'কখনো বিষ্ণু দে , কখনো যামিনী রায় , এই নিয়ে তর্কটা চলতো' .....
যতদিন বাঙালি থাকবে, থাকবে তাদের কবিতা-কফি হাউজ এবং থাকবেন তিনি…
আজ কবি বিষ্ণু দে'র ৪৩-তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
নামে হিন্দু ত্রিদেবতার একজন ৷ ব্যক্তিগত জীবনে গভীর ভাবে প্রভাবিত মার্ক্সীয় দর্শনে ৷ রবীন্দ্রোত্তর যুগে বাংলা সাহিত্যে কল্লোল গোষ্ঠীর অন্যতম বলিষ্ঠ কলম তিনি ৷ তিনি কবি বিষ্ণু দে।
বিখ্যাত শ্যামাচরণ দে বিশ্বাসের (কলেজস্ট্রিট , বইপাড়ার শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট) পরিবারে জন্ম ৷
বিষ্ণু দে শুধু একজন প্রখ্যাত কবি নন ৷ আধুনিক ও উত্তর আধুনিক যুগে তিনি ছিলেন গদ্যকার,অনুবাদক, শিক্ষাবিদ এবং শিল্প সমালোচক ৷
তিনি বাংলা সাহিত্যে একের পর এক ফুল ফুটিয়েছেন ৷ আর অধ্যাপনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের ৷
দেশজ এবং বিশ্বসাহিত্যের ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটেছিল তাঁর কাব্যে ৷ একদিকে ইউরোপীয় আধুনিক কবিদের প্রভাব , অন্যদিকে মার্ক্সীয় দর্শন ও বিশ্বাস ৷ তবে জীবনের এক পর্বে দোলাচলে কাটিয়েছেন কমিউনিস্ট নেতাদের প্রতি আস্থাহীনতা থেকেও ; যা ধরা পড়েছে তাঁর বেশ কিছু কবিতায় ৷
রাজনৈতিক-সামাজিক সচেতনতা লৌকিক জীবনচর্চা ইতিহাসবোধ‚ বিশ্ব ও মানবিকবোধ তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য ৷ তাঁর কাব্যগ্রন্হ 'স্মৃতি সত্ত্বা ও ভবিষ্যৎ বাংলা কাব্যে নতুন ধারার সূচনা করে ৷ এই রচনাই ১৯৬৫ সালে এনে দেয় সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৭১ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ৷
দেশভাগ পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ সালে কলকাতার নামী সাহিত্যিকদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন Anti-Fascist Writers and Artists Association ; সেইসঙ্গে যুক্ত ছিলেন Calcutta Group Centre, Soviet Friendship Association, Pragati Lekhak Shilpi Sangha, Indian People's Theatre Association-এর সঙ্গেও ৷
চিত্রশিল্পী যামিনী রায় ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ৷ সেই সখ্যতা থেকেই কবির কলম হয়ে ওঠে চিত্র সমালোচক ৷ বিষ্ণু দে লেখেন বেশ কিছু অন্যধারার বই ৷ ১৯৫৮ সালে ‘The Paintings of Rabindranath Tagore’‚ ১৯৫৯ সালে ‘India and Modern Art’ এবং ‘Art of Jamini Roy’ .
১৯৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রয়াত হন ৭৩ বছর বয়সে ৷
যতদিন বাঙালি থাকবে‚ থাকবে তাদের কফি হাউজ এবং বিষ্ণু দে ৷ তিনিই তো আমাদের আধুনিক বৈষ্ণব পদাবলীকার ৷ যে পদাবলীতে সবার উপরে কাব্যপ্রেম সত্য
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন