুরুষের কাছে একা যেতে দিবে না।নিজের সম্মান নিজেকে রক্ষা করার জন্য যদি নিজেকে শেষ করতে হয় তবে তাই করো।প্রয়োজনে ধর্ষকদের খুন করো।তবুও তাদের হাতের পুতুল হবে না।এই দেশে ধর্ষকদের কেউ দোষ দেয় না দেয় ধর্ষিতাদের।"


আমার কথা শেষ করে যখন চারপাশে তাকাই দেখি সবার চোখে পানি।যে অফিসার সাহেব গতকাল আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে আজ সে মাথা নিচু করে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছেন।হা!হা!কি অদ্ভুত নিয়ম।উপস্থাপক আমায় কিছু বলতে যাবেন তার আগে আমি হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অফিসারকে বলি -"আমার ফাঁসির সময় হয়ে গেছে এবার চলুন।আর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।"


বাবার দিকে তাকিয়েই "ভালো থাকবেন বাবা" কথাটুকু বলে বের হয়ে চলে আসি।পিছনে ফিরিয়ে মায়া বাড়াতে চাইনা।আমার জন্য মায়া মানায় না।না মানায় আমায় নিয়ে কেউ আফসোস করা।আমার জীবনের নেই কোন গতি।থেমে গেছে জীবনের ঘটী।নাম না জানা এক পথে পাড়ি জমিয়েছি।কোথায় থেকে শুরু আর কোথায় তার হবে শেষ সে নিয়ে নাই কোন আক্ষেপ।শুধু ধর্ষিতা নারীর প্রতি রয়ে গেলো এই সাইলেন্ট কিলারের দুটো লাইন-


"হে!ধর্ষিতা নারী তুমি ফিরে তাকাও,রুখে দাঁড়াও হায়নাদের দমন করতে,

তবেই হবে তুমি শ্রেষ্ঠ নারী,হবে তুমি ধর্ষিতাহীন।"


_____সমাপ্ত______

ছোট গল্প ঃঃসাইলেন্ট কিলার। 


ভুল_ত্রুটি_ক্ষমার_দৃষ্টিতে_দেখবেন_ 

রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫

 রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫ আজকের সংবাদ শিরোনাম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা --- পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টি...