এই ব্লগটি সন্ধান করুন
এই ব্লগটি সন্ধান করুন
এই ব্লগটি সন্ধান করুন
এই ব্লগটি সন্ধান করুন
এই ব্লগটি সন্ধান করুন
এই ব্লগটি সন্ধান করুন
মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩
হৈমন্তী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্য থেকে নেওয়া
হৈমন্তী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন , মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গেছে , কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে । মেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গেছে বটে , কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনো তাহার চেয়ে কিঞ্চিৎ উপরে আছে , সেইজন্যই তাড়া।
আমি ছিলাম বর, সুতরাং বিবাহসম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল। আমার কাজ আমি করিয়াছি , এফ.এ. পাস করিয়া বৃত্তি পাইয়াছি। তাই প্রজাপতির দুই পক্ষ , কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষ, ঘন ঘন বিচলিত হইয়া উঠিল।
আমাদের দেশে যে মানুষ একবার বিবাহ করিয়াছে বিবাহ সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোনো উদ্বেগ থাকে না। নরমাংসের স্বাদ পাইলে মানুষের সম্বন্ধে বাঘের যে দশা হয়, স্ত্রীর সম্বন্ধে তাহার ভাবটা সেইরূপ হইয়া উঠে । অবস্থা যেমনি ও বয়স যতই হউক, স্ত্রীর অভাব ঘটিবামাত্র তাহা পূরণ করিয়া লইতে তাহার কোনো দ্বিধা থাকে না। যত দ্বিধা ও দুশ্চিন্তা সে দেখি আমাদের নবীন ছাত্রদের । বিবাহের পৌনঃপুনিক প্রস্তাবে তাহাদের পিতৃপক্ষের পাকা চুল কলপের আশীর্বাদে পুনঃপুনঃ কাঁচা হইয়া উঠে , আর প্রথম ঘটকালির আঁচেই ইহাদের কাঁচা চুল ভাবনায় একরাত্রে পাকিবার উপক্রম হয়।
সত্য বলিতেছি , আমার মনে এমন বিষম উদ্বেগ জন্মে নাই । বরঞ্চ বিবাহের কথায় আমার মনের মধ্যে যেন দক্ষিনে হাওয়া দিতে লাগিল। কৌতূহলী কল্পনার কিশলয়গুলির মধ্যে একটা যেন কানাকানি পড়িয়া গেল । যাহাকে বার্কের ফ্রেঞ্চ্ রেভোল্যুশনের নোট পাঁচ-সাত খাতা মুখস্থ করিতে হইবে , তাহার পক্ষে এ ভাবটা দোষের । আমার এ লেখা যদি টেকসবুক-কমিটির অনুমোদিত হইবার কোনো আশঙ্কা থাকিত তবে সাবধান হইতাম।
কিন্তু , এ কী করিতেছি । এ কি একটি গল্প যে উপন্যাস লিখিতে বসিলাম । এমন সুরে আমার লেখা শুরু হইবে এ আমি কি জানিতাম। মনে ছিল , কয় বৎসরের বেদনার যে মেঘ কালো হইয়া জমিয়া উঠিয়াছে , তাহাকে বৈশাখসন্ধ্যার ঝোড়ো বৃষ্টির মতো প্রবল বর্ষণে নিঃশেষ করিয়া দিব । কিন্তু , না পারিলাম বাংলায় শিশুপাঠ্য বই লিখিতে , কারণ, সংস্কৃত মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ আমার পড়া নাই; আর, না পারিলাম কাব্য রচনা করিতে , কারণ মাতৃভাষা আমার জীবনের মধ্যে এমন পুষ্পিত হইয়া উঠে নাই যাহাতে নিজের অন্তরকে বাহিরে টানিয়া আনিতে পারি ।
সেইজন্যেই দেখিতেছি , আমার ভিতরকার শ্মশানচারী সন্ন্যাসীটা অট্টহাস্যে আপনাকে আপনি পরিহাস করিতে বসিয়াছে। না করিয়া করিবে কী। তাহার যে অশ্রু শুকাইয়া গেছে। জ্যৈষ্ঠের খররৌদ্রই তো জ্যৈষ্ঠের অশ্রুশূন্য রোদন।
আমার সঙ্গে যাহার বিবাহ হইয়াছিল তাহার সত্য নামটা দিব না। কারণ , পৃথিবীর ইতিহাসে তাহার নামটি লইয়া প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে বিবাদের কোনো আশঙ্কা নাই। যে তাম্রশাসনে তাহার নাম খোদাই করা আছে সেটা আমার হৃদয়পট । কোনোকালে সে পট এবং সে নাম বিলুপ্ত হইবে , এমন কথা আমি মনে করিতে পারি না । কিন্তু , যে অমৃতলোকে তাহা অক্ষয় হইয়া রহিল সেখানে ঐতিহাসিকের আনাগোনা নাই।
আমার এ লেখায় তাহার যেমন হউক একটা নাম চাই। আচ্ছা , তাহার নাম দিলাম শিশির। কেননা, শিশিরে কান্নাহাসি একেবারে এক হইয়া আছে , আর শিশিরে ভোরবেলাটুকুর কথা সকালবেলায় আসিয়া ফুরাইয়া যায়।
শিশির আমার চেয়ে কেবল দুই বছরের ছোটো ছিল । অথচ , আমার পিতা যে গৌরীদানের পক্ষপাতী ছিলেন না তাহা নহে।
তাঁহার পিতা ছিলেন উগ্রভাবে সমাজবিদ্রোহী, দেশের প্রচলিত ধর্মকর্ম কিছুতে তাঁহার আস্থা ছিল না; তিনি কষিয়া ইংরাজি পড়িয়াছিলেন। আমার পিতা উগ্রভাবে সমাজের অনুগামী ; মানিতে তাঁহার বাধে এমন জিনিস আমাদের সমাজে , সদরে বা অন্দরে , দেউড়ি বা খিড়কির পথে খুঁজিয়া পাওয়া দায়, কারণ, ইনিও কষিয়া ইংরাজি পড়িয়াছিলেন। পিতামহ এবং পিতা উভয়েরই মতামত বিদ্রোহের দুই বিভিন্ন মূর্তি। কোনোটাই সরল স্বাভাবিক নহে। তবুও বড়ো বয়সের মেয়ের সঙ্গে বাবা যে আমার বিবাহ দিলেন তাহার কারণ, মেয়ের বয়স বড়ো বলিয়াই পণের অঙ্কটাও বড়ো। শিশির আমার শ্বশুরের একমাত্র মেয়ে। বাবার বিশ্বাস ছিল , কন্যার পিতার সমস্ত টাকা ভাবী জামাতার ভবিষ্যতের গর্ভ পূরণ করিয়া তুলিতেছে।
আমার শ্বশুরের বিশেষ কোনো-একটা মতের বালাই ছিল না। তিনি পশ্চিমের এক পাহাড়ের কোনো রাজার অধীনে বড়ো কাজ করিতেন। শিশির যখন কোলে তখন তাহার মার মৃত্যু হয়। মেয়ে বৎসর-অন্তে এক-এক বছর করিয়া বড়ো হইতেছে , তাহা আমার শ্বশুরের চোখেই পড়ে নাই। সেখানে তাঁহার সমাজের লোক এমন কেহই ছিল না যে তাঁহাকে চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিবে।
শিশিরের বয়স যথাসময়ে ষোলো হইল; কিন্তু সেটা স্বভাবের ষোলো, সমাজের ষোলো নহে। কেহ তাহাকে আপন বয়সের জন্য সতর্ক হইতে পরামর্শ দেয় নাই, সেও আপন বয়সটার দিকে ফিরিয়াও তাকাইত না।
কলেজে তৃতীয় বৎসরে পা দিয়াছি, আমার বয়স উনিশ, এমন সময় আমার বিবাহ হইল। বয়সটা সমাজের মতে বা সমাজসংস্কারকের মতে উপযুক্ত কি না তাহা লইয়া তাহারা দুই পক্ষ লড়াই করিয়া রক্তারক্তি করিয়া মরুক, কিন্তু আমি বলিতেছি, সে বয়সটা পরীক্ষা পাস করিবার পক্ষে যত ভালো হউক বিবাহের সম্বন্ধ আসিবার পক্ষে কিছুমাত্র কম ভালো নয়।
বিবাহের অরুণোদয় হইল একখানি ফোটোগ্রাফের আভাসে। পড়া মুখস্থ করিতেছিলাম। একজন ঠাট্টার সম্পর্কের আত্মীয়া আমার টেবিলের উপরে শিশিরের ছবিখানি রাখিয়া বলিলেন, “এইবার সত্যিকার পড়া পড়ো — একেবারে ঘাড়মোড় ভাঙিয়া।”
কোনো একজন আনাড়ি কারিগরের তোলা ছবি। মা ছিল না, সুতরাং কেহ তাহার চুল টানিয়া বাঁধিয়া, খোঁপায় জরি জড়াইয়া, সাহা বা মল্লিক কোম্পানির জবড়জঙ জ্যাকেট পরাইয়া, বরপক্ষের চোখ ভুলাইবার জন্য জালিয়াতির চেষ্টা করে নাই। ভারি একখানি সাদাসিধা মুখ, সাদাসিধা দুটি চোখ, এবং সাদাসিধা একটি শাড়ি । কিন্তু , সমস্তটি লইয়া কী যে মহিমা সে আমি বলিতে পারি না। যেমন-তেমন একখানি চৌকিতে বসিয়া, পিছনে একখানা ডোরা-দাগ-কাটা শতরঞ্চ ঝোলানো, পাশে একটা টিপাইয়ের উপরে ফুলদানিতে ফুলের তোড়া। আর, গালিচার উপরে শাড়ির বাঁকা পাড়টির নীচে দুখানি খালি পা।
পটের ছবিটির উপর আমার মনের সোনার কাঠি লাগিতেই সে আমার জীবনের মধ্যে জাগিয়া উঠিল। সেই কালো দুটি চোখ আমার সমস্ত ভাবনার মাঝখানে কেমন করিয়া চাহিয়া রহিল। আর , সেই বাঁকা পাড়ের নীচেকার দুখানি খালি পা আমার হৃদয়কে আপন পদ্মাসন করিয়া লইল।
পঞ্জিকার পাতা উল্ টাইতে থাকিল; দুটা-তিনটা বিবাহের লগ্ন পিছাইয়া যায়, শ্বশুরের ছুটি আর মেলে না। ও দিকে সামনে একটা অকাল চার-পাঁচটা মাস জুড়িয়া আমার আইবড় বয়সের সীমানাটাকে উনিশ বছর হইতে অনর্থক বিশ বছরের দিকে ঠেলিয়া দিবার চক্রান্ত করিতেছে। শ্বশুরের এবং তাঁহার মনিবের উপর রাগ হইতে লাগিল।
যা হউক, অকালের ঠিক পূর্বলগ্নটাতে আসিয়া বিবাহের দিন ঠেকিল। সেদিনকার সানাইয়ের প্রত্যেক তানটি যে আমার মনে পড়িতেছে। সেদিনকার প্রত্যেক মুহূর্তটি আমি আমার সমস্ত চৈতন্য দিয়া স্পর্শ করিয়াছি। আমার সেই উনিশ বছরের বয়সটি আমার জীবনে অক্ষয় হইয়া থাক্।
বিবাহসভায় চারি দিকে হট্টগোল ; তাহারই মাঝখানে কন্যার কোমল হাতখানি আমার হাতের উপর পড়িল। এমন আশ্চর্য আর কী আছে। আমার মন বারবার করিয়া বলিতে লাগিল, ‘ আমি পাইলাম , আমি ইহাকে পাইলাম। ‘
কাহাকে পাইলাম। এ যে দুর্লভ, এ যে মানবী, ইহার রহস্যের কি অন্ত আছে।….আমার শ্বশুরের নাম গৌরীশংকর। যে হিমালয়ে বাস করিতেন সেই হিমালয়ের তিনি যেন মিতা। তাঁহার গাম্ভীর্যের শিখরদেশে একটি স্থির হাস্য শুভ্র হইয়াছিল। আর, তাঁহার হৃদয়ের ভিতরটিতে স্নেহের যে-একটি প্রস্রবণ ছিল তাহার সন্ধান যাহারা জানিত তাহারা তাঁহাকে ছাড়িতে চাহিত না।
কর্মক্ষেত্রে ফিরিবার পূর্বে আমার শ্বশুর আমাকে ডাকিয়া বলিলেন, “ বাবা , আমার মেয়েটিকে আমি সতেরো বছর ধরিয়া জানি , আর তোমাকে এই ক ‘ টি দিন মাত্র জানিলাম , তবু তোমার হাতেই ও রহিল । যে ধন দিলাম, তাহার মূল্য যেন বুঝিতে পার , ইহার বেশি আশীর্বাদ আর নাই। ”
তাঁহার বেহাই বেহান সকলেই তাঁহাকে বার বার করিয়া আশ্বাস দিয়া বলিলেন, “ বেহাই , মনে কোনো চিন্তা রাখিয়ো না। তোমার মেয়েটি যেমন বাপকে ছাড়িয়া আসিয়াছে এখানে তেমনি বাপ মা উভয়কেই পাইল। ”
তাহার পরে শ্বশুরমশায় মেয়ের কাছে বিদায় লইবার বেলা হাসিলেন; বলিলেন , “ বুড়ি, চলিলাম। তোর একখানি মাত্র এই বাপ , আজ হইতে ইহার যদি কিছু খোওয়া যায় বা চুরি যায় বা নষ্ট হয় আমি তাহার জন্য দায়ী নই। ”……মেয়ে বলিল, “ তাই বৈকি । কোথাও একটু যদি লোকসান হয় তোমাকে তার ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে। ”
অবশেষে নিত্য তাঁহার যে-সব বিষয়ে বিভ্রাট ঘটে বাপকে সে সম্বন্ধে সে বার বার সতর্ক করিয়া দিল। আহারসম্বন্ধে আমার শ্বশুরের যথেষ্ট সংযম ছিল না, গুটিকয়েক অপথ্য ছিল , তাহার প্রতি তাঁহার বিশেষ আসক্তি — বাপকে সেই-সমস্ত প্রলোভন হইতে যথাসম্ভব ঠেকাইয়া রাখা মেয়ের এক কাজ ছিল। তাই আজ সে বাপের হাত ধরিয়া উদ্বেগের সহিত বলিল, “ বাবা , তুমি আমার কথা রেখো — রাখবে ?”…….বাবা হাসিয়া কহিলেন, “ মানুষ পণ করে পণ ভাঙিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার জন্য, অতএব কথা না-দেওয়াই সব চেয়ে নিরাপদ। ”
তাহার পরে বাপ চলিয়া আসিলে ঘরে কপাট পড়িল। তাহার পরে কী হইল কেহ জানে না।….বাপ ও মেয়ের অশ্রুহীন বিদায়ব্যাপার পাশের ঘর হইতে কৌতূহলী অন্তঃপুরিকার দল দেখিল ও শুনিল । অবাক কাণ্ড! খোট্টার দেশে থাকিয়া খোট্টা হইয়া গেছে! মায়ামমতা একেবারে নাই!
আমার শ্বশুরের বন্ধু বনমালীবাবুই আবাদের বিবাহের ঘটকালি করিয়াছিলেন । তিনি আমাদের পরিবারেরও পরিচিত । তিনি আমার শ্বশুরকে বলিয়াছিলেন , “ সংসারে তোমার তো ঐ একটি মেয়ে । এখন ইহাদেরই পাশে বাড়ি লইয়া এইখানেই জীবনটা কাটাও।”
তিনি বলিলেন, “ যাহা দিলাম তাহা উজাড় করিয়াই দিলাম । এখন ফিরিয়া তাকাইতে গেলে দুঃখ পাইতে হইবে । অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই।”
সব-শেষে আমাকে নিভৃতে লইয়া গিয়া অপরাধীর মতো সসংকোচে বলিলেন, “ আমার মেয়েটির বই পড়িবার শখ , এবং লোকজনকে খাওয়াইতে ও বড়ো ভালোবাসে । এজন্য বেহাইকে বিরক্ত করিতে ইচ্ছা করি না । আমি মাঝে মাঝে তোমাকে টাকা পাঠাইব । তোমার বাবা জানিতে পারিলে কি রাগ করিবেন।”
প্রশ্ন শুনিয়া কিছু আশ্চর্য হইলাম । সংসারে কোনো-একটা দিক হইতে অর্থসমাগম হইলে বাবা রাগ করিবেন , তাঁহার মেজাজ এত খারাপ তো দেখি নাই।……যেন ঘুষ দিতেছেন, এমনিভাবে আমার হাতে একখানা একশো টাকার নোট গুঁজিয়া দিয়াই আমার শ্বশুর দ্রুত প্রস্থান করিলেন; আমার প্রণাম লইবার জন্য সবুর করিলেন না। পিছন হইতে দেখিতে পাইলাম , এইবার পকেট হইতে রুমাল বাহির হইল ।
আমি স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম । মনে বুঝিলাম , ইহারা অন্য জাতের মানুষ।…….বন্ধুদের অনেককেই তো বিবাহ করিতে দেখিলাম । মন্ত্র পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্ত্রীটিকে একেবারে এক গ্রাসে গলাধঃকরণ করা হয় । পাকযন্ত্রে পৌঁছিয়া কিছুক্ষণ বাদে এই পদার্থটির নানা গুণাগুণ প্রকাশ হইতে পারে এবং ক্ষণে ক্ষণে আভ্যন্তরিক উদ্বেগ উপস্থিত হইয়াও থাকে , কিন্তু রাস্তাটুকুতে কোথাও কিছুমাত্র বাধে না ।
আমি কিন্তু বিবাহসভাতেই বুঝিয়াছিলাম , দানের মন্ত্রে স্ত্রীকে যেটুকু পাওয়া যায় তাহাতে সংসার চলে , কিন্তু পনেরো-আনা বাকি থাকিয়া যায় । আমার সন্দেহ হয় , অধিকাংশ লোকে স্ত্রীকে বিবাহমাত্র করে , পায় না, এবং জানেও না যে পায় নাই ; তাহাদের স্ত্রীর কাছেও আমৃত্যুকাল এ খবর ধরা পড়ে না । কিন্তু , সে যে আমার সাধনার ধন ছিল ; সে আমার সম্পত্তি নয় , সে আমার সম্পদ ।
শিশির — না , এ নামটা আর ব্যবহার করা চলিল না । একে তো এটা তাহার নাম নয় , তাহাতে এটা তাহার পরিচয়ও নহে । সে সূর্যের মতো ধ্রুব ; সে ক্ষণজীবিনী উষার বিদায়ের অশ্রুবিন্দুটি নয় । কী হইবে গোপনে রাখিয়া। তাহার আসল নাম হৈমন্তী।
দেখিলাম , এই সতেরো বছরের মেয়েটির উপরে যৌবনের সমস্ত আলো আসিয়া পড়িয়াছে , কিন্তু এখনো কৈশোরের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই । ঠিক যেন শৈলচূড়ার বরফের উপর সকালের আলো ঠিকরিয়া পড়িয়াছে , কিন্তু বরফ এখনো গলিল না । আমি জানি , কী অকলঙ্ক শুভ্র সে , কী নিবিড় পবিত্র ।
আমার মনে একটা ভাবনা ছিল যে , লেখাপড়া-জানা বড়ো মেয়ে , কী জানি কেমন করিয়া তাহার মন পাইতে হইবে । কিন্তু, অতি অল্পদিনেই দেখিলাম , মনের রাস্তার সঙ্গে বইয়ের দোকানের রাস্তার কোনো জায়গায় কোনো কাটাকাটি নাই । কবে যে তাহার সাদা মনটির উপরে একটু রঙ ধরিল , চোখে একটু ঘোর লাগিল, কবে যে তাহার সমস্ত শরীর মন যেন উৎসুক হইয়া উঠিল, তাহা ঠিক করিয়া বলিতে পারিব না।..এ তো গেল এক দিকের কথা । আবার অন্য দিকও আছে , সেটা বিস্তারিত বলিবার সময় আসিয়াছে ।
রাজসংসারে আমার শ্বশুরের চাকরি । ব্যাঙ্কে যে তাঁহার কত টাকা জমিল সে সম্বন্ধে জনশ্রুতি নানাপ্রকার অঙ্কপাত করিয়াছে , কিন্তু কোনো অঙ্কটাই লাখের নীচে নামে নাই । ইহার ফল হইয়াছিল এই যে , তাহার পিতার দর যেমন-যেমন বাড়িল হৈমর আদরও তেমনি বাড়িতে থাকিল । আমাদের ঘরের কাজকর্ম রীতিপদ্ধতি শিখিয়া লইবার জন্য সে ব্যগ্র , কিন্তু মা তাহাকে অত্যন্ত স্নেহে কিছুতেই হাত দিতে দিলেন না । এমন-কি , হৈমর সঙ্গে পাহাড় হইতে যে দাসী আসিয়াছিল যদিও তাহাকে নিজেদের ঘরে ঢুকিতে দিতেন না তবু তাহার জাত সম্বন্ধে প্রশ্নমাত্র করিলেন না , পাছে বিশ্রী একটা উত্তর শুনিতে হয় ।
এমনিভাবেই দিন চলিয়া যাইতে পরিত , কিন্তু হঠাৎ একদিন বাবার মুখ ঘোর অন্ধকার দেখা গেল । ব্যাপারখানা এই — আমার বিবাহে আমার শ্বশুর পনেরো হাজার টাকা নগদ এবং পাঁচ হাজার টাকার গহনা দিয়াছিলেন । বাবা তাঁহার এক দালাল বন্ধুর কাছে খবর পাইয়াছেন , ইহার মধ্যে পনেরো হাজার টাকাই ধার করিয়া সংগ্রহ করিতে হইয়াছে, তাহার সুদও নিতান্ত সামান্য নহে । লাখ টাকার গুজব তো একেবারেই ফাঁকি ।
যদিও আমার শ্বশুরের সম্পত্তির পরিমাণ সম্বন্ধে আমার বাবার সঙ্গে তাঁহার কোনোদিন কোনো আলোচনাই হয় নাই , তবু বাবা জানি না, কোন্ যুক্তিতে ঠিক করিলেন , তাঁহার বেহাই তাঁহাকে ইচ্ছাপূর্বক প্রবঞ্চনা করিয়াছেন।
তার পরে , বাবার একটা ধারণা ছিল , আমার শ্বশুর রাজার প্রধান মন্ত্রী-গোছের একটা-কিছু । খবর লইয়া জানিলেন , তিনি সেখানকার শিক্ষাবিভাগের অধ্যক্ষ। বাবা বলিলেন , অর্থাৎ ইস্কুলের হেড্ মাস্টার — সংসারে ভদ্র পদ যতগুলো আছে তাহার মধ্যে সব চেয়ে ওঁচা। বাবার বড়ো আশা ছিল , শ্বশুর আজ বাদে কাল যখন কাজে অবসর লইবেন তখন আমিই রাজমন্ত্রী হইব।
এমন সময়ে রাস-উপলক্ষে দেশের কুটুম্বরা আমাদের কলিকাতার বাড়িতে আসিয়া জমা হইলেন। কন্যাকে দেখিয়া তাঁহাদের মধ্যে একটা কানাকানি পড়িয়া গেল । কানাকানি ক্রমে অস্ফুট হইতে স্ফুট হইয়া উঠিল। দূর সম্পর্কের কোনো-এক দিদিমা বলিয়া উঠিলেন, “পোড়া কপাল আমার! নাতবউ যে বয়সে আমাকেও হার মানাইল। ”
আর-এক দিদিমাশ্রেণীয়া বলিলেন, “ আমাদেরই যদি হার না মানাইবে তবে অপু বাহির হইতে বউ আনিতে যাইবে কেন। ”…….আমার মা খুব জোরের সঙ্গে বলিয়া উঠিলেন, “ ওমা , সে কি কথা । বউমার বয়স সবে এগারো বৈ তো নয় , এই আসছে ফাল্গুনে বারোয় পা দিবে । খোট্টার দেশে ডালরুটি খাইয়া মানুষ, তাই অমন বাড়ন্ত হইয়া উঠিয়াছে। ”
দিদিমারা বলিলেন, “ বাছা , এখনো চোখে এত কম তো দেখি না। কন্যাপক্ষ নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে বয়স ভাঁড়াইয়াছে।”……মা বলিলেন, “ আমরা যে কুষ্ঠি দেখিলাম। ”………কথাটা সত্য। কিন্তু কোষ্ঠীতেই প্রমাণ আছে , মেয়ের বয়স সতেরো।
প্রবীণারা বলিলেন , “ কুষ্ঠিতে কি আর ফাঁকি চলে না। ”…….এই লইয়া ঘোর তর্ক , এমন-কি বিবাদ হইয়া গেল।……….এমন সময়ে সেখানে হৈম আসিয়া উপস্থিত । কোনো-এক দিদিমা জিজ্ঞাসা করিলেন , “ নাতবউ , তোমার বয়স কত বলো তো। ”
মা তাহাকে চোখ টিপিয়া ইশারা করিলেন । হৈম তাহার অর্থ বুঝিল না ; বলিল , “ সতেরো। ”……..মা ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “ তুমি জান না। ”……..হৈম কহিল , “ আমি জানি , আমার বয়স সতেরো। ”………….দিদিমারা পরস্পর গা-টেপাটেপি করিলেন।
বধূর নির্বুদ্ধিতায় রাগিয়া উঠিয়া মা বলিলেন, “ তুমি তো সব জান! তোমার বাবা যে বলিলেন , তোমার বয়স এগারো । ”………হৈম চমকিয়া কহিল, “ বাবা বলিয়াছেন ? কখনো না। ”…..মা কহিলেন , “ অবাক করিল । বেহাই আমার সামনে নিজের মুখে বলিলেন , আর মেয়ে বলে ‘ কখনো না ‘ ! ” এই বলিয়া আর-একবার চোখ টিপিলেন।
এবার হৈম ইশারার মানে বুঝিল; স্বর আরো দৃঢ় করিয়া বলিল, “ বাবা এমন কথা কখনোই বলিতে পারেন না। ”……..মা গলা চড়াইয়া বলিলেন, “ তুই আমাকে মিথ্যাবাদী বলিতে চাস? ”…….হৈম বলিল, “ আমার বাবা তো কখনোই মিথ্যা বলেন না। ”
ইহার পরে মা যতই গালি দিতে লাগিলেন কথাটার কালি ততই গড়াইয়া ছড়াইয়া চারি দিকে লেপিয়া গেল।…….মা রাগ করিয়া বাবার কাছে তাঁহার বধূর মূঢ়তা এবং ততোধিক একগুঁয়েমির কথা বলিয়া দিলেন। বাবা হৈমকে ডাকিয়া বলিলেন, “ আইবড় মেয়ের মেয়ের বয়স সতেরো, এটা কি খুব একটা গৌরবের কথা, তাই ঢাক পিটিয়া বেড়াইতে হইবে? আমাদের এখানে এ-সব চলিবে না, বলিয়া রাখিতেছি। ”
হায় রে, তাঁহার বউমার প্রতি বাবার সেই মধুমাখা পঞ্চম স্বর আজ একেবারে এমন বাজখাঁই খাদে নাবিল কেমন করিয়া।………হৈম ব্যথিত হইয়া প্রশ্ন করিল, “ কেহ যদি বয়স জিজ্ঞাসা করে কী বলিব। ”
বাবা বলিলেন, “ মিথ্যা বলিবার দরকার নাই , তুমি বলিয়ো, ‘ আমি জানি না; আমার শাশুড়ি জানেন ‘ । ”……..কেমন করিয়া মিথ্যা বলিতে না হয় সেই উপদেশ শুনিয়া হৈম এমন ভাবে চুপ করিয়া রহিল যে বাবা বুঝিলেন, তাঁহার সদুপদেশটা একেবারে বাজে খরচ হইল।
হৈমর দুর্গতিতে দুঃখ করিব কী, তাহার কাছে আমার মাথা হেঁট হইয়া গেল। সেদিন দেখিলাম, শরৎপ্রভাতের আকাশের মতো তাহার চোখের সেই সরল উদার দৃষ্টি একটা কী সংশয়ে ম্লান হইয়া গেছে । ভীত হরিণীর মতো সে আমার মুখের দিকে চাহিল। ভাবিল, ‘ আমি ইহাদিগকে চিনি না। ‘
সেদিন একখানা শৌখিন-বাঁধাই-করা ইংরাজি কবিতার বই তাহার জন্য কিনিয়া আনিয়াছিলাম। বইখানি সে হাতে করিয়া লইল এবং আস্তে আস্তে কোলের উপর রাখিয়া দিল, একবার খুলিয়া দেখিল না।
আমি তাহার হাতখানি তুলিয়া ধরিয়া বলিলাম, “ হৈম , আমার উপর রাগ করিয়ো না। আমি তোমার সত্যে কখনো আঘাত করিব না। আমি যে তোমার সত্যের বাঁধনে বাঁধা। ”…..হৈম কিছু না বলিয়া একটুখানি হাসিল। সে হাসি বিধাতা যাহাকে দিয়াছেন তাহার কোনো কথা বলিবার দরকার নাই।
পিতার আর্থিক উন্নতির পর হইতে দেবতার অনুগ্রহকে স্থায়ী করিবার জন্য নূতন উৎসাহে আমাদের বাড়িতে পূজার্চনা চলিতেছে। এ-পর্যন্ত সে-সমস্ত ক্রিয়াকর্মে বাড়ির বধূকে ডাক পড়ে নাই। নূতন বধূর প্রতি একদিন পূজা সাজাইবার আদেশ হইল ; সে বলিল, “ মা , বলিয়া দাও কী করিতে হইবে। ”
ইহাতে কাহারো মাথায় আকাশ ভাঙিয়া পড়িবার কথা নয়, কারণ সকলেরই জানা ছিল মাতৃহীন প্রবাসে কন্যা মানুষ । কিন্তু, কেবলমাত্র হৈমকে লজ্জিত করাই এই আদেশের হেতু। সকলেই গালে হাত দিয়া বলিল , “ ওমা , এ কী কাণ্ড। এ কোন্ নাস্তিকের ঘরের মেয়ে । এবার এ সংসার হইতে লক্ষ্মী ছাড়িল, আর দেরি নাই। ”
এই উপলক্ষে হৈমর বাপের উদ্দেশে যাহা-না-বলিবার তাহা বলা হইল। যখন হইতে কটু কথার হাওয়া দিয়াছে হৈম একেবারে চুপ করিয়া সমস্ত সহ্য করিয়াছে। এক দিনের জন্য কাহারো সামনে সে চোখের জলও ফেলে নাই। আজ তাহার বড়ো বড়ো দুই চোখ ভাসাইয়া দিয়া জল পড়িতে লাগিল। সে উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, “ আপনারা জানেন- সে দেশে আমার বাবাকে সকলে ঋষি বলে ? ”
ঋষি বলে! ভরি একটা হাসি পড়িয়া গেল। ইহার পরে তাহার পিতার উল্লেখ করিতে হইলে প্রায়ই বলা হইত তোমার ঋষিবাবা! এই মেয়েটির সকলের চেয়ে দরদের জায়গাটি যে কোথায় তাহা আমাদের সংসার বুঝিয়া লইয়াছিল।
বস্তুত , আমার শ্বশুর ব্রাক্ষ্মও নন, খৃস্টানও নন , হয়তো বা নাস্তিকও না হইবেন। দেবার্চনার কথা কোনোদিন তিনি চিন্তাও করেন নাই। মেয়েকে তিনি অনেক পড়াইয়াছেন-শুনাইয়াছেন , কিন্তু কোনোদিনের জন্য দেবতা সম্বন্ধে তিনি তাহাকে কোনো উপদেশ দেন নাই । বনমালীবাবু এ লইয়া তাঁহাকে একবার প্রশ্ন করিয়াছিলেন। তিনি বলিয়াছিলেন, “ আমি যাহা বুঝি না তাহা শিখাইতে গেলে কেবল কপটতা শেখানো হইবে। ”
অন্তঃপুরে হৈমর একটি প্রকৃত ভক্ত ছিল, সে আমার ছোটো বোন নারানী। বউদিদিকে ভালোবাসে বলিয়া তাহাকে অনেক গঞ্জনা সহিতে হইয়াছিল। সংসারযাত্রায় হৈমর সমস্ত অপমানের পালা আমি তাহার কাছেই শুনিতে পাইতাম। এক দিনের জন্যও আমি হৈমর কাছে শুনি নাই। এ-সব কথা সংকোচে সে মুখে আনিতে পারিত না। সে সংকোচ নিজের জন্য নহে।
হৈম তাহার বাপের কাছ হইতে যত চিঠি পাইত সমস্ত আমাকে পড়িতে দিত। চিঠিগুলি ছোটো কিন্তু রসে ভরা। সেও বাপকে যত চিঠি লিখিত সমস্ত আমাকে দেখাইত। বাপের সঙ্গে তাহার সম্বন্ধটি আমার সঙ্গে ভাগ করিয়া না লইলে তাহার দাম্পত্য যে পূর্ণ হইতে পারিত না। তাহার চিঠিতে শ্বশুরবাড়ি সম্বন্ধে কোনো নালিশের ইশারাটুকুও ছিল না। থাকিলে বিপদ ঘটিতে পারিত। নারানীর কাছে শুনিয়াছি , শ্বশুরবাড়ির কথা কী লেখে জানিবার জন্য মাঝে মাঝে তাহার চিঠি খোলা হইত।
চিঠির মধ্যে অপরাধের কোনো প্রমাণ না পাইয়া উপরওয়ালাদের মন যে শান্ত হইয়াছিল তাহা নহে। বোধ করি তাহাতে তাঁহারা আশাভঙ্গের দুঃখই পাইয়াছিলেন । বিষম বিরক্ত হইয়া তাঁহারা বলিতে লাগিলেন, “ এত ঘন ঘন চিঠিই বা কিসের জন্য। বাপই যেন সব , আমরা কি কেহ নই। ” এই লইয়া অনেক অপ্রিয় কথা চলিতে লাগিল। আমি ক্ষুব্ধ হইয়া হৈমকে বলিলাম , “ তোমার বাবার চিঠি আর-কাহাকেও না দিয়া আমাকেই দিয়ো। কলেজে যাইবার সময় আমি পোস্ট করিয়া দিব। ”
হৈম বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ কেন ? ”…….আমি লজ্জায় তাহার উত্তর দিলাম না।………বাড়িতে এখন সকলে বলিতে আরম্ভ করিল, “ এইবার অপুর মাথা খাওয়া হইল। বি.এ. ডিগ্রি শিকায় তোলা রহিল। ছেলেরই বা দোষ কী। ”
সে তো বটেই । দোষ সমস্তই হৈমর। তাহার দোষ যে তাহার বয়স সতেরো ; তাহার দোষ যে আমি তাহাকে ভালোবাসি ; তাহার দোষ যে বিধাতার এই বিধি , তাই আমার হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সমস্ত আকাশ আজ বাঁশি বাজাইতেছে।
বি.এ.ডিগ্রি অকাতরচিত্তে আমি চুলায় দিতে পারিতাম কিন্তু হৈমর কল্যাণে পণ করিলাম, পাস করিবই এবং ভালো করিয়াই পাস করিব। এ পণ রক্ষা করা আমার সে অবস্থায় যে সম্ভবপর বোধ হইয়াছিল তাহার দুইটি কারণ ছিল — এক তো হৈমর ভালোবাসার মধ্যে এমন একটি আকাশের বিস্তার ছিল যে , সংকীর্ণ আসক্তির মধ্যে সে মনকে জড়াইয়া রাখিত না, সেই ভালোবাসার চারি দিকে ভারি একটি স্বাস্থ্যকর হাওয়া বহিত। দ্বিতীয় , পরীক্ষার জন্য যে বইগুলি পড়ার প্রয়োজন তাহা হৈমর সঙ্গে একত্রে মিলিয়া পড়া অসম্ভব ছিল না।
পরীক্ষা পাসের উদ্যোগে কোমর বাঁধিয়া লাগিলাম। একদিন রবিবার মধ্যাহ্নে বাহিরের ঘরে বসিয়া মার্টিনোর চরিত্রতত্ত্ব বইখানার বিশেষ বিশেষ লাইনের মধ্যপথগুলা ফাড়িয়া ফেলিয়া নীল পেন্সিলের লাঙল চালাইতেছিলাম, এমন সময় বাহিরের দিকে হঠাৎ আমার চোখ পড়িল।
হৈমন্তী –পর্ব -২- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩
আনারসের শরবত রেসিপি
আনারসের শরবত রেসিপি
(রেসিপি বাই রাতুল হায়দার রাহাত)
উপকরণঃ
আনারস কুচি।
পুদিনা-পাতা কুচি।
কাঁচামরিচ।
বিট লবণ।
লবণ (সামান্য)।
চিনি (ইচ্ছা)।
পানি।
এই সবগুলো উপকরণই নিতে হবে পছন্দ ও স্বাদ অনুযায়ী।
প্রস্তুত প্রনালীঃ
আনারসের খোসা ভালো করে ছাড়িয়ে, গায়ের চোখের মতো অংশ ভালো করে তুলে ফেলুন। এবার কুচি করে নিন।
এখন আনারসের সঙ্গে সব উপকরণ দিয়ে ব্লেন্ড করুন। তারপর ছাঁকনি দিয়ে ভালো করে ছেঁকে নিন।
গ্লাসে ঢেলে বরফ কুচি দিয়ে আনারসের টুকরা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার আনারসের শরবত।
হারাম সহবাস: লজ্জা নয় জানা জরুরী
▌হারাম সহবাস: লজ্জা নয় জানা জরুরী! ▌
আমরা জানি, নিজ স্ত্রী ও অধিনস্ত দাসি ব্যতিত অন্যকারো সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া হারাম।
কিন্ত বর্তমান সময় দাসীর প্রচলন নেই অতএব এটা বর্তমানে গ্রহণযোগ্য নয় । অথচ আমরা অনেকেই জানিনা যে, এমন কিছু সময় ও পন্থা রয়েছে যে সময় ও পন্থায় নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়াও হারাম।
ইসলামে যে সময় ও পন্থায় নিজ স্ত্রীর সাথেও সহবাস করা হারাম তা নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ
❑ [এক] হায়েজ ও নেফাস অবস্থায়:
অনেক দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিরা স্ত্রীর হায়েজ অবস্থাতেও সহবাসে লিপ্ত হয়। অথচ হায়েজ অবস্থায় সহবাসে লিপ্ত হওয়া সম্পুর্ণরুপে হারাম।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ [٢:٢٢٢]
"আর তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দিন,এটা অশুচি(কষ্ট)। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী-গমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না,যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে,তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।"
[সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২]
🔳এমনিভাবে কোন মহিলার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর যে কয়েকদিন ব্লাড( রক্ত) আসে এই দিনগুলোকে নেফাস বলে এর সর্বোচ্চ মেয়াদ চল্লিশ দিন।কমের কোন নির্ধারিত মেয়াদ নেই।এই নেফাস চলাকালীন সময়গুলোতেও স্ত্রী সহবাস করা হারাম। অথচ অনেকেই না জানার কারণে এই সময়ে সহবাসে লিপ্ত হয় যা হারাম।
🔳অবশ্য, প্রয়োজনে হায়েয ও নেফাস অবস্থায় সহবাসে লিপ্ত না হয়ে স্ত্রীর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ বাদ দিয়ে বাকী অঙ্গ দিয়ে উপভোগ করা জায়েয আছে। কিন্তু নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত অংশে উপভোগ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম।
❑ [দুই] রোযা অবস্থায়:
রমযানের রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম। কেননা রোযা হচ্ছে, "আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে ফজর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও যৌনসঙ্গম হতে বিরত থাকার নাম। কেউ যদি রোযা অবস্থায় সহবাস করে তাহলে সে অনেক বড় পাপে লিপ্ত হবে, তার রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে অনেক বড় কাফফারা দিতে হবে।"
[ফাতহুল বারী, ৪/১৩২]
তবে, রমযানে রাতের বেলা অর্থাৎ- ইফতার থেকে নিয়ে সাহরি পর্যন্ত সহবাস করা সম্পুর্ণরুপে জায়েজ।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, اُحِلَّ لَکُمۡ لَیۡلَۃَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآئِکُمۡ ؕ"আর সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে।" [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
আর নফল রোযা অবস্থায় সহবাস করে ফেললে কোন কাফফারা নেই। তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কাজেই,স্বামীর উচিত, ধৈর্যধারন করা, রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
❑ [তিন] স্ত্রীর পায়ুপথে/ পিছনের রাস্তায়(মলদ্বারে) সহবাস:
অনেক বিকৃত মানসিকতার মানুষ হালাল প্রন্থা ছেড়ে স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাসে লিপ্ত হয়। ইদানিং পশ্চিমা ইতরশ্রেনীর মানুষদের কালচার মুসলিম সমাজেও ছয়লাভ হচ্ছে। অথচ এটি একটি অতিব নোংরা, নিকৃষ্ট কাজ। এই কাজটি তো হারামই, এমনকি কাজটি নবীজির ভাষায় 'কুফুরীর নামান্তর'।
রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ.
"যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতীর সাথে মিলিত হয় কিংবা কোন মহিলার পায়ুপথে সঙ্গম করে অথবা কোন গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে’।"
[তিরমিযী, হাদীস নং-১৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৯০]
অপর হাদিসে রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
لَا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى امْرَأَةً فِي الدُّبُرِ
"যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না।" [তিরমিযি, হাদিস নং-১১৬৫]
আরেক হাদিসে রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَ
"যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে নিতম্বে সহবাস করে সে লা’নত প্রাপ্ত।" [আবু দাউদ, হাদিস-২১৬২]
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে পবিত্র তথা হালাল প্রন্থা অবলম্বন করার তাওফ্বীক দান করুন, দ্বীন ইসলাম বুঝে-শুনে সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন।
লিচুর ফলন বৃদ্ধির আধুনিক পদ্ধতি
লিচুর ফলন বৃদ্ধির আধুনিক পদ্ধতি
বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় কমবেশি লিচুর চাষ হলেও বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহে বেশি পরিমাণে উৎকৃষ্টমানের লিচু উৎপন্ন হয়। বর্তমানে পাবনায় প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি থেকে ২৪ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। লিচুর জন্য আর এক বিখ্যাত জেলা হলো দিনাজপুর। দিনাজপুরে ২০১২ সালে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এখানে উৎপাদিত লিচুর মধ্যে চায়না-৩, বেদানা, বোম্বাই ও মাদরাজি উল্লেখযোগ্য।
পুষ্টিগুণ
লিচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহসহ নানা খনিজ উপাদান। লিচুর অনেক ঔষধি গুণও আছে। এর পাতার রস বোলতা, বিছা ইত্যাদি কামড়ালে ব্যথা উপশমের কাজে ব্যবহার করা হয়। কাশি, পেটব্যথা, টিউমার ও গ্লান্ডের বৃদ্ধি দমনে লিচু বেশ কার্যকর। চর্মরোগের ব্যথায় এর বীজ ব্যবহার করা হয়। পানিতে সিদ্ধ লিচুর শিকড়, বাকল ও ফুল গলার ঘা সারায়। কচি লিচু শিশুদের বসন্ত রোগ ও বীজ অমস্ন ও স্নায়বিক যন্ত্রণায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাকল ও শিকড়ের কাঁথ গরম পানিসহ কুলি করলে গলায় কষ্টের উপশম হয়।
জাত
জাতের ওপর লিচুর ফলন ও স্বাদ বহুলাংশে নির্ভর করে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি লিচু-১, বারি লিচু-২, বারি লিচু-৩ নামে তিনটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি লিচু-১ একটি উচ্চফলনশীল লিচু । এর ফল ডিম্বাকার ও লাল। প্রতিটি ফলের ওজন ১৮ থেকে ২০ গ্রাম। বারি লিচু-২ উচ্চফলনশীল নাবি জাত। মধ্য মাঘে ফুল ধরে এবং আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে পাকে। জাতটি সারা দেশে চাষযোগ্য। বারি লিচু-৩ মধ্য মৌসুমি জাত। প্রতিটি ফলের ওজন ১৮ থেকে ২০ গ্রাম। ফলের শাঁস রসাল ও মিষ্টি। চায়না-১ নাবি জাতের লিচু। এ জাতের লিচুর শাঁস কিছুটা কম মিষ্টি। গাছের আকার মাঝারি। গাছে থোকা থোকা ফল ধরে। বীজ খুবই ছোট। শাঁস পুরু ও মিষ্টি। জুনের প্রথম সপ্তাহে ফল পাকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে লিচু বেশি চাষ হয়। ফল মোটামুটি গোলাকার এবং গড় ওজন প্রায় ২৫ গ্রাম। বীজ খুব ছোট। শাঁস রসাল ও অত্যন্ত মিষ্টি। এলাচি একটি নাবি জাতের লিচু। এর ফলের আকার ছোট, ওজন ১২ থেকে ১৫ গ্রাম। লে বোম্বাই জাতের বেশি চাষ হয়। ফল মাঝারি আকারের এবং ওজন ১০ থেকে ১৫ গ্রাম। লিচু শাঁস রসাল এবং মৃদু টকস্বাদযুক্ত। মোজাফফরপুরী জাতের লিচু ডিম্বাকার, প্রতিটি ফলের ওজন ২০ গ্রাম। পাকা ফলের রঙ গোলাপি। বেদানাজাতের লিচু খুব সুস্বাদু ও মিষ্টি। এ জাতের লিচু পাওয়া যায় জুন-জুলাইয়ে।
পরিচর্যা
সঠিক সময়ে পরিচর্যা করলে লিচুগাছের যেমন সুষম বৃদ্ধি হয়, তেমনি ফলনও বেশি পাওয়া যায়। লিচুগাছের পরিচর্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো- আগাছা দমন, পানি সেচ, ডাল ছাঁটাই, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, রোগ-পোকা ও বাদুড় দমন ইত্যাদি।
আগাছা দমন
ভালো ফলনের জন্য লিচু বাগানে অন্তত বছরে দুইবার অগভীর চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
জিরা পানি রেসিপি ফেইসবুক থেকে নেওয়া
জিরা পানি রেসিপি-
উপকরণ:
তেঁতুল- ১০০ গ্রাম,
আঁখের গুড়- আধা কাপ,
চিনি- ২ টেবিল চামচ,
লবণ- স্বাদ মতো,
লেবুর রস- ২ টেবিল চামচ,
টালা জিরা গুড়া- ১ টেবিল চামচ,
পানি- পরিমাণ মতো
প্রণালি:
প্রথমে তেঁতুল পানি দিয়ে গলিয়ে নিতে হবে। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন তেতুল পানির এই মিশ্রণ। এক কাপ হবে এই মিশ্রণ।
এরপর আরেকটি বাটিতে গুড় নিয়ে তাতে এক কাপ পানি দিন।
একে একে গুড়, চিনি, লবণ, লেবুর রস নিয়ে একসাথে ভালোভাবে গুলিয়ে নিন এবং ১ লিটার পানি ধরে এমন একটি জগে এই মিশ্রণ ছেঁকে ঢেলে নিন।
এবার আগেই ছেঁকে রাখা তেঁতুলের মিশ্রণ দিয়ে দিন এই জগে এবং টেলে রাখা জিরা গুড়া দিয়ে দিন।
এখন জগ ভর্তি করে ঠান্ডা পানি দিন এবং কিছুক্ষণ ফ্রিজে রাখুন। তৈরি হয়ে গেল মজার পানীয় জিরা পানি।
টিপস—
জিরায় রয়েছে আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, জিঙ্ক ও পটাশিয়াম।
নিয়মিত জিরা খেলে তা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হজমের সমস্যা দূর, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও রক্তস্বল্পতা দূর করার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
এক অনন্য রাবিন্দ্রনাথ ঠাকুর
এক অন্য রবি, যে রবি বিপ্লবী...
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সাথে ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের কথা শোনা যায়। ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গের সময়ে একটু বেশিই শিরোনামে আসে এই ঠাকুরবাড়ি।
অবন ঠাকুরের লেখা থেকে জানা যায় – ‘রবিকাকা বললেন রাখীবন্ধন উৎসব করতে হবে। ঠিক হল সকালবেলা গঙ্গায় স্নান করে সবার হাতে রাখী পরানো হবে। সামনেই জগন্নাথ ঘাট, সেখানেই যাবো। রবিকাকা বললেন সবাই হেঁটেই যাবো, গাড়িঘোড়া নয়। এদিকে সকালে রাস্তার দু ধারে বাড়ির ছাদ থেকে আরম্ভ করে ফুটপাত অবধি লোক দাঁড়িয়ে গেছে, মেয়েরা ফুল ছড়াচ্ছে, শাঁখ বাজাচ্ছে। দিনু গান গাইছে –
বাংলার মাটি, বাংলার জল...
স্নান সারা হল। সাথে ছিল একগাদা রাখী। হাতের কাছে ছেলে মেয়ে যারা ছিল কেউ বাদ পরল না, সবাইকে পরানো হল। পাথুরেঘাটা দিয়ে আসছি, দেখি বীরু মল্লিকের আস্তাবলে কতোগুলো সহিস ঘোড়া মলছে। হঠাৎ রবিকাকা ধা করে বেকে গিয়ে ওদের হাতে রাখী পরিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। ওরা সকলেই মুসলমান। ওরা তো হতবাক’।
আসলেই বাঙালী বিপ্লবীদের আনাগোনা ছিল ঠাকুরবাড়িতে। তবে খুব কম লোকেই জানতেন এদের কথা। এদের চিনতেন এদের জানতেন সুরেন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথ। এই দুই ভাইএর কাছে আসতেন বিপ্লবীরা। বারীন ঘোষ এসেছেন, উল্লাস্কর দত্ত এসেছেন, রাসবিহারী ও অরবিন্দ ঘোষ এসেছেন। আন্দামানে দ্বীপান্তরিত হয়েছিলেন যারা তাদের বেশিরভাগেরই যোগাযোগ ছিল এই ঠাকুর বাড়ির সাথে। অনুশীলন সমিতির আদি পর্বের বিশিষ্ট কর্মী বিপ্লবী অবিনাশচন্দ্র নিজে ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে মাসে মাসে টাকা নিয়ে আসতেন। প্রথমদিকে রিভালভার কেনার টাকাও নিয়ে আসতেন। পরবর্তীকালে সোমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে যোগাযোগের সূত্রে কমিউনিস্ট নেতা মুজফর আহমেদ, আব্দুল হালিম, নলিনি গুপ্ত প্রমুখ প্রায়শই যেতেন ঠাকুরবাড়িতে এবং শোনা যায় ঠাকুরবাড়ির একতলায় একটা গোপন ঘরে রীতিমত তারা সকলেই গুপ্ত মিটিঙে যোগ দিতেন। উপরিউক্ত সমস্ত বিপ্লবী এবং কমিউনিস্টদের আনাগোনার কথা সমস্ত কিছুই জানতেন রবিকাকা এবং অনেক সময় তার সাথেও এরা সকলেই বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করত।
অগ্নিযুগের এই সশস্ত্র বিপ্লবীদের সম্পর্কে রবি ঠাকুরের মনোভাবের দুটি দিক বারবার উঠে এসেছে – একদিকে তিনি তাদের অনুসৃত হিংসাত্মক পন্থার অভিভাবক সুলভ সমালোচক ছিলেন আবার তার চেয়েও বেশি তার লেখায় ও কাজকর্মে অতি স্পষ্টভাবেই বারংবার পরিস্ফুট হয়েছে ঐ দুঃসাহসী তরুণদের প্রতি তার গভীর টান এবং সেটাও সেই একই অভিভাবক সুলভ। তিনি লিখছেন – ‘ইহারা ক্ষুদ্র বিষয় বুদ্ধিকে জলাঞ্জলি দিয়া প্রবল নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবার জন্য সমস্ত জীবন উৎসর্গ করিতে প্রস্তুত হইয়াছে। এই পথের প্রান্তে কেবল যে গভর্নমেন্ট এর চাকরি বা রাজ সম্মানের আশা নাই তাহা নহে। ঘরের বিজ্ঞ অভিভাবকদের সঙ্গেও বিরোধে এ রাস্তা কণ্টকাকীর্ণ। ইহারা কংগ্রেসের দরখাস্ত পত্র বিছাইয়া আপন পথ সুগম করিতে চায় নাই’।
১৯০৭-এর আগস্টে ‘বন্দেমাতরম’ ইংরেজি দৈনিকে বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ একটি রাজদ্রোহমূলক লেখা লিখে পুলিসের সমন পান এবং পরে জামিনে আদালত থেকে মুক্ত হন। সাথে সাথেই রবীন্দ্রনাথ অরবিন্দকে উদ্দেশ্য করে লিখলেন – ‘দেবতার দ্বীপ হস্তে যে আসিল ভবে, সেই রুদ্র দূতে বল কোন রাজা কবে পারে শাস্তি দিতে’।
একটি পত্রের এক জায়গায় তিনি লিখছেন – ‘অরবিন্দকে জেলে দিলে ও কাগজের কি দশা হবে জানিনে। বোধ হয় জেল থেকে সে নিষ্কৃতি পাবে না। আমাদের দেশে জেল খাটাই মনুস্যত্বের পরিচয় স্বরূপ হয়ে উঠেছে’।
১৯০৮ সালে খুলনা সেনহাটি জাতীয় স্কুলের শিক্ষক হীরালাল সেন ‘হুঙ্কার’ নামে একটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেন। বইটি সরকার দ্বারা বাজেয়াপ্ত হয় এবং ব্রিটিশরাজ বিরোধী কবিতা লেখার জন্য লেখকের ছ মাস কারাদণ্ড হয়। এদিকে মুস্কিল হল বইটি উৎসর্গ করা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। সেই সূত্রে কবিগুরু সমন পেলেন খুলনার মাজিস্ট্রেট এর কাছ থেকে। সমনের বিষয়বস্তু ছিল সরকার পক্ষে তাকে সাক্ষী দিতে হবে। কবিগুরু গেলেন এবং গিয়ে আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন – ‘স্বাধীনতাকাঙ্খী তরুনের পক্ষে কবিতা বা গান লেখা আদৌ অস্বাভাবিক নয়। ওকালত তার পেশা নয়। সুতরাং কবিতা বা গান কি পরিমান উত্তেজক হলে সেটা আইনত দণ্ডনীয় হবে সেটা তার জানা নেই’। এটা শুনে মাজিস্ট্রেটও একদম চুপ। এদিকে এই হীরালাল সেনকেই ১৯১০ সালে কবিগুরু শিক্ষক পদে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন।
ব্রিটিশ সরকারের মনোভাব কোনদিনই কবিগুরু সম্বন্ধে ভালো ছিলনা। ১৯০৯-তে সরকারের গোপন দলিলে লেখা নোট – Babu Rabindranath Tagore, as a friend of Arabinda Ghose, was the aristrocratic champion of the Party’. ঐ বছরই তাদের ৬ নং সার্কুলারে পুলিসের বড় কর্তা এফ সি ডেলি সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন – To keep a close watch on the movements and doings of the more public and prominent persons connected with the political agitation. The list of the persons includes – Suren Banerjee, Motilal Ghose,Rabindranth Tagore…
এ প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে প্রভাত মুখোপাধ্যায় মজা করে তার এক রচনায় লিখছেন – ‘সরকারের দৃষ্টিতে কবি নিজেও একজন দাগি ছিলেন। শুনেছি কলকাতায় থাকাকালিন যখন ঘোড়ার গাড়ীতে চেপে রাস্তা দিয়ে যেতেন সেই সময় জোড়াসাঁকো থানা থেকে পুলিশ হেকে জানিয়ে দিত অমুক নং আসামী যাচ্ছে’।
১৯১৩-তে নোবেল পাওয়ার পরে পুলিশ মনে হয় কিছুটা সদয় হয় কবিগুরুর প্রতি, কারণ তখন থেকে তারা তাদের গোপন রিপোর্টে রবীন্দ্রনাথকে উল্লেখ করত late suspect হিসেবে অর্থাৎ আধা সন্দেহভাজন!
১৯২৪-এর অক্টোবরে কবিগুরু তখন দক্ষিন আমেরিকা সফরে। কলকাতা থেকে দিনু ঠাকুরের চিঠির মাধ্যমে জানতে পারলেন সরকার এক জঘন্য অর্ডিন্যান্স জারী করে বহু তরুনকে আটক করেছে। খবরটি পড়া মাত্রই রবি ঠাকুর লিখলেন –
ঘরের খবর পাইনে কিছুই, গুজব শুনি না কি
কুলিশপাণি পুলিশ সেথায় লাগায় হাঁকাহাঁকি।
শুনচি না কি বাংলা দেশের গান হাসি সব ঠেলে'
কুলুপ দিয়ে করচে আটক আলিপুরের জেলে।
মৃত্যুকে যে এড়িয়ে চলে মৃত্যু তারেই টানে
মৃত্যু যারা বুক পেতে লয় বাঁচতে তারাই জানে।
পরবর্তীকালে এই কবিতা সম্পর্কে তৎকালীন গোয়েন্দা বড় কর্তা স্যার ডেভিড পেত্রি তার সরকারী নোট এ লিখেছিলেন – The poem was written last December at Buenos Ayres. It alludes to the action taken under the Bengal ordinance, and is one of the latest indications we have of Tagore’s political view.
দেশে তখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম খুব ব্যপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ১৯২৯ সাল। লাহোর জেলে বিপ্লবী যতীন দাস অনশন শুরু করেন। এই অনশনের খবর শুনে কবিগুরু খুবই বিচলিত ছিলেন, তিনি তখন শান্তিনিকেতনে। ‘তপতী’ নাটক লিখে তার মহড়া দিচ্ছিলেন রোজ সন্ধ্যায়। শেষ পর্যন্ত ৬৩ দিন অনশন শেষে যতীন দাসের মৃত্যু হল। কবিগুরু মানসিকভাবে কিছুটা বিহ্বল হলেন। সেদিন সন্ধ্যায় আশ্রমবাসীদের নিয়ে ‘তপতী’র মহড়ায় কবিগুরু নিজে বারংবার পাঠের খেই হারাতে লাগলেন, শেষ পর্যন্ত সেদিন মহড়া বন্ধ করে দিলেন আর সেই রাতেই কবি লিখলেন – ‘সর্ব খর্ব তারে দহে তব ক্রোধ দাহ’ গানটি, যেটি পরে ‘তপতী’ নাটকে অন্তর্ভুক্ত হয়।
বিপ্লবের আঁতুড়ঘর রাশিয়ার প্রতি তার অভিনন্দন ‘রাশিয়ার চিঠি’ সহ অনান্য বহু রচনায় পরিস্ফুট হয়েছে, কবিগুরু মৃত্যুর পরে তার বন্ধু রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় লিখছেন – ‘রাশিয়ার কম্যুনিস্ট বা বলশেভিক কিছু নৃশংসতাকে কবি গর্হিত মনে করতেন, সমালোচনা করতেন কিন্তু তারা ভালো যা যা করেছে তার জন্য তাদের প্রশংসা করতেন। আমাদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তিনি অনেকবার বলেছেন – ‘আমি কম্যুনিস্ট’।’
১৯৩৩ সালে আন্দামানে বিপ্লবী বন্দীরা অনশন শুরু করে। কবিগুরু খবর পেয়েই টেলিগ্রাম করে লেখেন – বাংলাদেশ বাংলার ফুলগুলোকে শুকিয়ে যেতে দিতে পারে না। অনুরোধ তোমরা অনশন ভঙ্গ করো। পরবর্তীকালে বিপ্লবী গনেশ ঘোষ এর কাছ থেকে জানা যায় কবিগুরুর এই চিঠি জেল কতৃপক্ষ ৪৫ দিন গোপন করে রেখেছিলেন।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রবীন্দ্রনাথের সামান্য একটি ছবি বা গানের রেকর্ড রক্ষা করতে মানুষের জীবন বিপন্ন অবধি হয়েছে। এমনই একদিন জুলাই মাসের এক সন্ধ্যা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এর বন্দী শিবিরে চলছে চরম নির্যাতন। এক তরুন ছাত্রকে বেদম মারতে মারতে নিয়ে এল পাক সেনারা। ছেলেটি একটানা অনেক মার খেয়েও দরাজ গলায় গেয়ে চলেছে – আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। সুরেলা গানে গমগম করছে পুরো জেল, গান শুনে আরও জোরে আওয়াজ উঠলো জয় বাংলা। ২৩ বছরের ছেলেটি ছিল ইকবাল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখন অর্থনীতির ছাত্র।
১৯৪১-এ চূড়ান্ত অস্ত্রোপচারের মাত্র আধ ঘণ্টা আগে কবিগুরুর উৎকণ্ঠিত প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ-এর আশ্বাস – ‘রুশ রনাঙ্গনে নাৎসি বাহিনীকে কিছুটা বোধহয় ঠেকানো গেছে’। শুনে রবি ঠাকুরের শেষ কথা ছিল – ‘পারবে, ওরাই পারবে’।
বিপ্লব বা বিপ্লবীর আটপৌরে সংজ্ঞা অনুযায়ী তিনি কিন্তু কিছু কম ছিলেন না!
যৌবন কালের একটি সিজদা বৃদ্ধ বয়সে ৮০ বছর ইবাদতের সমান
তুমি নামাজ পড়োনি কেন?
= অসুস্থ তাই!
→তুমি কি হযরত আইয়ুব (আঃ) এর চেয়েও অসুস্থ?
তুমি নামাজ পড়োনি কেন?
= দায়িত্ব কর্মভার থাকার কারণে!
→তোমার কি হযরত সুলাইমান (আঃ) চেয়েও বড় রাজত্ব নাকি?
যে দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে নামাজ পরতে পারনি।
তুমি নামাজ পড়োনি কেন?
= স্বামীর অত্যাচারের কারনে!
→তোমার স্বামী কি বিবি আছিয়ার স্বামী ফেরআউন এর চেয়েও বেশী অত্যাচারী?
তুমি নামাজ পড়োনি কেন?
= সাংসারিক কাজকর্মের কারণে!
→তুমি কি মা ফাতেমার চেয়েও বেশী সংসারী?
নাহ! নামাজ না পরার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো অজুহাত চলবে না।
সমুদ্রে হাবুডুবু খেলেও তখন ওয়াক্ত হলে নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাস এর জন্য আমরা আল্লাহর কাছে ঋণী!
বিনা কারণে এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা করলে লক্ষ লক্ষ বছর জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। সে ক্ষেত্রে এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে কি শাস্তি হতে পারে? একবার ভাবো.......
দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৭০গুন তেজোদৃপ্ত জাহান্নামের আগুন থেকে যদি বাঁচতে চাও, নামাজে কখনো অবহেলা করোনা।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন -
আমিন 🤲🤲🤲
জীবনে সফলতার জন্য ছোটবেলা থেকেই আপনার শিশুকে এই ১৪ শিক্ষা দিন
জীবনে সফলতার জন্য ছোটবেলা থেকেই আপনার শিশুকে এই ১৪ শিক্ষা দিন
শিশুকে এমন শিক্ষা দেওয়া উচিত যা তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে এবং তার জীবনে সফলতা আনবে।
আর এজন্য কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। এ লেখায় তুলে ধরা হলো তেমন কিছু শিক্ষা-
১. টিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমানে শিশুরাও প্রচুর সময় ব্যয় করে। তবে এ সময় যেন দৈনিক এক ঘণ্টার বেশি না হয় সেজন্য শিক্ষা দিন। ভিডিও গেমস ও মোবাইল ফোনেও যেন সব মিলিয়ে দিনে এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় না করে।
২. প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি সাহিত্য বহির্ভূত বই পড়তে দিন এবং এক পাতা সারাংশ লেখা অভ্যাস করান।৩. সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য শারীরিক অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ কারণে প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট দৌড়াদৌড়ি বা এ ধরনের খেলাধুলা করতে দিন।
৪. শিশুর আদর্শ ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে সে সম্পর্কে লিখতে দিন।৫. শিশুকে প্রতি সপ্তাহের, মাসের, বাৎসরিক ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করা ও নিয়মিত তার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা শেখান। এটি তাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য তাড়া করতে শেখাবে।
৬. তাকে জনহিতকর কাজ করতে শেখান।৭. শিশুকে সঞ্চয় করতে শেখান।৮. যে কোনো দরকারে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকার বিষয়টি শিশুকে শেখানো খুবই প্রয়োজনীয়। ভবিষ্যতে সে যেন কোনো বিপদে পড়লে তাদের সহায়তা নেয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন। এছাড়া অন্য কারো বিপদে যেন সে পাশে দাঁড়ায় তাও শেখাতে হবে।
৯. যে কোনো বিষয়ে কারো কাছে উপকৃত হলে ধন্যবাদ দেওয়া শেখান। এছাড়া অন্যান্য ভদ্রতাও শেখাতে হবে।১০. শিশুর ভুল হতেই পারে। আর সে ভুলগুলোতে সে যেন হতাশ না হয় সেজন্য তাকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে হবে। ভুল মেনে নেওয়ার পাশাপাশি এক ভুল যেন বারবার না হয় সেজন্যও তাকে সতর্ক হওয়ার শিক্ষা দিন।১১. রাগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এ বিষয়টি ছোটবেলা তেকেই তাকে শেখাতে হবে। এজন্য বাবা-মায়েরও রাগ প্রকাশে সংযত হতে হবে। কারণ বাবা-মায়ের থেকে সে এ ধরনের অনেক বিষয় শেখে।
১২. আর্থিক বিষয়গুলো শিশুকে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিন। আর্থিকভাবে সফল হওয়ার উপায়গুলো তাকে জানিয়ে রাখুন। কিভাবে আর্থিক ব্যবস্থা কাজ করে তা শিশুকে শিক্ষা দিন।
১৩. শিশুর সঙ্গে মুখোমুখি আলাপে নানা বিষয় নিয়ে আসুন। এক্ষেত্রে ফোন বা অন্য কোনো মাধ্যম খুব একটা কার্যকর নয়।
১৪. সময় ব্যবহারের বিষয়টি শিশুকে শিক্ষা দিন। দৈনিক কাজের তালিকা তাকেই তৈরি করতে দিন। এটি তাকে মেনে চলার উপায় জানান।
রোজার আধুনিক কিছু মাসআলা ফেইসবুক থেকে নেওয়া
রোজার আধুনিক (৩১) #মাসআলা 📖
বিচারপতি মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উসমানী পাকিস্তানের একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি হাদীস, ইসলামী ফিকহ, তাসাউফ ও অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ।
তিনি বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতের এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক ছিলেন।
তিনি ইসলামী ফিকহ্ , হাদিস, অর্থনীতি এবং তাসাউউফ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ। তিনি বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘মাআরিফুল কোরআন’ এর রচয়িতা মুফতি শফী উসমানীর সন্তান এবং বিখ্যাত দুই ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা রফী উসমানী ও মাওলানা ওয়ালী রাজীর ভাই।
মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উসমানীর রোজার আধুনিক ৩১ মাসআলা:
১. ইনজেকশন: ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাওয়াহিরুল ফতওয়া)
২. ইনহেলার: শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ওষুধ স্প্রে করে মুখের ভেতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়, এভাবে মুখের ভেতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)
৩. এনজিওগ্রাম: হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া কেটে বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিওগ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরণের ঔষধ লাগানো থাকে তারপরও রোজা ভাঙবে না। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা)
৪. এন্ডোসকপি: চিকন একটি পাইপ যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এ নলে যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভেতর দিয়ে পানি/ওষুধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে, আর যদি কোনো ওষুধ লাগানো না থাকে তাহলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
৫. নাইট্রোগ্লিসারিন: এরোসল জাতীয় ওষধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোটা জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। ওষুধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এবং ওষুধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা থাকে। অতএব, এতে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
৬. লেপারোসকপি: শিক্ জাতীয় একটি যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভেতরের কোনো অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ওষুধ লাগানো থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে অন্যথায় রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
৭. অক্সিজেন: রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
৮. মস্তিস্ক অপারেশন: রোজা অবস্থায় মস্তিস্ক অপারেশন করে ওষুধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙবে না।
(আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
৯. রক্ত নেয়া বা দেয়া: রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না।
(আহসানুল ফতওয়া)
১০. সিস্টোসকপি: প্রসাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)
১১. প্রক্টোসকপি: পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপ বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করে না।
চিকিৎসকদের মতে ওই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে মিশে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ওই বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতওয়া শামী)
১২. কপার-টি: কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কাযা কাফফারা উভয়টিই ওয়াজিব হবে।
১৩. সিরোদকার অপারেশন: সিরোদকার অপারেশন হলো অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা। এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়। যেহেতু এতে কোনো ওষুধ বা বস্তু রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌঁছে না, তাই এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না।
১৪. ডিএন্ডসি: ডি এন্ড সি হলো আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্য ডিলেটর এর মাধ্যমে জীবত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোজা ভেঙে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে। (হেদায়া)
১৫. এমআর: এম আর হলো গর্ভ ধারণের পাঁচ থেকে আঁট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম আর সিরন্জ প্রবেশ করিয়ে জীবত কিংবা মৃত ভ্রণ নিয়ে আসা। যারপর ঋতুস্রাব পুনরায় হয়। অতএব মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা
জানা প্রয়োজন গায়রত কী? *******************
★জানা প্রয়োজন গায়রত কী? ************************** প্রিয় নবীজীর সাহাবীরা তাদের স্ত্রী'র নাম পর্যন্ত পরপুরুষকে বলতো না। এটাই গায়রত।তথা-(...
-
একটি জোঁক ২ থেকে ১৫ মিলিলিটার রক্ত শুষতে পারে। সেই সঙ্গে মুখ থেকে এক ধরনের লালা মিশিয়ে দেয় রক্তে। যাতে হিরুডিন, ক্যালিক্রেইন, ক্যালিনের ...
-
#মিনু গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : বন্যা সারা সকাল মিসেস সালমার বাসায় কাজ করে, তাকে খালাম্মা বলে ডাকে। সে মিসেস সালমার য...
-
ছাদ ঢালাইয়ের হিসাব। ও ১৫০০ বর্গ ফিট একটি ছাদ ঢালাই এর ইট, বালু, সিমেন্ট এবং রড এর পরিমান বের করার হিসাব মনেকরি ছাদের দৈর্ঘ্য = ৫০ ফিট এবং ছ...