বেগুন চাষী ভাইদের জন্য রোগ বালাই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শঃ
## বেগুন চাষের জন্য ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করা, সুষম সার ব্যবহার করা, সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করা ( গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ২ ফুট এবং সারি থেকে সারি দুরত্ব ২.৫-৩ ফুট , বেডের উচ্চতা ৬ ইঞ্চি । পানির বিষয় সবসময় সর্তক থাকবেন যাতে ক্ষেতে পানি জমে না থাকে ।
## শিডিউল স্প্রে :
১. চারা মুল জমিতে লাগানোর ৪/৫ দিন পরে কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
২. চারা রোপনের ৭ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ১ বার করে ইমিডাক্লোরোপ্রিড (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক + কার্বেন্ডিজম (1.5gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
৩.চারা লাগানোর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে হলুদ রঙের ফাঁদ শতাংশ প্রতি ১/২ টি দিবেন ।
৪.চারা লাগানোর ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বিএসএফবি-ফেরো ফাঁদ শতাংশ প্রতি ১/২ টি দিবেন ।( জিগ- জাগ পদ্ধতি মানে 'Z')
৫. চারা লাগানোর ৩০ দিনে পরে [এমামেকটিন বেনজোয়েট( 1gm/L)+থায়ামেথাক্সাম ক্লোরানট্টানিলিপ্রোল(0.5ml/L)] অথবা [সাইপারমেথ্রিন+ক্লোরপাইরিফস (1ml/L)] অথবা কারটাপ (2gm/L) অথবা সাইপারমেথ্রিন (1ml/L) অথবা ডেল্টামেথ্রিন (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক প্রতি সপ্তাহে ১ বার স্প্রে করুন ।
৬. চারা লাগানোর ৩০ দিন পর থেকে ১০/১৫ দিন পর পর ১ বার করে ইমিডাক্লোরোপ্রিড (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক + কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
৭. চারা লাগানোর ৩০ দিন পর থেকে ১২/১৫ দিন পর পর ১ বার করে [কার্বেন্ডিজম (2gm/L)+স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট(0.2gm/L)] অথবা [কার্বেন্ডিজম (2gm/L)+(বিসমার্থিওজল+কাসুগামাইসিন(2gm/L)] গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
[বি:দ্র: এভাবে স্প্রে করলে আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন, ইন শা আল্লাহ । ছত্রাকনাশক&কীটনাশক মাত্রা কোম্পানি অনুযায়ী কমবেশি হতে পারে]
##বেগুন গাছের রোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
১. চারা অবস্থায় গোড়া পচাঁ রোগ হলে কার্বেন্ডিজম (2gm/L) অথবা [ম্যানকোজেব+মেটালেক্সিল](1.5gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
২.বেগুন গাছে ক্ষুদে/তুলসি পাতা রোগের জন্য অথবা ভাইরাসজনিত মোজাইক ভাইরাসের জন্য --- ক্ষেতে ১-৫% গাছ দেখলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলুন, তারপর শোষক পোকা এদের বাহক তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন।
৩.বেগুন গাছে লাল মাকড়ের জন্য ---- ডিমসহ আক্রান্ত গাছের ডাল/পাতা কেটে ফেলুন , জৈব সার পরিমিত দিবেন , এবং মাকড়নাশক এবামেকটিন(1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক এবং সালফারযুক্ত মাকড়নাশক থিওভিট/কুমুলাস (2.0-2.5gm/L) স্প্রে করুন।
৪. বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার জন্য ------ লক্ষণ: চারা লাগানোর ৩০ দিন পর এ পোকার লক্ষণ প্রকাশ পায়, তবে বেগুনে ফুল আসার পরে আক্রমণ মাত্রা বাড়তে থাকে এবং ফল আসার পূ্র্বে কচি ডগায় আক্রমণ করে পরে ফলে আক্রমণ করে ।এই পোকার আক্রমণ গ্রীষ্মকালে বেশি হয় ।---সমাধান: .চারা লাগানোর ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বিএসএফবি-ফেরো ফাঁদ শতাংশ প্রতি ১/২ টি দিবেন । তারপর সপ্তাহে ১ বার পোকা আক্রান্ত ডগা ও ফল বাছাই করে বিনষ্ট করা ।[এমামেকটিন বেনজোয়েট( 1gm/L)+থায়ামেথাক্সাম ক্লোরানট্টানিলিপ্রোল(0.5ml/L)] অথবা [সাইপারমেথ্রিন+ক্লোরপাইরিফস (1ml/L)] অথবা কারটাপ (2gm/L) অথবা সাইপারমেথ্রিন (1ml/L) অথবা ডেল্টামেথ্রিন (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক প্রতি সপ্তাহে ১ বার স্প্রে করুন ।
৫.বেগুন গাছে কাঁঠালে পোকা & বিটল পোকা আক্রমণ করলে কার্বারিল (2gm/L) ) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন ।
৬.শোষক জাতীয় পোকার জন্য কিছু জৈব পদ্ধতি : চারা লাগানোর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে হলুদ রঙের ফাঁদ শতাংশ প্রতি ১/২ টি দিবেন । শুকনা ছাই ছিটিয়ে দিবেন । শস্য ফাঁদ –বেগুন ক্ষেতের চারপাশে ঢেঁড়স/ভুট্ট গাছ লাগাতে পারেন । তামাড় গুড়া ১০ গ্রাম + সাবানের ৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন ।প্রতি গাছে ৩৫-৪৫ পোকা বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড (1ml/L) অথবা ডাইমেথোয়েট (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন ।
৭.বেগুন গাছে ছাতরা পোকার জন্য ডাইমেথোয়েট (2ml/L) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন
৮. বেগুন গাছে সাদা মাছির জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড (1ml/L) অথবা ডাইমেথোয়েট (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন ।
৯.বেগুনের পাউডারী মিলডিউ রোগের জন্য--- কার্বেন্ডিজম (2gm/L) অথবা [ম্যানকোজেব+মেটালেক্সিল](1.5gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
১০. বেগুনের হোয়াইট মোল্ট রোগের জন্য---- [ম্যানকোজেব+ফেনামিডন (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: সিকিউর2gm/L স্প্রে করবেন ।
১১.বেগুনের ফোমোপসিস রোগের জন্য--- প্রপিকোনাজল (0.5ml/L)গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন ৮-১০ দিন দিন পর পর তিন বার ।
১২. পাতা, ফুল,ফল,পত্রবৃন্ত,বৃন্ত পচা রোধের জন্য ম্যানকোজেব/ কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
১৩. ফুল,ফল বৃদ্ধির জন্য [ চিলেকেট জিংক (1gm/L) + সলুবোর বোরন (2gm/L)] অথবা Nitrobenzene গ্রুপের (ফ্লোরা 2ml/L) গ্রুপের মাইক্রোনিউট্রিয়েন ।
১৩. মুলে নেমাটোডা আক্রমণ করলে এটা পরিচর্যা করতে হবে জমি তৈরির সময় করতে হবে চারা লাগানোর ১৫ দিন আগে শতাংশ প্রতি ৮০-৮৫ গ্রাম হারে ব্লিচিং পাউডার ছাই বা বালুর সাথে মিশিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিন এবং জমি তৈরির সময় শতাংশ প্রতি ১২০-১৩৫ গ্রাম হারে কার্বোফুরন গ্রুপর কীটনাশক ছাই বা বালুর সাথে মিশিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিন ।
১৪. ছত্রাকের কারনে বেগুন গাছ ঢলে পড়লে কার্বেন্ডিজম (2gm/L)/কপার-অক্সিক্লোরাইড(2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক গোড়ায় স্প্রে করবেন ।
১৫.ব্যাকটেরিয়ার কারণে বেগুন গাছ ঢলে পড়লে [স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট(0.2gm/L)] অথবা [(বিসমার্থিওজল+কাসুগামাইসিন(2gm/L)] অথবা ক্লোরো আইসো ব্রোমাইন সায়ানুয়িক এসিড গ্রুপের ব্যাকটেরিয়ানাশক গোড়ায় স্প্রে করবেন ।
বি:দ্র:- আবহাওয়া ও তাপমাত্রার তারতম্য ভেদে স্প্রে সিডিউল এর পরিবর্তন হতে পারে। এজন্য নিকটস্থ কৃষি অফিস বা আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখা।
কৃষিবিদ আব্দুল কাইয়ুম
গবেষক
এ আর মালিক সীডস।
![]() |